টিসিবির লাইনে মানুষের চাহিদা ও চাপ বাড়ছে

  • দেশের ৬৪ জেলায় ৪১০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি
  • আগে ট্রাকে ২০০ জন মানুষের পণ্য থাকলেও এখন থাকছে ৪০০ জনের
  • ৬৩ লাখ পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডে পণ্য দেওয়া হচ্ছে
সজীব আহমেদ
সজীব আহমেদ
শেয়ার
টিসিবির লাইনে মানুষের চাহিদা ও চাপ বাড়ছে
একটু কম দামে পণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাক ঘিরে প্রতিদিনই মানুষের ভিড় বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্যতেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বর্তমানে সংস্থাটি স্থানের সংখ্যা ও পণ্যের পরিমাণ দুটিই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়েছে। তবে দ্বিগুণ পণ্য বিতরণ করেও টিসিবির লাইনে পণ্য কিনতে আসা মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না সংস্থাটি। প্রতিদিনই ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে অনেক মানুষ।

টিসিবির লাইনে মানুষের চাহিদা ও চাপ বাড়ছেটিসিবির কর্মকর্তারা জানান, আগে টিসিবি বিভাগীয় শহরে ৬০টি, ঢাকা সিটিতে ৫০টি, চট্টগ্রাম সিটিতে ২০টি মিলিয়ে ১৩০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করত। বর্তমানে দেশের ৬৪ জেলাতেই টিসিবির ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আগে প্রতি ট্রাকে পণ্য সরবরাহ করা হতো ২০০ জনের জন্য। চলতি মার্চ থেকে প্রতি ট্রাকে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে ৪০০ ক্রেতার জন্য।

সব মিলিয়ে সারা দেশে এখন টিসিবি ৪১০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে। এ ছাড়া এর বাইরে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৬৩ লাখ পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দিচ্ছে টিসিবি। এর পরও সুলভ মূল্যে পণ্য কিনতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না টিসিবি। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর খালি হাতেই ফিরছে অনেকে।

জানা গেছে, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য দরিদ্র, এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও ট্রাকের লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে। বাজার থেকে সয়াবিন তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর না কিনে টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়াচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য কিনে কিছু টাকা সাশ্রয় করা। কিন্তু এই লাইন ক্রমে লম্বা হচ্ছে। নির্ধারিত স্থানে টিসিবির ট্রাক আসার তিন-চার ঘণ্টা আগে থেকেই মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে।

উদ্দেশ্য সাশ্রয়ী দামে এসব পণ্য কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে অনেককে।

বর্তমানে টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, এক কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারেন। প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিদ্যমান বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৪০০ টাকা কমে এসব পণ্য কিনতে পারে ক্রেতারা। তাই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন পড়ে।

গত রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরা বিটিভি সেন্টারের সামনে শতাধিক মানুষকে টিসিবির ট্রাক থেকে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য কেনার আশায় জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু তখনো পর্যন্ত টিসিবির ট্রাকটি পণ্য নিয়ে আসেনি। অনেকে সকাল ৯টা থেকে সেখানে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিল। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটের দিকে যখন টিসিবির ট্রাক আসে তখন মুহূর্তের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির মাধ্যমে নারী-পুরুষ দুটি আলাদা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজনকে দৌড়ে এসে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। 

ট্রাকের মাধ্যমে সেখানে পণ্য বিক্রির দায়িত্বে ছিল টিসিবির ডিলার মেসার্স ফয়সাল জেনারেল স্টোর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়কর্মী রুহুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে ট্রাকে ২০০ জন মানুষের জন্য পণ্য দেওয়া হলেও এখন ৪০০ জনের জন্য দেওয়া হয়। এখন তেল ৮০০ লিটার, চিনি ৪০০ কেজি, ডাল ৮০০ কেজি, ছোলা ৪০০ কেজি ও খেজুর ২০০ কেজি দেওয়া হচ্ছে। পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকের লাইনে মানুষের উপস্থিতিও আগের তুলনায় বেড়েছে। একই পরিবারের তিন-চার জন করে লাইনে দাঁড়ায়, তারা এখান থেকে পণ্য কিনে দোকানে কিছুটা লাভে বিক্রি করে দেয়। এসব চক্রের কারণে স্বল্প আয়ের অনেকে পণ্য না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। 

