ছুটি শেষে ফিরুন আগের রূপে

  • ছুটিতে অনেকেই যান গ্রামের বাড়ি। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষের জন্য রোদ, বৃষ্টি, কাদা, পানি ও ধুলাবালি অনেক সময় ত্বক, চুল, নখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ছুটি কাটিয়ে শহরে এসে ফিরুন আগের ধাঁচে। রূপবিশেষজ্ঞ শোভন সাহার পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন অলকানন্দা রায়
শেয়ার
ছুটি শেষে ফিরুন আগের রূপে
বেড়ানোর সময় ধুলাবালি, অতিবেগুনি রশ্মিসহ নানা কারণে চুলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। বাড়ি ফিরে তাই চুলে চাই বিশেষ যত্ন।   মডেল : মিথিলা; ছবি : মনজু আলম

ত্বকের যত্ন

গ্রামের খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে সবারই।  কড়া রোদ গায়ে লেগে অনেক সময় ত্বক পুড়ে কালচে হয়ে যায়। মুখ, হাত, কপাল, ঘাড়, গলায় ছোপ ছোপ দাগ কিংবা ঠোঁট ফাটার সমস্যাও দেখা দেয় অনেকের। শহরে ফিরে এসে প্রথমে মনোযোগ দিন সেসব সারিয়ে তুলতে।

শুরুতে সেরে নিন ডিপ ক্লিনজিং পর্ব। সারা মুখে জমে থাকা ধুলাবালি ও ময়লা পরিষ্কার করে নিতে পারেন ফেসওয়াশ দিয়ে। এরপর করুন এক্সফোলিয়েশন। স্ক্রাব নিয়ে আলতো হাতে ঘষে নিন মুখ, ঘাড়, গলা ও হাতে।
এটি ত্বকের গভীর থেকে মৃত চামড়া দূর করতে সাহায্য করবে। এটা সপ্তাহে ২-৩ বার করা উচিত। এবার ত্বকের হাইড্রেশনের পালা। ময়েশ্চারাইজার ও হাইড্রেটিং ফেস প্যাক, দই ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সারা ত্বকে মাখুন।
১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক হারানো লাবণ্য ফিরে পাবে। বাইরে গেলে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। কারণ রোদে ত্বক আরো শুষ্ক হতে পারে। ত্বক সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে বেছে নিন ডিটক্স ড্রিংক।
পান করতে পারেন প্রচুর পানি, ডাব ও লেবুর শরবত।

চুলের যত্ন

সরাসরি সূর্যের আলো এবং তাপের কারণে চুলের ক্ষতি হয়। চুল রুক্ষ, লালচে ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। চুলের গোড়ায় ঘাম ও ময়লা জমে। এ কারণে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এসব সমস্যা মোকাবেলায় নারকেল, অলিভ বা ক্যাস্টর অয়েল হালকা গরম করে চুলে ম্যাসাজ করুন। ডিম, দই, মধু বা অ্যালোভেরা দিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরি করেও মাথার ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারেন। রুক্ষতা বেশি হলে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত

ছুটি শেষে ফিরুন আগের রূপে
হলদে হয়ে যাওয়া দাঁত পরিষ্কার করতে শাক সবজি ও ফলমূল উপকারী। মডেল : মুন; ছবি : মনজু আলম

নখের যত্ন

খোলা মাঠ পেয়ে অনেকেই দৌড়ে বেড়ান কিংবা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠেন। পুকুরের জলে সাঁতার কাটেন। এ সময় হাত বা পায়ের নখের কোনায় কাদা, ময়লা ঢুকে যায়। এমনকি কাদায় থাকা জীবাণুতে আঙুলের ফাঁকে ইনফেকশনও হতে পারে। এমন হলে পেডিকিউর, মেনিকিউর করিয়ে নিন। গরম পানিতে লবণ, লেবুর রস ও শ্যাম্পু মিশিয়ে হাত-পা ভালো করে ভিজিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে নখ ঘষে নিন। দুর্বল নখ কেটে ফেলুন। কোনায় ঢুকে থাকা ময়লা বের করে নিন। নখ শুষ্ক হলে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করুন। লেবু ও বেকিং সোডা নখের হলদে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। 

দাঁতের যত্ন

শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে অনেকেই দাঁত নিয়ে সমস্যায় পড়েন। অনেক টিউবওয়েলের পানিতে আয়রন, আর্সেনিক থাকে। এই পানি পান করলে অনেক সময় দাঁত কালো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বেকিং সোডার সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ব্রাশ করুন। তবে এটি সপ্তাহে ১-২ বারের বেশি করা উচিত নয়। এ ছাড়া স্ট্রবেরির সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়েও দাঁত পরিষ্কার করে নিতে পারেন। চারকোল পাউডার দিয়ে ব্রাশ করলেও দাঁত বেশ ঝকঝকে হয়ে উঠবে। দাঁত পরিষ্কার রাখতে ভালোভাবে ব্রাশ ও ফ্লাশ করুন। লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করুন। এতে দাঁতের ফাঁকে ময়লা জমে থাকলে দূর হবে। আপেল, গাজর, শসা দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় এসব ফল ও শাকসবজি রাখতে পারেন।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পাহাড়িদের প্রাণের উৎসবে

