<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিকচিক করছে কালো পানি। তার মাঝে ভেসে আছে কয়েকটি সাদাটে হাতের সামান্য অংশ, যেন গভীর পানিতে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে হাতগুলো এবং তার মালিকরাও। ভেসে আছে শুধু ডুবন্ত প্রতিটি হাতের পাঁচটি আঙুল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনকে নাড়া দেওয়া দৃশ্যটি দেখা গেল ঢাকা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের গুলশান শাখার সীমানাপ্রাচীরে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিমজ্জন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামের এই চিত্রকর্ম শিল্পী লুবনা চর্যার আঁকা। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে দেয়ালজুড়ে রয়েছে এমন আরো কয়েকটি দৃশ্য। সব ছবিই এঁকেছেন উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার একদল শিল্পী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেয়ালচিত্র, কাপড়ের পুতুল, নকশি রুমালসহ কয়েকটি আউটডোর স্থাপনাশিল্প নিয়ে আয়োজিত হয়েছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিকড়ের গান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। শিল্পকর্মের মাধ্যমে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এতে। জলবায়ুর পরিবর্তন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিতে যে প্রভাব ফেলছে তাকে কেন্দ্র করে উপস্থাপিত হয়েছে বেশ কিছু শিল্পকর্ম। প্রদর্শনীটির কিউরেট করেছেন শিল্পী খন্দকার নাসির আহমেদ। সমন্বয় করেছেন শিল্পী মণি মাঝি ও বিশ্বজিৎ রায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একসময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে নারীরা নকশি কাঁথা ও রুমাল সেলাই করতেন। কোমল হাতে অত্যন্ত যত্নে তৈরি করা রুমালগুলোতে ভারি জীবনদর্শনের পাশাপাশি অনেক সময় থাকত নারীর মনের কথা। দক্ষিণাঞ্চল ঘুরে পল্লীর সাধারণ নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্পী অ্যামি। তাঁদের আনন্দ-বেদনার কথা উঠে এসেছে প্রদর্শনীর নকশি রুমালে। এসব রুমালে লেখা, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাটনি করাই আমাগো জীবন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতরের নাম পরশমণি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিনা খাটুনি খায় ভাত, শরীর করে উৎপাত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চাঁপাফুলের গন্ধে জামাই আইস আনন্দে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইত্যাদি কথা। বিলীয়মান সংস্কৃতি হলেও গ্রামবাংলায় কিছু শিশু আজও </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুতুল বিয়ে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> খেলে। লোকজীবনের এই অবিচ্ছেদ্য অংশকে তুলে ধরা হয়েছে বেশ কিছু কাপড়ের তৈরি পুতুল দিয়ে। রঙিন কাপড়ে সজ্জিত পুতুলগুলো রাখা হয়েছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ঠিক সদর দরজার সামনে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রদর্শনীতে ১১ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম রয়েছে। সবাই খুলনার শিল্প সংগঠন শ্বাসমূল আর্টসের সদস্য। সংগঠনটি যাঁর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করেছিল সেই শিল্পী মণি মাঝি কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা মূলত বাংলার মৌলিকত্বকে শিল্পে ধরার চেষ্টা করছেন। শিল্পীর দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে প্রান্তিক মানুষ এবং তাদের যাপিত জীবন নিয়ে কাজ করছেন। ভোগবাদী মানুষের আধুনিক জীবনযাত্রা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ, প্রাণ ও প্রকৃতির ওপর। খুলনা আর্ট কলেজ ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিল্পপাঠ নেওয়া মণি মাঝি বলেন, নগরের মানুষকে তাঁরা শিকড়ের গান শোনাতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রদর্শনীতে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফাঁদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামের একটি স্থাপনাশিল্পকর্মে ব্যবহার করা হয়েছে খুলনা অঞ্চলের মাছ শিকারের চাঁই বা ফাঁদ। এর ভেতর পুরে দেওয়া হয়েছে কৃষক, বনজীবী, প্রাণিকুল ও গাছপালার আদল। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পানিবন্দনা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামের একটি দেয়ালচিত্রে দেখানো হয়েছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখাকে ঘিরে উপকূলীয় মানুষের জীবনচিত্র। তাতে রয়েছে মিঠা পানির জন্য উন্মুখ মানুষের বৃষ্টির আগমন ঘিরে রীতি-রেওয়াজের দৃশ্যায়ন। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সভ্যতার আরো একটি দান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামের দেয়ালচিত্রে রয়েছে কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদ কৌশলের দৃশ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিউরেটর শিল্পী খন্দকার নাসির আহমেদ বলেন, প্রান্তিক মানুষকে নিয়েই তাঁদের কাজ। শুধুই শিল্পের জন্য নয়, বরং মানুষের জন্যই শিল্প করেন তাঁরা। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে। বাংলার গ্রামীণ জীবনের অনেক কিছু স্বভাবতই শিল্প। তাকে আবিষ্কার করে সমকালীন শিল্পধারায় উপস্থাপন করেন তাঁরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রদর্শনীটি চলবে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। </span></span></span></span></p>