বিসিএসের জট খুলছে না। সর্বশেষ পরিস্থিতি হলো—চার বিসিএসের জটে আটকা পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। একটি বিসিএস শেষ হতেই তিন থেকে চার বছর সময় লাগছে। চাকরিপ্রার্থীরা তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিসিএসের জট খুলছে না। সর্বশেষ পরিস্থিতি হলো—চার বিসিএসের জটে আটকা পড়েছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। একটি বিসিএস শেষ হতেই তিন থেকে চার বছর সময় লাগছে। চাকরিপ্রার্থীরা তাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ৪৪, ৪৫, ৪৬ ও ৪৭তম বিসিএস প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই ডাক্তার নিয়োগের জন্য ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা রয়েছে।
কাজের চাপ বেশি উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের এত এত জট, সেটা খোলা কঠিন। তবে আমরা প্রত্যেক বিসিএসের জন্য পৃথক রোডম্যাপ করেছি। কম সময়ে প্রত্যেকটি বিসিএস শেষ করতে কিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। চেষ্টা করছি দ্রুত সম্ভব ভাইভা শেষ করার। আমাদের প্রত্যেক সদস্য তাঁর নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান পদ্ধতিতে একটি বিসিএসের খাতা দেখতে ছয় মাস এমনকি এর চেয়েও বেশি সময় লাগছে। এর বাইরে পরীক্ষার নানা প্রক্রিয়ায় লিখিত পরীক্ষা ও খাতা দেখা শেষ হতে বছরখানেক সময় লাগে। একটি খাতা তিনজন পরীক্ষকের কাছে যায়। দিনে মাত্র ১৮০ জন পরীক্ষার্থীর ভাইভা নেওয়া সম্ভব হয়। শুক্র-শনিবার বন্ধ থাকে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ভাইভা শেষ করতেও দীর্ঘ সময় লাগে। এতে বিসিএসে জট লেগে যাচ্ছে। পাওয়া তথ্য অনুসারে, এরই মধ্যে ৪৭তম বিসিএস থেকে ভাইভার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০-তে আনা হয়েছে। আগামীতে শনিবারও ভাইভা নেওয়া হবে। ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো ইন্টেলেকচুয়াল পার্ট রাখা যায় কি না তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
জানা গেছে, ৪৫তম বিসিএসের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের খাতা পরীক্ষামূলকভাবে পিএসসিতে বসেই দেখা হয়। এই প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষক নির্দিষ্ট একটি প্রশ্নের উত্তর দেখেছেন। এতে খুব কম সময়ে এই দুই বিষয়ের খাতা দেখা শেষ হয়। আগামীতে পিএসসি কার্যালয়ে বসেই সব বিষয়ের খাতা দেখারও পরিকল্পনা রয়েছে।
জানা যায়, ৪৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১১ হাজার ৭৩২ জন। তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ২০২১ সালের নভেম্বরে এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের ২৭ মে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। এতে মোট দুই লাখ ৭৬ হাজার ৭৬০ জন প্রার্থী অংশ নেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১৫ হাজার ৭০৮ জন পাস করেন।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। গত বছরের ৬ জুন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। লিখিত পরীক্ষা এ বছরের ২৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই বিসিএসের খাতা বর্তমানে তৃতীয় পরীক্ষক দেখছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিএসসির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, তৃতীয় পরীক্ষকের তালিকা করাই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষক খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এসব খাতা দেখার কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। তবে কবেনাগাদ শেষ হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। গত বছরের ৯ মে এই বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে ১০ হাজার ৬৩৮ প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। কিন্তু গত সরকারের পতনের পর সম্ভাব্য বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এরই মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে আরো ১০ হাজার ৭৫৯ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আগের ও বর্তমানের মিলে মোট ২১ হাজার ৩৯৭ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাক পেয়েছেন। আগামী ৮ মে থেকে তাঁদের লিখিত পরীক্ষা শুরুর কথা।
৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের নভেম্বরে। তবে সময় বাড়িয়ে এই বিসিএসে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার এবং ২০১টি নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তাকিন আহমেদ আশিক বলেন, ‘৪৪তম বিসিএসের ভাইভা শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর। ৬ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও অর্ধেক প্রার্থীর ভাইভা শেষ হয়নি। যে গতিতে পিএসসি এগোচ্ছে, তাতে আরো অনেক সময় লাগবে ভাইভা শেষ করতে। এর মধ্যে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা রয়েছে। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রার্থী ৪৬-এর লিখিত দেবেন। তাঁরা মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন, না কি লিখিত পরীক্ষার? ফলে সব মিলিয়ে বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’
সম্পর্কিত খবর
খুলনার খালিশপুরের সাজিদ (২০) গত সোমবার যোগ দিয়েছিলেন খুলনা শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলে। সেই বিক্ষোভ থেকেই কিছু সুযোগসন্ধানী লোক খুলনা শহরে বাটার শোরুমে প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে। এরপর লুটপাট চালায়। সেই লুটপাটকারীদের মধ্যে ছিলেন সাজিদও।
পুলিশ সাজিদের মতো আরো অনেকের কাছেই জানতে চেয়েছিল, বাটা কোন দেশের প্রতিষ্ঠান। তাঁরা কেউই জানাতে পারেননি। তাহলে কেন তাঁরা হামলা ও লুটপাট করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, অনেকেই লুটপাট করেছে, এ কারণে তাঁরাও লুটপাটে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনার সময় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে জড়িত আরো অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অন্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা জানায়, বাটা ইসরায়েলি পণ্য কি না তারা তা জানে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার পর আশপাশের এলাকায় কিছু জুতা পড়ে ছিল, সেগুলো শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে থানায় জমা দেয়। আর যেগুলো লুট হয়েছে সেগুলো আমরা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত পাঁচ জোড়া জুতা উদ্ধার করা গেছে।
সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ সদস্যরা জানান, গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য রয়েছেন খালিশপুরের বাসিন্দা মো. সাইদ তালুকদার (১৮), খান জাহানআলী থানার বাড়ৈপাড়ার মৃত আনন্দ দাসের ছেলে সবুজ দাস ওরফে মো. আবদুল্লাহ (২৬), খালিশপুরের রাজ শিকদার (২১), মো. আশরাফ হোসেন (২৬) এবং সোনাডাঙ্গার মো. লাল মিয়া (৫২)।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় ৭২ জন গ্রেপ্তার : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় ১০টি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যের বরাতে প্রেস সচিব জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনায় ৩৩ জন, সিলেটে ১৯ জন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, গাজীপুরে চারজন, নারায়ণগঞ্জে চারজন, কুমিল্লায় তিনজন এবং কক্সবাজারে চারজন রয়েছেন। এসব ঘটনা সংক্রান্তে এখন পর্যন্ত মোট ১০টি মামলা করা হয়েছে।
খুলনা থেকে কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন জানান, কেএফসি, ডমিনোস পিত্জা ও বাটা শোরুমে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। তিন মামলায় মোট আসামির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তবে আসামিরা সবাই অজ্ঞাতপরিচয়। এ ঘটনায় প্রথম দিন ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করার পর আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তার হলো ৩৬ জন।
টেলিভিশন সিরিজ ফ্যান্টাসি ড্রামা ‘গেম অব থ্রোনস’ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে ডায়ার উলফকে। এবার জিন প্রযুক্তিবিদ্যায় (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর করে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বছর পরে পৃথিবীতে ফিরে এলো নেকড়ের এই প্রজাতি, আদতে যা বিলুপ্ত একটি বিশেষ প্রজাতির সাদা নেকড়ে, যার বিজ্ঞানসম্মত নাম অ্যায়োনোসিয়ন ডায়ারাস।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসভিত্তিক ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ নামের একটি বায়োটেক সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বিশ্বের প্রথম বিলুপ্ত প্রাণী পুনরুদ্ধারের (ডি-এক্সটিংকশন) কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। সফলভাবে পরীক্ষাগারে তিনটি ডায়ার উলফ ছানার জন্ম হয়েছে।
