অর্থপাচার দেশের অর্থনৈতিক সংকটের ১ নম্বর কারণ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘এই পাচার ঠেকাতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। ডলার সংকটে আমরা তেল-গ্যাস আমদানি করতে পারছি না। অন্যদিকে দুর্বৃত্তরা সেই টাকা পাচার করে দিচ্ছে।
’গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত ‘কর ফাঁকি ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কর্মশালা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের প্রচুর তথ্য প্রয়োজন। ব্যাংক কর্মকর্তারা আমাদের একটা বড় সোর্স। একই সঙ্গে আইনগতভাবেও তাঁদের সহযোগিতার বাধ্যবাধকতা আছে।
আমরা জেলসহ অন্যান্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি না, তাই ফাঁকির পরিমাণ অনেক বেশি। ধীরে ধীরে আমাদের তথ্য আদান-প্রদানে অটোমেশন করতে হবে। এনআইডি নম্বর দিয়েই যেন তথ্য পাওয়া যায়।’ ব্যাংক সহযোগিতা না করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে বলে জানান তিনি।
একই অনুষ্ঠানে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এনবিআরের কর প্রশাসনের সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ‘এনবিআরকে সহযোগিতা করাকে বাড়তি ঝামেলা মনে করবেন না। এটা রাষ্ট্রের কাজ।’ এ সময় আয়কর গোয়েন্দা ইউনিকের কমিশনার মোহাম্মদ আবদুর রকিব জানান, এই মুহূর্তে সাত শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তদন্ত করছে সংস্থাটি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেন, ‘শুধু এস আলম গ্রুপের এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানে দুই লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন স্থিতির পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
সাত হাজার কোটি টাকা ব্যাংক সুদ। যার বেশির ভাগই দেখানো হয়নি। এ কারণে ব্যাংকের সাতজন এমডিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে দেশ-বিদেশের তথ্য আছে। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হতে পারে। শোনা যাচ্ছে কে কাকে চাঁদা দেবে। তারপর বের হয়ে যাবে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমরা পারিনি পাশের একটা দেশের কারণে।’ আয়কর গোয়েন্দা ও সিআইসিকে দুটি মসজিদের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘এখানে কাউকে ঘুষ দিতে পারবেন না। কেউ বেশি করও নেবে না। আপনারা সহযোগিতা করলে আমরা অর্থনীতির ক্ষত কিছুটা মেরামত করতে পারব। যাদের লাখ লাখ কোটি টাকা আছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধে নেমেছি। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক স্ক্যাম বাংলাদেশে হয়েছে। এই কলঙ্ক আমরা বয়ে বেড়াব না।’
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক ব্যাংক স্টেটমেন্ট এনে দেখেছি বড় অঙ্কের টাকা শুধু ডেবিট হচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’