<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মেগাপ্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্তে তোড়জোড় শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা ও বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতির তিন মামলা নতুন করে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আদালত থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আরো ছয় মামলা পুনরায় চালুর বিষয়ে কমিশনের আইন অনুবিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই ফ্রিগেট (যুদ্ধজাহাজ) ক্রয়ে দুর্নীতি মামলা, মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্নীতি মামলা, নাইকো দুর্নীতি মামলা, ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্নীতি মামলা, বেপজায় পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির মামলা ও মিগ যুদ্ধবিমান ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার পুনরায় তদন্ত চালু করা হবে। এর বাইরে আট প্রকল্প থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে গতকাল মঙ্গলবার দুদক থেকে তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সব অভিযোগেরই অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। কমিশন থেকে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলাসহ চারটি এবং অন্য যেসব মামলায় শেখ হাসিনা আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, সেগুলো পুনরায় তদন্তের প্রক্রিয়া কী হতে পারে সে বিষয়ে কমিশনের আইন অনুবিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার মামলার নতুন করে তদন্ত : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা সম্পৃক্ত পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলা এবং বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতির তিন মামলা নতুন করে তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। দুর্নীতির </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ষড়যন্ত্রের সন্দেহে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় তদন্ত শেষে কমিশন মামলাটি থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আগের মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট একনেক সদস্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এই তিনটি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হলে মামলাগুলো কমিশনে হস্তান্তর করা হয়। তিনটি মামলার একটিতে সাতজন, একটিতে আটজন এবং আরেকটিতে ১২ জনকে আসামি করা হয়। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের (একনেক) তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়ে মামলা তিনটি হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো প্রকল্পের পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, ভবন নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি ও কমকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় বৃদ্ধি। ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট বিচারপতি সুলতান হোসেন খানের কমিশন এই মামলাটিতে চার্জশিট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট আবেদন করেন। ২০১০ সালের ৪ মার্চ চার্জশিট দাখিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, মামলা তিনটি অসৎ উদ্দেশ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে (হাসিনা) হেয় প্রতিপন্ন করতে দায়ের করা হয়েছিল। মামলাগুলোতে মাওলানা ভাসানীর নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি, অবৈধভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রের ৫২ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরো ৬ মামলার তদন্ত শুরু প্রক্রিয়াধীন : আদালত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুর্নীতির পুরনো আরো ছয়টি মামলা নতুন করে তদন্ত শুরু করা হবে। মামলাগুলোর মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিদেশি প্রতিষ্ঠান নাইকোকে তিনটি গ্যাস ফিল্ড থেকে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আটটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের দুর্নীতির অভিযোগে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সময় ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর মিগ-২৯ বিমান ক্রয় দুর্নীতি মামলাটি করা হয়। মামলায় শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নীতিমালা লঙ্ঘন করে রাশিয়া থেকে ১৬টি মিগ-২৯ বিমান কেনার চুক্তি হয়। এর মধ্যে আটটি সরবরাহ করা হয় এবং এর মূল্য হিসেবে ১২ কোটি ৯০ লাখ ইউএস ডলার বা তৎকালীন মুদ্রামানে ৭০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। ১৬টির মধ্যে আটটি সরবরাহ না হওয়ায় সরকারের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর রমনা থানায় মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্নীতি মামলা করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো। ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলায় চার্জশিটও দেওয়া হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের ১৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতাকে কাজ দেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্নীতি মামলাটি করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৮ প্রকল্পের নথি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি : ১৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা-রেহানার পরিবারের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা এবং বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, বেপজাসহ আটটি প্রকল্প থেকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট ও পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। পরদিন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্ব পাঁচ সদস্যের টিম গঠন করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগও অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযোগ অনুসন্ধানে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আটটি প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুদক সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে। গত ১৭ আগস্ট প্রকাশিত গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাট্রম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়, যাতে মধ্যস্থতা করেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার, প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। এতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাট্রম। নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৯ সালে প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামের একটি ভুয়া কম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তাঁর মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামের একটি কম্পানি রয়েছে তাঁদের। এই কম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন শেখ হাসিনা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিষয়ে একটি প্রাথমিক তদন্ত করে। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বনাম রিজভী আহমেদ মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম আসে। এফবিআইয়ের তদন্তে জয়ের গুরুতর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি উন্মোচিত হয়। একই সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধেরও প্রমাণ পেয়েছে।</span></span></span></span></p>