সর্বোচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের কারণে অভিযোগ গঠনের পরও প্রায় তিন বছর ধরে আটকে আছে সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দুই মামলার বিচারকাজ। অথচ মামলা দুটি একসঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য দুই বছর আগে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের এই ঘটনায় অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়। আর শাহপরান থানা পুলিশের দায়ের করা চাঁদাবাজি ও ছিনতাই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয় ২০২২ সালের ১১ মে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুল লিটনের ভাষ্য, বিচারকাজে সর্বোচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ না থাকলেও হাইকোর্টে আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) কারণে মামলার বিচারকাজ এগোচ্ছে না।
যেখানে থমকে আছে বিচারকাজ : ঘটনার দুই মাস সাত দিন পর সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ওই দিন মহানগর দায়রা জজ আদালতে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলাটিরও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই অভিযোগপত্রেই প্রধান আসামি করা হয় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে।
ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আটজনের মধ্যে ছয়জন ধর্ষণে সরাসরি জড়িত, বাকিরা সহযোগিতা করেছে। সরাসরি জড়িতরা হলো সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া। আর রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়।
আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।
৩৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ৫১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। এ ছাড়া ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় সাইফুর ও মাহবুবুর রহমান রনিকে আসামি করে সেদিন আরেকটি অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
পরে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি অপহরণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সাক্ষীদের বিড়ম্বনার কথা বিবেচনা করে এবং দ্রুত বিচারের স্বার্থে বাদীপক্ষের আবেদনে দুটি মামলারই বিচারকাজ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে করার আদেশ দেন হাইকোর্ট।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির বিচারে আন্তরিক থাকলে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করার কথা না। এই আবেদন করে প্রকারান্তরে মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত করা হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য ছিল আসামিদের রক্ষা করা।’
সৈয়দ আকরাম আল সাহান মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক-দেড় বছর ধরে বাদী সংস্থার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার একপর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে বাদী জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম যোগাযোগ করে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং আপসরফা করার বিষয়ে চাপ দিচ্ছেন। তখন আমি বলেছিলাম, এই ঘটনার আপস হয় না। আপস করা যাবে না। সংস্থা তাকে আইনি সব সহযোগিতা দেবে। কিন্তু এসব আশ্বাস দেওয়ার পরও তিনি মোটা অঙ্কের (৮০ লাখ) টাকার বিনিময়ে আপস করেছেন বলে শুনেছি।’
সৈয়দ আকরাম আল সাহান আরো বলেন, গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করে ম্যাসেজ পাঠালে বাদী ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর জিডি করেন তিনি।
তবে সৈয়দ আকরাম আল সাহানের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার বাদী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেছেন, মামলার আইনজীবী পরিবর্তন করায় ওই সংস্থার (বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা) সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। আইনজীবী পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।