নতুনবাজার মূল সড়কে ময়লার দুর্গন্ধে দমবন্ধ অবস্থা

  • আধুনিক ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী সমাধান দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা
  • ময়লা সংগ্রহকারীরা বিক্রয়যোগ্য বস্তু আলাদা করতে গিয়ে বেশি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে
  • এসটিএসের ময়লার পানি গড়িয়ে আসছে রাস্তায়
  • ইউ টার্ন থাকায় যানজটে আটকাদের ভোগান্তি
জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
নতুনবাজার মূল সড়কে ময়লার দুর্গন্ধে দমবন্ধ অবস্থা
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) কারণে ময়লার তীব্র গন্ধে চলাচলকারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাজধানীর প্রগতি সরণিতে। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক প্রগতি সরণি। এই সড়কের বাড্ডা থেকে কুড়িলের দিকে যেতে নতুনবাজার পার হলেই নাকে ভেসে আসে তীব্র দুর্গন্ধ আর পড়তে হয় যানজটে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের (এসটিএস) কারণে প্রতিদিনই তীব্র গন্ধ ও যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। আশপাশের বাসিন্দারা বলছে, দিনের একটি বড় সময়জুড়ে এখানে ময়লা জমিয়ে রাখা হয় এবং গাড়িতে তোলার সময় তা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে এমন স্থাপনা তৈরি করে নগরবাসীর স্বাভাবিক চলাচল কঠিন করে তোলা হয়েছে।

দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন, এটি জনভোগান্তির কারণ জানার পরও কিছু করা যাচ্ছে না। এই সমস্যা পুরো রাজধানীর। তাই প্রয়োজন স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ।

স্থান সংকুলান, পরিবেশ এবং কার্যকারিতাএ তিনটি বিষয় বিবেচনা করে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে যেতে হবে। বর্তমানে ডিএনসিসি এলাকার ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬ ওয়ার্ডে ৫৩টি এসটিএস থাকলেও ১৮ ওয়ার্ডে কোনো এসটিএস নেই।

দেখা যায়, সড়কটির পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এসটিএস নির্দিষ্ট জায়গা হলেও এর পরিধি অনেক।

প্রায় আধাকিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলে ময়লা সরানোর কার্যক্রম। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সংগ্রহ করা ময়লা ভ্যানে করে আনার পর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লার ভ্যান দাঁড় করিয়ে বিক্রিযোগ্য তথা দামি বস্তু আলাদা করতে গিয়ে ময়লার দুর্গন্ধ আরো বেশি ছড়াতে থাকে। এতে করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা রোগীদের একদিকে দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে, অন্যদিকে যানজটে গন্তব্যে যেতেও বিলম্ব হচ্ছে। এসটিএসের ভেতরের ময়লা পানি গড়িয়ে রাস্তার পাশে চলে আসছে। তাই সেটি ঘেঁষে কোনো গাড়ি যেতে চায় না।
সবাই ডান পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং ইউ টার্ন থাকায় তৈরি হচ্ছে যানজট। আর যানজটে আটকে থেকে সহ্য করতে হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।

কথা হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী রনক ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ময়লা টেনে যে টাকা পাই তাতে চলে না। তাই বাসাবাড়ির ময়লা আনার পর মূল্যবান কিছু থাকলে সেগুলো বিক্রি করি। প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা বাড়তি আয় করতে পারি।

বারিধারার বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, দুপুর হলেই বাইরে থাকা দায় হয়ে যায়। প্রচণ্ড দুর্গন্ধে জানালা খুলেও থাকা যায় না। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এক হাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে নতুনবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এত বেশি দুর্গন্ধ। নাক না ধরে উপায় নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে এক হাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউ টার্ন নিতে হলো।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এই এসটিএস সাময়িকভাবে স্থাপন করা হয়েছে, তবে বাসিন্দাদের ভোগান্তি কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, যদি ঢাকা শহরের এসটিএসের নির্দিষ্টতা ঠিক করতে না পারি, তবে নাগরিকদের জন্য এটি দুর্ভোগ। আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট কম্পেক্টর বা আন্ডারগ্রাউন্ড এসটিএস করতে হবে। এটা ছাড়া কোনো সমাধান নেই। এসটিএসের জায়গা পাওয়া নিয়ে জটিলতা থাকে। জায়গা পেলেও পরে বাসিন্দারাই অভিযোগ করে সরানোর জন্য। তাহলে ময়লাগুলো কোথায় নিয়ে রাখা হবে? প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি করে এসটিএস থাকার কথা থাকলেও সেটি নেই। কোনো ওয়ার্ডে দুটি আছে, আবার কোনোটিতে একটিও নেই।

