সেলাই করা খোলা মুখ

‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু...’

  • মোফাজ্জল করিম
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু...’

কবিগুরুর অমর বাণী দিয়েই আজকের লেখাটি শুরু করি : ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারেবারে/দয়াহীন সংসারে,/তারা বলে গেল ‘ক্ষমা করো সবে’ বলে গেল ভালোবাসো/অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো’...। এখনকার স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে এ ধরনের কালোত্তীর্ণ কাব্যকণিকা খুব একটা দেখা যায় না। আর পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সাহিত্যভুবনের আস্বাদ গ্রহণের ব্যাপারটা তো কবেই ফেসবুক, ইউটিউব আর মেসেঞ্জারের কল্যাণে শিকেয় উঠেছে। কিন্তু যে আমলে পড়ুয়ারা ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি’ দিয়ে... ‘বা বা ব্ল্যাক শিপ’ কিংবা ‘হাম্পটি-ডাম্পটি স্যাট অন অ্যা ওয়াল’ দিয়ে নয়—শিক্ষাজীবন শুরু করে কৈশোরে-যৌবনে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দ-জসীমউদ্দীনকে অস্থিমজ্জায় মিশিয়ে ফেলতেন, সেই আমলের পড়ুয়ারা পরিণত বয়সে এ কী আচরণ করছেন? এখন সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত দূতেরা যুগে যুগে কী বলে গেছেন তা শোনার কিংবা অনুধাবন করার ব্যাপারটাকে তাঁরা সেকেলে মনে করে রবীন্দ্রনাথকে গুডবাই এবং ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই নহে কিছু মহীয়ান’-এর ঘোষককে জাতীয় কবির সার্টিফিকেট দিয়ে, ‘অত মানুষ মানুষ করবেন না’ বলে ‘মসজিদেরই কাছে’ কবর দিয়ে খোদা হাফেয জানিয়ে দিয়েছেন।

এখন সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত দূত নয়, দিনদুপুরে কোন যমদূত চোখের পলকে কটা লাশ ফেলতে পারে, কোনো মানুষ নয়, মাস্তানরূপী অমানুষ হুকুম পেলেই প্রতিপক্ষকে শুইয়ে দিতে পারবে সেই সব তালেবরদের তত্ত্ব-তালাশ নিতেই তাঁরা বেশি আগ্রহী। কারণ তাঁরা মনে করেন এই ডিজিটাল যুগে রবীন্দ্র-নজরুল অচল দু’আনি। তার চেয়ে ল্যাং মারামারি থেকে শুরু করে ছুরি মারামারি, গলা কাটাকাটিতে যারা বিশারদ, তারাই তাদের মোক্ষলাভের জন্য দরকারি জীব। এখন তাঁরা কৈশোরে-যৌবনে পড়া ‘অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ নাশো’তে বিশ্বাসী নন, বরং ‘অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ’ ঢালো নীতির একনিষ্ঠ সেবক।

আমার কথাটা যদি বিশ্বাস না করেন তবে এই মুহূর্তে টিভি খুলুন, শুনুন আপনার-আমার নমস্য ব্যক্তিরা—যাদের কণ্ঠনিঃসৃত অনুপম বাণীর জন্য দেশের অগণিত মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা, চাতক পাখির বারিপিপাসা নিয়ে অপেক্ষায় থাকে—কী বলছেন। তাঁরা তাঁদের নীতি-আদর্শ-সংগঠন এবং প্রতিযোগিতামূলক তৈলমর্দন ইত্যাদি নিয়ে দুটো কথা বললে দশটা নেগেটিভ কথা বলেন প্রতিপক্ষ সম্বন্ধে। আর সেসব কথা তথ্যনির্ভর বা যুক্তিগ্রাহ্য কি না সেদিকে তাঁদের খেয়াল থাকে না। এ যেন ফিলিস্তিনি লক্ষ্যবস্তুর দিকে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ—এতে নারী-শিশু-বৃদ্ধ মরল, না যোদ্ধা মরল, তাতে কিছু যায় আসে না, ফিলিস্তিনি মরলেই হলো।

সম্পূর্ণ অসত্য অলীক বক্তব্য হলে কী হলো, একমাত্র উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, বিপক্ষকে জাতির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা। যেন ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’ (মেঘনাদবধ কাব্য : মাইকেল মধুসূদন)। আর এই বাক্যবাণ নিঃসরণে যে যত বড় চাপাবাজ, যার চোপার জোর যত বেশি তার কদরও যেন ‘বস্’দের কাছে তত বেশি। কিন্তু একটা বিষয় বক্তা বা ‘বস্’ ভেবে দেখছেন না। এসব বক্তব্যের চমক হয়তো তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু মতলবি হাততালি এবং অসচেতন নেতাকর্মীর বাহবালাভে সমর্থ হয়; কিন্তু দিনশেষে বা ‘ইন দ্যা লং রান’, এগুলো হয়তো বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে পারে, যখন এর ভিত্তিহীন অসত্য রূপ সাধারণ্যে প্রতিভাত হয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

আমি অবশ্য এতেও কাতর বোধ করি না। কোন বক্তব্যের কী লাভক্ষতি তা বক্তব্য প্রদানকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে, আমাদের মতো থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারদের এতে কিছু যায় আসে না। আমি দুশ্চিন্তিত বিষয়টির সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও অপসংস্কৃতির বিস্তার নিয়ে। পাড়া-মহল্লা বা রাস্তাঘাটের কটাই-মজর-আম্বর-জাবিদরা (টম ডিক অ্যান্ড হ্যারির টিপিক্যাল সিলেটি সংস্করণ শুনতে বোধ করি খারাপ লাগে না) উল্টাপাল্টা কত কিছুই বলে থাকে উঠতে-বসতে, এগুলো পাবলিক খুব একটা সিরিয়াসলি নেয় না, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়; কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের বীর-মহাবীরদের কথা তো আর ফেলনা না। তাঁরা যখন কিছু বলেন তখন পাবলিকের কাছে সেটা আর কথা থাকে না, হয়ে যায় ‘বাণী’। অতএব সেই বাণী প্রদানের আগে অবশ্যই যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত মনে করি। আপনি এমন একটা হাস্যকর অবাস্তব কথা বললেন যা শুনলে পুরনো আমলের পুরান ঢাকার জুম্মন মিয়া ঘোড়ার গাড়ির চালক আজ বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, ‘আস্তে কন সাব, হুনলে ঘোড়ায় ভি হাসব।’ এতে আপনার প্রেস্টিজ পাংচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সংগঠনের ভাবমূর্তির ভাব হাওয়া হয়ে গিয়ে শুধু মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকবে অশরীরী প্রেতাত্মার মতো। কাজেই কথার তীর ছোড়ার আগে একবার ভেবে দেখুন এর প্লাস-মাইনাসের কথা। আপনি হয়তো বলবেন, অত ভাবাভাবির কী আছে, আমি দেখব শুধু শত্রু মরল কি না। সে শত্রু নারী, না শিশু, না বৃদ্ধ তাতে কী, ফিলিস্তিনি হলেই হলো। আর আমার কাজ ‘অন্তর হতে বিদ্বেষবিষ’ ঢালা, যে বিষের ধাক্কায় প্রতিপক্ষ জ্বলেপুড়ে ছাই হবে। হয়তো আপনি এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েই ময়দানে নেমেছেন এবং আপনি নিজেকে ‘ব্যাটা একখান’ প্রমাণ করার জন্য, বিশেষ করে ‘বসিপ্রয়তা’ লাভের জন্য, কোমর বেঁধে লেগেছেন। আর এতে আপনার বা আপনার সংগঠনের লাভ হোক বা না হোক আপনি কিন্তু এই গাঙ্গেয় বদ্বীপের আবহমানকালের ভদ্র, সুরুচিসম্মত, সুকুমার সংস্কৃতির একটা বিরাট ক্ষতি করলেন। তা হচ্ছে মিথ্যাশ্রয়ী অপসংস্কৃতির চর্চা। এরপর বিদেশিরা বলবে এটা কার বক্তব্য? বাংলাদেশের? এটা যাচাই-বাছাই না করে চট করে মেনে নেওয়া যাবে না। বাঙালিরা অম্লানবদনে একটা কথার পিঠে দশটা অলীক অকথা-কুকথা বলতে ওস্তাদ। ...ভেবে দেখুন, দেশের মান-মর্যাদা কোথায় কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকতে পারে। অথচ এ দেশের খেটে খাওয়া নারী-পুরুষ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশটিকে দ্রুত কী উচ্চতায়ই না পৌঁছে দিচ্ছে তাদের অক্লান্ত শ্রম ও বিধিদত্ত মেধা দিয়ে। আর আপনি, আমি—যারা এদের সব অর্জনের মালাই-মাখন দিবারাত্রি সেবা করছি একরকম ওদের ঠকিয়ে, বঞ্চিত করে—আমরা ব্যস্ত ভাষা শিল্পের বাই প্রডাক্ট হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণা ইত্যাদি নিয়ে।

২.

আমরা যারা পাকিস্তানি আমল দেখেছি, দেখেছি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তাদের একটি পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে, আমি মনে করি, বর্তমান প্রজন্মকে বলে যাওয়া আমরা স্বাধীনতার আগে কী ছিলাম আর এখন কী হয়েছি। সংক্ষেপে যদি বলি, আমরা ছিলাম বঞ্চিত-নির্যাতিত-হতদরিদ্র একটি জাতি, যে জাতি অত্যাচার-অবিচার সইতে সইতে একদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল, একটি চাপিয়ে দেওয়া অসমযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। কিন্তু তারপর? তারপর যে স্বর্ণডিম্ব প্রসবিনী হংসীটিকে আমাদের উচিত ছিল আদরযত্নে পেলে-পুষে রাখা, তাকেই কিনা আমরা কেটেকুটে তার পেট থেকে একবারেই পেতে চাইলাম সব সোনার ডিম। আমরা ভিয়েতনামিদের মতো সাম্য-মৈত্রীর শৃঙ্খলাপরায়ণ ধৈর্যশীল পরিশ্রমী বড় জাতি হতে চাইলাম না, হতে চাইলাম অর্থগৃধ্নু কপটচারী প্রবঞ্চক কিছু মানুষের হাতের ক্রীড়নক। মনোযোগী হয়ে পড়লাম এদের উচ্ছিষ্টভক্ষণে ও উঞ্ছবৃত্তিতে। আর তারাও সহজ-সরল মানুষগুলোর মাথায় কখনো কাঁঠাল ভেঙে খেয়ে, কখনো তাদের চাঁদিতে নুন রেখে বদরী ফল ভক্ষণে সুখে কালাতিপাত করতে লাগল। ফল দাঁড়াল এই, কিছু সংখ্যালঘিষ্ঠ কালো টাকার ধলো টাকার মালিক দ্রুতই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ-আমগাছ-বটগাছ হয়ে গেল, আর যাদের কাঁধে পা রেখে তারা নিরন্তর আকাশ থেকে তারাফুল পেড়ে পেড়ে জেবে পোরে, সেই সব বঞ্চিত হতদরিদ্র মানুষ, তাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে এখনো পর্যুদস্ত। অথচ পরাধীনতামুক্ত, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ অর্জিত, স্বাধীন-সার্বভৌম দেশটিতে তো এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কোথায় পাকিস্তানি আমলের দীর্ঘ দুই যুগের বঞ্চনা-লাঞ্ছনার অবসান হয়ে রচিত হবে সাম্য-মৈত্রীর এক যুগান্তকারী ইতিহাস, তা না নিচেরতলার মানুষদের আমরা সঁপে দিলাম তাদের ভাগ্যের ওপর। সমাজের উপরতলায় উন্নয়ন হলে তার চোয়ানি পেয়ে (উন্নয়ন অর্থনীতিতে যাকে বলা হয় ট্রিকল ডাউন ইফেক্ট) নিচেরতলার মানুষেরা উপকৃত হবে—এই ধারণা (এযাম্পশন) থেকে মূলত সব অথনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। এ ধারণা ভুল প্রমাণিত হতে বেশিদিন লাগেনি। সুখের বিষয়, দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষকে উন্নয়নের পাদপ্রদীপের সামনে নিয়ে এসে তাদের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু কর্মকাণ্ড শুরু হয় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে। ফলে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর সমাজের নিচতলার মানুষদের চেহারা-ছবিতে খুব একটা চেকনাই না এলেও কিছুটা খোলতাই অবশ্যই দৃশ্যমান। রাজনীতিতে শুধু পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি না করে আর কেবল মসনদে আরোহণের জন্য কিংবা মসনদ আঁকড়ে থাকার উদ্দেশ্যে সবটুকু শক্তি নিয়োজিত না করে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী যে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ তাদের ভাগ্যোন্নয়নের ব্যাপারে কোনো দল বা গোষ্ঠী আরও মনোযোগী হলে মসনদ নিজেই, আমি মনে করি, কাছে টেনে নেবে সেই দল বা গোষ্ঠীকে।

৩.

