<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় দ্রুতই শেষ হয়ে আসছে। আগামী ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের একটা সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন বিদায়ি প্রেসিডেন্ট। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব না নিলেও বিষয়টি নিয়ে তৎপর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। একদিকে বাইডেন তড়িঘড়ি করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সারতে চাইছেন, এই লক্ষ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যদিও এই আলোচনা চলমান অবস্থায় ইসরায়েলের হামলাও অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ হামাস ইসরায়েলের ৩৪ জন জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ চাইছে। হামাসের এই অবস্থানকে এখন পর্যন্ত যৌক্তিক বলে মানছে না ইসরায়েল। এর পেছনে ইরানের প্ররোচনা রয়েছে এবং ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রতিক সময়ে হামাস ও হিজবুল্লাহর বাইরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও সোচ্চার রয়েছে বলে মনে করছে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সহযোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর মেয়াদের বাকি সময়ের মধ্যে যদি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত না হয়, তবে ইরানে হামলা চালানোর অনুমোদনের বিষয়টি একেবারে নাকচ করে দিচ্ছেন না জো বাইডেন। তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বাইডেনকে ইরানে হামলার বিষয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/12-01-2025/222/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="218" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/12-01-2025/222/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />এদিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গতি বৃদ্ধি, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতিসহ ইরানের প্রক্সিদের দুর্বল অবস্থান এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাসহ অন্যান্য দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরে ইরানে মার্কিন হামলা পরিচালনার জন্য এটিই উপযুক্ত সময় বলে বাইডেনকে বুঝিয়েছেন জ্যাক সুলিভান। আর সে জন্যই সম্ভবত ইরান গত ৭ জানুয়ারি থেকে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মহড়া শুরু করেছে। এমন একটি সময়ে তারা এ ধরনের মহড়া পরিচালনা করছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে তাদের ওপর সম্ভাব্য হামলার খবর চাউর হচ্ছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সমন্বয়ে নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা কেন্দ্রের সুরক্ষা সুদৃঢ় করা হয়েছে, যদিও তারা জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই এই মহড়া পরিচালিত হবে এবং তা আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ইসলামিক রিপাবলিকান বাহিনীর মুখপাত্র স্বীকার করে নিয়েছেন যে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা এই মহড়া পরিচালনা করছেন এবং পর্যায়ক্রমে বিপ্লবী বাহিনীর নৌবহর ও আধাসামরিক বাহিনী এতে যুক্ত হবে। ইরানের দিক থেকে এ ধরনের তৎপরতার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানান দেওয়া যে তাদের এ ধরনের স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে অক্ষত রয়েছে এবং তারা যেকোনো হামলার জবাব দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসে ইসরায়েলের হামলার ফলে তাদের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি জানানোর পর এটি ইরানের পক্ষ থেকে এক ধরনের জবাব হিসেবেও বিবেচনা করা যায়। গত বছরের জুলাই মাসে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ইরানের পক্ষ থেকে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে অক্টোবরের শেষ দিকে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে বাইডেন প্রশাসন ইরানে এই হামলা পরিচালনা করবে কি না, সেটি এখনো স্পষ্ট না হলেও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আলোচনার সাফল্য বা ব্যর্থতার ওপর তা অনেকটাই নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটিও উল্লেখ করা সংগত যে এর আগে বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি সমৃদ্ধ করতে দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কর্মসূচি চলমান রেখেছে এবং ২০ জানুয়ারির আগে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এমনটি হলে তা বাইডেনের ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পাল্টা হুমকি হিসেবে মনে করছে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে বাইডেন ইরানে হামলা চালানোর অনুমতি দেবেন, নাকি বিষয়টি পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনের জন্য তুলে রাখবেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে চাইছেন তিনি। বাইডেনের মতে, তিনি যদি এই মুহূর্তে ইরানে হামলা পরিচালনার অনুমতি দেন, তবে তা পরবর্তী প্রশাসনকে একটি নতুন ঝামেলা না চাইলেও টেনে নিতে বাধ্য