<p>জাতির সুখ-সমৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে সব যুদ্ধের অবসান কামনা করে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারা দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ধর্মীয় আচার, প্রার্থনা ও আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। গির্জার পাশাপাশি রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো মজবুত করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।</p> <p>গতকাল বঙ্গভবনে বড়দিনের অনুষ্ঠানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া শুভেচ্ছা বাণীতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাইকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, যিশুখ্রিস্ট ছিলেন সত্যান্ব্বেষী এবং আলোর দিশারি। রাষ্ট্রপতি যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে শুভ বড়দিনের একটি কেক কাটেন এবং খ্রিস্ট ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস রান্ডেল, বাংলাদেশ ক্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ফাদার আলবার্ট রোজারিও এবং রেভারেস্ট মার্থা দাস, সংশ্লিষ্ট সচিবরা, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বড়দিন উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। সকাল ৭টায় বড়দিনের প্রথম প্রার্থনা ও সকাল ৯টায় খ্রিস্টযোগ (বিশেষ প্রার্থনা) শুরু হয়। প্রার্থনায় যোগ দিতে গির্জায় গির্জায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ঢল নামে। চার্চে সমবেত হন যীশুভক্তরা। সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও মানবজাতির সুখ-শান্তি ও সত্য-ন্যায়ের পথে আহ্বানের বাণীতে শুরু হয় প্রার্থনা।</p> <p>এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন গির্জা ও উপাসনালয়ে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড় দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মঙ্গলবাণী পাঠের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি এবং জগতের সব মানুষের জন্য মঙ্গল কামনা করা হয়। বড় হোটেলগুলোও বড়দিনে আলাদা আয়োজন করেছে। শিশুদের জন্য রাখা ছিল নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে ‘সান্তাক্লজ’ আসেন নানা উপহার ও চমক নিয়ে।</p> <p>বড়দিন ঘিরে গতকাল উৎসবের আমেজ ছিল সারা দেশে। রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল গির্জা, তেজগাঁওয়ের হলি রোজারিও চার্চে সাকল গান, মহাখালীর লুর্দের রানির গির্জা, লক্ষ্মীবাজারের ক্রুশ ধর্মপল্লী, মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জা, মিরপুর-২-এর মিরপুর ক্যাথলিক গির্জা, কাফরুলের সেন্ট লরেন্স চার্চগুলোতে সকালে প্রার্থনা শুরু হয়। এতে যোগ দেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী নানা বয়সী মানুষ। প্রার্থনায় যিশুখ্রিস্টের আদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে সবার জন্য শান্তি ও আনন্দের বার্তা দেন তাঁরা।</p> <p>প্রার্থনা শেষে যিশুভক্ত ক্রেইজা বলেন, ‘ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে এই দিন উদযাপন করছি। যিশুখ্রিস্ট সমাজে শান্তি ও ক্ষমা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই বিষয়টি সবাইকে ধারণ করতে হবে। একজনের প্রতি আরেকজনের ক্ষমাশীল হতে হবে। ত্রাণকর্তা যেন আমাদের পাপ থেকে মুক্তি দেন এটাই আমাদের চাওয়া।’</p>