তিনি বলেন, আমরা স্থায়ী সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। ফিনল্যান্ডের হাবাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। আধুনিক একটি এসটিএস তৈরিতে খরচ হবে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সহায়তা করতে চায়। সিটি করপোরেশন থেকে আমরা জানিয়েছি, আমাদের প্রায়োরিটি থাকবে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট কম্পেক্টর। এটার জন্যও আমাদের জায়গা লাগবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডের এই ব্যবস্থাপনায় ভূগর্ভস্থ বর্জ্য কম্পেক্টর/সংগ্রাহকের ভূগর্ভস্থ সাইলো (জায়গা) থাকবে, কনটেইনার, কনটেইনার বহনকারী ট্রাক এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা লাগবে। তাতেই মিলবে স্থায়ী সমাধান। আমরা নিজেদের অর্থায়নেও এটি করার চেষ্টা করছি। আগে একটি উদ্যোগ ছিল, সেটি নানা কারণে স্লো হয়ে গিয়েছিল। সেটি আবার আমরা ধরেছি। ঢাকা শহরে আর কোনো অপশন নেই। এটি করতেই হবে।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, আধুনিক ব্যবস্থাপনায় এমন একটি কনটেইনার থাকবে যেটি ময়লা ধারণ করবে এবং সেটি দিয়েই সরানো যাবে। অল্প জায়গায় রাখা যাবে বেশি ময়লা। কনটেইনার থাকবে মাটির নিচে, গাড়ি আসবে, পুরনো কনটেইনার নিয়ে নতুন একটি রেখে যাবে।

পরিকল্পনাহীনভাবে এমন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছেএমন মত নগর পরিকল্পনাবিদদেরও। তাঁদের মতে, আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জনগণের মতামত ও পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় রাখা জরুরি।

জানা যায়, ২০১৬ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিএস স্থাপনের উদ্যোগ নেন ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। পরবর্তী মেয়ররা এটির বাস্তবায়নে যাওয়ায় আগের অব্যবস্থাপনার কিছুটা পরিবর্তন ঘটলেও হয়নি স্থায়ী সমাধান। নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিএস স্থাপন একটি টেম্পোরারি সমাধান। বর্জ্যকে সম্পদে রূপ দিতে হলে সিটি করপোরেশনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। গৃহস্থালি থেকে বর্জ্য সরাসরি অপসারণ করতে হবে ভাগাড়ে। আধুনিক তথা নতুন স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চট্টগ্রামের ডিসি হিল

মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চ ভাঙচুর, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে না, আটক ৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
শেয়ার
মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চ ভাঙচুর, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে না, আটক ৬

চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে মঞ্চ এবং আশপাশের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। এ সময় তারা শেখ হাসিনার ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এখানে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।

এবার অনুষ্ঠানটি ৪৭ বছরে পা রাখতে চলেছে। ভাঙচুরের পর ডিসি হিলে এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিষদ। প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে পরিষদের অভিযোগ।

ভাঙচুরের আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে ২০টি সংগঠনের একটি তালিকা দেওয়া হয় আয়োজকদের।

ফ্যাসিস্টের দোসর অভিযোগ এনে ওই সংগঠনগুলোকে মঞ্চে তুলতে নিষেধ করে দেয় প্রশাসন। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে সম্মিলিত বাংলা নববর্ষ উদযাপন মঞ্চ নামে একটি সংগঠন মানববন্ধন করে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার চিহ্নিত দোসরদের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠান উদযাপন আয়োজনের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মূলত জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), বিএনপির সহযোগী সংগঠন মিলে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে এই সংগঠনগুলোকে নববর্ষের অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