করবে। তিনি তাঁর শেষ সময়ে এসে এমন কিছু না করার পক্ষপাতী, বরং সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে ২০ জানুয়ারির আগে যদি ইসরায়েলের জিম্মিদের জীবিত মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে হামাসকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সুতরাং পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে এটি ধারণা করা যেতে পারে যে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে হয়তো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন ধরনের বিতর্ককে এড়িয়ে চলাটাকেই পছন্দ করবেন বাইডেন। তবে সুলিভান ও বাইডেনের অপরাপর সহযোগীরা মনে করেন, ইরান বর্তমানে যথেষ্টই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে এবং এই সময়ে ইরানের ওপর মার্কিন হামলা পরিচালনা করা হলে, তা অদূর ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক উত্তেজনার ঝুঁকি কমাবে এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইরান যদিও অনেক দিন ধরেই বলে আসছে যে তারা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চায় না, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা নিজেদের নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় নিয়ে আগের অঙ্গীকার থেকে সরে আসছে। তারা এরই মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে ফেলেছে, যা দিয়ে তারা চারটি পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম। পরিস্থিতি বলছে, তারা দ্রুতই পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে হাঁটছে, যা ইসরায়েল ছাড়াও মার্কিন প্রশাসনকে উদ্বেগে রেখেছে এবং এই উদ্বেগ নিরসনে তাদের তরফ থেকে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সেটি নিশ্চিত করা সময়ের ব্যাপার। তবে আবারও বলে রাখা ভালো যে বাইডেন তাঁর মেয়াদের শেষ সময়ে এসে এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলেও ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনা শুরু করে দেওয়া তাঁর প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইরানের বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি বরাবরই কঠিন। ২০১৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আগ্রহে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিতকরণ নিয়ে যে ছয় জাতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এই চুক্তি থেকে সরে আসেন। ট্রাম্পের ২০১৭-২১ সময়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। শুধু তা-ই নয়, সে সময়ে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয় ট্রাম্পের নির্দেশে। ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ইরানের নেতাদের। তাঁরা খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছেন যে ২০২৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বড় ধরনের ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঠিক কী পদক্ষেপ নেবেন, সেটি খোলাসা না করলেও তিনি হামাসকে ইঙ্গিত করে জানিয়েছেন যে এই যুদ্ধের জন্য যে বা যারাই দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের কঠিনতম ব্যবস্থা নেবেন তিনি। ইরান এটিও ধারণা করছে যে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এ লক্ষ্যে ইসরায়েলকে ক্ষমতা দিতে পারেন, যেন তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করে ধ্বংস করে দেয়। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, হামাস-ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইরানের প্রক্সি এই গোষ্ঠীগুলোর ওপর তার আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ খর্ব হবে এবং এই অবস্থায় ইরানের ওপর তারা তাদের জিঘাংসা চরিতার্থ করতে পারবে। ট্রাম্পের হুমকিতে হামাস ও হিজবুল্লাহ কিছুটা হলেও ভীত হচ্ছে এবং দ্রুত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে তারা সম্মত হয়েছে। এই অবস্থায় ইরান তার এই প্রক্সিগুলোর ওপর বর্তমানে খুব একটা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারছে বলে মনে হয় না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসবের বাইরেও সিরিয়ায় আসাদের পতন ইরানের জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা। সব কিছু মিলে তাদের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ইরানের প্রতি যতটুকু কঠোর হওয়া প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশিই কঠোর ছিলেন তিনি। বারাক ওবামার সময়ে তেল নিষেধাজ্ঞার ওপর শর্ত সাপেক্ষে অবরোধ শিথিল করা হলেও ট্রাম্প আবার তা বহাল করেন। এবার ট্রাম্প দায়িত্ব নিতে চাইছেন আরো আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে। এরই মধ্যে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খালের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর জোরালো মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সব সময়ের বন্ধু ইসরায়েলকে রক্ষা করতে ইরানকে যে তিনি একচুল ছাড় দেবেন না, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">mfulka@yahoo.com  </span></span></span></span></p>