তবে সব কিছুর আগে চাই জাতীয় ঐক্য। একটি ঐক্যবদ্ধ আবিভাজিত জাতি যে কী অসাধ্য সাধন করতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ। এটা শুরু থেকেই হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ফলে নানা মত নানা পথের মানুষকে তিনি শুধু সম্পৃক্তই করেননি স্বাধীনতাসংগ্রামে, তাঁর আদর্শে, তাঁর বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকলে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। আজ যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কথা বলে বলে গলা ফাটাই, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে সেই ঐক্য, সেই সম্প্রীতি, সেই পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার কি আছে দেশে। নিশ্চয়ই আমাদের রাজনীতিকরা রাজনীতি করেন মানুষকে সেবাদানের জন্যে, তার কল্যাণের জন্যে। কিন্তু সেই সেবাদান কি এই করোনাকালে একজন ডাক্তার, নার্স কিংবা একজন স্বেচ্ছাসেবকের নিঃস্বার্থ ও বাছবিচারহীন সেবার মতো? ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত একজন চিকিৎসাকর্মী গোটা সমাজের সামনে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে পিছপা হচ্ছেন না, আজ তা থেকে শুধু রাজনীতিবিদরা নন, সমাজের সকল মানুষকে শিক্ষা নিতে হবে, ভালোবাসতে হবে দেশের উচ্চ-নীচ, ধনী-গরিব সকল মানুষকে। সেখানে বিদ্বেষের এক ফোঁটা গোচনা এক পাতিল গোদুগ্ধকে বিষাক্ত করতে যথেষ্ট। তাই বিনীত অনুরোধ : হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণার রাজনীতি আর নয়, বন্ধ করুন গালাগালি আর কাদা ছোড়াছুড়ির বক্তৃতা-বিবৃতি। অনেক হয়েছে, এবার আসুন, আমরা প্রমাণ দিই আমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসতে পারি, সম্মান জানাতে পারি, আমরা ধারক ও বাহক হতে পারি একটি কলুষমুক্ত রাজনীতির। আসুন, রাজনৈতিক অঙ্গনে হিংসা-বিদ্বেষ-ঘৃণাকে আমরা ‘না’ বলি। তা না হলে কবিগুরুর মতো আজকের বাংলাদেশের মানুষ ফরিয়াদ জানাবে বিধাতার কাছে : যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,/তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?...আজ থেকে ৯০ বছর আগে ১৩৩৮ সালে তাঁর অমর সৃষ্টি ‘প্রশ্ন’ কবিতায় এই ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন কবিগুরু, সেই ফরিয়াদ এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক ১৬-১৭ কোটি মানুষের কণ্ঠে।

 

লেখক : সাবেক সচিব, কবি

 mkarim06@yahoo.com

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

শিল্প-কারখানা চালু রাখতে হবে

    মো. আবু জাফর সামছুদ্দিন
শেয়ার
শিল্প-কারখানা চালু রাখতে হবে

শিল্প-কারখানা দেশের সম্পদ, জনগণের সম্পদ। শিল্প-কারখানা ধারাবাহিক কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস। শিল্প-কারখানা কাঁচামালকে পণ্যে রূপান্তর করে, মানুষের অভাব পূরণ করে, সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন মত ও পথের মানুষের দৈনন্দিন অভাব পূরণ করে। দেশের সীমানা পার হয়ে শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত পণ্য সমগ্র পৃথিবীর মানুষের অভাব পূরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

শিল্প-কারখানার মাধ্যমে রচিত হয় সমগ্র পৃথিবীর মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ। মানবসভ্যতার এক বিশাল ভূমিকায় অবদান রয়েছে শিল্প-কারখানার। শিল্প-কারখানা ছাড়া কৃষিপণ্য রূপান্তর করা সম্ভব নয়। ফলে শিল্পের বিকাশ বন্ধ হলে কৃষি খাত অব্যবহৃত থেকে যাবে এবং কৃষিক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে, যার পরিণতিতে বেড়ে যাবে বেকারত্ব।

শিল্প-কারখানার মালিক কে? আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে একজন উদ্যোক্তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। কিন্তু বিষয়টি অন্যভাবে চিন্তা করা যায়। একজন উদ্যোক্তা তাঁর শুধু নিজস্ব পুঁজি দিয়ে শিল্প-কারখানা স্থাপন করেছেন এমন অনুপাত নিতান্তই নগণ্য। আর্থিক প্রতিষ্ঠান শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য অর্থায়ন করে থাকে।

তাহলে আমরা কি বলতে পারি শিল্প-কারখানার মালিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উত্তর না। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপামর জনতার কাছ থেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয় একীভূত করে তহবিল গঠন করে সেই তহবিল শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগ করে। তাহলে শিল্প-কারখানার মূল মালিক একটি দেশের আমানতকারীরা, যাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই শিল্প-কারখানার মালিক জনগণ।  

কর্মসংস্থান এবং বাজারব্যবস্থা সমন্বয়ের জন্য সব অর্থব্যবস্থায় ও সরকারি উদ্যোগে শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়ে থাকে।

মালিক কি সত্যি সরকার? না, সরকার ওই শিল্প-কারখানা স্থাপন করে থাকে জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত ট্যাক্সের অর্থ থেকে অথবা জনগণের কাছ থেকে ঋণ করা অর্থ থেকে। সেই শিল্প-কারখানার মালিকও জনগণ।

শিল্প-কারখানা চালু রাখতে হবেপরোক্ষ মালিকানার বিষয়টি ছাড়াও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি জনগণ। জনসাধারণ শ্রম ও সেবা প্রদান করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল রাখে। জীবিকার একটি প্রধান উৎস হিসেবে বেছে নেয় শ্রমিক ও সেবা প্রদানকারী আপামর জনগণ।

প্রতিটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা প্রদান করে। জনগণের ট্যাক্স থেকেই সরকার ওই সুবিধা প্রদান করে। সব বিষয় বিবেচনায়ই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক জনগণ।

কিছু সময় ধরে শিল্পোদ্যোক্তা রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার নজির লক্ষণীয়। রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত হতো শিল্পোদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ। অধিকন্তু উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত কিভাবে হবেন এবং কতটা ঝামেলামুক্তভাবে ব্যবসা করতে পারবেন তার নির্ধারকও ছিল রাজনৈতিক পরিচয়। সরকারি দলের বাইরে কোনো শিল্পোদ্যোক্তা নানা নিপীড়নের মাধ্যমে কোনো রকম নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হতেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী নিজের মতাদর্শকে বিলীন করে দিয়ে ব্যবসার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট দলের সদস্য হয়ে যেতেন। তাহলে ব্যবসায়ীসমাজ মোটামুটিভাবে পুরোটাই হতে হবে সরকারি দল। এতে ওই সরকার যত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকবে, তত দিন পর্যন্ত তিনি ঝামেলামুক্তভাবে তাঁর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আর ভিন্নমতাবলম্বীরা প্রতিকূলতার মাঝে টিকে থাকার জন্য চেষ্টা করবেন।  

