ঢাকা, সোমবার ০৭ এপ্রিল ২০২৫
২৩ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৬

আফগানিস্তানের সংবিধানে ইসলাম ও শরিয়া আইন

আসআদ শাহীন
আসআদ শাহীন
শেয়ার
আফগানিস্তানের সংবিধানে ইসলাম ও শরিয়া আইন
পার্লামেন্ট ভবন, কাবুল, আফগানিস্তান। ছবি: সংগৃহীত

যেকোনো দেশ দখলের পর সাধারণত দখলদার শক্তি ওই দেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে থাকে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রও ব্যতিক্রম নয়। তারা আফগানিস্তানের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে (যাতে ১২টি অনুচ্ছেদ ও ১৬২টি ধারা আছে), যা The Constitutional Loya Jirga  -এর ৫০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি দ্বারা অনুমোদিত হয়। পরে ২০০৪ সালের ২৬ জানুয়ারি কাবুলে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি বাস্তবায়ন করেন।

এই সংবিধানে ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে একটি সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি সংবিধানের ভূমিকা থেকেই স্পষ্ট।

ভূমিকার সূচনা হয়েছে এভাবে : ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, সালাত ও সালাম প্রেরিত নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তার সাথি-সঙ্গী ও অনুসারীদের প্রতি।’

ভূমিকার প্রথম অনুচ্ছেদে ধর্মীয় বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই ভাষায়—‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস রেখে, তার ইচ্ছার প্রতি ভরসা করে এবং ইসলাম ধর্মকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে।

অন্যদিকে শেষ অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে এই বাক্যের মাধ্যমে—‘জাতিসংঘ সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।’

রাষ্ট্রের পরিচিতি

আফগান সংবিধানের প্রথম ধারায় রাষ্ট্রের পরিচিতি তার নামের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আফগানিস্তান একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র।’

দ্বিতীয় ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ইসলাম ধর্ম আফগানিস্তান ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম।’ তবে একই সঙ্গে অন্য ধর্মের অনুসারীদের জন্য তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে (যা অবশ্যই আইনের সীমার মধ্যে থাকতে হবে)।

সংবিধানের সপ্তম ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আফগানিস্তান জাতিসংঘ সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র মেনে চলবে।’ এই ধারায় আরো জোর দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদ, মাদক চাষ ও পাচার থেকে বিরত থাকার ওপর। এর পাশাপাশি সংযোজন করা হয়েছে ইসলামী ফিকহ (আইনশাস্ত্র) থেকে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা : ‘মাদকদ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

অষ্টাদশ ধারায় নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘হিজরি বর্ষপঞ্জি হবে রাষ্ট্রের সরকারি বর্ষপঞ্জি এবং শুক্রবার হবে রাষ্ট্রের সাপ্তাহিক ছুটির দিন।’

১৯তম ধারায় রাষ্ট্রের জাতীয় প্রতীক নির্ধারণ করা হয়েছে।

  প্রতীকের শীর্ষ অংশে একটি ধর্মীয় বাক্য সংযোজন করা হয়েছে, যাকে ‘পবিত্র’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবার।’

২০তম ধারায় সংবিধান জাতীয় সংগীত সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করেছে। এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহু আকবার’ বাক্যটি অবশ্যই জাতীয় সংগীতে থাকতে হবে।

এটি স্পষ্ট যে ইসলাম ধর্ম রাষ্ট্রের প্রতিটি দিক ও আনুষ্ঠানিক প্রতীকের কেন্দ্রে আছে। রাষ্ট্রের পরিচিতি, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় প্রতীক—সব কিছুতে ইসলামের সুস্পষ্ট উপস্থিতি আছে।

শরিয়া ও আইন

তালেবান আন্দোলনের মুখপাত্র ঘোষণা করেছেন, ‘শরিয়া আফগানিস্তানের লেনদেন ও কার্যক্রম পরিচালনার মূল ভিত্তি হবে।’ এই ঘোষণা একটি যৌক্তিক প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করে, আফগানিস্তানে কি এমন কোনো আইন ছিল, যা শরিয়ার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ?

