নাড়ির টানে বাড়ি যেতে উত্তরের ঈদ যাত্রায় এবার খুলছে ১৯০ কিলোমিটার চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক। ফলে দীর্ঘ আট বছর পর প্রথমবারের মতো টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা হয়ে রংপুর পর্যন্ত যাত্রীরা পাবেন চার লেনে চলাচলের সুবিধা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) ও দক্ষিণ এশীয় উপআঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রম (সাসেক-২) প্রকল্পসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আগামী ২০ মার্চের মধ্যে উত্তরের ১৬ জেলায় ঈদ যাত্রাকে নিরবচ্ছিন্ন করতে চার লেন চালু হবে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন সাসেক প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান।
সাসেক-২ কর্তৃপক্ষ ও সওজ বলছে, যদি যমুনা সেতুতে কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে তাহলে এবার উত্তরের ঈদ যাত্রা হবে স্বস্তিকর।
গেল ৬ মার্চ ও ৯ মার্চ ঈদ যাত্রায় সড়কের প্রস্তুতি নিয়ে দুই দফা সভাও করেছে মন্ত্রণালয়। সেখানে উঠে এসেছে সমস্যা ও তা সমাধানের একাধিক সুপারিশ। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমাধানে বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
উত্তরে চার লেন উন্মুক্ত হলেও একাধিক স্থানে তীব্র যানজট হতে পারে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পাশাপাশি লক্কড়ঝক্কড় বাস, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কের পাশের ভাসমান বাজার এবং নসিমন, করিমন, ইজি-বাইক চলাচলে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকছে এবারের ঈদ যাত্রায়।
সরেজমিনে সাসেক প্রকল্পের একাধিক এলাকাঘুরে দেখা যায়, ঈদকে সামনে রেখে কাজ চলছে তড়িৎ গতিতে। এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে কিছু কিছু এলাকার চার লেন।
সেই লেন দিয়ে চলছে গাড়িও। কথা হয় সড়ক নির্মাণ শ্রমিক ফজল আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সড়কের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এহন তো এই রাস্তা দিয়া রাইতে গাড়ি যায়। আরেক শ্রমিক আশরাফ জানান, এবার ঈদে কাজের চাপ বেশি, যাতে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়।’
দুই দিন আগে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম এসেছেন এনা ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার এ এইচ ইমন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন চালু হয়নি। তবে রাস্তার কাজ চলমান। তবে রাস্তাগুলো চলাচলযোগ্য। এখন কিছু কিছু সড়কে চার লেন দিয়ে গাড়ি চলছে। গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী ও যমুনা সেতুতে যানজট না হলে এবার উত্তরের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।’
কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা—এই রাস্তায় দীর্ঘ ১৫ বছর থেকে দূরপাল্লার গাড়ি চালান মো. হাবিব। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদে গত বছরও ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম আসতে সময় লাগত ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা। তার অন্যতম প্রধান কারণ চার লেন চালু না থাকা। এ বছর যদি চার লেন সড়ক চালু হয়, তাহলে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম আট ঘণ্টায় আসা যাবে।’ তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘যমুনা সেতুর টোল প্লাজায় যদি কোনো যানজট না থাকে তাহলে এবারের ঈদ যাত্রা হবে স্বস্তিদায়ক।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাসেক-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী ২০ তারিখের মধ্যে এলেঙ্গা থেকে যমুনা ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারের চার লেন খুলে দেওয়া হবে। এর ফলে রংপুর পর্যন্ত যাত্রীরা চার লেনের সুবিধা পাবেন। আশা রাখি যাত্রীদের দূরপাল্লার যাত্রায় তেমন কোনো ভোগান্তি হবে না। তবে এই চার লেনের পুরোপুরি সুবিধা পাওয়া যাবে যমুনা সেতুকে আরো সংস্কার করলে।’
ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘যমুনা যদি সেখানে গাড়ি নষ্ট হয় সেখানে গাড়িটা সরানো ছাড়া কাজ করা যায় না। গত বছর ঈদের চার দিনে ৫৩টি গাড়ি নষ্ট হয়েছিল। ব্রিজে যদি গাড়ি নষ্ট নয় তাহলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে।’
সভায় মহাসড়ক ও করিডর প্রস্তুত করার নির্দেশ : আন্ত মন্ত্রণালয়ের ওই সভাগুলোতে ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরে বিশেষ দৃষ্টি রাখবে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। ১৫ রমজানের মধ্যে এসব সড়কের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক, এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর পর্যন্ত সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে মহাসড়ক ও করিডর প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্বস্তির যাত্রায় মোবাইল কোর্ট : সূত্র বলছে, সড়ক নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে অনুষ্ঠিত আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় জেলা পুলিশ সুপার, সব জেলা প্রশাসক এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উপজেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি, জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটি এবং মেট্রোপলিটন সড়ক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এ ছাড়া বিআরটি, শ্রমিক ও মালিক সংগঠনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। এখানে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে—চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি দৌরাত্ম্য ঠেকাতে।
হাইওয়ে পুলিশের রংপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদ যাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করতে আমরা বদ্ধপরিকর। বিগত সময়ের মতো আমরা আমাদের নিরাপত্তাচৌকি দিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা দেব। রাতে দূরপাল্লার বাসে যাতে ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে সেদিকে আমাদের বিশেষ নজর থাকবে। এই অঞ্চলের সড়কগুলোর একাধিক স্থানে থাকবে স্থায়ী ও অস্থায়ী নিরাপত্তাচৌকি। পাশাপাশি বাসের যাত্রীদের নেওয়া হবে ভিডিও।’