ফরিদপুর সদরের বাখুণ্ডা শরিফ জুট মিলের সামনে গত মঙ্গলবার সকালে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে খাদে পড়ে যায় যাত্রীবাহী বাস। তাতে বাবা-ছেলেসহ প্রাণ হারান সাতজন। পরে যাচাই করতে গিয়ে বিআরটিএ ফরিদপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা দেখতে পান, বাসের ফিটনেস সনদের মেয়াদ গত ৫ মার্চ শেষ হয়েছে। বিআরটিএ ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, হাইডেক্স পরিবহনের এই বাসের ফিটনেস ছিল না।
নিরাপদ ঈদ যাত্রার জন্য ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল রোধে যৌথ অভিযান শুরু করা হয়েছিল গত ২২ মার্চ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর হিসাবে গত ১২ মার্চ পর্যন্ত দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি ছিল ছয় লাখ ১১ হাজার ১৪১টি। তবে অভিযান চালানোর পরও এ ধরনের অনুপযোগী গাড়ি বাড়ছেই।
গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে রাজধানীতে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের ফিটনেস নিশ্চিত করা না হলে বিআরটিএর বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ বলে সতর্ক করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।
বিআরটিএ ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ফিটনেস শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক মো. রুহুল আমীন গত সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে ফিটনেসহীন গাড়ি আটক করে ডাম্পিংয়েও পাঠানো হয়। ২০২৩ সাল থেকে খেলাপি মালিকদের নিয়মিত চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। তিনি স্বীকার করেন, ঢাকায়ও ফিটনেসহীন গাড়ি বাড়ছে।
‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর ২৫ ধারা অনুযায়ী, বিআরটিএ থেকে মোটরযানের ফিটনেস সনদ নেওয়ার বিধান রয়েছে।
বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দফায় দফায় কর মওকুফের পরও মালিকরা গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করছেন না। বারবার অভিযান চালানোর পরও এসব গাড়ির মালিকরা কৌশলে গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়ির জন্য সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যান্য কারণের মধ্যে ছিল ৬৬ হাজার ৬৬১টি অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন) গাড়ি। এখনও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এটি। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ফিটনেসহীন গাড়ি। বাস ও ট্রাকের মতো ভারী গাড়ির ফিটনেস তুলনামূলকভাবে কম। গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ভারী গাড়ি, বাস ও ট্টাকের সংশ্লিষ্টতা ছিল ৪৩.৪ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয় ৪৪.৫ শতাংশ। এখন তা আরো বেড়েছে।
বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকরা জানান, কোনো গাড়ি সড়কে চলাচলের উপযোগী কি না, তা যাচাই করার জন্য গাড়ির ৩২টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হয়। সব বিষয় খালি চোখে ধরা পড়ে না। মিরপুর ছাড়া বাকি অন্য সব সার্কেলে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা হয় চোখে দেখে। চোখে শুধু গাড়ির বডি, চেসিস নম্বর, ইঞ্জিনের অবস্থা, হেডলাইট ও লুকিং গ্লাস এ ধরনের ছয়-সাতটি অবস্থা দেখে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা যান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করতে ১৯৯৪ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০০৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট পাঁচটি সেমি অটোমেটিক (আধা-স্বয়ংক্রিয়) ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) বা যানবাহন পরীক্ষণকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত শুধু বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ে এ কেন্দ্র চালু হয়।
ঈদ মৌসুমে ৩১৬ দুর্ঘটনা
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঈদুল ফিতরের আগে-পরে দেশের বিভিন্ন সড়কে ৩১৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩২২ জন নিহত হয়েছেন। প্রতিবারের মতো দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ফিটনেসহীন গাড়ির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা অবাধে চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোডসাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; সড়কে মিডিয়ামে রোড ডিভাইডার না থাকা, অন্ধবাঁকে গাছপালায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা—উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন ও বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটছে।