ক্রীড়া প্রতিবেদক : ‘হামজা ভাই অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ। তাঁকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগে খেলা একজন ফুটবলার এভাবে আমাদের সঙ্গে মিশে যাবেন, তা ভাবতেও পারিনি। অনুশীলনের পর ম্যাচেও সবাইকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন’, হামজা চৌধুরীকে নিয়ে এভাবে মুগ্ধতার কথা বলছিলেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা।
শুধু সতীর্থদেরই নয়, বাংলাদেশে পা রাখার পর থেকে সবাইকে মুগ্ধ করে চলেছেন হামজা। ১৭ মার্চ সিলেটে যখন হামজা পা রাখলেন, হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। এরপর হবিগঞ্জ ঘুরে, ঢাকার পর শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ম্যাচ খেলে ‘হৃদয়’ জিতে গতকাল হামজা ফিরে গেছেন ইংল্যান্ডে। তিনি যোগ দেবেন নিজের ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে।
ঢাকা ছাড়ার আগে বাফুফের দেওয়া ভিডিওতে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ভবিষ্যৎ বার্তাও দিয়ে গেছেন হামজা, ‘আমি বোঝাতে পারব না আমার কাছে এর অনুভূতিটা কেমন ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ, ইনশাআল্লাহ আমি জুনে আবার ফিরে আসব। আমার সুস্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করবেন। জুনে বড় দুটি ম্যাচের সময় আবার দেখা হবে।
’
জুনে আবারও বাংলাদেশে ফিরবেন হামজা চৌধুরী। সে সময় এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আরো একটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর। সেই ম্যাচ নিয়ে বড় আশার কথা গত মঙ্গলবার শিলংয়ের জওয়াহেরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন হামজা চৌধুরী। ভারতের বিপক্ষে সুযোগ নষ্টের মিছিলে নেমে জিততে না পারলেও ঘরের মাঠে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় তাঁর।
ভালো কিছু হবে বলেই বিশ্বাস এই তারকার।
সিঙ্গাপুরকে হারাতে পারলে মূল পর্বের পথ খুলে যেতে পারে বাংলাদেশের সামনে। আগামী ১০ জুন বাংলাদেশের মাটিতে হবে হামজার প্রথম ম্যাচ। জাতীয় স্টেডিয়ামে নাকি কিংস অ্যারেনায় হবে ম্যাচ, সেটা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বাফুফের চাওয়া জাতীয় স্টেডিয়াম। তবে এখানে সংস্কারকাজ চলমান এখনো। যদিও জুনের আগে মাঠ খেলার পুরোপুরি উপযুক্ত হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
শিলংয়ে অভিষেক হলেও স্বাগতিক সমর্থকদের হাতে গোনা কয়েকজন গ্যালারিতে বসে হামজাকে উপভোগ করতে পেয়েছে। ঢাকায় হতে যাওয়া সিঙ্গাপুর ম্যাচে দর্শকদের যে ঢল নামবে, তা অনুমেয়ই। দেশের বাইরে খেলা হওয়ায়ই হামজাকে নিয়ে যে উন্মাদনার জোয়ার দেখা গেছে, ঘরের মাঠে সেটা কেমন রূপ নিতে পারে সেই ছবি এখনই কল্পনায় এঁকে ফেলছে অনেকে।
গ্যালারিতে যে সমর্থকদের জায়গা দেওয়া যাবে না, সেটাও মনে করছে অনেকে। ভারতীয়দের অনেকেই যে দূর-দূরান্ত থেকে শিলংয়ে ছুটে এসেছিল ইংলিশ লিগে খেলা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বাংলাদেশের হামজার খেলা দেখতে। সেখানে লাল-সবুজের সমর্থকরা হাত ছোঁয়া দূরত্বে হামজাকে দেখার সুযোগ অবধারিতভাবেই লুফে নেবে। সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক মঞ্চেই ব্যস্ত থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
জুন-জুলাইয়ে মাঠে গড়াবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আয়োজক দেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জানা গেছে, ভারত ও শ্রীলঙ্কা আয়োজক হতে চায়। হামজা থাকায় এবার সাফের অন্যতম ফেভারিট হয়েই খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব জেতা হয়নি। হামজা থাকায় এবার সেই স্বপ্নের পালে হাওয়া দিয়েছে। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের সঙ্গে অন্যদেরও পারফর্ম করতে হবে। রাকিব হোসেন-শেখ মোরসালিনদের হতে হবে আরো নিখুঁত ফিনিশার।