<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক মা। মায়ের মতো আপন কেউ হয় না। ফুল-পাখি-নদী-ঝরনা কোনো কিছুই মায়ের মতো মায়াবি না। দুনিয়ার অনেক রং আছে, অনেক আলো আছে, অনেক জৌলুস আছে; তবে মায়ের মতো এত রং, এত আলো, এত জৌলুস আর কিছুতে নেই। জীবন যখন নিরানন্দ হয়ে ওঠে, হৃদয়ের জমিন যখন শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়, মা তখন আনন্দের বর্ষণ হয়ে সন্তানের মন আকাশ ভিজিয়ে দেয়। যার মা নেই, তার সব থেকেও কিছু নেই। মায়ের সেবা অন্যতম ইবাদত। একজন সাহাবি এসে নুর নবীজিকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওগো দয়াল নবী! আমার ভালো ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? নবীজি বলেন, তোমার মায়ের। সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কার? নবীজি বলেন, তোমার মায়ের। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কার? এবারও নবীজি বললেন, তোমার মায়ের। চতুর্থবার সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কার? নবীজি বলেন, তোমার বাবার। তারপর তোমার কাছের মানুষজন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বর ৩)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মা এমন এক সম্পদ দুনিয়া ও আখিরাতে যার বিকল্প নেই। বন্ধু হারালে বন্ধু পাওয়া যায়, অর্থ খোয়া গেলে অর্থ গড়ে নেওয়া যায়, সম্পদ নষ্ট হলে আবার তৈরি করা যায়; কিন্তু মা একবার চলে গেলে আর পাওয়া যায় না। যত দিন মা বেঁচে থাকে তত দিন মাথার ওপর মায়ের দোয়া থাকে। একবার ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বড় অপরাধের ভঙ্গিতে বলল, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওগো আল্লাহর নবীর পেয়ারা সাহাবি! আমি রাগের মাথায় খুন করেছি। এক রূপবতীকে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিই। সে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। কিছুদিন পর অন্য একজন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। বিষয়টি জেনে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। নিজেকে খুব ছোট মনে হতে থাকে। অপমানের আগুন আমার ভেতরকে পুড়িয়ে দেয়। এক পর্যায়ে রাগের মাথায় আমি ওই নারীকে খুন করে ফেলি। এখন আপনি বলুন, আমার জন্য তাওবার  দরজা খোলা আছে কি?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইবনে আব্বাস (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হে যুবক, তোমার মমতাময়ী মা বেঁচে আছেন?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> জবাবে যুবক বলল, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি হতভাগার মাও বেঁচে নেই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইবনে আব্বাস কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুমি খালেস দিলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং নেক আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের চেষ্টা করো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুবকটি চলে গেলে বর্ণনাকারী আতা ইবনে ইয়াসার (রা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপনি তার মায়ের ব্যাপারে প্রশ্ন করেছেন কেন?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> জবাবে ইবনে আব্বাস বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মায়ের সেবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো আমলের কথা আমার জানা নেই। তার মা বেঁচে থাকলে সে যদি মায়ের সেবা করত খুব সহজেই আল্লাহ তার তাওবা কবুল করে নিতেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নম্বর ৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মায়ের সেবার পুরস্কার সম্পর্কে আরো একটি চমৎকার হাদিস আছে। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিক (রা.)। নবীজি (সা.) বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি যখন মিরাজে যাই, তখন সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াত শুনতে পাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এমন মধুর তিলাওয়াত কার কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছে?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলা হলো, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটা হারিসা ইবনে নুমানের কণ্ঠ। সে ছিল পরম মা ভক্ত ছেলে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এতটুকু বলার পর নবীজি সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তোমরা হারিসার মতো মা ভক্ত হও। হারিসার মতো মা ভক্ত হও। অবশ্যই হারিসা অন্য সবার চেয়ে মায়ের প্রতি বেশি যত্নশীল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী এই হাদিস উদ্ধৃত করার পর আদাবুল মুফরাদের টিকায় লিখেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মায়ের সেবা এমন এক ইবাদত, যা বান্দার গুনাহ ঝরিয়ে জান্নাত নিশ্চিত করে দেয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনূদিত আদাবুল মুফরাদের টিকা, ২৮-পৃষ্ঠা)</span></span></span></span></p>