পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান। তার একমাত্র মিশন হলো, মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। মানুষের ইহকাল-পরকাল ধ্বংস করে দেওয়া।
হিংসুক : এই অভ্যাসটির কারণেই মূলত সে আদম (আ.)-কে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তান। তার একমাত্র মিশন হলো, মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। মানুষের ইহকাল-পরকাল ধ্বংস করে দেওয়া।
হিংসুক : এই অভ্যাসটির কারণেই মূলত সে আদম (আ.)-কে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
আয়াতের অর্থ : ‘তারা বলে, এ কেমন রাসুল যে আহার করে, হাটে-বাজারে চলাফেরা করে; তাঁর কাছে কোনো ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে তাঁর সঙ্গে থাকত সতর্ককারীরূপে? অথবা তাঁকে ধন ভাণ্ডার দেওয়া হয় না কেন? ...দেখ, তারা তোমার কী উপমা দেয়! তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, ফলে তারা পথ পাবে না। কত মহান তিনি, যিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে দিতে পারেন এর চেয়ে উত্তম বস্তু—উদ্যানগুলো, যার নিম্নদেশে নদী-নালা প্রবাহিত এবং তিনি দিতে পারেন তোমাকে প্রাসাদগুলো!’
(সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৭-১০)
আয়াতগুলোতে মহানবী (সা.)-এর ব্যাপারে অবিশ্বাসীদের আপত্তির উত্তর দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহানবী (সা.) মাটির তৈরি রক্ত-মাংসের মানুষ। মক্কার মুশরিকরা যা অসম্ভব মনে করত।
২. ধন-সম্পদ ও সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ধর্মীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের মানদণ্ড হতে পারে না। তার ভিত্তি হবে আল্লাহভীতি ও উত্তম গুণাবলি।
৩. ঈমান-ইসলামের ওপর চলা লোকদের নির্বোধ ও বোকা মনে করা অবিশ্বাসীদের পুরনো রীতি।
৪. আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও দ্বিনকে নিয়ে মন্দ উপমা দেওয়া, উপহাস করা কাফির-মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য।
৫. মুমিন পার্থিব জীবনে সম্পদহীন থাকাকে দোষের মনে করে না। কেননা সে বিশ্বাস করে তার জন্য চিরস্থায়ী জান্নাত প্রস্তুত আছে।
(আত-তাহরির ওয়াত-তানভির : ১৮/৩২৬)
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। রক্ত, মাংস আর শিরা-উপশিরায় তৈরি এই মানবদেহ এমন সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম অনুভূতিবোধ দিয়ে তৈরি, যেখানে সামান্য কিছুতেই মানুষ খুশি হয়, রাগ হয়, সুখ অনুভব করে ও কষ্ট পায়। কাজেই এ কথা অবলীলায় বলা যায় যে রাগ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু রাগ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তা নিজ শরীর বা পরকালীন
আমলনামা—সর্বত্রই বিপদের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়।
হাদিস শরিফে অনিয়ন্ত্রিত রাগকে শয়তানের প্রভাবের ফল হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, রাগ হলো শয়তানি প্রভাবের ফল। শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৪)
শয়তানের প্রভাবে যখন মানুষ প্রভাবিত হয়, তখন তার মাধ্যমে এমন কাজ সংঘটিত হওয়া স্বাভাবিক, যা তার আমল ও জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অপর এক হাদিসে এসেছে—‘প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’
(বুখারি, হাদিস : ৬১১৪)
অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষকে শারীরিক অনেক ক্ষতির মধ্যে ফেলতে পারে, যা কখনো কখনো জীবনও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্র নিশ্চিত করেছে যে ‘রাগ হূিপণ্ডের কার্যকারিতা ধ্বংস করে দেয় এবং রাগের পরের দুই ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আট গুণেরও বেশি বৃদ্ধি করে।’ সেখানে গবেষকরা বলছেন, একবার রেগে গেলে আপনার হূত্স্পন্দন দ্রুত হয়, রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, জমাট বাঁধা বৃদ্ধি পায়, রক্তনালি সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিওফ্রে টফলার বলেছেন, ‘মানুষের প্রতি আমাদের বার্তা হলো তাদের সচেতন থাকা উচিত যে তীব্র রাগ বা উদ্বেগের বিস্ফোরণ করোনারি রোগের কারণ হতে পারে, তাই যেখানে সম্ভব প্রতিরোধমূলক কৌশলগুলো বিবেচনা করুন।’
ওই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা রাগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর যদি রাগ এসেই যায়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন—দাঁড়ানো থাকলে বসে যাওয়া, মুখে কিছু পানি ঢালা এবং রাগের কারণ ভুলে যাওয়ার জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের নির্দেশনাও একই রকম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কারো যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগের উদ্রেক হয়, তাহলে সে যেন বসে পড়ে। এতে যদি তার রাগ দূর হয় তো ভালো, অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে।’
(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮২)