    পার্বত্যাঞ্চলে নতুন বছরকে বরণ করার বর্ণাঢ্য উৎসব—বৈসাবি। গত বছর এই উত্সব ঘুরে এসে লিখেছেন এলিজা বিনতে এলাহি
শেয়ার
পাহাড়িদের প্রাণের উৎসবে
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়, টিলা আর অরণ্যে বসবাসরত মানুষের উৎসব বৈসাবি। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নারী-পুরুষ, শিশুরা নদীর জলে ফুল ভাসায়।ছবি:  লেখক

আমাদের এই ব-দ্বীপটি আসলে একটি ভূ-স্বর্গ। এই ভূ-স্বর্গের একটি রঙিন ভুবন হলো পার্বত্যাঞ্চল। বৈচিত্র্যে ভরপুর। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিক প্রথা, উত্সব, খাদ্যাভ্যাস বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে একেবারেই ভিন্ন।

শুধু তা-ই নয়, এই অঞ্চলের রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। 

সেই ছেলেবেলা থেকেই পহেলা বৈশাখে রাজধানীর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছি।  বৈশাখের সময় বাংলাদেশজুড়েই ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা উৎসবের রেওয়াজ। পার্বত্যাঞ্চলে নতুন বছরকে বরণ করার বর্ণাঢ্য উৎসব—বৈসাবি।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়, টিলা আর অরণ্যে বসবাসরত মানুষের উত্সব বৈসাবি। মূলত ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বৈসুক, মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর বিজু। এই তিন অনুষ্ঠান মিলে বৈসাবি। এই তিন সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উত্সবকে একত্রে উদ্‌যাপন করার একটি প্রথা বৈসাবি।
চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের এই উত্সবকে চাকমারা বলে বিজু, বড়ুয়ারা বলে বিয়ু, অসমিয়ারা বলে বিহু, ত্রিপুরারা বলে বৈসুক, মারমারা বলে সাংগ্রাই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে যেটুকু জেনেছি বৈসাবি কিন্তু একক কোনো অনুষ্ঠান নয়। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ পার্বত্যাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি সম্প্রদায় নিজেদের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস থেকে নববর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজন করে নিজেদের প্রথা ও সংস্কৃতি অনুসারে।

পাহাড়িদের প্রাণের উৎসবে
কিশোর-কিশোরীরা মেতে উঠেছে বৈসাবি উৎসবে

 বেশ কয়েক বছর ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম বৈসাবি উত্সব দেখতে যাব। সে হিসেবে গন্তব্যস্থল রাঙামাটি।

কর্ণফুলী নদীর অশ্বখুরাকৃতি বাঁকের কোলে রাঙামাটি শহরের একটি অংশ সমতল, বাকি অংশে বেশ কয়েকটি টিলা, তার পাশেই সংরক্ষিত বন। কর্ণফুলীর ওপারে সমতল ভূমিতে চাকমা রাজার বাড়ি। রাঙামাটি শহরে চাকমা রাজার বাড়ির ঘাটে পালিত হয় এই উত্সব। 

পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা থেকে উৎসবের আগের দিন রাতে গিয়ে উপস্থিত হলাম রাঙামাটি শহরে। সেখানকার একটি আবাসন থেকে ভোর ৬টায় রওনা হলাম রাজবাড়ির ঘাটে। হ্রদ-পাহাড়ের শহর রাঙামাটি বিখ্যাত তার সৌন্দর্যের কারণে। শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় রয়েছে শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি বাজার বনরূপা বাজার। সেদিনের বাজার তখনো জমেনি। ঝকঝকে মেঘহীন সকাল। পথে যেতে যেতে দেখছি, কলাপাতায় নানা ফুল সাজিয়ে লাল, হলুদ ও নানা রঙা থামি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ যাচ্ছে ঘাটের দিকে। পুরো শহর মনে হচ্ছে রঙে মোড়ানো।

পাহাড়িদের প্রাণের উৎসবে
বৈসাবিতে ফুল ভাসাতে চলেছেন দুই তরুণ

তিন দিনব্যাপী বৈসাবি উত্সবের প্রথম দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। নদীতে ফুল ভাসিয়ে উদযাপন করা হয় ফুল বিজু। বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ভাসিয়ে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় এই উৎসবে। আজ সেই দিন। যে ঘাটে গিয়ে উপস্থিত হলাম সেখান থেকে আরো দুটি ঘাট দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি ঘাটেই কলাপাতায় নানা রঙের ফুল হাতে নিয়ে নর-নারীর ভিড়। 

সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মিলনে পালিত হয় বিজু উত্সব। ফুল বিজু, মূল বিজু আর গোজ্যপোজ্য। এই উত্সবকে একেক নামে অভিহিত করে একেক সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে বিজু উৎসব সব সম্প্রদায় একই দিনে পালন করে। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে চাকমা সম্প্রদায় বলে মূল বিজু, আগের দিনকে ফুল বিজু আর পহেলা বৈশাখ পরিচিত গোজ্যপোজ্য দিন হিসেবে। ফুল বিজুতে অংশগ্রহণ করতে হলে পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগেই উপস্থিত হতে হবে রাঙামাটি।

বিজু মানে আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া, নতুন পোশাক পরা। বিজু মানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা। এ ছাড়া ফুল ভাসিয়ে দেওয়ার নানা অর্থ রয়েছে যেমন—নদী দেবীকে ফুল দিয়ে তুষ্ট করা, বুদ্ধকে নিবেদন করা। কয়েকজন কিশোরীকে দেখলাম মাটির পাত্রে জল সংগ্রহ করছে। কারণ জানতে চাইলে বলল, বাড়িতে বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নানের জল নিয়ে যাবে। এতে পুণ্য হবে। চাকমা, মারমাদের কাছে খুব পবিত্র এই কাজ। 

ঘাটের একপাশ থেকে অন্য ঘাটে যেতে ইচ্ছা করছিল। জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে ভিন্ন ঘাটে যাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে উঠলাম নৌকায়। তিনটি ঘাটই ঘুরে দেখলাম। আমি ছাড়া বাকি সবাই স্থানীয়। কেউ কেউ ভীষণ আগ্রহ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বললেন। পোশাক আর কথায় বুঝতে পেরেছেন আমি অতিথি। নারীদের পরিহিত অলংকারগুলোর নাম জিজ্ঞাসা করলাম। উত্সবের নানা নাম ও পালন করার পদ্ধতি সেখানকার স্থানীয়জনদের থেকেই জেনেছি। ধীরে ধীরে সবাই ঘাট ত্যাগ করতে লাগল। স্থানীয় সাংবাদিক বিপ্লব বড়ুয়া আমাকে নিয়ে গেলেন চাকমা ও মারমাদের গ্রাম ঘুরে দেখতে। প্রায় প্রতিটি  চাকমা ও মারমা বাড়ির আঙিনায় ফুল গাছ। বিজু উপলক্ষে দরজায় ফুল ও নিমপাতা ঝুলিয়ে দিয়েছে। গরু ও ছাগলের গলায় ফুলের মালা। সেখানকার একজন বললেন, আগে সিন্দুক-আলমারিতে নাকি কুরুক ফুল বেঁধে দেওয়া হতো। কুরুক হলো কুর্চি বা গিরি মল্লিকা। এর ফুল, ফল, বাকল সবই আমাশয়ের ওষুধ।  চাকমা সাহিত্য ও গানে এই ফুলের জয়জয়কার। 

দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় খাওয়াদাওয়া। উত্সবের মূল খাবার পাজন ত্যোন । এটি চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। সাতাশ পদের সবজি-শাক ও শুঁটকি  দিয়ে পাজন ত্যোন রান্না করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পিঠাও খাওয়া হয় এ সময়। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্সবে এখন অনেক বদল এসেছে বললেন বিপ্লব বড়ুয়া। ফুল বিজুর দিনেই পাজন ত্যোন ও পিঠা খেয়েছি বিপ্লব বড়ুয়ার বাড়িতে। বিজু উত্সব চলাকালে কোনো জীবিত প্রাণী হত্যা করে না চাকমারা। 

বৈসাবি শুধু উৎসব নয়, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া, প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা, প্রকৃতির কাছে নতি স্বীকার করা। বৈসাবি পার্বত্যাঞ্চলের প্রাণের উৎসব । শুধু পাহাড়ের নয়—এ আমাদের সবার নতুন বছর উদযাপনের প্রাচীন প্রথা। শুধু যে ফুল বিজুর রঙিন ভুবনে অবগাহন করেছি এমন নয়। আধবেলা ফুরোমন পাহাড়েও ঘুরে বেরিয়েছি। ফুরোমন পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখেছি রাঙামাটি শহর।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

গৃহে থাক বৈশাখী সাজ

    বাংলা নববষের্র প্রথম দিনটি উদযাপিত হয় আড়ম্বরের সঙ্গে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বর্ষবরণ। মঙ্গল শোভাযাত্রা, মেলা, পুতুল নাচ, লাঠিখেলাসহ দিনভর চলে নানা রকম অনুষ্ঠান। এই আনন্দে সেজে ওঠে আমাদের গৃহও। কেমন করে? জানাচ্ছেন চান্দ্রেয়ী মম
শেয়ার
গৃহে থাক বৈশাখী সাজ
বৈশাখে ঘর সেজে উঠুক দেশি নানা উপকরণে। ছবি : সংগৃহীত

