প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রাপ্তি ও কৃষি যন্ত্র সংগ্রহে তাদের প্রবেশাধিকার কম। ফলে তাদের প্রতি ইউনিট জমির উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার কম। অন্যদিকে বড় ও মাঝারি কৃষকরা ক্রমাগতভাবে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষাবাদে। তাঁরা ক্ষয়িষ্ণু কৃষক। চাষাবাদে তাঁদের বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে তাঁদের উৎপাদন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে।
কৃষিপণ্যের বাজারব্যবস্থা এখন কৃষকদের অনুকূলে নয়। এর নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বড় ব্যবসায়ী, মিলার ও তাঁদের দ্বারা সংগঠিত সিন্ডিকেটের হাতে। বাজারে কৃষিপণ্যের মূল্য তাঁরাই নির্ধারণ করেন। এতে উৎপাদনকারী কৃষক ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বাজারে খামার প্রান্তের ক্রয়মূল্য ও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের বিক্রয়মূল্যের পার্থক্য বেশি। এর পুরো সুবিধা নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা। তাঁরা শস্যের প্রক্রিয়াজাত করেন, মূল্য সংযোজন করেন এবং বাজারে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণে উৎপাদনকারীরা চালের ভোক্তা-মূল্যের ৭১ শতাংশ থেকে বঞ্চিত হন। এ ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। কারণ খাদ্যশস্য মজুদের ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা কম। ব্যবসায়ী ও মিলারদের সক্ষমতা অনেক বেশি। বর্তমানে সরকারের খাদ্যশস্য মজুদের সক্ষমতা মাত্র ২২ লাখ টন। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও ছোট-বড় মিলারদের মজুদ সক্ষমতা প্রায় এক কোটি টন। শুধু ধান-চালের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এবার আলু ও সবজির মূল্য ধসে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উৎপাদনকারী কৃষকরা। জমি চাষ, শ্রমিকের মজুরি, বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচের খরচ উচ্চহারে পরিশোধ করে তাঁরা অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কৃষিকাজে বড় দাগে লোকসান দিয়ে তাঁদের অনেকেই এবার পথে বসেছেন।
বাংলাদেশকে আমরা প্রায়ই খাদ্যে স্বনির্ভর বলে দাবি করি। কথাটি তেমন অর্থবহ নয়। কারণ প্রতিবছরই আমরা বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি করছি। খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। তেল, ডাল, পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রেও আমাদের বড় নির্ভরতা আমদানির ওপর। প্রতিবছর গড়ে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারের আকার প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমান বিশ্বে কৃষি খাত খুবই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধবিগ্রহ, প্রথমে ইউক্রেন-রাশিয়া, পরে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন। এসব কারণে সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে, উৎপাদন কমে গেছে। তেলের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর আগে আবার করোনাকালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। ওই সময় সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে, পরবর্তী সময়ে যুদ্ধের কারণেও খাদ্য পরিবহন ও বিতরণ বিঘ্নিত হয়েছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে। গত দুই বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৪৮ ডিগ্রি এবং ২০২৪ সালে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ শিল্পোন্নয়ন প্রাক্কালের চেয়ে দ্রুত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে। এই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও খরার কারণে ধান ও গমের উৎপাদনসহ পুরো কৃষির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উৎপাদন। উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। এই বৈশ্বিক পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ২০২৪ সালের শুরুতে ছিল খরা, পরে হয়েছে বন্যা। কোথাও কোথাও হয়েছে অতি বৃষ্টি ও বন্যা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি। তারপর আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ একসঙ্গে আঘাত করায় খাদ্য উৎপাদন কমেছে। এই অবস্থায় দরকার ছিল প্রচুর খাদ্য আমদানির, কিন্তু ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় আমদানি সম্ভব হয়নি। ফলে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতি, বাংলাদেশের আর্থিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। তা ছাড়া কোনোভাবেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি দমানো যাবে না। কৃষির উৎপাদন অনেক দিক থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এগুলোর একটি প্রকৃত মূল্যায়ন হওয়া দরকার। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। তাদের কাজে সহায়তার জন্য কৃষি খাতের পুরো পরিস্থিতির একটি রিভিউ করা দরকার। আমরা কৃষি খাতে কোথায় আছি, তার মূল্যায়ন দরকার। এর জন্য দরকার কৃষি কমিশন। ওই কমিশন বর্তমান কৃষি ব্যবস্থার একটি বিস্তারিত রিভিউ উপস্থাপন করবে এবং বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের গভীর বিশ্লেষণ করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণে সুপারিশ করবে।
উৎপাদনের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি খাত। আসলে উৎপাদনশীল খাত বলতে প্রধানত কৃষিকেই বোঝায়। সুদূর অতীতেও কৃষিকেই উৎপাদনশীল খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। অন্যান্য খাত তথা শিল্প, সেবা, কলকারখানা—এগুলো সহযোগী খাত। শিল্পের কাঁচামাল কৃষি থেকেই আসে। এর ওপরই নির্ভর করে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা। অতীতের মতো বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থেকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা যে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, তা এখন অবধারিত। তাই কৃষি খাতের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বর্তমানে কৃষির উৎপাদনে অনেকটা স্থবিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর আগে সত্তর ও আশির দশকের গোড়ার দিকে কৃষি খাতে ছোট করে মূল্যায়ন হয়েছিল। পরে ১৯৮৮-৮৯ সালে জাতিসংঘের সহায়তায় বিস্তারিতভাবে কৃষি খাতের রিভিউ করে দুই ভলিউমে তা বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে ক্রপস, লাইভস্টক, ফিশারিজ, ফরেস্ট্রি এবং মেকানাইজেশনসহ সব উপখাতের ওপর আলোকপাত করা হয়েছিল। কৃষিকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে গভীর বিশ্লেষণ করা হয়েছিল এবং সুপারিশ পেশ করা হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে অধ্যাপক রেহমান সোবহান পরিকল্পনা কমিশনের উপদেষ্টা থাকাকালে বিভিন্ন টাস্কফোর্স গঠন করেছিলেন। সেগুলো প্রকাশনী সংস্থা ইউপিএল থেকে চারটি ভলিউমে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে একটি বিষয় ছিল কৃষি। নব্বইয়ের পর প্রায় ৩৪ বছর ধরে কৃষি খাতে রিভিউ করা হয়নি। এখানে একটি গভীর বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
কৃষি খাতে বর্তমান সমস্যাগুলো কী, তা আমরা মোটামুটিভাবে জানি। একটা সময় ছিল, যখন আমরা শস্য খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিলাম। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ৮০ শতাংশই ক্রপস সেক্টর থেকে আসত। কালক্রমে আমরা তা থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছি। বর্তমানে ক্রপস সেক্টর থেকে আসছে ৫০ শতাংশ এবং বাকি ৫০ শতাংশ আসছে লাইভস্টক, ফিশারিজ ও ফরেস্ট্রি সেক্টর থেকে। তবে পরিবর্তনের গতিটা খুবই কম। আমরা ধানের ওপর যতটা গুরুত্ব দিয়েছি, অন্যান্য শস্যের ওপর ততটা দিচ্ছি না। ধান উৎপাদনের জন্য ৭২ শতাংশ জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন ধান উৎপাদনে মোটামুটিভাবে আমরা স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছি। যখন ভালো উৎপাদন হয়, তখন আমদানি করতে হয় না। তা ছাড়া অন্যান্য শস্যের ক্ষেত্রেও প্রচুর আমদানি করতে হয়। মসলাজাতীয় ফসল, ডাল, তেল ইত্যাদি আমদানি করতে হয় অনেক। তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গ্রহণ করতে হবে আমদানি প্রতিস্থাপন নীতি।
দেশে কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৮৪ সালে বিস্তারিতভাবে দেশে কৃষি শুমারির আয়োজন করা হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ সালের কৃষি শুমারির হিসাব মতে, কৃষি খাতে গত ৩৫ বছরে জমির পরিমাণ বার্ষিক গড়ে ০.৫৮ শতাংশ হারে কমেছে। এই হারে যখন জমি কমছে, তখন আমরা কী করতে পারি? দেশে আইন রয়েছে—দুইফসলি ও তিনফসলি জমি কৃষি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। এটি কেউ মানছে না। আমাদের রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্যাটার্ন ও হাউজিং প্যাটার্নে কিভাবে পরিবর্তন আনা যায়, যাতে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা ভাবা দরকার। আমাদের বছরে জনপ্রতি প্রায় ৮২ কেজি খাদ্য অপচয় হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া এবং ভারতের চেয়েও এখানে খাদ্য অপচয় বেশি। এর কারণ হচ্ছে প্রসেসিং ও গ্রেডিং, পরিবহন ও সংরক্ষণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
