বিয়ানীবাজার উপজেলা ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক ও ভূতাত্ত্বিক দিক দিয়ে এক ব্যতিক্রমী জনপদ। বিহানবেলা এই হাট বসত বলে এই স্থানের নামকরণ করা হয় বিহানীবাজার অর্থাৎ বিয়ানীবাজার। সেই জনপদ এখন বিরাণভূমি। ২৫১.২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় রয়েছে তিনটি নদী এবং একটি হাওর।
একসময় এই জনপদে ছিল গহিন জঙ্গল, টিলাবেষ্টিত ভূমি। সেই পরিবেশ এখন নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) তথ্য মতে, বিয়ানীবাজারে ২৭০টি ছোট-বড় টিলা ছিল। চার হাজার ২৫০টি পুকুর-দিঘি থেকে পাঁচ হাজার মেট্রিক টমনর বেশি মৎস্য আহরণ হতো।
কিন্তু এই উপজেলার সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন নেই। নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে, খাল-বিল অস্তিত্ব সংকটে। রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার বালু উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ায় নদীর সর্বনাশ হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের ভয়াবহতায় জনপদ ও কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। অনেক খালে গ্রামীণ পানির প্রবাহপথ ‘গোপাট’ প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। খনন না করার কারণে অনেক নদী নাব্যতা হারিয়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে এবং নদী দখলদারদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। নদীদূষণের মাত্রাও বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হাবীব আহমদ দত্ত চৌধুরী জানান, প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করে সর্বনাশ শুরু হয়েছে দুই দশক আগে থেকে। বনের যে আয়তন কাগজ-পত্রে দেখানো হয়, সত্যিকার অর্থে বিয়ানীবাজার উপজেলায় তার এক-তৃতীয়াংশও আর অবশিষ্ট নেই।
বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেছে বন্যপ্রাণী।
জানা যায়, এই অঞ্চলের পাহাড়-টিলার ওপর সবচেয়ে বড় দুর্যোগ নেমে আসে ৯০-এর দশক থেকে। আবাসস্থল নির্মাণে উজাড় করা শুরু হয় টিলা, ফসলি জমি। উপজেলায় মোট জমির পরিমাণ ৬২ হাজার ১২০ একর, আবাদযোগ্য জমি ৩৪ হাজার ৮৩৯ একর, অনাবাদি জমির পরিমাণ তিন হাজার ৩০০ একর, নিট ফসলাধীন জমি ৩৪ হাজার ৮৩৯ একর এবং খাসজমি ছিল ৪৬২০.১৪ একর। বর্তমানে সব হিসাব পাল্টে বেড়েছে অকৃষি আর অনাবাদি জমির পরিমাণ। জমিতে অপরিমিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে আমাদের পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান হেকিম বলেন, ‘আমরা অনাবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’