রাজনৈতিক ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর ওপর নেমে আসে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, যা তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যকে আবার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে তাঁকে নানা দিকের উপদ্রব সহ্য করতে হয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসা বেদখল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবসার দীর্ঘদিনের টানাপড়েনের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, যার পরিণতিতে ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণগ্রহীতার তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নতুন ঋণের সংস্থান করতে ব্যর্থ হন। গ্যাস, বিদ্যুত্, অবকাঠামো সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এবং শিল্পের সংকোচন হয়। রাজনৈতিক টানাপড়েনের শেষ ধাক্কাটা আসে আপামর জনতার ওপর। ভোক্তা ও আমানতকারীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে ভাটা পড়তে শুরু করে। 

ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত থাকতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি মৌলিক উপাদান। ব্যবসায়ী বলে তাঁকে সব সময় সরকারি দল করতে হবে এমনটি হওয়া উচিত নয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে দেখতে হবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মতো, যা দেশের প্রতিটি ব্যক্তির সম্পদ। 

রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যেকোনো পরিবর্তনে শিল্প-কারখানাকে দুর্বল করার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কৌশল দৃশ্যমান। লুটপাট, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অসহনীয় চাঁদাবাজির ফলে দুর্বল হয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ভিত। এ কাজের সঙ্গে সত্যিকার অর্থে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা না থাকলেও স্বার্থান্বেষীচক্র এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে।

কখনো ভীতসন্ত্রস্ত মালিক আত্মগোপন করেন আবার কখনো মূলধন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে বন্ধ হয়ে যায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের প্রয়োজনে সব প্রতিষ্ঠান সচল রাখতে হবে। কোনো রপ্তানিকারী শিল্প-কারখানা বন্ধ হলে আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর আশঙ্কা থাকে। বিরূপ প্রভাব পড়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপণনযোগ্য পণ্যসামগ্রী উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ফলে দেশের অভ্যন্তরে সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়ে। এই সুযোগগুলোকে লুফে নেবে সংশ্লিষ্ট পণ্যের রপ্তানিকারক দেশগুলো। বিরূপ প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ওপর। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান; যথাব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং পুঁজিবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার এই দুঃসময়ে যদি ১০ শতাংশ শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ভেবে দেখতে হবে আমাদের জিডিপির ওপর কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে? এর ওপর যদি ১০ শতাংশ লোক নতুন করে বেকারত্বের কবলে পড়ে, তাহলে কী পরিমাণ সামাজিক অবক্ষয় নেমে আসবে, তা অনুমান করা সত্যি অনেক কঠিন। হাজারো অব্যবস্থাপনাকে মোকাবেলায় সরকার এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে, তার ওপর যদি অনিবারণযোগ্য সমস্যা সরকার ও জনগণের সামনে উপস্থিত হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি ভেঙে পড়বে এবং দেশ একটি নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

অপরাধী যে পরিচয়েরই হোক না কেন, তাকে আইনের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। ব্যক্তির অপরাধের প্রভাব প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আপামর জনগণ তথা রাষ্ট্র।

আমাদের দেশে এখনো শক্তিশালী করপোরেট কালচার গড়ে ওঠেনি। তাই একটি শক্তিশালী দক্ষ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠন করে হলেও শিল্প-কারখানার উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে আপৎকালীন ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং দক্ষ ও সত্ পেশাদার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠান সচল রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন এবং বণ্টনের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সফল ও দক্ষ সমগোত্রীয় উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে অথবা সংশ্লিষ্ট ট্রেড বডির সমন্বয়ে শিল্প-কারখানা সচল রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আমাদের মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম তাত্ত্বিকের পরিবর্তে প্রায়োগিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা সময়ের দাবি। শিক্ষাব্যবস্থায় করণিক সৃষ্টির বিপরীতে নির্বাহী ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর দেশের শিল্প-কারখানা পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ জনবল আমদানি করা সত্যি আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়।

আমাদের দেশের সব শিল্প-কারখানা সচল রাখতে হবে। উদ্যোক্তা হতে পারেন রাজনৈতিক, শিল্প-কারখানা অরাজনৈতিক। রাজনীতি কোনো অপরাধ নয়। রাজনীতির আবরণে অপরাধীচক্র এবং সুবিধাভোগীরা আইনের মুখোমুখি হোক, এটি জনগণের প্রত্যাশা। অন্যদিকে জনগণের সম্পদ শিল্প-কারখানাকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে দেশের উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশ হোক রপ্তানিমুখী দেশ, অন্য দেশের বাজার নয়। সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান সচল থাকবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ব্যাংকার্স ক্লাব অব বাংলাদেশ লিমিটেড

afarcu88@gmail.com

 

মন্তব্য

জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর গুরুত্বপূর্ণ

    এ কে এম আতিকুর রহমান
শেয়ার
জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর গুরুত্বপূর্ণ

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ মাসের ১৩ তারিখ বিকেলে চার দিনের এক সফরে বাংলাদেশে আসেন। তাঁর এই সফর মূলত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য হলেও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তিনি আলাপ-আলোচনা করেন। ১৪ তারিখ সকালে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং দুপুরের পর কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন আন্তোনিও গুতেরেস ও ড. ইউনূস।

সন্ধ্যার পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। পরের দিন জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় পরিদর্শন ছাড়াও তিনি নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই দিন তাঁর সম্মানে প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত ইফতার ও নৈশভোজেও তিনি যোগ দেন। ১৬ তারিখে সকালের দিকে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
     

দুই.