আমাদের দেশে প্রচুর কৃষি শ্রমিক আছে, কিন্তু অভাব রয়েছে উৎপাদনের আধুনিক উপকরণের। একসময় ভাবা হতো, দেশে প্রচুর গ্যাস আছে, তাই সার উৎপাদন সম্ভব। কয়েকটি কারখানাও স্থাপন করা হয়েছিল। ইউরিয়ার উৎপাদন ছিল আশাব্যঞ্জক। প্রয়োজনের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইউরিয়া দেশে উৎপাদন করা হতো। কালক্রমে সেই উৎপাদন কমে গিয়ে আমদানিনির্ভরতা বেড়েছে। এখন বছরে যা প্রয়োজন তার মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদিত হয়, বাকিটা আমদানি। বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সার তেমন সহজলভ্য নয়। তাই বিদেশের ওপর নির্ভর করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেভাবেই হোক সারের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বন্ধ থাকা কারখানাগুলো চালু করতে হবে। অন্যান্য কৃষি উপকরণেও নিজেদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া দরকার। বছরে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টন কীটনাশক আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা জানি কীটনাশক তৈরিতে কী কী উপকরণ দরকার। তাই প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানি করে দেশেই কীটনাশক উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে ব্যবহৃত সেচযন্ত্রের প্রায় এক-চতুর্থাংশ বিকল। এগুলোর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বিদ্যুত্চালিত, বাকি সব ডিজেলচালিত। বর্তমানে বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বেড়েছে, তাতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এ ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার খুবই সাশ্রয়ী হতে পারত। এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার।
অনেক দেশের তুলনায় কৃষি খাতে বাংলাদেশে ভর্তুকি কম। বহু বছর ধরে আমরা কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছি, এখনো দিচ্ছি। আমাদের ৯২ শতাংশ কৃষক হচ্ছেন ক্ষুদ্র। তাঁরা প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে পারেন না। চীনে প্রত্যেক কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া হয় ১৫৯ ডলার এবং বাংলাদেশে ৭.৮ ডলার মাত্র, এটি খুবই কম। কৃষি খাতে অর্থায়ন বড় সমস্যা। এ জন্য গরিব কৃষকদের জন্য অর্থের জোগান দেওয়া দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিঋণ গড়ে ৭-৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে কৃষিঋণ বাড়লেও দেশের কৃষকদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি এখনো প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাচ্ছে না। মূল টাকাটা ধনিক শ্রেণির মানুষ নিয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য কৃষি খাতে গভীর বিশ্লেষণ দরকার।
কৃষি উৎপাদনের সরকারি পরিসংখ্যান খুব কম নির্ভরশীল। খাদ্যশস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে মাছ-মাংস খাওয়ার যে পরিসংখ্যান আমরা পাচ্ছি, তা অনেক ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ নয়। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, দুধ ও মাংসের ক্ষেত্রে উৎপাদনের যে হিসাব দেওয়া হয়, বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল পাওয়া যায় না। তা ছাড়া বিভিন্ন পণ্যের ভোগ চাহিদার ক্ষেত্রেও সঠিক পরিসংখ্যানের অভাব। আমাদের উৎপাদন ও ভোগের পরিসংখ্যান প্রদানের ক্ষেত্রে যে নিয়ম অনুসরণ করা হয় তার চুলচেরা বিশ্লেষণ প্রয়োজন। সঠিক পরিসংখ্যানের জন্য দরকার পদ্ধতিগত সংস্কার।
কৃষি খাতে উৎপাদনের স্থবিরতা এবং বড় ধরনের আমদানিনির্ভরতা আমাদের শঙ্কার কারণ। এর সঙ্গে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং কৃষিকাজে তাঁদের উৎসাহ হারানো খুবই উদ্বেগের বিষয়। তা ছাড়া কৃষিজমি মালিকানায় ক্ষয়িষ্ণু ধারা এবং ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের সংখ্যাবৃদ্ধি বাণিজ্যিক চাষাবাদের বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষি উপকরণ জোগানের জন্য বিদেশনির্ভরতাও আমাদের উদ্বেগের বিষয়। আমাদের কৃষিব্যবস্থায় ক্রমাগতভাবে পরিবর্তন ঘটছে। এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্তের সমারোহ ঘটানো প্রয়োজন। এর জন্য গঠন করতে হবে কৃষি কমিশন। ওই কমিশন থেকে যে সুপারিশ আসবে, তা এই সরকার যতটুকু পারে বাস্তবায়ন করবে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের ওপর বাকিটা বাস্তবায়নের ভার থাকবে। এই অন্তর্বর্তী সরকার যদি কৃষি খাতে একটি রিভিউ করে যেতে পারে, তাহলে দেশের জন্য ভালো একটি কাজ হবে।
লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ। সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