যারা এসব অভিযোগ তুলেছেন, তাঁরাই সন্ধ্যায় ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে আয়োজকদের অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শী সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ আলী বলেন, সন্ধ্যার দিকে ৪০ জনের মতো একটি দল মিছিল নিয়ে আসে। তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় হাসিনার দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান, হাসিনার ফাঁসি চাই ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

এক পর্যায়ে মঞ্চে উঠে ভাঙচুর শুরু করে। এই দলের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে থাকা কয়েকজনও ছিলেন। তাঁরা চেয়ার-টেবিল সব ভাঙচুর করেন ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। শিল্পীদের জন্য তৈরি কক্ষসহ সব কিছু ভাঙচুর করেন। ১৫ মিনিট পর তাঁরা চলে যান।

পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, একটি মিছিল এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভাঙচুর করে চলে গেছে। বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ বলেন, আমরা সোমবার (আজ) আর পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করব না। যারা বিভিন্ন সংগঠনের নামে অভিযোগ দিয়েছে, তারাই এই ভাঙচুর করেছে। এভাবে আর অনুষ্ঠান করা যায় না। প্রশাসন শুরু থেকে আমাদের অনুমতি দিতে গড়িমসি করেছে। অসহযোগিতা করেছে। এ কারণে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসাসের সদস্যসচিব ও নববর্ষ উদযাপন মঞ্চের সংগঠক মামুনুর রশিদ (শিপন) বলেন, তারা হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। যারা ডিসি হিলে অনুষ্ঠান করছে, তারা দোসর। আমরা মানববন্ধন করে ডিসিকে স্মারকলিপি দিয়েছি। ভাঙচুরের বিষয়ে অবগত নই।

জানতে চাইলে রাত পৌনে ৯টার দিকে নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

 

মন্তব্য

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা

শেয়ার
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীর দোয়েল চত্বরে হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত জাকির খানের কারামুক্তি শহরজুড়ে শোডাউন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত জাকির খানের কারামুক্তি শহরজুড়ে শোডাউন
জাকির খান

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আলোচিত-সমালোচিত সেই জাকির খান কারামুক্তি লাভ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, সকালে তিনি নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি ১৯ মার্চ কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে অবস্থান করছিলেন।

জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজিব মণ্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, দীর্ঘদিন পর জাকির খান মুক্ত বাতাসে ফিরেছেন।

তাঁকে পেয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা অনেক বেশি আনন্দিত।

মুক্তি পেয়ে জাকির খান বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফা দাবি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করবই। আমার শরীরের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর ঋণ কোনো দিন শোধ হবে না।

শেখ হাসিনার সরকারের সময় আমরা যে ধরনের হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন তার শিকার না হয় সে জন্য আমরা সব ধরনের ভূমিকা রাখব।

এদিকে জাকির খানের কারামুক্তি উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নারায়ণগঞ্জ কারাগারের সামনে ভিড় করে। সাউন্ড বক্স, শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে কারাগারের সামনে জড়ো হয় তারা। সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নেতাকর্মীদের মধ্যে হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায়।

এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। জাকির খানের অনুসারীরা শত শত মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে মহড়া দেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সোহেল রানা বলেন, সকাল থেকেই একজনের কারামুক্তিকে ঘিরে সড়কে মানুষের প্রচুর চাপ ছিল। পরে তারা বিশাল শোভাযাত্রা করে।

এর ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে ঘণ্টাখানেক পরই লিংক রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চারটি হত্যা মামলাসহ মোট ৩৩টি মামলার আসামি ছিলেন জাকির খান। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-১১-এর একটি অভিযানে ঢাকার একটি আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন মামলায় জামিন পান তিনি। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি সাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে তিনি এবং মামলার অন্য আসামিরা খালাস পান।

 

মন্তব্য

শাহজাদপুরে আ. লীগ সমর্থক ও ফুলবাড়িয়ায় বাবা-ছেলেকে হত্যা

    পৃথক স্থানে আরো ছয় খুন
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
শাহজাদপুরে আ. লীগ সমর্থক ও ফুলবাড়িয়ায় বাবা-ছেলেকে হত্যা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে খাসজমি দখল নিয়ে যুবদল নেতার লোকজনের হামলায় আওয়ামী লীগের এক সমর্থক নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সালিসে না আসায় বাবা ও ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