পহেলা বৈশাখ মানেই পুরনোকে ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলার আহ্বান। এর আয়োজন শুরু হয় মূলত চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে। ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের পর চলে ঘর সাজানোর আয়োজন। এই দিন সবাই চেষ্টা করে বিভিন্ন দেশি উপকরণ ব্যবহার করে ঘর সাজাতে।

  ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘খাবার টেবিলে রাখতে পারেন মাটির প্লেট, বাটি, জগ, গ্লাস। ঘরের কোণ বা দেয়ালে শোভা পায় মাটির শোপিস, ফুল, নকশি কাঁথা, শীতল পাটি ইত্যাদিতে। ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো এভাবেই আমাদের গৃহকোণে শোভা বাড়ায়। সাজানো-গোছানো ঘর মনে প্রশান্তি আনে।
আর সেটা যদি হয় নববর্ষে, তবে সেই প্রশান্তি বেড়ে হয় দ্বিগুণ।’ 

 

প্রবেশদ্বার

বাড়ির প্রবেশদ্বার থেকেই সাজসজ্জা শুরু করতে পারেন। প্রথমত দুই-তিনটা মাটির মালসা নিন। এগুলোর আকৃতি নির্ভর করবে বাড়ির আকারের ওপর।

গেট বড় হলে, আলাদা বাড়ি হলে বা ফ্ল্যাটের সামনে অনেকটা জায়গা ফাঁকা থাকলে বড় আকারের মালসা নিলে ভালো। ফ্ল্যাট বা বাড়ি ছোট হলে তিনটি ছোট-বড় আকারের মালসা নিয়ে তাতে পানি নিয়ে ওপরে গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতে পারেন। ছোট ছোট কিছু তাজা ফুল ভাসিয়ে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় ঘরে অনুষ্ঠান থাকলে পানির ওপর ভাসমান মোমবাতি বসিয়ে দিলে ভালো লাগবে। ঘরের দেয়াল প্রশস্ত হলে ছোট-বড় নানা আকৃতির মুখোশ ঝুলিয়ে দিলেও সুন্দর দেখাবে।

গৃহে থাক বৈশাখী সাজ
রিকশা পেইন্টের নকশা করা কেটলি ও কাপে পরিবেশন করতে পারেন চা। ছবি : সংগৃহীত

বসার ঘর

বসার ঘরটাকে সাধারণত সবচেয়ে বেশি সুন্দর করে সাজানো হয়। কারণ অতিথিরা এ ঘরেই বেশির ভাগ সময় বসেন। জানালার পর্দাগুলো হতে পারে বিভিন্ন রঙের। সোফার কভারে একটু সফট টোনের রং ব্যবহার করা যায়। একটি কর্নারকে বড়-ছোট বিভিন্ন টবের গাছ, মানিপ্ল্যান্ট, ফার্ন ইত্যাদি দিয়ে সাজালে ঘরের আবহই বদলে যাবে। এর সামনে মাটির ঘোড়া, হাতি, পালকি, লণ্ঠন ইত্যাদি নানা শোপিস রাখা যায়। এই কর্নারের উল্টোদিকে ফ্লোরে ছোট ম্যাট্রেস দিয়ে তৈরি করা যায় একটি বসার স্পেস। তার ওপর চাদর দিয়ে কিছু ছোট-বড় কুশন রেখে দেওয়া যায় ভিন্নমাত্রা। সবাই যখন জমায়েত হবে তখন অল্প বয়সী বাচ্চারা এখানে বসতে পারবে।

 

খাবার ঘর

ডাইনিং স্পেসে টেবিলের চেয়ার কভার গ্রামীণ চেকের ছোট ছোট চেকের হালকা হলুদ, হালকা সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। টেবিলের রানার, ম্যাটও একই কাপড়ের হলে দেখতে ভালো লাগবে। খাবার পরিবেশনের সময় মাটির কাপ-পিরিচ, গ্লাস, জগ, প্লেট, বাটি ইত্যাদির সঙ্গে কাঠের চামচ বা নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি চামচ ব্যবহার করা যায়। সাধারণত পহেলা বৈশাখে গরম থাকে। তাই অতিথিদের জন্য তেঁতুলের শরবত বা লেবুর শরবত তৈরি করে রাখা যেতে পারে।

গৃহে থাক বৈশাখী সাজ
মাটির থালা-বাটিতে খাবার পরিবেশনে ফুটিয়ে তুলতে পারেন বৈশাখী আমেজ। ছবি : সংগৃহীত

শোবার ঘর

উত্সব পার্বণে সাধারণত দরজা-জানালার পর্দা বদলানো হয়, বিছানার চাদরও বদলে নেন অনেকে। পহেলা বৈশাখে রঙিন পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। জানালা বা দরোজায় দুদিকে দুটি লাল পর্দা এবং মাঝে একটি হলুদ, একটি কমলা পর্দা দিয়ে সাজাতে পারেন। এ ছাড়া কমলা, হালকা সবুজ, হালকা নীল, সি গ্রিন ইত্যাদি মাল্টিকালার ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে। এ ক্ষেত্রে বিছানার চাদর ক্রিম, অফ হোয়াইট বেছে নিতে পারেন। কেউ চাইলে নকশি কাঁথা স্টিচ করা বিছানার চাদর, ব্লক-বাটিকের চাদর, বালিশের কভার ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি বিছানায় শীতল পাটিও বিছাতে পারেন। এ ছাড়া ঘরের এক কোনায় মাটির মালসায় জল দিয়ে ফুল, পাপড়ি, মোমবাতি ভাসিয়ে দিলে মন হবে ফুরফুরে।

পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে দেশি উপাদান ও উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। এতে দেশি আমেজটা বজায় থাকবে। চাইলে ঘরের মেঝেতে ছোট আকৃতির আলপনা করতে পারেন। এ ছাড়া ফুলদানিতে কিছু রজনীগন্ধার স্টিক দিয়ে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় চন্দন কাঠের ধূপ জ্বালিয়ে রাখলে সুগন্ধির আমেজে জমে উঠবে বৈশাখী বৈঠক।

 

কোথায় পাবেন

হাতে তৈরি নানা রকম মুখোশ, পেইন্টিং, শোপিসগুলো সাধারণত নববর্ষের ১০-১৫ দিন আগে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পাওয়া যায়। মাটির তৈরি বাসনকোসন ও মালসা পাবেন আড়ং, ভূমি, আর্টিসানসহ নানা দেশি ব্র্যান্ডের শো রুমে। দোয়েল চত্বর, মিরপুর-২, মিরপুর-১০ বিভিন্ন জায়গায় এগুলো কিনতে পাওয়া যায়। শাহবাগ ফুলের মার্কেট থেকে তাজা ফুল কিনে নিতে পারেন। গ্রামীণ চেক, হোমটেক্স, আড়ং ব্র্যান্ডের দোকান থেকে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা, চেয়ার কাভার, রানার, ম্যাট পাওয়া যাবে। শাঁখারীবাজারের দোকানগুলোয় পাওয়া যাবে বিভিন্ন সুবাসের ধূপধুনো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

গরমে আরামের পাঁচ পদ

    গরমের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় পাতে রাখতে পারেন এমন সব পদ যেগুলো শরীরের জন্য আরামদায়ক। এমন পাঁচটি রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী সুতপা দে
শেয়ার
গরমে আরামের পাঁচ পদ

ডিমের বড়া দিয়ে কাঁচা আমের টক

এই পদটি খেতে একটু ব্যতিক্রমী ও দারুণ স্বাদযুক্ত। মাছের ডিমের বড়ার মচমচে স্বাদ আর কাঁচা আমের টক ঝাল ঝোল একসঙ্গে মিশে অসাধারণ একটা ফিউশন তৈরি করে

উপকরণ

 

মাছের ডিমের বড়ার জন্য, মাছের ডিম ১ কাপ (রুই, কাতলা বা যেকোনো), কাঁচা মরিচ ২টি (কুচি করা), লবণ স্বাদমতো, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ (কুড়মুড়ে করার জন্য), সরিষার তেল ভাজার জন্য

 

কাঁচা আমের টকের জন্য

 

কাঁচা আম ১টি (খোসা ছাড়িয়ে ফালি করে কাটা), পানি ২ কাপ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ২টি, কালো সরিষা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ২ টেবিল চামচ

গরমে আরামের পাঁচ পদ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   মাছের ডিম ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।

২.   একটি বাটিতে মাছের ডিম, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লবণ, চালের গুঁড়া দিয়ে মাছের ডিম মিশিয়ে নিন।

৩.   মাঝারি আঁচে কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে বড়া আকারে দিয়ে ভেজে তুলুন।

 

কাঁচা আমের টক রান্না

১.   কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ ও কালো সরিষা ফোড়ন দিন।

২.   এতে কাঁচা আম দিয়ে হালকা ভাজুন। এরপর হলুদ, লবণ ও পানি দিন।

৩.   আম নরম হলে চিনি দিন ও কিছুক্ষণ ফুটতে দিন।

৪.   টক একটু ঘন হলে মাছের ডিমের বড়াগুলো দিয়ে নেড়ে দিন। ২-৩ মিনিট দমে রেখে নামিয়ে ফেলুন।

৫.   গরম গরম ভাতের সঙ্গে মাছের ডিমের বড়া দেওয়া কাঁচা আমের টক গরমকালে দারুণ লাগবে।

 

পোস্ত দিয়ে আলু ভাজি

পোস্ত দিয়ে আলু ভাজা একটি সহজ ও সুস্বাদু বাঙালি পদ।

এটি কম উপকরণে তৈরি করা যায় এবং ভাতের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যায়।

উপকরণ

আলু ২টি (মাঝারি, লম্বা করে কাটা), পোস্ত (খসখসে দানা) ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ২টি, কাঁচা মরিচ ১টি, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, হলুদ গুঁড়া সিকি আধা চামচ, কালো জিরা আধা টেবিল চামচ।