বিশেষ করে যখন বর্তমান সংবিধানের তৃতীয় ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘আফগানিস্তানে কোনো আইন ইসলাম ধর্মের নীতিমালা ও আদেশের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারবে না।’

আফগান সংবিধানের ধারা-১৩০-এ আরো নিশ্চিত করা হয়েছে যে কোনো আদালত যদি কোনো মামলা নিষ্পত্তির জন্য লিখিত আইনে কোনো বিধান না পায়, তাহলে তারা হানাফি ফিকহের আলোকে সেই বিরোধ মীমাংসা করবে। তবে যদি বিবাদকারীরা শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে শিয়া ফিকহের ভিত্তিতে বিরোধের সমাধান করা হবে।

এখানে স্পষ্টভাবে সংবিধান আইন প্রণেতাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, ‘কোনো আইন শরিয়ার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারবে না।’ একই সঙ্গে বিচার বিভাগের জন্যও সীমা নির্ধারণ করেছে যে তারা শরিয়ার বাইরে যেতে পারবে না।

এটি এমন একটি মূলনীতি, যা সংবিধানের ধারা-১৪৯-এ অপরিবর্তনীয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ধারাটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে, ‘ইসলাম ধর্মের নীতিমালা এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলোর সংশোধন অনুমোদনযোগ্য নয়।’

সংবিধানে রাজনৈতিক দল ও শীর্ষ পদসমূহ

আফগান সংবিধান নাগরিকদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বেসরকারি সংগঠন বা রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার। তবে সংবিধানের ধারা-১৩৫-এ এই স্বাধীনতার ওপর কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শর্তটি হলো, ‘কোনো সংগঠন বা দলের ঘোষণাপত্র ও চার্টার ইসলাম ধর্মের নীতি এবং সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হতে পারবে না।’

রাষ্ট্রের শীর্ষ পদগুলোর ক্ষেত্রে, আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আংশিক রাষ্ট্রপতিশাসিত বা আধা-রাষ্ট্রপতিশাসিত হিসেবে বর্ণনা করা যায়, যেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অন্যান্য সংস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগের জন্য একটি মৌলিক শর্ত হলো, তাকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। দায়িত্ব গ্রহণের আগে রাষ্ট্রপতিকে একটি নির্দিষ্ট শপথ গ্রহণ করতে হবে, যা নিম্নরূপ :

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আমি আল্লাহ তাআলার নামে শপথ করছি যে আমি ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুগত থাকব এবং তা রক্ষা করব। সংবিধান ও অন্যান্য আইনের প্রতি সম্মান দেখাব এবং সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব। আফগানিস্তানের স্বাধীনতা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করব। আল্লাহর সাহায্য এবং জাতির সমর্থন নিয়ে আমি আফগান জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাব।’

সংবিধানের ধারা-৭৪-এ মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথের ফরম্যাট প্রায় একই রকম রাখা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সংযুক্ত করা হয়েছে—‘ইসলাম ধর্মের সুরক্ষা’।

অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য সংবিধানের ধারা-১১৮-তে কয়েকটি যোগ্যতার শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় শর্তটি হলো, ‘তাদের অবশ্যই আইন বা ইসলামী ফিকহ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা থাকতে হবে।’

সংবিধানের ধারা-১৯০-এ বিচারকদের শপথের নির্দিষ্ট ফরম্যাট উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিম্নরূপ :

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আমি আল্লাহ তাআলার নামে শপথ করছি যে আমি ইসলাম ধর্মের নীতি এবং এই সংবিধান ও আফগানিস্তানের অন্যান্য আইন অনুযায়ী সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে আমার বিচারিক দায়িত্ব পালন করব। আমি আমার কাজ সম্পূর্ণ সততা ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সম্পন্ন করব।’

