<p style="text-align:justify">মো. আবুল হাসেম শিকদার (৫০)। একসময় কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এই ব্যক্তি বর্তমানে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন, তা নিয়ে এলাকায় আলোচনা তুঙ্গে।</p> <p style="text-align:justify">আবুল হাসেমের পেশাগত যাত্রা শুরু হয় ফরিদপুর ডিসি অফিসের ট্রেসার পদে। মাত্র এক যুগ আগেও তার নিজের ও শ্বশুরবাড়ির আর্থিক অবস্থা ছিল নাজুক। পরিবারের সবাই সীমিত আয় ও জমিজমার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তাকে দ্রুতই অঢেল সম্পদের মালিক করে তুলেছে।</p> <p style="text-align:justify">হাসেমের নিজ এলাকা সালথার বোয়ালিয়া গ্রামে একাধিক ফসলি জমি রয়েছে। স্থানীয় বাজারে দোকান, ঢাকায় ও ফরিদপুরে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট, সাভারে জমি এবং আলফাডাঙ্গায় ফ্ল্যাট ভাড়া থেকে আয় করছেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, তার পরিবারের কাছে এখন বিলাসবহুল গাড়ি, সিএনজি, আইফোন এবং স্বর্ণালঙ্কারের অভাব নেই। এমনকি ফরিদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে তার উল্লেখযোগ্য শেয়ার রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয়রা জানান, সরকারি জমি বরাদ্দের কথা বলে কিংবা জমি অধিগ্রহণের সময় অর্থ আত্মসাৎ করে হাসেম এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সালথার নাসির তালুকদার অভিযোগ করেন, তার শ্বশুরের জমি অধিগ্রহণের সময় হাসেম ১৩ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরকারি সেবার নামে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় করে তিনি সম্পদ গড়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">হাসেমের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। একবার দুর্নীতির দায়ে চাকরি থেকে বরখাস্তও হয়েছিলেন তিনি। তবুও ক্ষমতা ও প্রভাবের জোরে তিনি পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে আসেন।</p> <p style="text-align:justify">হাসেমের গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, তার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। পরিবারের অন্য ভাইয়েরা শ্রমিক বা সামান্য চাকরির মাধ্যমে জীবনযাপন করেন। অথচ হাসেমের সম্পদের পরিমাণ এত বেশি যে, তার জীবনযাত্রা আর দশজনের সঙ্গে মেলে না।</p> <p style="text-align:justify">একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পক্ষে এ ধরনের অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। এলাকাবাসীর দাবি, এই অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।</p> <p style="text-align:justify">ডিসি অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত কর্মচারীদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু স্থানীয় প্রশাসনের নয়, গোটা দেশের সুশাসনের জন্য হুমকি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও সুষ্ঠু পদক্ষেপই কেবল এই ধরনের অনিয়মের লাগাম টানতে পারে।</p>