আমদানি করা ভোগ্যপণ্য আটকে রেখে বাজারে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা নস্যাতে চার দিনের ফ্রি টাইমের পর বন্দরে কনটেইনার ফেলে রাখলে চার গুণ বেশি মাসুল নিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়ার দাবি করে মাসুল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, এতে শিল্পের কাঁচামাল খালাসে খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে, যা পোশাকশিল্পের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে। বন্দর চেয়ারম্যানের দাবি, এই নির্দেশনার পর অসাধু ব্যবসায়ীরা আর বন্দরকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, আমদানি পণ্য জাহাজ থেকে খালাস করে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে রাখলে চার দিন পর্যন্ত কোনো ভাড়া দিতে হয় না। তবে পঞ্চম দিন থেকে প্রতি টিইইউএসের (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক কনটেইনার) জন্য ছয় ডলার করে ভাড়া বা স্টোর রেন্ট দিতে হয়, সাত দিনে যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ ডলারে। তবে বন্দরে কনটেইনারজট বাড়লেই জট কমাতে চার দিন ফ্রি টাইমের পর কখনো কখনো চার গুণ বেশি মাসুল আরোপ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এবার রোজার আগেই বন্দরে কনটেইনার জট তৈরি হওয়ায় কঠোর অবস্থান নেয় বন্দর।
এ ক্ষেত্রে অসাধু আমদানিকারকরা যেন পণ্যের দাম বাড়াতে বন্দরকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন সে জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক পরিপত্রে আমদানিকারকদের দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার আহবান জানানো হয়। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আইন অনুযায়ী চার দিন পর বর্তমান ভাড়ার চেয়ে চার গুণ বেশি মাসুল নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়। এই নির্দেশনা গত ১০ মার্চ থেকে কার্যকর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় মাসুল আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ।
কাস্টমের জটিলতায় এফসিএল (পণ্যভর্তি কনটেইনার) কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে আটকা পড়ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের খরচ চার গুণ হারে বাড়ছে, যার ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। কারণ এ বাড়তি খরচ পণ্যের অর্ডার নেওয়ার সময় পণ্যের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ ছাড়া এ দায় শুধু আমদানিকারকের নয়। যথাসময়ে ব্যাংক ডকুমেন্ট না পাওয়া, কাস্টমের প্রক্রিয়াগত জটিলতাসহ নানা কারণে পণ্য খালাসে দেরি হয়। এর পরও আমরা বন্দর চেয়ারম্যানকে চার গুণ হারে মাসুল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছি।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জনস্বার্থে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখতে এই অতিরিক্ত মাসুল আরোপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ ফ্রি টাইমের মধ্যে আমদানিকারকদের পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বন্দর ও কাস্টম থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। অনেক কার্গো আছে যেগুলো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের, দৈনন্দিন বাজারে যেটার প্রয়োজনীয়তা আছে এবং যার সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি।
প্রসঙ্গত, ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯ মার্চ পর্যন্ত কনটেইনার রয়েছে ২৯ হাজার ৯১ টিইইউএস। আর ১৮ মার্চ এক দিনেই রেকর্ড চার হাজার ৮৫৫ টিইইউএস কনটেইনার বন্দর থেকে ডেলিভারি হয়েছে। অথচ মার্চ মাসের শুরুতে বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৪৫ হাজারের বেশি কনটেইনার আটকে ছিল। রমজানে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে দাম বাড়াতে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য কৌশলে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠায় দ্রুত কনটেইনার খালাসে কঠোর অবস্থান নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।