এ ছাড়া মৃত ১৬ জন ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলের হেফাজতে থাকা ১৬০ জন মৃত ফিলিস্তিনির মরদেহ মুক্তি দেওয়া হবে।
হামাস কর্মকর্তা বলেন, ‘৪৫ দিনের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ আওতায় সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে এবং গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করবে। একই সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হবে, এই সহায়তা যেন শুধু বেসামরিক লোকদের কাছে পৌঁছয়। পাশাপাশি এই প্রস্তাবে গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশের ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে গত সপ্তাহান্তে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল কায়রোতে মিসরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তবে ইসরায়েল আলোচনায় দল পাঠিয়েছে কি না, তা প্রকাশ করেনি।
এদিকে মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে, যার মধ্যে খাদ্য সরবরাহও রয়েছে। সহায়তা সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, এই পদক্ষেপ গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার জন্য পরিস্থিতিকে চরমভাবে খারাপ করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চলমান আক্রমণ পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে।
ইসরায়েল বলেছে, হামাসকে জিম্মি মুক্তির জন্য চাপ দিতে এবং বিদ্যমান যুদ্ধবিরতির শর্ত পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে তারা গাজায় সহায়তা প্রবেশ বন্ধ ও সামরিক অভিযান চালিয়েছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, মার্চের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
হামাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সাত দিনের জন্য গাজার কিছু অংশ, যেমন দক্ষিণাঞ্চলের রাফা, উত্তরের কিছু এলাকা ও গাজা সিটির পূর্ব দিক থেকে সরে যাবে।
সিএনএনকে ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ইসরায়েলি প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, ‘গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ’ ও ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা’ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিন থেকে। তিনি বলেন, ‘৪৫ দিনের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছতে হবে।’ এরপর হামাসের হাতে থাকা বাকি জীবিত ও মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত দেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘যদি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে চুক্তি হয়, তবে নির্ধারিত শর্ত ও সময় অনুযায়ী তা বাড়ানো যাবে…আর যদি এই সময়ের মধ্যে কোনো চুক্তি না হয়, তবে নতুন জিম্মি-বন্দিমুক্তির বিনিময়ে মেয়াদ বাড়ানো হবে।’
হামাস কর্মকর্তার যে বিবরণ, তার কিছু অংশ ইসরায়েলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যায় বলে জানিয়েছে সিএনএন।
‘চুক্তির পথে অগ্রগতি হচ্ছে’
এর আগে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবে গাজা থেকে ১০ জন জিম্মি মুক্তির দাবি রয়েছে। সেই সঙ্গে আলেকজান্ডারকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুক্তির পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রস্তাব অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপে হামাসকে অন্য জিম্মিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর রবিবার জানায়, গাজায় জিম্মি ও যুদ্ধবিরতি বিষয়ক নতুন চুক্তির পথে ‘পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে’, যা জানানো হয় জিম্মি আইতান মোরের পরিবারের সঙ্গে আলাপের সময়। জিম্মি পরিবারের সংগঠন টিকভা ফোরাম এই কথোপকথন নিশ্চিত করে জানায়, নেতানিয়াহু মোর পরিবারকে ‘১০ জন জীবিত অপহৃত ব্যক্তির মুক্তিসংক্রান্ত আলোচনার অগ্রগতি’ সম্পর্কে জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতেও বলা হয়েছে, আলোচনাটি ১০ জন জিম্মি মুক্তির বিষয়ে। তবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংখ্যা নিশ্চিত করেনি।
সিএনএন হামাস কর্মকর্তার দেওয়া প্রস্তাবের আরো কিছু বিবরণ যাচাইয়ের চেষ্টা করছে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ মারদাবি রবিবার টেলিগ্রামে বলেন, হামাস যেকোনো প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে, যদি তা ‘আক্রমণ বন্ধ ও দখলদার বাহিনীর প্রত্যাহারের ভিত্তিতে’ হয়। তবে তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘খাদ্যের বিনিময়ে জিম্মি মুক্তি’র মতো খণ্ডিত প্রক্রিয়া হামাস মেনে নেবে না।
সিএনএন গত সপ্তাহে জানায়, মধ্যস্থতাকারীরা হতাশ, কারণ নেতানিয়াহু আলোচনায় ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্বকারী অভিজ্ঞ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা রন ডারমারকে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত আলোচনার গতি মন্থর করেছে এবং আগের যুদ্ধবিরতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করছে।