​​​​গরমে আরামের পাঁচ পদ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করুন। কালিজিরা, শুকনা মরিচ ও কাঁচা মরিচ দিন।

২.   এরপর আলু দিয়ে লবণ ও হলুদ গুঁড়া ছড়িয়ে ভালো করে ভাজুন।

আলু সিদ্ধ হলে পোস্ত দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে দিন।

৩.   ঢেকে মাঝারি আঁচে রান্না করুন ১ মিনিট। আলু নরম হলে ও পোস্ত ভালোভাবে মিশে গেলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন মজাদার পোস্ত দিয়ে আলু ভাজি।

 

 

গন্ধরাজ লেবু দিয়ে মসুর ডাল

দটি দারুণ সুগন্ধি ও রুচিকর, যা ভাতের সঙ্গে খেতে অসাধারণ লাগে।

উপকরণ

মসুর ডাল ১ কাপ, পানি ৩ কাপ, গন্ধরাজ লেবুর রস ১ টেবিল চামচ (স্বাদ অনুযায়ী), গন্ধরাজ লেবু ২-৩ টুকরা (ঐচ্ছিক), কালো সরিষা আধা চা চামচ, শুকনা মরিচ ২টি,

কাঁচা মরিচ ২টি (ফালি করা), সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, হলদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো

গরমে আরামের পাঁচ পদ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   ডাল ভালো করে ধুয়ে ৩ কাপ পানির সঙ্গে একটি পাতিলে দিন। হলুদ ও লবণ দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে ১০-১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন।

২.   কড়াইতে সরিষার তেল গরম করুন। শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ ও কালো সরিষা দিন।

৩.   সিদ্ধ করা ডাল কড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নেড়ে দিন। ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন। গন্ধরাজ লেবুর রস ও খোসার টুকরা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন।

৪.   চুলা বন্ধ করে ঢাকা দিন ১-২ মিনিট। এরপর নামিয়ে ভাত বা রুটি সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

লাউ শাক পোস্ত

 

উপকরণ

২টি লাউ শাকের ডগা, ২টি মাঝারি আলু লম্বা করে কাটা, ৫০ গ্রাম পোস্ত বাটা, লবণ স্বাদমতো, ৪টি কাঁঁচা মরিচ, পরিমাণমতো সরিষার তেল

​​​​গরমে আরামের পাঁচ পদ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   লাউ শাক ও আলু কেটে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। গরম পানিতে পোস্ত ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বেটে নিন।

২.   কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে কাঁচা মরিচ, আলু দিয়ে একটু ভেজে নিন। এবার শাক দিয়ে দিন।

৩.   চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। পানি বেরিয়ে শাক সিদ্ধ হয়ে এলে লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। আলাদা পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৪.   আবারও ঢাকা দিয়ে রান্নাটা হতে দিন। এরপর পোস্ত বাটা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

 

 

গুগলি (শামুক) ঝাল রেসিপি

গুগলি বা শামুকের ঝাল গ্রামবাংলার একটি জনপ্রিয় পদ। এটি একটু ঝাল-ঝোল স্বাদের হয় এবং ভাতের সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।

উপকরণ

গুগলি (শামুক) ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২টি (কুচি করা), রসুন ৫-৬ কোয়া (বাটা), আদা ১ চা চামচ (বাটা), টমেটো ১টি (কুচি করা), কাঁচা মরিচ ৩-৪টি (ফালি করা), শুকনা মরিচ ২টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লাল মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো

গরমে আরামের পাঁচ পদ

যেভাবে তৈরি করবেন

১.   গুগলির খোলস ভালো করে ধুয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে ৫-৭ মিনিট সেদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা হলে খোলস ভেঙে ভেতরের অংশ বের করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

২.   কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ ও পেঁয়াজ দিন।

৩.   পেঁয়াজ হালকা বাদামি হলে রসুন-আদা বাটা দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন।

৪.   টমেটো, হলুদ, লাল মরিচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার গুগলি দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন যাতে মসলা ভালোভাবে মিশে যায়। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢেকে ১০-১২ মিনিট রান্না করুন।

৫.   শেষে গরম মসলা, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা ছিটিয়ে নামিয়ে গরম ভাত বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।

মন্তব্য

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই

    সংসার নিয়ে স্বপ্ন বোনেন যেকোনো নবদম্পতি।  তবে নীড় ছোট হলে চিন্তায় পড়ে যান অনেকে। কিছু নিয়ম মানলে সাধ্যের মধ্যে সাজাতে পারেন আপনার সাধের সদর-অন্দর। পরামর্শ দিয়েছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরীন চৌধুরী। লিখেছেন আতিফ আতাউর
শেয়ার
নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
মডেল : রিসাত ও সাঈকা ছবি : শেখ সাদি

