বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা এক ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া জনগণের ঘাড় থেকে বাড়তি করের লাগাম টেনে ধরা, মানুষের মন থেকে করের ভয় দূর করে কিভাবে কর আহরণ বাড়ানো যায়, তা নিয়েও কাজ করতে চায় দলটি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বিএনপি এসব পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘এক ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে মির্জা ফখরুল লিখেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান বা চাকরির ব্যবস্থা করবে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)/মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রার ০.৪৫ শতাংশ থেকে জিডিপির ২.৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। ২০৩৪ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা এক ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে বিএনপি।
জনগণের ঘাড় থেকে বাড়তি করের লাগাম টেনে ধরা, মানুষের মন থেকে করের ভয় দূর করে কিভাবে কর আহরণ বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়েও কাজ করতে চায় বিএনপি।
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইকে জনপ্রিয় করতে বিএনপি ১১টি রেগুলেটরি পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এর মধ্যে আটটি প্রস্তাবের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। সেগুলো হলো—বিডাকে কার্যকর করা, ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট বিধির আধুনিকীকরণ, বিনিয়োগকারীদের জন্য ২৪দ্ধ৭ (দিনে ২৪ ঘণ্টা ও সপ্তাহে সাত দিন) সেবা চালু করা, স্বয়ংক্রিয় মুনাফা প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা, স্থানীয়ভাবে দক্ষ জনশক্তির ব্যবস্থা করা, বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানবসম্পদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রকৃত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ও আওতা বৃদ্ধি।
সরকার গঠন করতে পারলে দেশের মানবসম্পদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া, প্রকৃত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ও আওতা বাড়ানোর জন্য বিএনপি অতীতের চেয়েও ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে চায় বলে জানান মির্জা ফখরুল। পোস্টে তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে এক শুভেচ্ছাবার্তায় তিনটি বিষয় বলেছেন। এগুলো হলো—ঐক্যই ভবিষ্যৎ জাতীয় উন্নয়নের সোপান, এফডিআই আকৃষ্ট করতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার আইন করেছিল এবং খালেদা জিয়ার সরকারগুলোর বিনিয়োগবান্ধব নীতি ছিল।
বিনিয়োগকারীদের সব সুবিধা দেওয়া হবে : খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর জন্য বিডায় একজন করে ক্যাপ্টেন নিয়োগ দেওয়া হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বনানীর সারিনা হোটেলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের আমীর খসরু এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে যত ধরনের সংস্কার হয়েছে তার প্রায় সব কটিই বিএনপির করা। আগামী দিনের যে অর্থনীতি হবে, সেটা মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা আগেভাগেই করেছি। আমাদের ভিশন ২০৩০-এ এটার প্রতিফলন ঘটেছে। ৩১ দফার সংস্কারের মধ্যেও তার প্রতিফলন ঘটেছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা বাংলাদেশে আসা বিনিয়োগকারীদের বলছি আমরা কী কী পরিবর্তন আনব। বিনিয়োগকারীরা যে বাধা-বিপত্তির মধ্যে পড়ে, সেটা যাতে না পড়ে তার জন্য আমরা সব কিছু সহজ করার মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন আনতে চাই। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা...। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি মুক্ত অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই। তারা (বিনিয়োগকারী) আসার পর এয়ারপোর্ট থেকে আনা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ করা, উৎপাদনে যাওয়া পর্যন্ত এবং উৎপাদনের পরবর্তী সময়ে তাদের সব সুযোগ-সুবিধা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য আমাদের পরিকল্পনা সব কিছু খুলে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারী আসার পর তার প্রজেক্টটা শুরু করার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তরে লাইসেন্সিং ও অনুমতির বিষয় আছে; আমরা এর জন্য বিডায় ইনভেস্টমেন্ট ক্যাপ্টেন বলে অনেক ক্যাপ্টেন দেব। প্রত্যেক ইনভেস্টরের জন্য একজন ক্যাপ্টেন থাকবে। বিনিয়োগকারীর পুরো প্রজেক্ট এই ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে থাকবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীকে কোনো অফিস বা মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে না। ক্যাপ্টেনকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে, যেমন—লাইসেন্স এক সপ্তাহের মধ্যে, ভিসা অনুমতি এক সপ্তাহের মধ্যে ইত্যাদি।’
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, তাজভীরুল ইসলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হুমায়ুন কবির, মাহাদি আমিন এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক সহপরামর্শ কমিটির সদস্য ইসরাফিল চৌধুরী খসরু।