এসব হাদিসে এ কথার প্রমাণ বহন করে যে নবী (সা.) রাগকে যেকোনো উপায়ে হলেও দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
আমরা সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের নানা আচারে বিচরণের ক্ষেত্রে রাগান্বিত হতেই পারি, মন্দ অনুভূতির সম্মুখীন হতেই পারি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। সব চেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ক্ষমা করে দেওয়া। যেমন—মহান আল্লাহ তাআলা সুরা শুরায় খাঁটি মুমিনের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘যারা মহাপাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়।’
(সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৭)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়ার জীবনে সুস্থতা ও পরকালীন জীবনে মুক্তির জন্য হলেও নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে খাঁটি মুমিনের দলভুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস
saifpas352@gmail.com
বিক্রয়কর্মী কম্পানির নিযুক্ত ওয়াকিল বা প্রতিনিধি। প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো তাঁকে যিনি নিযুক্ত করেছেন তাঁর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা। সুতরাং বিক্রয়কর্মীর জন্য কম্পানির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা বৈধ নয়। আর যদি কম্পানি পণ্য নির্ধারণ করে দিয়ে না থাকে, তবে বিক্রয়কর্মী অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
উরওয়া (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) তাঁকে তাঁর জন্য একটি ছাগল কিনতে এক দিনার দেন।
এ ক্ষেত্রে উরওয়া (রা.) নবী (সা.)-এর নিযুক্ত ক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ক্রয়-বিক্রয়ে লাভ করতে পেরেছিলেন। লাভটা ছিল নবী (সা.)-এর জন্য। লাভ যদি উরওয়া (রা.)-এর জন্য হতো তাহলে নবী (সা.) তা গ্রহণ করতেন না।
যদি কম্পানি একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে বলে আপনি বেশি দামে বিক্রি করলে লাভটা আপনার জন্য।
(আল মুগনি : ৭/৩৬১)
সম্প্রতি দেশে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। পরীক্ষা ঘিরে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। পরীক্ষার বহু আগে থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ভালো ফলের জন্য। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য।
এই পরীক্ষাগুলো মুমিনদের জীবন-পরীক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই পরীক্ষার্থী। গোটা পৃথিবীটাই একটি পরীক্ষাগার।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আমি তা তার জন্য শোভা বানিয়েছি, যেন আমি পরীক্ষা করতে পারি মানুষের মধ্যে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।
(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)
পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য বহু নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন। এই নিয়ামতগুলো ভোগ করার নিয়ম-কানুন দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি পরীক্ষা করছেন, কারা এগুলোর ভেতর থেকেও দুনিয়াপ্রীতি সংবরণ করে মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে। আর কারা এগুলোর লোভে পড়ে আল্লাহর হুকুম থেকে দূরে সরে যায়।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই পরীক্ষার ব্যাপারে তাঁর উম্মতদের সাবধান করেছেন।
আমাদের নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের দুনিয়ার এই পরীক্ষা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। একদিন তিনি তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় তোমাদের খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০০০)
এ জন্য প্রত্যেক মুমিনের উচিত দুনিয়ার চাকচিক্যের মোহে পড়ে তাদের আসল কাজ ভুলে না যাওয়া। পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, যে কালের শুরু আছে শেষ নেই। ক্ষুদ্র এই জীবনকে সাজাতে গিয়ে অসীম জীবনের সফলতা থেকে বঞ্চিত না হওয়া। প্রত্যেক মানুষের জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ। জন্ম থেকে মৃত্যুর এই মধ্যবর্তী সময়টা মানুষ কিভাবে কাটায় মহান আল্লাহ তা যাচাই করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’
(সুরা : মুলক, আয়াত : ২)
দুনিয়ার পরীক্ষায় একবার অকৃতকার্য হলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু এই পরীক্ষা একবারই হয়। দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত সময় থাকতে নিজেদের সব পাপ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর পথে ধাবিত হওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্যই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, সেদিকেই সে মুখ করে। কাজেই তোমরা সত্ কাজের দিকে ধাবমান হও। যেখানেই তোমরা অবস্থান করো, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান।’
(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৮)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সব পাপ ও উদাসীনতা ক্ষমা করুন। আমিন।