১৪ তারিখে জাতিসংঘ মহাসচিব কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রোহিঙ্গা শিবিরে চলে যান। সেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে কিছুটা সময় কাটানো ছাড়াও তরুণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতিসংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। তিনি রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মসূচিও পর্যবেক্ষণ করেন।

এরপর তিনি এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে তিনি যেমন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন, তেমনি এক গভীর মানবিক সংকটের উপনীত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি যেমন বলেছেন, তারা বাড়ি ফিরে যেতে চায়। মায়ানমার তাদের মাতৃভূমি। নিরাপদে, স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়াই এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান।
তেমনি রাখাইন রাজ্যসহ মায়ানমারের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, রাখাইনে সংঘাত এবং পদ্ধতিগত নিপীড়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই যাদের সুরক্ষার প্রয়োজন, তাদের সহযোগিতা করতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর গুরুত্বপূর্ণজাতিসংঘ মহাসচিব ২০২৪ সালের মানবিক সহায়তার তুলনায় ২০২৫ সালে ওই সহায়তা ৪০ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন বিপর্যয় হবে। তিনি বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য বিশ্ববাসীর সাহায্য-সমর্থনের খুবই প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি মায়ানমারে কয়েক দশক ধরে চলমান বৈষম্য ও নিপীড়ন এবং রাখাইনে জেনোসাইডের কথা তুলে ধরেন। মানবাধিকারের নৃশংস লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে, সে কথাও তিনি বলেন। তাঁর বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পাশাপাশি অনেক মানবিক ও উন্নয়নমূলক এনজিও বিশাল তহবিল হ্রাসের ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ায় তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে মানুষের ওপর, যারা সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। সাহায্য তহবিল কাটছাঁট হলে মানবিক ক্ষতি হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না। পরিস্থিতি যতক্ষণ অনুকূল না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের পাশে না দাঁড়ায়, ততক্ষণ এই ইস্যুতে কথা বলে যাওয়ার আশ্বাস দেন।   

আমরা জানি, রোহিঙ্গা শিবিরগুলো সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা শিশু, তরুণ, মহিলাসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় সবাই রাখাইনে ফেরার প্রবল আকুতি ব্যক্ত করে। এ ছাড়া তারা রাখাইনে ফেরার আগ পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ আর কাজের সুযোগের বিষয়গুলো জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তুলে ধরে। অন্যদিকে মাথাপিছু রেশন মাসে সাড়ে ১২ ডলার থেকে ছয় ডলারে নেমে আসায় তাদের বেঁচে থাকাটাই যে কঠিন হয়ে পড়েছে, তা-ও তারা জানায়।

তিন.

জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফরের কার্যক্রম শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে ১৪ মার্চ। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার পদক্ষেপ, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, রোহিঙ্গা ইস্যু, বিশ্বে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা, আঞ্চলিক রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অবহিত করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে কথা বলেন। তিনি তাঁর সরকারের গৃহীত সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং সেসবের বাস্তবায়ন সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে ওই সব সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে জাতীয় নির্বাচন এ বছর, না আগামী বছর আয়োজন করা যাবে। প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে নেওয়া সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই সংস্কারপ্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি বাস্তব রূপান্তর নিশ্চিত করবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গারা যাতে মায়ানমারের পশ্চিম রাখাইনে তাদের নিজেদের ভিটামাটিতে ফিরে যেতে পারে সে ব্যাপারে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি রোহিঙ্গারা যত দিন বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন যাতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা চান। জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন বলে জানান। তিনি কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি। মানবিক সহায়তা কমানো একটি অপরাধ উল্লেখ করে তিনি বলেন যে পশ্চিমা দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করলেও মানবিক সহায়তা হ্রাস করছে। জাতিসংঘ মহাসচিব জানান যে তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে ভূ-রাজনীতি, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্কের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা দিক নিয়েও আলোচনা হয়।

চার.

১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করতে পেরে আনন্দিত বলে জানান। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বিরাট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বৃহত্তর পরিসরে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং সমৃদ্ধির ভবিষ্যতের জন্য জনগণের আশাকে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। তিনি বলেন, একটি ন্যায়সংগত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা এবং ঐকমত্যে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। সবার জন্য একটি টেকসই এবং ন্যায়সংগত ভবিষ্যত্ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করে আপনাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারেন।

মায়ানমারে লড়াই বন্ধ করা ও সেখানে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মায়ানমারের সব প্রতিবেশী দেশের চাপ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি বলে জাতিসংঘ মহাসচিব উল্লেখ করেন। তিনি এটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মায়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সম্মিলিতভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান। আর এ জন্য প্রথম ধাপে সহিংসতা বন্ধ করে একই সঙ্গে এমন কার্যকর ব্যবস্থা গঠন করা, যাতে মায়ানমারে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ সুগম হয়, যা স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনকে সহজ করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে আমাদের মায়ানমারের ভেতরে মানবিক সহায়তা জোরদার করতে হবে, যাতে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।

পাঁচ.

১৫ মার্চ বিকেলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাঁরা পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সম্ভাবনা এবং উদ্বেগ নিয়ে খোলাখুলিভাবে কথা বলেন। অপতথ্য আর বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদলের কথায় দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের ফলে কাঠামোগত পরিবর্তন হলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়ার উল্লেখ করে নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বাংলাদেশের জনগণের এসব অংশের লোকজনের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার বিষয়গুলো উঠে আসে।

জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁদের কথা অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে শোনেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জটিল। তবে ব্যবসা, বিনিয়োগের জন্য নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। তবু বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কিছু বিষয়ে তাঁর আরো জানা প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতি যে জটিল, তিনি এবার বাংলাদেশ সফরে এসে মতবিনিময়ের পর বুঝেছেন। তাই তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

ছয়.

রোহিঙ্গা ইস্যুটির দুটি দিক বেশি গুরুত্বপূর্ণতাদের জন্মভূমিতে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন এবং প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানকালে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা। বাস্তবতার ভিত্তিতে বলতে গেলে এই দুই ক্ষেত্রই সংকটে পড়েছে। প্রত্যাবাসন হয় হয় করে সেই যে ঝুলে গেছে, সেই জট খুব তাড়াতাড়ি খুলবে বলে মনে হয় না। মায়ানমারের জান্তা সরকার, সর্বোপরি সেখানকার অভ্যন্তরীণ সহিংস পরিস্থিতি কবে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যাতে রোহিঙ্গাদের সঠিকভাবে প্রত্যাবাসন করা যাবে, তা কেউ বলতে পারবে না। অতএব আমাদের দ্বিতীয় সমস্যার দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে, যাতে বাংলাদেশের আশ্রয়ে যত দিন আছে, তাদের অসুবিধা না হয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে তাদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিতে হবে। আমাদের একা নয়, বিশ্ববাসীকে নিয়েই এর সমাধান করতে হবে। তবে বর্তমান আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কতটুকু এগোতে পারবে সে প্রশ্নটি থেকেই যায়। যা হোক, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, রোহিঙ্গারা যেন আগামী বছর মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সে লক্ষ্যে জাতিসংঘের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করছি।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে। অন্যদিকে তিনি নিজে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলমান ঘটনাগুলো যেমন দেখলেন এবং জানলেন, তা জাতিসংঘের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভবিষ্যত্ সাহায্য-সহযোগিতার সমীকরণ নির্ণয়ে অবশ্যই সহায়ক হবে।  

 

লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব

মন্তব্য

পুতিনের শর্তেই শেষ হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ

    মাহবুব আলম
শেয়ার
পুতিনের শর্তেই শেষ হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক দীর্ঘ টেলিফোন সংলাপের মধ্য দিয়ে এই আলোচনার সূচনা করেন। এরপর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ও তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা মুখোমুখি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে উভয় দেশের পক্ষ থেকে আলোচনাকে সন্তোষজনক মন্তব্য করে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তিচুক্তির লক্ষ্যে আরো আলোচনা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সেই আলোচনাও শুরু হয়েছে। তবে কী শর্তে এই যুদ্ধ বন্ধ হবে, তা কোনো পক্ষই স্পষ্ট করেনি। এ বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বলেছেন, রাশিয়া এরই মধ্যে ইউক্রেনের যে চারটি প্রদেশ দখল করে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে, তাকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হবে না, নিরপেক্ষ থাকবে—এই মর্মে ইউক্রেনকে অঙ্গীকার করতে হবে।
আর ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে হবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই শর্তের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে রুশ শর্তের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের আপত্তি নেই। আলোচনার পর মার্কিন কর্মকর্তারা সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

অবশ্য এই ইঙ্গিত নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্চ ও এপ্রিলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের নেতৃত্বে ইস্তাম্বুলে যে যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তির আলোচনা শুরু হয়, তখনো এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত হেনরি কিসিঞ্জার ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়ে অবিলম্বে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের কথা বলেন। ওই বছর ২৪ মে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে কিসিঞ্জার আবারও তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, অহেতুক হানাহানি না বাড়িয়ে ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার দাবি মেনে নেওয়া।

রাশিয়া যে জায়গা দখল করেছে তার মালিকানা ছেড়ে দেওয়া। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে রাশিয়াকে পরাস্ত করা তো দূরের কথা, নিজের অস্তিত্ব নিয়েই হুমকির মুখে পড়বে ইউক্রেন। সেই সময় ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি ও একটি শান্তিচুক্তির বিষয়ে সম্মত হলেও শেষ মুহূর্তে চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত হয়। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, ‘আজ হোক, কাল হোক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেনকে বেদনাদায়ক আঞ্চলিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ অর্থাৎ শান্তির লক্ষ্যে ইউক্রেনকে তার নিজ ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে।

উল্লেখ্য, সেই সময় যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার শর্ত ছিল—১. ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে হবে। ২. ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসি প্রভাব থেকে দূরে রাখতে হবে এবং ৩. দেশটির নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

ওই সময় শান্তিচুক্তির স্বার্থে রাশিয়া তার সামরিক অভিযানের লাগাম টেনে ধরে। কিয়েভ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এবং চেরনোহির দখল ছেড়ে দিয়ে সেনাদের রুশ সীমান্তের কাছে ফিরিয়ে নেয়। এ বিষয়ে তৎকালীন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোবিন বলেন, ‘সমঝোতার পথ তৈরির জন্য সেনা সরানো হয়েছে।’ সমঝোতা হলেও শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন শান্তিচুক্তিতে সই করা থেকে বিরত থাকে এরই মধ্যে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছি।

সেই সময় যা ঘটেছিল তা হলো—২৯ এপ্রিল ইস্তাম্বুলে একটি শান্তিচুক্তির বিষয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন সম্মত হয়। এবং পরদিন ৩০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তি আলোচনা রাশিয়ার কূটকৌশল। ওয়াশিংটন এই কূটকৌশলের ফাঁদে পা দেবে না। ভণ্ডুল হয়ে গেল শান্তি আলোচনা। টেবিলেই পড়ে থাকে চুক্তির খসড়া।

তারপর দীর্ঘ লড়াই। তিন বছরের রক্তক্ষয়ী লড়াই। এই লড়াইয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেত্স্ক, জাপোরিঝিয়াসহ চারটি প্রদেশ ও ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ দখল করে নিয়েছে। এই ভূখণ্ডের পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি। স্বাভাবিকভাবেই বদলে গেছে রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি ও শান্তিচুক্তির শর্ত। কারণ এই সময়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের দখলকৃত এলাকাকে রাশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করে ডিক্রি জারি করেছেন। অবশ্য গণভোট করে ওই অঞ্চলের জনগণের মতামত নিয়ে।

এখানে উল্লেখ্য, রাশিয়ার সেনারা যে অঞ্চল দখল করেছে, তা রুশ ভাষাভাষী অঞ্চল। এই অঞ্চলের দুটি প্রদেশ লুহানস্ক ও দোনেত্স্ক আগে থেকেই স্বাধীনতার দাবিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল।

রাশিয়ার শর্তের বিষয়ে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তীব্র আপত্তি রয়েছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই আপত্তিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, এই যুদ্ধের জন্য অতীতের বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য হিসেবে যে অর্থ দিয়েছে, সেই অর্থও ফেরত চাইছে। এ জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের মাটির তলায় যে মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে, তা উত্তোলনের দাবি করেছে। দাবি করেই ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষান্ত হয়নি, অবিলম্বে এ বিষয়ে চুক্তি সম্পাদনের আহবান জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে। কার্যত এ লক্ষ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৮ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জেলেনস্কি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে দুই নেতার বাগবিতণ্ডা ঝগড়ায় পরিণত হয়। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁকে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেন। হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে জেলেনস্কি ছুটে যান ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে। ইউরোপীয় মিত্ররা তাঁর পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। এতে ক্ষিপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনকে প্রদত্ত সব সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধের ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহও বন্ধ করে দেন। ফলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসের ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে খনিজ সম্পদ চুক্তি সই করতে তাঁর সম্মতির কথা জানিয়েছেন। আরো জানিয়েছেন, যুদ্ধ বন্ধের ও একটি শান্তিচুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতেও তিনি প্রস্তুত। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি রিয়াদে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সর্বশেষ ১১ মার্চ জেদ্দায় মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন।

একটি বিষয়ে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে মার্কিন সাহায্য ছাড়া শুধু ইউরোপের সাহায্য নিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে না। উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে দিয়েছে ৬৫.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য। সেখানে ইউরোপের সব দেশ মিলে দিয়েছে ৬৪.৯ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য। আর প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর মেয়াদের শেষ সময়ে নতুন করে যে ৫৪ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য ঘোষণা করেন, তা আটকে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

এই অবস্থায় ইউক্রেনের সামনে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আসা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তবে যুদ্ধবিরতি ও একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদনে কত দিন লাগবে, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। অবশ্য এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিকল্প চিন্তা-ভাবনাও শুরু করেছেন। তিনি জেলেনস্কিকে স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়ে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার চিন্তা-ভাবনা করেছেন। এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনও একমত। পুতিন বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছেন জেলেনস্কির প্রেসিডেন্সির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই তাঁর সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়। আলোচনা হবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো যুদ্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি করেছেন। ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী সামরিক শাসনের মধ্যে কোনো নির্বাচনের বিধান নেই। তার পরও এ বিষয়ে পর্দার অন্তরালে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।

মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস বলেছেন, ‘আমাদের এমন একজন নেতার প্রয়োজন, যিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন, যিনি রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করবেন, যিনি যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর ইউক্রেনের ক্ষমতাচ্যুত আগের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পেরেশেংকো ওয়াশিংটন সফর করেছেন। এই পেরেশেংকো রুশপন্থী হিসেবে পরিচিত ও প্রভাবশালী নেতা। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে তাঁর চেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি, বর্তমান গোয়েন্দাপ্রধান কিরিল দাদভ ও বিরোধী দলের নেতা লিমোশেংকো। এককথায় ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রয়োজনে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ রাশিয়া একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তাকে পরাস্ত করার পরিণাম যে ভালো হবে না, এটি একজন বোকাও বোঝে। তাইতো বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধকে অহেতুক যুদ্ধ বর্ণনা করে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে বৈরিতার পরিবর্তে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাই রাশিয়ার শর্তেই শেষ হচ্ছে তিন বছরব্যাপী রক্তক্ষয়ী ইউক্রেন যুদ্ধ।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

মন্তব্য

বাংলাদেশ-চীন সুদৃঢ় বন্ধনে জড়ানো আবশ্যক

    গাজীউল হাসান খান
শেয়ার
বাংলাদেশ-চীন সুদৃঢ় বন্ধনে জড়ানো আবশ্যক

চীনের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত তার নিজ জাতীয় স্বার্থে কাজ করা, কোনো তৃতীয় পক্ষের জন্য নয়। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কাজ দেশের স্বার্থে করেননি, করেছেন নিজের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার তাগিদে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের পর্যায়ে ছিল না, ছিল ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের সাবেক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পর্যায়ে। সর্বত্র অভিযোগ উঠেছে যে শেখ হাসিনা নিজে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জাতীয় স্বার্থ এবং এমনকি জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিষয়াদি মোদির হাতে তুলে দিতে দ্বিধা বোধ করেননি।

বাংলাদেশ ভূখণ্ডের শীর্ষ উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল দিয়ে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অর্থাৎ প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যে প্রয়োজনে সামরিক সরঞ্জাম এবং সেনাবাহিনী চলাচলের জন্য একটি রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ দেওয়া। এতে ব্যক্তিগতভাবে ভারতে নিজ ক্ষমতা বলিষ্ঠতর করার সুযোগ পাবেন নরেন্দ্র মোদি; অন্যদিকে হাসিনা পাবেন অবৈধ পন্থায় নির্বাচন জয়ের নিশ্চয়তা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের জনগণের মতামত কিংবা জাতীয় আইনসভায় অনুমোদন ছাড়া শেখ হাসিনা ভারতের নরেন্দ্র মোদিকে কিভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত ভূমি কিংবা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন। সে অধিকার কোনো দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রীকে দিতে পারে না।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/03.March/16-03-2025/kalerkantho-ed-1a.jpgতা ছাড়া আরো উল্লেখ্য, দুটি প্রতিবেশী দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিচ্ছে না ভারত। উল্লেখ্য, এরও বহু আগে দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আরেক অভিন্ন নদী গঙ্গার ওপর ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করেছে ভারত। গঙ্গার (এপারে পদ্মা) পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটানোর জন্য মুহুরী নদী থেকে পানি সরবরাহ করা থেকে আখাউড়ায় রেলযোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছে।

এর পরও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ বাংলাদেশি নিরস্ত্র নাগরিকদের কথায় কথায় গুলি করে হত্যা করে। ভারতের সঙ্গে বিবদমান কোনো সমস্যারই খুব সহজে সমাধান হয় না। কথায় কথায় ভারতের বর্তমান সরকার শুধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে বাংলাদেশিদের সাহায্য করার খোঁটা দিয়ে সব কিছুতে ঠকিয়ে চলার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এটি সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশকে দমিয়ে রাখার এবং শোষণ করার একটি চলমান অপকৌশল বলে তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সমতা, ন্যায়সংগত অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে বিবেচনা করে না ভারত।
এখন ব্যক্তি পর্যায়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে এক উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত ছিল না দুই দেশের জনগণের কাছে।

এ পর্যায়ে একটু পেছন ফিরে যাওয়া যাক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ চীন সফর সংঘটিত হয়েছে ৮-১০ জুলাই ২০২৪। এর আগে তিনি সে বছরেরই জুন মাসে এক রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গিয়েছিলেন। সে দুই সফর থেকেই চীন ও ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থানগত দৃষ্টিভঙ্গি নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন বিশ্বের  নেতৃস্থানীয় সংবাদ বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনার সর্বশেষ সফরের আগে চীন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণসহ পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করেছে। তা ছাড়া হাত দিয়েছে ঢাকা-আশুলিয়ার মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো দীর্ঘ উড়ালসড়কের কাজসহ আরো বেশ কিছু প্রকল্পে। বাংলাদেশ চীনের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সমস্যা দেখা দেয় উত্তরবঙ্গের প্রস্তাবিত তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে। দেড় দশকের মতো দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম দিকে চীন সফরের আগেও কয়েকবার গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে বেইজিংয়ে যান। শেখ হাসিনা ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া অভিন্ন নদী তিস্তার বিভিন্ন সমস্যা চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি চিনপিং ও অন্যদের কাছে তুলে ধরেন। উত্তরবঙ্গের পাঁচটি মঙ্গাপীড়িত জেলা এবং তাদের ওপর তিস্তার প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক সরকারপ্রধান একটি বক্তব্যের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রতিকারের জন্য চীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি চিনপিংয়ের পরামর্শে শেখ হাসিনাকে তখন তাঁদের এককালের খ্যাপাটে হোয়াংহো নদীর তীরে গড়ে তোলা সুকিয়ান সিটি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সব কিছু দেখেশুনে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং চীন সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলেন তিস্তাপারের দুই কোটি মানুষের অবস্থার উন্নয়নের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে। ভারতের ওপর সেচের পানির জন্য নির্ভর করে বসে থাকার চেয়ে তিস্তা নদী খনন, তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং একটি কৃষি, শিল্প ও পর্যটন বান্ধব বন্দর গড়ে তোলার পরামর্শ দেয় চীন এবং সম্পূর্ণ তিস্তা অববাহিকাটি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে চীন বেশ কিছু প্রস্তাব তৈরি করে। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে চীনের। সে প্রস্তাবিত মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার খরচ ধরা হয়েছিল, যা ঋণ হিসেবে প্রদান করার জন্য চীন রাজি হয়েছিল। তারপর বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করেছে। তত দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও অনেক জল গড়িয়ে গেছে। প্রথমত, চিকেন নেক নামে খ্যাত ভারতের সীমান্তে শিলিগুড়ি করিডরের স্পর্শকাতর অঞ্চলের আশপাশে তারা চীনের কোনো প্রকৌশলী কিংবা কর্মী বাহিনীর কর্মতৎপরতায় বাধা প্রদান করে। ভারত সে অঞ্চলে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করে লালমনিরহাটে অবস্থিত পুরনো বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার ব্যাপারেও আপত্তি জানায়। তা ছাড়া চট্টগ্রামের পেকুয়ায় চীনের তত্ত্বাবধানে একটি আধুনিক সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণের ব্যাপারেও বাধা প্রদান করে তারা। মোটকথা, ভারত তখন বাংলাদেশে চীনের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পেন্টাগনের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কাজ শুরু করে। এতে তিস্তা অববাহিকায় শেখ হাসিনার সব পরিকল্পনা থমকে দাঁড়ায়।