বিয়ের পর পাঁচ বছর যৌথ পরিবারে ছিলেন রুবানা ও শামীম দম্পতি। সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়ানোর উদ্দেশ্যে গাজীপুর জেলা সদরে এসে নতুন সংসার পেতেছেন। ঢাকার নিউমার্কেটে এসেছিলেন সংসার সাজানোর জিনিসপত্র কিনতে। বললেন, ‘নিজের একার একটা সংসারের সাধ ছিল মনের মধ্যে।

তাই ধীরে ধীরে সংসার সাজাচ্ছি।’

বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পরই ঢাকা এসেছেন মামুন ও তৃণা দম্পতি। দুই রুমের ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে উঠেছেন। ক্র্যাফটের কাজ জানেন তৃণা।

নিজের করা ক্র্যাফট দিয়ে ঘর সাজিয়েছেন। ছুটি পেলেই এটাসেটা কিনতে ছুটে যান মার্কেটে। বললেন, ‘ছোট থেকেই ঘর সাজানো আমার শখ। এখন তো নিজের সংসার।
তাই শখের পাল্লাটা আরো ভারী।’ 

নতুন সংসারের নতুন ঘর তো খালি ক্যানভাস। সেই ক্যানভাস একেকজন একেকভাবে রাঙিয়ে তোলেন। সাধ্যের মধ্যে ছোট ছোট সাধ পূরণ করতে নিজেদের মতো উপায়ও বের করেন দম্পতিরা। এ জন্য কিছু নিয়মও মানতে পারেন।

ধীরে ধীরে সেজে উঠবে সুখের সাজানো সংসার। গৃহ সাজাতে নিচে দেওয়া উপায়গুলো মানতে পারেন।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
বারান্দায় টবে মৌসুমি ফুলগাছ ঝুলিয়ে দিতে পারেন

শোবার ঘর

সংসার রাষ্ট্র হলে শোবার ঘর তার সংসদ। এখান থেকেই পরিচালিত হয় সংসার। আরামদায়ক ও সুন্দর একটা খাট শোবার ঘরে আলাদা সৌন্দর্য এনে দেয়। সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে ক্লান্তি কাটাতে আরামদায়ক বিছানা বেছে নিন। ম্যাট্রেস, চাদর, বালিশ এবং খাটের উচ্চতা যেন যুতসই হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। ঘরে বেশি জায়গা পেতে চাইলে কম উচ্চতার খাট বেছে নিতে পারেন। দুই রুমের ছোট বাসায় চাইলে সোফা কাম বেডসেটও ব্যবহার করতে পারেন শোবার ঘরে। এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে এতে।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
শোবার ঘরের মেঝেতে নকশা করা মাদুর, কার্পেট বা শতরঞ্জি বিছিয়ে দিলে সুন্দর লাগবে 

বসার ঘর

বাড়িতে কেউ এলে এখানেই আগে বসেন। তাই বসার ঘরের সুন্দর সাজ আপনার রুচির সঙ্গে অতিথির পরিচয় করিয়ে দেবে। এই ঘরের দেয়ালে ফ্রেম করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন নিজেদের বিয়ের নানা মুহূর্ত। বসার ঘরের দরজার পাশে স্বাগতবার্তার সঙ্গে নবদম্পতির নামও লিখে রাখতে পারেন। ছোট্ট অ্যাকোয়ারিয়ামে রঙিন মাছের খেলাধুলাও বসার ঘরকে প্রাণবন্ত করে তুলবে। ঘরে শৈল্পিক আমেজ এনে দেবে চিত্রকর্ম। ছাদ থেকে স্পটলাইট দিয়ে দেয়ালের ফটোফ্রেম, পেইন্টিং, হাইলাইট করে নিলে আরো সুন্দর দেখাবে। অতিথির জন্য বাসায় আলাদা ঘর না থাকলে এখানে ভাঁজখোলা সোফা রাখতে পারেন। মেঝেতে শতরঞ্জি বা কার্পেটের ওপর নকশিকাঁথার চাদরের সঙ্গে কুশন পেতেও বসার জায়গা করে নিলে ভালো দেখাবে। বসার ঘর বড় হলে দোলনা রাখতে পারেন। অবসরে দোল খেতে মন্দ লাগবে না। যেভাবেই সংসার সাজিয়ে তুলুন না কেন, তাতে দুজনেরই ভালোলাগাকে প্রাধান্য দিন। 

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
মানানসই পর্দা গৃহসজ্জায় এনে দেবে অভিজাত ভাব

রান্নাঘর

অল্প কিছু জিনিস নিয়েই শুরু হয় নতুন সংসারের রান্নাঘর। তাই বেশি কিছু না কিনে এমন কিছু কিনুন, যেগুলো একান্তই দরকারি এবং ব্যবহারে সহজ হয়ে উঠবে রান্নাঘরের কাজ। বাজেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর একটা তালিকা করে নিন। রান্নাঘরের জিনিস গুছিয়ে রাখতে কেবিনেট বা র্যাকের ব্যবস্থা রাখুন। সব কিছুর জন্য আলাদা পাত্র রাখলে কাজে সুবিধা পাবেন। রান্নার সরঞ্জামাদি ভাগে ভাগে গুছিয়ে রাখুন রান্নাঘরের নির্দিষ্ট স্থানে, হাত বাড়ালেই যাতে পাওয়া যায়। এই যেমন একদিকে সব ধরনের চামচ রাখতে পারেন। আবার আলাদা একটা নিরাপদ জায়গায় রাখতে পারেন কাটাকুটির সরঞ্জাম। কিচেন ক্যাবিনেটের বিভিন্ন তাকে অনায়াসেই নানা জিনিস সাজিয়ে রাখতে পারেন।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
Caption

