<p>মহান আল্লাহ আমাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। একজন মুসলমানের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। পাশাপাশি তিনি আমাদের আদেশ করেছেন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩)</p> <p>অর্থাত্ তোমরা জামাতের সহিত নামাজ আদায় করো। জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য মানুষকে দৈনিক পাঁচবার মসজিদে যেতে হয়। যারা জামাতে নামাজ আদায় করে তারা একাকী নামাজির চেয়ে বেশি সওয়াব পায়। যারা জামাতে অংশগ্রহণের জন্য মসজিদে গমন করে, তারা বাড়ি কিংবা ইবাদতখানায় নামাজের চেয়ে আরো বেশি সওয়াব পায়। আবু মুসা (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার হাঁটার পথ (অর্থাত্ ঘর) মসজিদ থেকে বেশি দূরে সে নামাজের অধিক সওয়াব লাভের হকদার আর যে ব্যক্তি নামাজের জন্য অপেক্ষা করে ইমামের সঙ্গে (জামাতে) নামাজ আদায় করে সে ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি সওয়াবের হকদার যে একাকী নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৯৯)</p> <p>শুধু তা-ই নয়, যারা হেঁটে মসজিদে গমন করে, মহান আল্লাহ প্রতি কদমের বিনিময়ে তাদের জন্য সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। প্রতি কদমে কদমে তাদের পাপ ঝরে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পাক-পবিত্র হয়ে (অজু করে) তারপর কোনো ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপের একটি পাপ ঝরে পড়ে এবং অপরটিতে মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৪০৭)</p> <p>এ জন্য বহু সাহাবায়ে কেরাম মসজিদ থেকে দূরে বাড়ি রাখতে পছন্দ করতেন। যাতে দূর থেকে মসজিদে আসার কারণে তাঁরা বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারেন। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আমি জনৈক লোক সম্পর্কে জানি, যার বাড়ি অপেক্ষা কারো বাড়ি মসজিদ থেকে অধিক দূরে ছিল বলে আমার জানা নেই। জামাতের সঙ্গে (বর্ণনাকারী আবু উসমান নাহদির সন্দেহ) আমি বললাম, যদি তুমি একটি গাধা কিনে নাও এবং তার পিঠে আরোহণ করে রাতের অন্ধকারে এবং রোদের মধ্যে নামাজ আদায় করতে আসো তাহলে তো বেশ ভালোই হয়। এ কথা শুনে সে বলল, আমার বাড়ি মসজিদের পাশে হোক তা আমি পছন্দ করি না। আমি চাই মসজিদে হেঁটে আসা এবং মসজিদ থেকে ঘরে আমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ আমার জন্য (আমালনামায়) লিপিবদ্ধ হোক। তাঁর এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য অনুরূপ সওয়াব একত্রিত করে রেখেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৪০০)</p> <p> </p> <p>এমনকি রাসুল (সা.) নিজেও কিছু সাহাবায়ে কেরামকে মসজিদের পাশে থাকার উদ্দেশ্য বসতি পরিবর্তনে অনুত্সাহিত করেছেন। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মসজিদ-ই-নববীর পাশে কিছু জায়গা খালি হলে বানু সালামাহ গোত্র সেখানে এসে বসতি স্থাপন করতে মনস্থ করল। বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি তাদের (বানু সালামাহ গোত্রের লোকদের) উদ্দেশে বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মসজিদের কাছে চলে আসতে চাও। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তা-ই মনস্থ করেছি। এ কথা শুনে তিনি (সা.) বলেন, হে বানু সালামাহ গোত্রের লোকেরা! তোমরা তোমাদের ওই বাড়িতেই থাকো। কারণ তোমাদের নামাজের জন্য মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৪০৫)</p> <p>রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের পাশে থাকার জন্য বাড়ি পরিবর্তনে অনুত্সাহিত করার আরেকটি কারণ হলো, মহান আল্লাহ প্রতি ওয়াক্তেই মসজিদে আগত মুসল্লিদের জন্য জান্নাতে মেহমানদারির আয়োজন করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারির ব্যবস্থা করে রাখেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৬২)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সহিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>
