চারুকলায় নিরাপত্তা ইস্যুতে প্রক্টর বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা ইস্যুতে সচেতন ছিলাম। সে সময় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা নামাজে গিয়েছিল। এ সময়টাতে সবাই একটু ক্লান্ত থাকে। সেই সুযোগকেই কাজে লাগানো হয়েছে।’
চারুকলায় এখনো ফ্যাসিস্টের দোসররা রয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যেও এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর রয়েছে—শিক্ষার্থীদের এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রক্টর আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের মন্তব্যকে একেবারে অমূলক বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত থাকলে তদন্ত কমিটির কাছে জানানোর কথাও বলেন তিনি।
এদিকে গতকাল দুপুরে চারুকলায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। পুলিশ থাকতে এমন ঘটনা কিভাবে ঘটল, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মুখ খোলেননি তিনি।
এর আগে সকালে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এম মো. নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, যারা মোটিফটি পছন্দ করে না তারাই করেছে, এটা অনুমান করে বলা যায়।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির আহবায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, মোটিফ তৈরির কাজটি মূলত চারুকলা আর শিল্পীরা মিলে করে থাকেন। নতুন করে মোটিফ তৈরির সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা সেখানে থাকবে।
হাসিনার দোসরদের দায়ী করেছেন ফারুকী
এ ঘটনার জন্য ভারতে পালানো শেখ হাসিনার দোসরদের দায়ী করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। গতকাল শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে আওয়ামী লীগের লোকজনকে দায়ী করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফারুকী।
পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘হাসিনার দোসররা গতকাল ভোররাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে, সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আসতে হবে, দ্রুত। আমরা নিশ্চিত করতে চাই এবারের শোভাযাত্রা যেন আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়।’
তিনি আরো লেখেন, ‘কাল রাতের ঘটনার পর হাসিনার দোসররা জানিয়ে দিয়ে গেল, বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে উৎসব করুক, তারা এটা চায় না। আমরা এখন আরো বেশি ডিটারমাইন্ড এবং আরো বেশি সংখ্যায় অংশ নেব। গত কিছুদিন জুলাই আন্দোলনের পক্ষের অনেকেই বলেছিলেন, এবারের শোভাযাত্রা সবচেয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভিন্ন রকমের হচ্ছে। এখানে ফ্যাসিবাদের ওই বিকট মুখ না রাখাই ভালো। আমরাও সব রকম মত নিয়েই ভাবছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মত জানার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কালকের ঘটনার পর এই দানবের উপস্থিতি আরো অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল।’
অন্যদিকে চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দানবীয় মুখাকৃতির মোটিফে আগুন লাগানোর ঘটনাটি রহস্যজনক নয়, বরং এটি পরিকল্পিত বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
গতকাল সংগঠনটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন সংগঠনটির সদস্যরা।
এ ছাড়া মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সন্ধ্যায় মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে। মানববন্ধনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ১৪৩২’-এর আহবায়ক প্রফেসর ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল এবং সদস্যসচিব প্রফেসর কাওসার হাসান টগর উপস্থিত ছিলেন। প্রফেসর কাওসার হাসান টগর বলেন, ‘নির্মিতব্য-প্রতীকী ফ্যাসিবাদী মুখাবয়বে গভীর রাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ গোষ্ঠীর সরাসরি হস্তক্ষেপে। পাশে থাকা শান্তির প্রতীক কবুতরের মোটিফটিও পুড়ে যায়। আমরা চারুশিল্পীরা এতে দমে যাইনি, বরং দ্বিগুণ উৎসাহে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা আয়োজনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। পহেলা বৈশাখ সকাল ৮টায় আপনারা এই শোভাযাত্রায় উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অংশগ্রহণ করবেন।’