রামপুরা এলাকার গৃহিণী সালেহা খাতুন কালের কণ্ঠকে জানান, গত সপ্তাহে একদিন দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও তিনি পণ্য না পেয়ে ফিরে যান, যার কারণে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য রবিবার সকাল ৯টার দিকে সেখানে আসেন। এখান থেকে পণ্য কিনলে কিছু টাকা বেঁচে যায়, যার কারণে কষ্ট হলেও সকাল সকাল চলে এসেছেন।

টিসিবির ট্রাকে পণ্যের ওজন কম দেওয়ার অভিযোগ করেছেন রামপুরার আব্দুর রাজ্জাক। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, কিছুটা কম দামে পণ্য কেনার আশায় মানুষজন ট্রাকের সামনে ভিড় করে। কিন্তু বিক্রয়কর্মীরা প্রতি কেজিতে ডাল, চিনি ও ছোলা ৫০ গ্রাম করে কম দেন। দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি ও এক কেজি ছোলাতেই প্রায় ২৫০ গ্রামের মতো ওজন কম দিচ্ছেন বলেও তিনি জানান। একই কথা জানান রিকশাচালক সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য পণ্যের মতো ৫০০ গ্রাম খেজুরে ৫০ গ্রামের মতো ওজন কম দেয় টিসিবির ডিলাররা।

একই দিনে রাজধানীর আফতাবনগর মেইন গেট ও পল্টনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ট্রাক সেলের সামনেও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে ৯.২৪ শতাংশে নেমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতি এখনো নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ের অনেক ওপরে। মানুষের প্রকৃত আয় বাড়ছে না। এ কারণে নিয়মিত টিসিবির ট্রাকের সামনে সুলভে পণ্য কিনতে আসা মানুষের ভিড় বাড়ছে। পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়েও অপেক্ষমাণ মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না টিসিবি।

দ্বিগুণ পণ্য বিতরণের বিষয়ে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ৬৩ লাখ ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে দেশে ৬৪ জেলায় ৪১০টি ট্রাক সেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা আমাদের সামর্থ্যের সবটুকু চেষ্টা করছি, যেন কেউ খালি হাতে ফিরে না যায়। টেন্ডার-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত পণ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, যাতে পণ্য সরবরাহে কোনো ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ

দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
দুই দশকে অপসারিত হলেন দুই বিচারপতি

অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গত মঙ্গলবার তাঁকে অপসারণ করেন। পরে বুধবার আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ৬ দফা অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিচারপতি খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের পদ থেকে অপসারণ করেছেন।

২০১৮ সালের ৩১ মে খিজির হায়াতকে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০২০ সালের ৩০ মে তিনি স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিলেন। গত বছরের ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্টের যে বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন, সেই বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক ছিলেন খিজির হায়াত। কোটা পুনর্বহালের পূর্ণাঙ্গ রায়টি তিনি লিখেছিলেন।

এই রায়ের পরই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলন গণ-আন্দোলনে রূপ নিলে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।

খিজির হায়াতের অপসারণের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তের ভিত্তিতেই অপসারণ করা হয়েছে। আরো ছয় বিচারপতির বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে হাইকোর্টের সদ্য সাবেক বিচারপতি খিজির হায়াতকে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

দুই দশকে দুই বিচারপতির অপসারণ : নিকট অতীতে দুজন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ৯ জন বিচারপতি পদত্যাগ করলেও গত দুই দশকে অপসারণের ঘটনা এটি দ্বিতীয়। ২০০৩ সালের অক্টোবরে আইনজীবীদের এক সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তত্কালীন সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। শাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে জামিন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসের অভিযোগ ছিল। পরে এই অভিযোগ তদন্ত করেন তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।

তদন্ত শেষে কাউন্সিল শাহিদুর রহমানকে অপসারণের সুপারিশ করে তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রতিবেদন দেয়।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পূর্বাপর : সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত ও অপসারণসংক্রান্ত সাংবিধানিক ফোরাম হচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ষোড়শ সংশোধনী এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংবিধান থেকে বাদ দেয়। ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদকে। ওই বছর ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় সংশোধনীর গেজেট। পরে সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০১৭ সালের ৮ মে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়, চলে ১১ দিন। শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ এবং হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে ৩ জুলাই রায় দেন আপিল বিভাগ। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট আপিল বিভাগের ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ পেলে ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করে। এরপর বিভিন্ন সময় এই আবেদন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এলেও রাষ্ট্রপক্ষ ও রিটকারী পক্ষের আবেদনে শুনানি পিছিয়ে যায়।