শেখ হাসিনা ও তাঁর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তখন রাজনৈতিক ক্ষমতা রক্ষার জন্য ভারত এবং উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য চীনের প্রয়োজনীয়তার কথা মুখে বললেও বাস্তবে চীন থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন। এবং এক পর্যায়ে তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ কাজ ভারতকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তখন প্রশ্ন ওঠে যে মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ জোগান দেবে কে? বাংলাদেশে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ক্রমে ক্রমে দুর্বার গতি লাভ করে। সংগ্রামী ছাত্র-জনতার আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে এক দফায় রূপান্তরিত হয়। আর তা ছিল শেখ হাসিনার অপসারণ এবং ভারতীয় দখলদারি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তিলাভের প্রচেষ্টা। চীন তার গভীর পর্যবেক্ষণমূলক কূটনীতির আলোকে গত বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১২তম জাতীয় সংসদের ডামি নির্বাচন থেকেই হাসিনা সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে চরম সন্দেহের দোলাচলে দুলছিল। তা ছাড়া শেখ হাসিনার আগের দুটি ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ভারতের সঙ্গে তাঁর (হাসিনার) রাজনৈতিক বোঝাপড়ার কারণে চীন প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপ্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। সে কারণে শেখ হাসিনা যখন গত বছর নির্বাচনের পর অর্থাৎ জুন মাসে প্রথমে ভারত সফর করেন এবং পরের মাসে চীনে গিয়ে ঋণ সহযোগিতা চাইলেন, প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তখন তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রথমে অর্থাৎ বাংলাদেশের বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্যান্য চলমান প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চীনের কাছে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ (অনুদান ও এককালীন সাহায্যসহ) প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের প্রাক্কালে তা পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বেইজিংয়ে দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট শি সে ঋণ সহযোগিতার প্রস্তাব বাতিল করে শেষ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। চীন চার ভাগে অর্থাৎ ঋণ, অনুদান ও প্রকল্প সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে। তা ছাড়া নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপ্রকল্পটি নিয়ে ভারতের সঙ্গে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছিল। চীন সরকার তখন থেকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে তাদের আগ্রহ একরকম হারিয়ে ফেলেছিল। অথচ চীন প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করেছে এ প্রকল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের জন্য। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট শি ধরেই নিয়েছিলেন যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থে শেখ হাসিনা ভারতের প্রভাববলয় থেকে কখনো বেরিয়ে আসতে সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তখন তিনি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের আন্দোলন যখন একটি পরিপূর্ণ গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হলো, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার অবিনাশী প্রত্যয়। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিকভাবে দিনবদলের পালা। আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন বিশ্বসভায় ড. ইউনূস বাংলাদেশকে তুলে ধরতে শুরু করলেন একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্তা এবং নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে। বাংলাদেশের মিরসরাই শিল্প এলাকায় এবং কর্ণফুলী টানেলের ওপারে আনোয়ারায় চীনের বৃহত্ভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং বিশেষ করে সোলার এনার্জি উৎপাদনের (সূর্যরশ্মিভিত্তিক জ্বালানি শক্তি) লক্ষ্যে অবিলম্বে কারখানা নির্মাণের ওপর জোর দেন ড. ইউনূস। গতবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ ব্যাপারে চীনকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানান। তা ছাড়া চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পুরনো চুক্তিটি নবায়ন করবে বলে জানিয়েছে ইউনূসের অন্তর্বর্তী প্রশাসন। মার্চের ২৬ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন ড. ইউনূস। বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা এশিয়া এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। বোয়াও সম্মেলনকে তাই এশিয়ার ডাবোস বলা হয়ে থাকে। এতে এশিয়া এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এশিয়া ও অন্যান্য মহাদেশের সরকার, শিল্প ও ব্যাবসায়িক এবং একাডেমিক মহলগুলোর নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়ে থাকে। তবে এ সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি বিশেষ কারণে যে এতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হবে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে অন্যদের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে। এ পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের তথ্যাভিজ্ঞমহলের। বাংলাদেশকে সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে আগ্রহী চীন। তারা বাংলাদেশকে চীনের মিসাইল প্রযুক্তি দিচ্ছে, যার রেঞ্জ হবে ৩৫০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ বর্তমানে চীন থেকে তার ৭২ শতাংশ সমরাস্ত্র ক্রয় করছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ চীন থেকে বহুমুখী যুদ্ধবিমান (মাল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার জেট) জে১০সি (J10C) কিনতে আগ্রহী, যা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের চেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী। ড. ইউনূসের আসন্ন সফরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু যুগান্তকারী চুক্তি হতে পারে, যা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে বিশ্বাস।

দ্বিতীয় ধাপের মিসাইল প্রযুক্তি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত চীন। তা ছাড়া বঙ্গোপসাগরের জলসীমা রক্ষার্থে চীনের সঙ্গে সাবমেরিন প্রকল্পে কাজ করাও জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ২০১৪ সালে সামরিক অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি চুক্তি হয়েছিল বলে জানা যায়। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তাঁর দেশ। বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ক্লিন এনার্জি, ইলেকট্রিক যানবাহন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত চীন। বাণিজ্য সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করার জন্য বেইজিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ১৪টি চীনা সংস্থা এরই মধ্যে বাংলাদেশে মোট ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক জনগণকেন্দ্রিক, ব্যক্তি বা নেতা কেন্দ্রিক নয়।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

gaziulhkhan@gmail.com

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