এখানে দেখা যায়, সংবিধান আফগানিস্তানের শীর্ষ পদগুলোর নিয়োগ, যোগ্যতার শর্ত এবং শপথগ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মকে সর্বত্র প্রাধান্য দিয়েছে। ধর্মীয় অনুশাসন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ এখানে নেই। প্রতিটি স্তরে ইসলামী মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় আদর্শের সুস্পষ্ট উপস্থিতি আছে।

শিক্ষা সংবিধান

এটি সাধারণভাবে গ্রহণ করা হয় যে আধুনিক রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা শিক্ষার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার দাবি করে, যাতে কোনো ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক পরিচিতি প্রকাশ না পায়। কিন্তু আফগানিস্তানের বর্তমান সংবিধান এতে বিপরীতভাবে কাজ করেছে। সংবিধানের ধারা-১৭-তে শিক্ষা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং এতে বলা হয়েছে, ‘ধর্মীয় শিক্ষার উন্নতি করা, মসজিদ, ধর্মীয় স্কুল তথা মাদরাসা এবং ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোর (মারকাজ) অবস্থা সংবিধানিকভাবে সংগঠিত ও উন্নত করা।’

এবং সংবিধান এখানেই থেমে থাকেনি, ধারা-৪৫-এ আরো স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রকে এমন একটি একক শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যা ইসলাম ধর্মের নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।’

নারীবাদ এবং গণতন্ত্র সংবিধান

নারীর অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে সংবিধানে সাধারণ নাগরিকত্বের অধিকার হিসেবে ধারা-২২-এ উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে নারীদের সমান অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে সংবিধান এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি শরিয়ার সঙ্গে বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করতে বাধা দেয়। সুতরাং এটি একটি সমতা প্রদান করেছে, যা শরিয়াভিত্তিক।

ধারা-৪৪-এ বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র নারীশিক্ষা উন্নত করার জন্য কার্যকর কর্মসূচি তৈরি করবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত শিক্ষার মধ্যে মূল ফোকাস হবে।’

তথ্যসূত্র:

World Intellectual Property Organization, The Constitution and Laws of the Taliban, The Constitution of Afghanistan

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যেভাবে আত্মিক প্রশান্তির খোঁজ পেলেন ইতালিয়ান তরুণ

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যেভাবে আত্মিক প্রশান্তির খোঁজ পেলেন ইতালিয়ান তরুণ
ইতালিয়ান নওমুসলিম লুকাস ক্লেমেন্ট। ছবি : আনাদোলু এজেন্সি

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক যুগ ধরে কাজ করছেন লুকাস ক্লেমেন্টে। দীর্ঘ এই সময়ে কথা হয় এক মুসলিম সহকর্মীর সঙ্গে। তার কথায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ও অন্য ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন লুকাস। পরে ৩৫ বছর বয়সে দীর্ঘদিন চিন্তা-ভাবনার পর অবশেষে ইসলাম গ্রহণ করেন।

 

ইতালির মিলানে জন্ম নেওয়া ক্লেমেন্টে প্রথমে বারটেন্ডিং হিসেবে ব্রাসেলসে যান। মূলত তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে অফারটি পেয়েছিলেন। তখন ব্রাসেলস সম্পর্কে তার কোনো জানাশোনা ছিল না। এমনকি ফ্রেঞ্চ ভাষাও তার জানা ছিল না।

ভিনদেশে একজন সাধারণ অভিবাসী যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে থাকে তিনিও এসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন। 

ক্লিমেন্টে জানান, তিনি যে হোটেলে থাকতেন সেখানে মরক্কোর একজন রিসেপশনিস্টের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মূলত ওই ব্যক্তি সঙ্গে কথা বলতে বলতে এক সময় তার আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু হয়। তাদের মধ্যে প্রায়ই ধর্মীয় বিষয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হতো।