দেয়াল কাবার্ড

জামা-কাপড় রাখার জন্য ফ্ল্যাটের দেয়াল কাবার্ড ব্যবহার করতে পারেন। মিস্ত্রি ডেকে চাহিদামতো নকশায় তৈরি করে নিন দেয়াল আলমারি। সিলিং উচ্চতার দেয়াল আলমারি ঘরের জায়গা বাঁচাবে। অথবা একটু একটু করে টাকা জমিয়ে নিজেদের পছন্দমতো আলমারিও কিনে ফেলতে পারেন।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
প্রবেশ দরজার মুখেই রাখতে পারেন অ্যাকোয়ারিয়াম ও শো পিস

 

ছোট বা বড়, সোফা চাই

রেডিমেড সোফা তো পাওয়াই যায়। চাইলে পছন্দমতো কাস্টমাইজড সোফাও বানিয়ে নিতে পারেন। ওয়েবসাইটেই পাবেন অসংখ্য সোফার ডিজাইন। কাপড়, ফোম, অন্যান্য উপকরণ কিনে মিস্ত্রি ডেকে নিজেরাই বানিয়ে নিন পছন্দসই সোফা। সোফা রাখার জায়গা কিংবা কেনার সাধ্য না থাকলে ম্যাট্রেস বিছিয়ে দিতে পারেন বসার ঘরে। আড্ডা, বই পড়া থেকে ল্যাপটপে অফিসের কাজ সেরে নিতে পারবেন এখানে।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
সংসারের খুটিনাটি সব কিছুই আগলে রাখুন। যত্ন নিন। আনন্দে অবসর কাটবে। জিনিসপত্রও দীর্ঘদিন ভালো থাকবে

খাবার ঘর

দুজনের সংসারে খাবার টেবিল নিয়ে বেশ চিন্তাতেই পড়তে হয় নব দম্পতিকে। সর্বক্ষণ দুজন থাকলেও বন্ধু বা আত্মীয় এলে সমস্যায় পড়তে হয়। এমন হলে খাবার টেবিলে চেয়ারের পাশাপাশি বেঞ্চ রাখতে পারেন। ব্যবহার শেষে আবার টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে রাখা যায় বেঞ্চ। সদস্য বেড়ে গেলে বেঞ্চটা বের করে পেতে দিলেই সমাধান।

নীড় ছোট, ক্ষতি নেই
ঘরে প্রাকৃতিক আলো ঢোকার ব্যবস্থা রাখুন। নান্দনিক ফুলের টব, ওয়াল ল্যাম্প, দেয়ালচিত্র ও কুশন কভারও ঘরের শোভা বাড়াবে

ড্রেসিং টেবিল

ছোট সংসারে এমন ড্রেসিং টেবিল বেছে নিন যেটা ঘরের জায়গা বাচাবে। আলমারির সঙ্গে বড় আয়না জুড়ে দিয়ে এখানেই সারতে পারেন সাজগোজ। জায়গা কম হলে বাথরুমেই বড় আয়না লাগিয়ে ড্রেসিং টেবিল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

 

বারান্দা

একসঙ্গে চা খাওয়া বা অবসরে গল্প করার জন্য বারান্দাকেই বেছে নেন বেশির ভাগ দম্পতি। এখানে কেউ ছোট টি-টেবিল ও টুল রাখতে পারেন। বারান্দায় দোলনা ঝুলিয়ে নিতে পারেন, রাখতে পারেন বড় বিন ব্যাগ। অবসরটুকু আরো আনন্দময় করে তুলতে বারান্দা বাগান করতে পারেন। বাগানের ফুল, লতাপাতা মনকে খুশিতে ভরে তুলবে।

 

ছোট্ট লাইব্রেরি

বই পড়তে পছন্দ করলে বাসাতেই করতে পারেন লাইব্রেরির ব্যবস্থা। আমেরিকান সমাজ সংস্কারক হেনরি ওয়ার্ড বিচার বলেছেন, ‘লাইব্রেরি কোনো শৌখিনতার বিষয় নয়; বরং এটি একটি প্রয়োজনীয়তা।’ যেকোনো সংসারের সাজে এক নিমিষেই রুচির ছোঁয়া এনে দিতে পারে একটি লাইব্রেরি। বই রাখার নান্দনিক আলমারি বা তাক বই গুছিয়ে রাখবে আবার ঘরের সৌন্দর্যেও এনে দেবে ভিন্নমাত্রা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