<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতি এক হাজার সদ্যোজাত শিশুর প্রায় আটজনের হার্টে জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। যেসব শিশু অপরিণত অবস্থায় অর্থাৎ স্বল্প ওজন (জন্মকালীন ওজন দুই হাজার ৫০০ গ্রামের নিচে) বা অকালপ্রজ (গর্ভকাল ৩৭ সপ্তাহের কম) হয়ে জন্ম নেয়, তাদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমস্যা ধরা পড়ে জন্মের পর</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই অসুখ সামান্য বা খুব মারাত্মক রকমেরও হতে পারে। গর্ভকালীন অবস্থায় শিশুর রক্তসঞ্চালন মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকার কারণে হার্টের মারাত্মক ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সচরাচর ওই সময়ে শিশুর বিপদ ঘটে না। কিন্তু জন্মের পরপরই যখন শিশুর হার্ট স্বাধীনভাবে কাজ করতে যায় কিংবা শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্রের বৃদ্ধি ঘটে, তখন এসব ত্রুটি সমস্যার সৃষ্টি করে, অসুখের জটিলতা বাড়ায়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রয়োজন দ্রুত শনাক্ত </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জন্মের এক সপ্তাহ বয়সের মধ্যে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ এবং এক মাস বয়সের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত এই হৃদরোগ নির্ণয় করা সম্ভব। অন্যদিকে প্রতি হাজারে মাত্র দু-তিনজন হার্টের জন্মগত অসুখ নিয়ে জন্মানো শিশু এক বছর বয়সের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ নিয়ে হাজির হয়। তাই আগেভাগে যাতে রোগ ধরা পড়ে সে বিষয়ে মা-বাবার সতর্ক থাকা দরকার।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অসুখের কারণ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখনো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগের কারণ অজানা রয়ে গেছে। এই অসুখ কদাচিৎ বংশগত কারণে দেখা দিতে পারে। ৩ শতাংশ জিনের গঠনগত ত্রুটি এবং ৫ থেকে ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রমোজোমের অস্বাভাবিকতা রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডাউন ও টারনার সিনড্রোমের কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গর্ভাবস্থায় মা জার্মান হাম (রুবেলা) ডায়াবেটিস, এসএলই ইত্যাদি রোগে ভুগলে বা নির্দিষ্ট ক্ষতিকর ওষুধ সেবন করলে শিশুর হার্টে জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। এ রকম ওষুধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লিথিয়াম, ইথানল, থালিডোমাইড এবং খিঁচুনি বন্ধের কিছু ওষুধ।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুর এই সমস্যা কী করে বোঝা যায়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হার্টের জন্মগত রোগগুলো মূলত দুই শ্রেণির হয়ে থাকে। একটি সায়ানোটিক, অন্যটি এসায়ানোটিক। প্রথম গ্রুপের রোগে শিশুর ঠোঁট, জিভ বা নখের সাদা অংশ নীলচে হয়ে যায়। নীল বর্ণ সব সময় থাকবে, তা অবশ্য নয়। সাধারণত শিশু কেঁদে উঠলে নীল বর্ণ বেশি স্পষ্ট হয়। এ ছাড়া শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। কখনো খিঁচুনি দেখা যায়। সায়ানোটিক হার্ট ডিজিজের শিশুকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্লু বেবি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলা হয়ে থাকে। এ গ্রুপের মধ্যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফেলটস টেট্রালজি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের অসুখই বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে খুব জটিল অবস্থা ছাড়া এসায়ানোটিক কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের বাচ্চার এই নীল বর্ণ ভাব থাকে না। শিশু ঘন ঘন সর্দিকাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত থাকে। এই শ্রেণির অসুখের মধ্যে ভিএসডি, এএসডি ও পিডিএ প্রধান। শিশুদের জন্মগত হার্টের অসুখের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ থাকে ভিএসডি এবং এই রোগের ভবিষ্যৎ তুলনামূলক ভালো। এসায়ানোটিক গ্রুপের অসুখে হার্টের প্রকোষ্ঠের মধ্যে ফুটো থেকে যায়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগেভাগে বোঝার উপায়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব ছাড়াও হার্টের জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুর সাধারণ কিছু লক্ষণ থাকে। অন্যান্য শিশুর তুলনায় এরা বুকের দুধ একনাগাড়ে টানতে পারে না। একটু টেনেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঘুমিয়ে যায়, কিন্তু যেহেতু পেট ভরে না, তাই অল্প সময়ের মধ্যেই জেগে উঠে কাঁদতে থাকে এবং দিনভর এ রকম চলতে থাকে। মায়ের ভাষ্য অনুযায়ী </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশ বিরক্ত করে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অত্যধিক ঘামে, বিশেষত কপাল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর সঙ্গে দ্রুত হূত্স্পন্দন, দ্রুত শ্বাস, কখনো কখনো শ্বাসকষ্টের শব্দ শোনা যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সর্বোপরি শিশু ঠিকমতো বাড়ে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব দেখা গেলে মা-বাবা ও অভিভাবকের সতর্ক হওয়া দরকার। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত অনতিবিলম্বে। তখন হার্টের শব্দ শুনে প্রয়োজনে বুকের এক্স-রে, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি ইত্যাদি করিয়ে রোগ নির্ণয় নির্দিষ্ট করা যায়।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অভিভাবকদের করণীয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জন্মের পরপরই নবজাতককে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা শিশুর জন্মগত এই হৃদরোগ যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, ততই মঙ্গল। এসবের মধ্যে অনেক রোগ চিকিৎসার সাহায্যে সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগের বাচ্চার জন্মগত হৃদরোগ থাকলে পরবর্তী গর্ভধারণে তা হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ২ থেকে ৬ শতাংশ বেশি থাকে এবং পর পর দুই শিশুতে তা হয়ে থাকলে তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো। এ কারণে মাকে পুরো গর্ভকালীন অবস্থায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল</span></span></span></span></p>