সবাই ডান পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং ইউ টার্ন থাকায় তৈরি হচ্ছে যানজট। আর যানজটে আটকে থেকে সহ্য করতে হচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ।
কথা হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী রনক ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ময়লা টেনে যে টাকা পাই তাতে চলে না। তাই বাসাবাড়ির ময়লা আনার পর মূল্যবান কিছু থাকলে সেগুলো বিক্রি করি। প্রতিদিন ন্যূনতম ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা বাড়তি আয় করতে পারি।’
বারিধারার বাসিন্দা সালমা আক্তার বলেন, ‘দুপুর হলেই বাইরে থাকা দায় হয়ে যায়। প্রচণ্ড দুর্গন্ধে জানালা খুলেও থাকা যায় না। শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’ এক হাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে নতুনবাজারের দিকে যাচ্ছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এত বেশি দুর্গন্ধ। নাক না ধরে উপায় নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে এক হাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ইউ টার্ন নিতে হলো।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা জানান, এই এসটিএস সাময়িকভাবে স্থাপন করা হয়েছে, তবে বাসিন্দাদের ভোগান্তি কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, ‘যদি ঢাকা শহরের এসটিএসের নির্দিষ্টতা ঠিক করতে না পারি, তবে নাগরিকদের জন্য এটি দুর্ভোগ। আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট কম্পেক্টর বা আন্ডারগ্রাউন্ড এসটিএস করতে হবে। এটা ছাড়া কোনো সমাধান নেই। এসটিএসের জায়গা পাওয়া নিয়ে জটিলতা থাকে। জায়গা পেলেও পরে বাসিন্দারাই অভিযোগ করে সরানোর জন্য। তাহলে ময়লাগুলো কোথায় নিয়ে রাখা হবে? প্রতিটি ওয়ার্ডে দুটি করে এসটিএস থাকার কথা থাকলেও সেটি নেই। কোনো ওয়ার্ডে দুটি আছে, আবার কোনোটিতে একটিও নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্থায়ী সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। ফিনল্যান্ডের হাবাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি। আধুনিক একটি এসটিএস তৈরিতে খরচ হবে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সহায়তা করতে চায়। সিটি করপোরেশন থেকে আমরা জানিয়েছি, আমাদের প্রায়োরিটি থাকবে আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট কম্পেক্টর। এটার জন্যও আমাদের জায়গা লাগবে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ডের এই ব্যবস্থাপনায় ভূগর্ভস্থ বর্জ্য কম্পেক্টর/সংগ্রাহকের ভূগর্ভস্থ সাইলো (জায়গা) থাকবে, কনটেইনার, কনটেইনার বহনকারী ট্রাক এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা লাগবে। তাতেই মিলবে স্থায়ী সমাধান। আমরা নিজেদের অর্থায়নেও এটি করার চেষ্টা করছি। আগে একটি উদ্যোগ ছিল, সেটি নানা কারণে স্লো হয়ে গিয়েছিল। সেটি আবার আমরা ধরেছি। ঢাকা শহরে আর কোনো অপশন নেই। এটি করতেই হবে।’
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, আধুনিক ব্যবস্থাপনায় এমন একটি কনটেইনার থাকবে যেটি ময়লা ধারণ করবে এবং সেটি দিয়েই সরানো যাবে। অল্প জায়গায় রাখা যাবে বেশি ময়লা। কনটেইনার থাকবে মাটির নিচে, গাড়ি আসবে, পুরনো কনটেইনার নিয়ে নতুন একটি রেখে যাবে।
পরিকল্পনাহীনভাবে এমন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে জনজীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে—এমন মত নগর পরিকল্পনাবিদদেরও। তাঁদের মতে, আবর্জনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জনগণের মতামত ও পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় রাখা জরুরি।
জানা যায়, ২০১৬ সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিএস স্থাপনের উদ্যোগ নেন ডিএনসিসির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। পরবর্তী মেয়ররা এটির বাস্তবায়নে যাওয়ায় আগের অব্যবস্থাপনার কিছুটা পরিবর্তন ঘটলেও হয়নি স্থায়ী সমাধান। নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসটিএস স্থাপন একটি টেম্পোরারি সমাধান। বর্জ্যকে সম্পদে রূপ দিতে হলে সিটি করপোরেশনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। গৃহস্থালি থেকে বর্জ্য সরাসরি অপসারণ করতে হবে ভাগাড়ে। আধুনিক তথা নতুন স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে।’