ক্লেমেন্টে ওই সময় একজন নাস্তিক ছিলেন। খ্রিস্টান স্কুলে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তা ছাড়া তার পরিবারও খুব ধার্মিক ছিল না। 

ক্লিমেন্টে বলেন, ‘আমি স্রষ্টায় বিশ্বাস করতাম না। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে আমরা বিতর্ক করতাম।

আমি পড়াশোনা ও গবেষণা করে কিছু বিষয় যুক্তি বের করি, কেন আমি মনে করি স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই। পরে এসব যুক্তি উপস্থাপন করতাম। তবে আমি দ্রুত বুঝতে পারি, আমার এসব প্রমাণ দুর্বল। বরং তার যুক্তিগুলো খুবই শক্তিশালী। তখন আমি বুঝতে শুরু করি, স্রষ্টার পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে। আমার মতো একজন নাস্তিকের জন্য তা খুবই অবিশ্বাস্য ছিল। এরপর আমি গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ 

স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করার পর ক্লেমেন্ট কোন ধর্ম সবচেয়ে সঠিক সেই প্রশ্নের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন। ইসলাম সম্পর্কে জানার পর কোরআনের অনস্বীকার্য প্রমাণ এবং অলৌকিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার খোঁজ পান যা তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি।

ক্লেমেন্ট বলেন, ‘কোরআনের প্রথম যে বিষয় আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা হলো এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। এমনকি তাতে ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে বিবরণ রয়েছে।’

ক্লেমেন্ট বলেন, কেবল বৈজ্ঞানিক দিকগুলোই তাকে প্রভাবিত করেনি, বরং মুসলিম সমাজের চরিত্রও তাকে প্রভাবিত করেছে। মুসলিমরা সাধারণত বেশি উদার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল। ইসলাম সামাজিক আচরণকে যেভাবে প্রভাবিত করে তিনি এর প্রশংসা করেন।

তা ছাড়া একজন ইমামের কথাও ক্লেমেন্টের মধ্যে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। ইমাম তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তুমি কি মনে করো, তোমার কবজির ঘড়িটি কোনো স্রষ্টা ছাড়াই অস্তিত্বে এসেছে? সে বলেছিল, না। তখন ইমাম বলেছিল, তাহলে তুমি কিভাবে ভাবতে পারো যে একজন মানুষ একজন স্রষ্টা ছাড়া অস্তিত্বে এসেছে?’ ক্লেমেন্ট এই প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করে বুঝতে পারেন, একটি উচ্চতর শক্তির অস্তিত্ব কাকতালীয় বিষয় নয়।

ক্লেমেন্ট বলেন, ‘যখন আমি মুসলিম হই তখন আমি আমার হৃদয়ে এমন কিছু অনুভব করি। তা এমন কিছু যা আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। কেবল অনুভব করতে পারবেন। আপনি সুন্দর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি অনুভব করেন। তা একটি অবর্ণনীয় অনুভূতি, কিন্তু তা বাস্তবতার সারাংশ।’

ইসলাম গ্রহণের পর তার আধ্যাত্মিক রূপান্তরের বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্লেমেন্ট বলেন, ‘প্রথমে আমি সন্দেহের মন নিয়ে ইসলামের দিকে এগিয়ে যেতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা একটি আধ্যাত্মিক জাগরণে পরিণত হয়। আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম প্রয়োগ করতে শুরু করেন। নামাজ, রোজাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে থাকেন। আমি পার্থক্য অনুভব করতে শুরু করেন। যেদিন আমি মুসলিম হয়েছিলাম, সেদিনই আমি আমার হৃদয়ে কিছু অনুভব করেছিলাম। এটি ছিল গভীর শান্তির অনুভূতি।’

