<p>জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। ওই ঘোষণায় দ্বীপের পরিবেশ ঝুঁকির মুখে পড়ে—এমন সব পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি পর্যটকদের ভ্রমণেও নিষিদ্ধ রয়েছে অলিভ রিডলি প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার সৈকত এলাকা পর্যন্ত। তার পরও দ্বীপে অবৈধভাবে রিসোর্ট নির্মাণ থেমে নেই। প্রতিনিয়ত টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছে নির্মাণসামগ্রী।</p> <p>টানা এক সপ্তাহ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অবস্থানে পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলায় এক বিরল অভিজ্ঞতা নিয়ে গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারে ফিরেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আওসাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এত বিপুলসংখ্যক রিসোর্ট নির্মাণ কিভাবে হলো? দ্বীপ ঘুরে এসব অবৈধ রিসোর্টের তালিকা করে পাওয়া গেছে ২১০টি। তন্মধ্যে ২২টি দোতলাসহ বহুতল পাকা ভবনও রয়েছে। অন্যগুলোর দেয়াল পাকা হলেও ছাউনি টিন বা শণের। সেই সঙ্গে রয়েছে গাছ ও বাঁশের তৈরি ইকো রিসোর্ট।</p> <p>পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আওসাফুল ইসলাম দ্বীপের অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন, দ্বীপে রিসোর্ট নির্মাণ করা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও টেকনাফ থেকে নির্মাণসামগ্রী কিভাবে সেখানে সরবরাহ হয়।</p> <p>পরিদর্শক জানান, টেকনাফ থেকে যেকোনো পণ্যসামগ্রী নৌযানে করে দ্বীপে সরবরাহ করার আগে বিজিবি সদস্যরা চেক করেন। আবার দ্বীপের জেটিঘাটে নৌযান থেকে পণ্যসামগ্রী নামানোর সময় কোস্ট গার্ড সদস্যরা তদারকি করে থাকেন। এ রকম তদারকির মধ্যেও দ্বীপে অবৈধ নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ কিভাবে হয় তার কূলকিনারা খুঁজে পাননি তিনি। পরিদর্শক জানান, সরকার দ্বীপটির পরিবেশ রক্ষায় অত্যধিক গুরুত্বারোপ করার কারণে দায়দায়িত্বও বেড়েছে। এ জন্যই দ্বীপের এত বিপুলসংখ্যক অবৈধ রিসোর্ট নির্মাণের বিষয়টির খোঁজাখুঁজি চলছে।</p> <p>শীত মৌসুমের ডিসেম্বর-জানুয়ারি দৈনিক মাত্র দুই হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগসহ অন্যান্য সময় পর্যটকদের দ্বীপে অবস্থান করা নিষেধ রয়েছে। তার পরও সেখানে রিসোর্ট নির্মাণ থেমে নেই। অন্তত ২০-২৫টি রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলছে লুকোচুরি খেলার মতো করেই। ইসিএ ঘোষিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সমুদ্রতীরের সেই সংকটাপন্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই এক শ্রেণির পর্যটন ব্যবসায়ী রিসোর্ট নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন। রাতের বেলায় সৈকতের বালুচরে নির্বিঘ্নে যাতে সামুদ্রিক কাছিম উঠে বালুচরে ডিম পাড়তে পারে সে জন্য বৈদ্যুতিক আলো জ্বালানোর বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা-ও মানা হচ্ছে না। প্রাকৃতিক ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে দ্বীপের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত সাগরপারের কেয়াগাছগুলো কেটে রিসোর্ট নির্মাণ অবাধে চলছে। সব মিলে দ্বীপটির পরিবেশ রক্ষায় এত ঢাকঢোল পেটানো হলেও বাস্তবে কারো মাথাব্যথা নেই।</p> <p>এসব বিষয়ে পরিবেশ পরিদর্শক আওসাফুল বলেন, ‘কাছিম যখন নানা উপদ্রবের কারণে ডিম দিতে উঠতে পারছে না তখনই আমি অভিযান চালানো শুরু করি। একে একে সৈকতের রিসোর্টগুলোর বৈদ্যুতিক আলো বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছি। গত বৃহস্পতিবার চাঁদের বাড়ি নামের একটি রিসোর্টের ক্যান্ডল-লাইট ডিনার পার্টি বন্ধ করে দিয়েছি। একদিকে সামলালে আরেক দিকে শুরু করে দেয় এ ধরনের কাজ। তাই বড় ধরনের অভিযানসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মামলা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’</p>