নেত্রকোনার মদনে ছাগলে ধান খাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, নরসিংদীতে একজন, বরিশালের গৌরনদীতে একজন, বগুড়ার ধুনটে একজন ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক গৃহবধূ খুনের ঘটনা ঘটেছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত

শাহজাদপুর : নিহত মদিন মোল্লা (৫৫) বড়ধুনাইল গ্রামের মৃত সগির মোল্লার ছেলে ও আওয়ামী লীগের জাফর মোল্লা পক্ষের লোক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড়ধুনাইল গ্রামে একটি সরকারি খাসজমি আওয়ামী লীগ সমর্থক জাফর মোল্লার দখলে ছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যুবদল নেতা আব্দুর রাজ্জাক সেখের পক্ষ ওই জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে জাফর ও রাজ্জাকপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

এর জের ধরে গত শুক্রবার রাতে রাজ্জাকপক্ষের লোকজন জাফরপক্ষের বাড়িঘর ঘেরাও করে রাখে। এতে ভয়ে ওই সব বাড়ির ছেলেরা পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় শনিবার সকালে রাজ্জাকপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রতিপক্ষের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় অন্তত ১০টি বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এতে বাধা দিতে গেলে অন্তত ১৫ জন নারী-পুরুষ হামলায় আহত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল সকালেও রাজ্জাকের পক্ষের লোকজন ওই সব বসতবাড়িতে হামলা করে। এতে বাধা দিতে গেলে জাফরের পক্ষের মদিন মোল্লাকে তাঁর নিজ বাড়ির সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় আহত হন অন্তত পাঁচজন।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

শাহজাদপুর থানার ওসি আসলাম আলী বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই হামলাকারীরা পালিয়েছে। মদিন মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ফুলবাড়িয়া : ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামে গতকাল মাদক ব্যবসা ও চুরির অভিযোগে সালিস বৈঠক বসানো হয়। সেই সালিস থেকে শত শত মানুষ গিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে আ. গফুর (৪০) ও তাঁর ছেলে মেহেদী হাসানকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে গফুরের বাড়িসংলগ্ন নাওগাঁও হোসেনীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার সামনে গ্রামের শত শত মানুষের সালিস বসে। সালিসকালে আ. গফুর ছেলেসহ উপস্থিত না হয়ে নিজ ঘরে রামদা নিয়ে বসে ছিলেন। এ সময় সালিস থেকে লোকজন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। পরে শত শত মানুষ রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে গিয়ে হারুন অর রশিদ নামের একজনের বাসা, দোকানঘর ও একটি মাজার ভাঙচুর করে।

বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কাজী আখতারুল আলম। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো. রোকনুজ্জামান বলেন, শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিস বসেছিল। সালিস থেকে গিয়ে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

মদন : নেত্রকোনার মদনে ছাগলে ধান খাওয়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইমাম হোসেন (৫৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নারীসহ অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আখাশ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, আখাশ্রী গ্রামের কৃষক সোনাতন মিয়ার একটি বোরো ক্ষেতের ধান খাচ্ছিল একই গ্রামের আকবর মিয়ার ছাগল। এ নিয়ে গতকাল বিকেলে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। এ পর্যায়ে তারা দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মো. জামাল মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাতে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাঁটিহাতা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নরসিংদী : নরসিংদীর শিবপুরে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে (৩৫) গলা টিপে হত্যার পর স্বামী তারেক মিয়া (৪০) পালিয়ে গেছেন। পুলিশ জানায়, রবিবার সকালে বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে খাদিজার মরদেহ দেখতে পায়।

গৌরনদী : বরিশালের গৌরনদীর সিংগা গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় দেলোয়ার হোসেন ফকির (৫৫) খুন হয়েছেন।

ধুনট : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাবার ঘর থেকে গতকাল প্রাপ্তি বালা (১১) নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পঞ্চম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ঝুলন্ত অবস্থায় ঝর্না (২৪) নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী মো. শারফিনকে (৩৪) আটক করেছে পুলিশ। ঝর্নাকে নির্যাতনের পর  হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