রমজান মাসেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ঝিনাইদহের চালের বাজার। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে আকারভেদে সাত থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত। কয়েক মাসের ব্যবধানে দফায় দফায় চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছে। চালকল মালিকরা বলছেন, ধানসংকটে চালের দাম বেড়ে গেছে।
সেই সঙ্গে ধানের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চালকল মালিক ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করছেন। পরে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছেন তাঁরা।
জানা যায়, রমজানের আগে ঝিনাইদহের বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি।
তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়। কাজললতা ৬৪-৬৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকায়। সরু চাল মিনিকেট ৭০ থেকে এখন ৮০ টাকা। আর দেশি বাসমতী বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৪ টাকায়, যা আগে বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ৯২ টাকায়।
গতকাল রবিবার দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা, হামদহ ও ওয়াপদা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া কাজললতা ৭২, আটাশ ৭৪, মিনিকেট ৮০ ও বাসমতী চাল আকারভেদে ১০০ থেকে ১০৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শহরের নতুন হাটখোলা বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক আব্দুল খালেক বলেন, ‘গত মাসে যে চাল ৫০ টাকায় কিনতাম, তা এখন ৬০ টাকা কেজি করে কিনতে হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে চালের দাম বেড়েই যাচ্ছে। চাল কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কিভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না।’
আরেক চাল ক্রেতা রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি দামে চাল কিনলাম। ব্যবসায়ীরা তাঁদের খেয়ালখুশিমতো চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখন পর্যন্ত এদিকে নজর দিচ্ছেন না।’
নতুন হাটখোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আসাদুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করেই মিনিকেট, বাসমতীসহ সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মিলাররা। তারা সিন্ডিকেট করে যখন যা ইচ্ছা তা-ই করে।’
সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলাকার শুভ অ্যাগ্রো প্রগতি অটো রাইস মিলের মালিক তপন কুমার বলেন, ‘পরিবহন, শ্রমিক ও বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় চালে দাম বাড়েনি। এ ছাড়া হঠাৎ করে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই কয়েক প্রজাতির চালের দাম কেজিপ্রতি খুবই সামান্য বাড়ানো হয়েছে।’
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে অবৈধ মজুদদার ও সিন্ডিকেট নেই।’
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজান মাসের শুরু থেকেই আমরা কঠোরভাবে বাজার মনিটর করছি। সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুদদারদের সন্ধান পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’