 

মন্তব্য

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

শেয়ার
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে ছিল মেঘলা আকাশ। দুপুরের দিকে কোথাও কোথাও ঝরেছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তোপখানা রোড থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
মন্তব্য

গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
শেয়ার
গাজীপুরে চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ, বন্ধ তিনটি
বেতন-বোনাসের দাবিতে গতকাল গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।

গাজীপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছেন চার কারখানার শ্রমিকরা। এর মধ্যে মহানগরীর কোনাবাড়ীর জরুন এলাকার তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ কারখানাগুলো হলো স্বাধীন গার্মেন্টস, স্বাধীন ডায়িং ও স্বাধীন প্রিন্টিং। সকালে শ্রমিকরা কারখানার গেটে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে মূল ফটকের সামনেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

অন্যদিকে ঈদের ছুটি বৃদ্ধির দাবিতে গতকাল হোতাপাড়ায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে সদর উপজেলার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা।

শ্রমিকরা জানান, কয়েক দিন ধরেই বার্ষিক ছুটির ভাতা, ঈদ বোনাস ও চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো সমাধান না দিয়ে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কারখানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা কিছুদিন ধরে কয়েকটি দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান না করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে।

অন্যদিকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুর সদরের হোতাপাড়া এলাকায় সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মনিপুর এলাকার ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং কারখানার শ্রমিকরা। দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পুলিশ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। জানা গেছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটি ১০ দিন ঘোষণা করেছে ইউটা কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শ্রমিকরা ১০ দিনের পরিবর্তে ১২ দিন ছুটির দাবি জানান।

৫ কর্মকর্তাকে মারধর, আটক ৪ : বেতনবৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ঈদ বোনাস ও ঈদের ছুটি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ রওশন সড়ক এলাকার শফি প্রসেসিং গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছেন। এ সময় তাঁরা কারখানার জিএমসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধর করেন।

এ ঘটনায় এক নারীসহ চার শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

 

মন্তব্য
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে দেবপ্রিয়

সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকার যা বলে বাস্তবতার সঙ্গে তার ফারাক থাকে

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্দেশে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা সাম্প্রতিক দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকার যে কথা বলে, তার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য রয়ে যায়। এই পার্থক্যটার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, যে মানুষগুলো গণতন্ত্রের অভাবের সময় বিপন্ন ছিল, সেই বিপন্নতা এখনো দূর হলো না।

বৃহস্পতিবার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দপ্তর, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫ : পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি শীর্ষক একটি সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলানগরে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই সংলাপে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, সরকার বদল হওয়া আর শাসকের পরিবর্তন হওয়া এক বিষয় নয়। একটা আরেকটার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁরা সংখ্যায় বড় না, কিন্তু তাঁদের কণ্ঠস্বর অনেক বড়।

তাঁদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সংস্কারের বিষয়ে হতাশা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিষয়ে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পরিতাপের ব্যাপার হলো যতগুলো কমিশন গঠন হয়েছে সেখানে পার্বত্য, বা সমতলের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন? তার মধ্যে নারী প্রতিনিধি ঠিকমতো হয়েছেন। সবচেয়ে সুবোধ সরকারও তা করতে পারছে না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বা একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। অর্থের সমস্যা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেককে হেনস্তার শিকার করা হয়েছে এবং কথা বলা যখন খুবই দুর্যোগ ছিল, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একা না পারি সবাই মিলে করব।

সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় অভ্যুত্থানে আমরা বৈষম্যবিরোধী কথা বলি।

কিন্তু আমরা কি আসলেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি? কোনো বৈষম্যের কথা বলি, আবার কোনো বৈষম্যের কথা চেপে যাই।

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হুমা খান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে আরো কৌশলী হতে হবে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আসলে কারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, আজকের আলোচনা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব চ্যালেঞ্জ ও ঘাটতির কথা উঠে এসেছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকার পরিকল্পনা সাজাবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি এবং ইউএনডিপির বাংলাদেশ কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি  স্টেফান লিলার বক্তব্য দেন।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