<p>‘এই ঘটি গরম, লাগবে ঘটি গরম ভাজা’ এই ছন্দোময় বাক্যগুলো বলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা বাজারের অলিগলিতে হলুদ ও খয়েরি রঙের বাহারি পোশাক পরে চিড়া দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ খাবার বিক্রি করেন ৬৫ বছর বয়সী মিরাজ শেখ। চোখে কালো সানগ্লাস, মাথায় কার্টুন টুপি। শরীরের পোশাকের ওপর থাকে বিভিন্ন রঙের লাইট। কোমরে  বাঁধা থাকে সাউন্ডবক্স। সাউন্ডবক্স চালিয়ে নেচে-গেয়ে ফেরি করে বিশেষ ধরনের এই চিড়া ভাজা বিক্রি করেন তিনি। ঘটিতে আগুন জ্বালানো থাকে। ফলে চিড়া সব সময় গরম ও টাটকা থাকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নেচে-গেয়ে তিনি যখন চিড়া ভাজা বিক্রি করেন, মানুষ আগ্রহী হয়ে তাঁর নাচ দেখতে আসে। দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তাঁর এই ব্যস্ততা।</p> <p>মিরাজ শেখ জানান, ভাঙ্গায় তিনি চার বছর পূর্বে এসেছিলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করেন ভাঙ্গা কলেজ পাড়ার একটি ভাড়া বাসায়। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাঁর পরিবার। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বেশিদূর লেখাপড়া করেনি। সে এখন পৈতৃক ভিটা দেখাশোনা করে এবং সামান্য যা কিছু জমি আছে তাতেই চাষাবাদ করে। তাঁর আদি নিবাস গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বনগ্রাম এলাকায়।</p> <p>তিনি আরো জানান, তাঁর ঘটি গরম ভাজার অনেক চাহিদা। যিনি একবার খেয়েছেন,  তাকে আবার খেতে হবে। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে তাঁর ভাজা বিক্রি শুরু হয়। মিরাজ বলেন, ‘প্রতিদিন তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। এর মধ্যে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা লাভ হয়। এই টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালাই এবং পরবর্তী দিনের ভাজা তৈরির জন্য উপকরণ কিনে থাকি।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘৩০ বছর ধরে ঘটি গরম ভাজা বিক্রি করছি। শুরু থেকে খাদ্যদ্রব্যের মান একটুও কমেনি। কিন্তু বর্তমানে বাজারদর অনেক বেশি। উপকরণগুলো কিনতে অনেক কষ্ট হয়। তার পরও অন্য পেশায় যেতে মন চায় না। এ পেশায় কষ্ট হলেও আমি মনের শান্তি খুঁজে পাই। যত দিন সুস্থ আছি, তত দিন এই ঘটি গরম ভাজা বিক্রি করব।’</p> <p> </p>