তা ছাড়া ক্লেমেন্ট একটি স্বপ্নের কথাও বর্ণনা করেন। তিনি দেখেন, একজন নাস্তিক বন্ধুর সঙ্গে তিনি দৌড়াচ্ছিলেন। পথের সব বাধা অতিক্রম করে তিন স্বপ্নে দৌড়ে জয়ী হন। তিনি বলেন, ‘তা আমার কাছে একটি পূর্বাভাস ছিল, আমি সঠিক পথে আছি।’

ইসলাম গ্রহণের পর ক্লেমেন্টের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। তিনি বলেন, ‘আগে আমি টাকা হারানোর ভয় করতাম। আমি ঝুঁকি নিতে পারতাম না।ভয় করতাম যে আমি যা বিনিয়োগ করেছি তা হারাব। কিন্তু বিশ্বাস গ্রহণের পর আমি নৈতিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করে বুঝতে পারি, সবকিছুই আল্লাহর কাছ থেকে আসে। একবার আপনি তা বুঝতে পারলে ভয় অদৃশ্য হয়ে যায়।’

ক্লেমেন্ট আরো বলেন, ‘আমি আমার সব খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করেছি। আমি মদ্যপান ও ধূমপান বন্ধ করেছি। আমার মনোযোগ উন্নত হয়েছে। আমি বুঝতে পারি, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারতাম না। ৩৫ বছর বয়সে আমি আমার ক্যারিয়ার এবং পরিবার গড়ে তুলেছি। অন্যদিকে ইতালিতে আমার সমবয়সী বন্ধুরা এখনও তাদের বিশের কোঠায় বসবাস করছে।’

আধ্যাত্মিক সংকটে ভোগা তরুণদের উদ্দেশে ক্লেমেন্ট বলেন, ‘ইসলাম হলো আপনার সব সমস্যার সমাধান। তা একটি উন্নত জীবনের দিকে পরিচালিত করে। ইসলামের অভ্যন্তরীণ দিক ব্যাখ্যা করা কঠিন, তবে যৌক্তিক দিকগুলো স্পষ্ট। ইসলাম অনুসারে জীবনযাপন আপনাকে শক্তি, মনোযোগ ও উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে নেবে।’

তথ্য সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

মন্তব্য
প্রতিদিনের আমল

কবর জিয়ারতের সময় যে দোয়া পড়া সুন্নত

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
কবর জিয়ারতের সময় যে দোয়া পড়া সুন্নত

মানুষের মৃত্যুর পর প্রথম আবাসস্থল কবর। মুমিনদের সেখানকার অধিবাসীর জন্য দোয়া করতে বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) নিয়মিত কবর জিয়ারত করতেন এবং দোয়া করতেন। হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া হলো- 

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ، مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، أنتُم لنا فرَطٌ ونحنُ لَكم تبعٌ، أَسْاَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ

উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম আহলাদ দিয়ার।

মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিন। ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া নাহনু লাকুম তাবউন। আসআলুল্লাহ লানা ওয়া লাকুমুল আফিয়াহ।
 

অর্থ : হে গৃহের অধিবাসী মুমিন ও মুসলিমরা, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। তোমরা আমাদের অগ্রগামী এবং আমরা তোমাদের অনুসরণকারী। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করি।

 

হাদিস : বুরাইদাহ আল-আসলামি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) কবর জিয়ারতে গেলে তিনি দোয়াটি পড়তেন। (নাসায়ি, হাদিস নং : ২০৩৯)


 

মন্তব্য

রাসুল (সা.) পরিবারের সঙ্গে যেভাবে আনন্দ উদযাপন করতেন

সাআদ তাশফিন
সাআদ তাশফিন
শেয়ার
রাসুল (সা.) পরিবারের সঙ্গে যেভাবে আনন্দ উদযাপন করতেন

পৃথিবীতে সুখে থাকার জন্য পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা। হালাল পন্থায় তাদের আনন্দ দেওয়া। রাসুল (সা.) পরিবারের সদস্যদের যেমন নতুন নতুন বিষয় শিক্ষা দিতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও করতেন।

