কর্মব্যস্ত জীবনে গন্তব্যে পৌঁছতে মুসলমানদের রোজা রেখেই গাড়িতে যাতায়াত করতে হয়। তাদের অনেকেই বিকেলের মধ্যে নিজের বাসায় বা গন্তব্যে পৌঁছে পরিবার বা নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে ইফতারে মিলিত হয়। কিন্তু যাত্রীদের একটি অংশ গাড়িতে থাকতেই মাগরিবের আজান হয়ে যায়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারে না।
গাড়িতে থাকা সামান্য পানিতেই তাদের ইফতার সারতে হয়। গাড়িতে থাকা সেসব রোজাদারকে চার বছর ধরে বিনামূল্যে ইফতার খাওয়াচ্ছেন কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হরিশ্চর চৌরাস্তা এলাকার সামাদগঞ্জ জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ ও মুতাওয়াল্লি সামছুল আরেফীন শাহীন। তাঁর নিজের পরিবারের রান্না করা খাবার দিয়ে মসজিদে প্রতিদিন তিন শতাধিক বাসযাত্রীকে (মুসাফির) ইফতার করান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আসরের নামাজের পর মুতাওয়াল্লি সামছুল আরেফীন শাহীন বাড়ি থেকে ইফতারের বিভিন্ন ধরনের খাবার মসজিদে নিয়ে আসছেন।
মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন হিফজ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ইফতার প্রস্তুতে তাঁকে সহযোগিতা করছে। শিক্ষার্থীরা মসজিদের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ যাত্রীদের জন্য সারি সারি করে ইফতারির প্লেট সাজিয়েছে। নিচতলায় নারীদের নামাজের কক্ষে নারী যাত্রীদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্য ধর্মাবলম্বী বা অসুস্থতার কারণে যারা গাড়ি থেকে নামতে পারবে না, তাদের জন্য শতাধিক ইফতারির বক্স প্রস্তুত রাখা রয়েছে।
ইফতারির প্রতি প্লেটে থাকছে দুটি খেজুর, কোয়েলের দুটি সিদ্ধ ডিম, এক টুকরা তরমুজ, একটি আলুর চপ, একটি বেগুনির চপ, দুটি পেঁয়াজু, মুড়ি, ছোলা, গাজর ও শসা। তৃষ্ণা মেটাতে রয়েছে আধালিটার ঠাণ্ডা পানির বোতল ও এক গ্লাস শরবত।
ঢাকা-নোয়াখালী হিমালয় পরিবহনের চালক সুলতান আহমেদ বলেন, ‘লালমাই বাজার থেকে লাকসাম পর্যন্ত সড়কের পাশে গাড়ির যাত্রীদের খাওয়া ও ইফতারের জন্য ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। সামাদগঞ্জ মসজিদের সামনে বাস থামালে যাত্রীরা বিনামূল্যে ইফতার করতে পারেন এবং জামায়াতে নামাজ পড়ারও সুযোগ হয়।’
ইফতারের আয়োজক ও মসজিদের মুতাওয়াল্লি সামছুল আরেফীন শাহীন বলেন, ‘আমার দাদাসহ পূর্বপুরুষদের মাগফিরাত কামনায় চার বছর ধরে আমাদের পরিবারের উদ্যোগে মুসাফিরদের জন্য এই মসজিদে ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে।
’