<p>হইচই-এর নতুন সিরিজ ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ হইচই ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকের নতুন সংযোজন। এটি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের চিরন্তন প্রেমকাহিনীর একটি আধুনিক এবং গ্রামীণ বঙ্গীয় সংস্করণ বলা যায়। মুক্তির পর থেকেই বেশ সাড়া ফেলেছে সিরিজটি। প্রেম, সংঘাত এবং প্রতিশোধের এক রোমাঞ্চকর মিশ্রণে নির্মিত ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’। ভালোবাসা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সময়-সমাজ, রাজনীতির দেখা মিলবে এ সিরিজে।</p> <p>সিরিজটি বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের প্রেক্ষাপটে নির্মিত, যেখানে দুই পরিবারের মধ্যে পুরনো শত্রুতা, হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব চিরন্তন ভালোবাসার পথে বাধা সৃষ্টি করে। মোট পাঁচটা এপিসোড। প্রত্যেকটা এপিসোডের নাম কোনও না কোনও আমার-আপনার চেনা বাংলা ছবি থেকেই নেওয়া। কখনও ‘বাতাসে গুনগুন’, ‘কখনও চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা’ আবার কখনও ‘সেদিন দেখা হয়েছিল’। বুকের ভিতরে অনেকটা আবেগ জমে উঠেছিল।</p> <p>গল্পটি শুধুমাত্র রানা এবং জাহানারার প্রেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি পরিবার, সমাজ এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইকে গভীরভাবে তুলে ধরে। রোমিও চরিত্রে দেবদত্ত রাহা এবং জুলিয়েট চরিত্রে হিয়া রায় ভালো অভিনয় করেছে। তাদের রসায়ন প্রাকৃতিক এবং হৃদয়গ্রাহী। তবে অনির্বাণ ভট্টাচার্য যেন এই সিরিজকে আলাদাভাবে প্রাণ দিয়েছে। শুরু থেকেই তার অভিনয় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে সিরিজে। অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রী যারা আছেন তারাও মোটামুটি ভালো অভিনয় করেছেন। পরিচালক অর্পন গড়াই গ্রামীণ বাংলার প্রাণবন্ত ছবি এঁকেছেন। কাহিনীর গতিশীলতা এবং বাস্তবতার উপস্থাপনা প্রশংসার যোগ্য।</p> <p>চিত্রনাট্যে শেক্সপিয়ারের আসল কাহিনীকে যথাযথভাবে অনুসরণ করলেও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা গল্পটিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে দর্শকদের কাছে। আর হ্যাঁ, এই সিরিজের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর কিন্তু অনির্বাণ ভট্টাচার্য; তাকে নিয়ে তো আলাদা করে আর বলার কিছু নাই। অভিনয়ে যেমন এই সিরিজে সেরা কাজ করেছে তেমনি ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে রেখেছে বিচক্ষণতার চাপ। গ্রামের পটভূমি, সবুজ মাঠ এবং নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ক্যামেরার মাধ্যমে অসাধারণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সিরিজের ব্যাকগ্রাউন্ড সংগীত এবং গানগুলো আবেগঘন দৃশ্যগুলোকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে।</p> <p>সিরিজের যে দিকগুলো দর্শকরা উপভোগ করবে তা হচ্ছে, মূল চরিত্রদের অনবদ্য অভিনয়, বাংলার গ্রামীণ পরিবেশের বাস্তব চিত্রায়ন এবং সংগীত ও আবহ। তবে সিরিজের নেগেটিভ দিকগুলো হচ্ছে, কিছু জায়গায় কাহিনীর গতি একটু ধীর বলে মনে হতে পারে দর্শকদের। বিশেষ করে মাঝের দুটো এপিসোড। এছাড়া পার্শ্বচরিত্রগুলোর গভীরতা আরেকটু বাড়ানো যেতো তাহলে দর্শক আরও উপভোগ করতে পারত।</p> <p>অবশেষে বলা যায়, ‘তালমার রোমিও জুলিয়েট’ বাংলা সিরিজের একটি নতুন মাত্রা। এটি শুধুমাত্র শেক্সপিয়ারের কাহিনীর পুনঃর্নির্মাণ নয়; এটি বাংলা সংস্কৃতি এবং সামাজিক বাস্তবতাকে রোমাঞ্চকরভাবে উপস্থাপন করে। যারা ভালোবাসা, সংঘাত এবং গ্রামের গল্পের সমন্বয়ে নির্মিত কিছু ভিন্নধর্মী দেখতে চান, তাদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দেখার মতো সিরিজ। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ দেখে নিতে পারেন সিরিজটি। ভালো সময় কাটবে।</p>