তাদের বিভিন্নভাবে আনন্দ দিতেন।

আমাদের সমাজের ধারণা যে পরিবারকে সব সময় শাসনে রাখলেই তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সুপথে থাকবে। এটি ভুল ধারণা। পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে, তাদের মাঝে মাঝে আনন্দ দিতে হবে, তাহলে তারা যেকোনো বিষয়ে তাদের পরিবারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে সাহস পাবে।

এতে আমাদের পরিবারের অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। অনেক সময় পরিবারপ্রধানের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানরা অনেক কথাই তাঁর সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না। ফলে পরিবারপ্রধানের সঙ্গে তাদের অনেক বিষয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, যা একটি সংসারে কখনোই শান্তি ডেকে আনে না। এখানে রাসুল (সা.)-এর এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেখানে রাসুল (সা.) তাঁর পরিবারকে আনন্দ দিয়েছেন।

কন্যা ও জামাতাকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) মাঝে মাঝে কথার ছলে তাঁর কন্যা ও জামাতাকেও আনন্দ দিয়েছেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলী (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখো তো সে কোথায়।

সেই ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) সেখানে গেলেন। তখন আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তার শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠো, হে আবু তুরাব! ওঠো, হে আবু তুরাব! (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)

উপরোক্ত হাদিসে রাসুল (সা.) তাঁর মেয়েকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বলেছিলেন, ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’ আবার আলী (রা.)-কে ধুলাবালিতে শুয়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ বলার উদ্দেশ্যও ছিল আনন্দ দেওয়া।

স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরও আনন্দে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি তাঁদের আনন্দ নষ্ট হয় এমন কাজ করতে অপছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলা করত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩০)

এমনকি রাসুল (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭৮)

নাতি-নাতনিদের আনন্দ দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ইশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) সিজদা করলে হাসান-হুসাইন লাফ দিয়ে তাঁর পিঠে উঠত। রাসুল (সা.) সিজদা থেকে ওঠার সময় তাদের হাত দিয়ে নামিয়ে দিতেন। তিনি আবার সিজদা করলে তারাও আবার পিঠে উঠত। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৮৭৬)

অন্যান্য হাদিসে রাসুল (সা.) স্বীয় নাতনি উমামা বিনতে আবুল আসকেও আনন্দ দিয়েছেন বলে জানা যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য
হাদিসের কথা

শাসকদের জন্য মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
শাসকদের জন্য মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ

নীতিবান শাসকদের জন্য ইহকাল ও পরকালে সুসংবাদ রয়েছে। তাদের মাধ্যমে পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ সুফল ভোগ করে। পাশাপাশি ন্যায়-ইনসাফের কারণে তাদরে জন্য আসমান ও জমিনের অসংখ্য সৃষ্টি কল্যাণের দোয়া করতে থাকেন। হাদিস শরিফে এসেছে,

وَعَن عِياضِ بن حِمارٍ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُأهلُ الجَنَّةِ ثَلاَثَةٌ : ذُو سُلطَانٍ مُقْسِطٌ مُوَفَّقٌ وَرَجُلٌ رَحيمٌ رَقِيقُ القَلْبِ لكُلِّ ذي قُرْبَى ومُسْلِمٍ وعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيالٍ رواه مسلم

অর্থ : ইয়াজ বিন হিমার (রা.) বলেছেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জান্নাতিরা তিন ধরনের হবেন।

এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক, যাকে ভালো কাজ করার সামর্থ্য দেওয়া হয়েছে। দুই. ওই ব্যক্তি যেসব আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিমদের প্রতি দয়ালু ও বিনম্র-হৃদয়ের অধিকারী। তিন. ওই ব্যক্তি যে অনেক সন্তানের পিতা হওয়ার পরও হারাম ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৬৫)

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