<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উভয় পক্ষের যৌথভাবে কাজ করে যেতে হবে, যাতে বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকে। ভোক্তাদের কোনো গুজবে কান দেওয়া যাবে না। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু সফলতা কম। সাধারণ মানুষ মনে করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবে মানুষের আশা পূরণ হয়নি বলে সমাজে আলোচনা চলমান। সবার কাছে একটিই প্রশ্ন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমছে না কেন? তবে নানা কারণে সরকার বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে নানা ধরনের তদবির বা লবিংয়ে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা ধান্দাবাজি করেন। এখন ওই সব ধান্দাবাজি কম থাকার কথা। তার পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে অনেক সময় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তাই বর্তমান সরকারের আরো কঠোর নির্দেশনা দিতে হবে এবং বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে, যাতে কেউ বাজার সিন্ডিকেট করতে না পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/22-12-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="220" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/22-12-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />এমনকি বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমেছে। তা সত্ত্বেও এবং সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাহলে সমস্যা কোথায়, সেটি দ্রুত অনুসন্ধান করে বের করতে হবে। তারপর বাজার সমস্যার সমাধান করা যাবে। দেশের বাজারে আলু, ভোজ্য তেল এবং পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরে বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট বাড়ছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহে তীব্র লড়াই করে সংসার চালাচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালোবাজারি বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করা হয়। কালোবাজারি সরাসরি প্রতারণা, জুলুম ও আর্থিক অস্বচ্ছতা প্রকাশ করে। তাই ব্যবসায়ীদের কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে। সমাজে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সর্বদা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং তারা বাজারে সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন। তাদের সবাইকে অনুরোধ করছি, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে বাজারে কালোবাজারি বা সিন্ডিকেট বন্ধ করুন। বর্তমান সরকারের হাতে সুবর্ণ সুযোগ বাজারের কালোবাজারি বন্ধ করে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর, যা জনগণের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামনে পবিত্র রমজান আসছে। রমজানে অনেক ভোগ্য পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এসব পণ্যের বেশির ভাগই আমদানিনির্ভর। ডলার সংকট এখনো সম্পূর্ণ কাটেনি। সমস্যা এখনো রয়েছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত এলসি খুলতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এ কারণেও রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আবার বাড়তে পারে বলে মনে করছে কেউ কেউ। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। তাই ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংককেও উদ্যোগ নিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলছে। দৈনন্দিন জীবনে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দরকার। চাল, আটা, ডাল, চিনি, তেল এর মধ্যে অন্যতম। অতীতের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, রমজানে তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের চাহিদা বাড়ে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোজ্য তেলের চাহিদা দেড় লাখ টন, রমজানে এই চাহিদা দাঁড়ায় তিন লাখ টনে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একইভাবে মাসিক চিনির চাহিদা দেড় লাখ থেকে বেড়ে তিন লাখ টনে এবং খেজুরের চাহিদা পাঁচ হাজার থেকে বেড়ে ৫০ হাজার টনে দাঁড়ায়। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে, যা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। ভোক্তার ওপর চাপ কমাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করা যেতে পারে। কিছু পণ্যের ওপর সরকার শুল্ক হ্রাস করেছে, যা ভালো পদক্ষেপ। আরো কী কী বিকল্প আছে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উদাহরণস্বরূপ, সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা থাকা উচিত, যাতে কোনো ক্রেতা রমজানের সময় একবারে ১০ থেকে ১৫ দিন বা তার বেশি পণ্য কিনতে না পারে। ক্রমবর্ধমান ডিম, পেঁয়াজ ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলেছেন। গরিব মানুষের কথা ভাবার সময় নেই তাদের। কোনো পণ্যের দাম একবার বাড়লে আর কমে না। এটি এখন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে আরো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষ যদি স্বস্তি বোধ না করে, তাহলে দাম কমাতে যতই ব্যবস্থা নেওয়া হোক না কেন, তা তেমন গুরুত্ব পাবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উচ্চমূল্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্রয়ে অক্ষমতার কারণে কিছু পরিবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারে না। এ অবস্থার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং না থাকা এবং ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মুনাফাকে দায়ী করছে সাধারণ ক্রেতারা। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলার প্রতিটি বাজারে নিয়মিত প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাজার পর্যবেক্ষণ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পর্যালোচনার জন্য কর্তৃপক্ষ জেলা পর্যায়ে ১০ সদস্যের একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে, যা ইতিবাচক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোলাবাজারে বিক্রয় কর্মসূচির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রিসহ সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক নেই। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলেরও। জাতীয় ভোক্তা সুরক্ষা অধিদপ্তরের নৈতিক দায়িত্ব অবশ্যই যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সরকারি কার্যক্রম আরো গতিশীল ও সক্রিয় হতে হবে। আপনি যদি অতীতে বিভিন্ন বড় বাজার জরিপ করেন, দেখতে পাবেন কিভাবে রমজান মাসে পণ্যের দাম ওঠানামা করে। রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে ও পরে দামের পার্থক্য লক্ষণীয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রমজান শুরু হলেই আমাদের দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এটি নতুন নয়। তবে অন্যান্য দেশে উৎসবের সময় দাম কমানো হয়। পবিত্র রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পণ্যের দাম কমানো হয় বেশি। বড়দিনে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় বাজারে। কিন্তু আমাদের দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রমজান মাস এলেই আমাদের দেশের খুচরা, মাঝারি, বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার উৎসবে মেতে ওঠেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সংযমী হতে হবে এবং অল্প করে লাভ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত তদারকি করতে হবে। রমজান আসার আগে থেকেই অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্যের দাম বাড়াতে না পারেন, সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখন থেকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে রমজানের সময় সুফল পাওয়া যায়।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সহজেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে প্রচুর মুনাফা করতে পারেন, যা মোটেও যৌক্তিক নয়। অধিকন্তু বেশির ভাগ ভোক্তা আসল ও নকল পণ্যের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। ফলে তারা প্রায়ই সমস্যায় পড়ে। তাই ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পর্যাপ্ত প্রচার করা উচিত, যাতে সাধারণ নাগরিকরা কিভাবে সঠিক পণ্য কিনতে হয় সে সম্পর্কে সচেতন হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো অন্যায় দেখলে ক্রেতাদের প্রতিবাদ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত যেকোনো নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় ভোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে, যাতে তারা তাদের অধিকার প্রকাশ করতে পারে। বৈশ্বিক সংকটে ভোক্তাদেরও সাশ্রয়ী হতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বছরের নভেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনে বর্ণনা করা হয়, বাংলাদেশের সোয়া দুই কোটির বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখানে সরকারের প্রচুর কর্মমুখী এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, যাতে তীব্র খাদ্যসংকট থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে নানামুখী সংকট চলছে, এই সংকটে টিসিবি যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করে, তাতে সাধারণ ভোক্তাদের অনেক উপকার হয়। নিঃসন্দেহে এটি সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ হবে। সব সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রতিটি এলাকায় ডিলার এবং ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকিযুক্ত পণ্য বিক্রি করা একান্ত জরুরি। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকার এগিয়ে আসুক, এটিই জনগণের প্রত্যাশা। আমাদেরও সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে রাজনীতি না করে সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ</span></span></span></span></p>