রোজাদারের দাঁত ও মুখের যত্ন

ডা. অনুপম পোদ্দার
ডা. অনুপম পোদ্দার
শেয়ার
রোজাদারের দাঁত ও মুখের যত্ন

রমজান মাসে প্রাত্যহিক রুটিন বদলে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে খাবার ও পানি গ্রহণ না করার কারণে মুখের লালা উৎপাদন কম হয়। এর ফলে মুখগহ্বর ও জিহ্বা শুকিয়ে যায়। মুখের অভ্যন্তর শুষ্ক থাকায় তৈরি হয় দুর্গন্ধ।

এ জন্য রমজান মাসে মুখ ও দাঁতের বাড়তি যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব নিয়ম মেনে চললে মুখের দুর্গন্ধ দূর করা যাবে, তা নিচে দেওয়া হলো

 

সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ ও মেসওয়াক ব্যবহার

সাহরি ও ইফতারের পর নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত, মাড়ি ও জিহ্বা ঠিকভাবে পরিষ্কার করার জন্য অন্তত দুই মিনিট ধরে ব্রাশ করতে হবে। ধর্মীয় দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মেসওয়াকের ব্যবহার।

এটি মুখের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে এবং দাঁত ও মাড়ি রাখে সুস্থ।

 

ফ্লসিং

রাতের খাবার গ্রহণের পর দাঁত ব্রাশের পাশাপাশি ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। ব্রাশ করলেও অনেক সময় দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যকণা ঠিকমতো পরিষ্কার হয় না। এর জন্য প্রয়োজন ফ্লসিং।

বিশেষ করে যাঁদের মুখে প্রস্থেসিস (নকল দাঁত) আছে, তাঁদের জন্য ফ্লসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

মাউথওয়াশ ব্যবহার ও গার্গল

মাউথওয়াশ কেনার আগেই খেয়াল করতে হবে, সেটি অ্যালকোহলমুক্ত কি না। অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের শুষ্কতা কম হবে। হালকা কুসুম গরম পানি ও লবণ দিয়ে গার্গল করলেও মুখের ব্যাকটেরিয়া কমে যায়। অন্তত ৩০ সেকেন্ড মুখে রাখতে হবে মাউথওয়াশ, নইলে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যাবে না।

 

পর্যাপ্ত পানি পান

ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। এ সময়ের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত আট থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। এতে মুখের শুষ্কতা কমে যাবে।  চা ও কফি মুখের শুষ্কতা বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব এ ধরনের পানীয় কম পান করতে হবে। তবে যাদের পানি পান করা নিয়ে চিকিৎসকের বিধি-নিষেধ আছে, তা মেনে চলতে হবে।

 

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন

মিষ্টান্নজাতীয় খাবার বা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় মুখে দুর্গন্ধ বাড়ায়। যেসব খাবার পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করে, সেসবও মুখের স্বাস্থ্য নষ্টের কারণ। অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত ফলও সমস্যার কারণ হতে পারে। এসব খাবারের বদলে বেশি করে রসালো ফলমূল; যেমনমাল্টা, তরমুজ, পেঁপে ও সবুজ শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে। এতে মুখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

 

জিহ্বা ও মাড়ির যত্ন

দাঁত ব্রাশ করার সময় সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা পরিষ্কার করুন। কারণ জিহ্বায় ব্যাকটেরিয়া জমে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি মাড়ি ম্যাসাজ করুন। এতে মাড়ি সতেজ ও সুস্থ থাকবে।

লেখক : অধ্যক্ষ, খুলনা ডেন্টাল কলেজ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যেভাবে বুঝবেন দেখা দিয়েছে পানিশূন্যতা

শেয়ার

কিডনি পরীক্ষায় অবহেলা নয়

    অনেক রোগীর কিডনি বিকল হয়ে গেলেও কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অন্যান্য রোগের সঙ্গে কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণও মিলে যেতে পারে। যে ধরনের সমস্যায় কিডনি পরীক্ষা জরুরি, তা জানাচ্ছেন কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
শেয়ার
কিডনি পরীক্ষায় অবহেলা নয়
নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করা উচিত ছবি : সংগৃহীত

নীরবে নিভৃতেও কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। কোনো বড় লক্ষণ ছাড়াই কিডনিতে দেখা দিতে পারে প্রাণঘাতী সব রোগ, এমনটি অনেকেরই অজানা। ডাক্তারের কাছে রোগীরা এমন অবস্থায় উপস্থিত হন, যখন আর ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই সময় থাকতেই কিডনির অবস্থা জেনে নেওয়া জরুরি।

যাঁদের কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি, কোনো লক্ষণ না থাকলেও তাঁদের উচিত কিডনির কার্যক্রম ঠিক আছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেওয়া। কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি কার বেশি এবং কোন লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্র কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে, তা নিচে দেওয়া হলো।

 

ডায়াবেটিস

কিডনির বড় শত্রু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। কিডনির ওপর এ রোগটির প্রভাব এতটাই প্রকট যে প্রতি তিনজন ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে একজনই কিডনি বিকল হওয়ার শিকার।

যাঁদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে অথবা মাত্রই ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়েছে, তাঁদের অবশ্যই অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি কিডনির অবস্থাও পরীক্ষা করাতে হবে। যেসব রোগীর টাইপ-২ ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়েছে, তাঁদের অবশ্যই প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে। টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পাঁচ বছর পর প্রতিবছর একবার কিডনির অবস্থা জেনে নিতে হবে।

 

উচ্চ রক্তচাপ

এ রোগেও কিডনির বড়সড় ক্ষতি হয়।

প্রতি পাঁচজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর মাঝে একজন কিডনি বিকলের শিকার। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি অবশ্যই ফিবছর কিডনির কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে হবে।

 

হৃদরোগ

হূিপণ্ডের সমস্যায় দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চাপ পড়ে। সেটি বিকল হলে কিডনি বিকল হওয়ারও মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেয়।

হূিপণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনিতে চর্বি জমে গেলে ঘটে ভীষণ বিপত্তি। এটিকে বলে ইশকেমিক হৃদরোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনিও ঝুঁকিগ্রস্ত। যাঁদের হৃদরোগ আছে, হূিপণ্ডের পাশাপাশি তাঁদের অবশ্যই প্রতিবছর কিডনিও পরীক্ষা করাতে হবে। 

রক্তনালির অসুখ

বিভিন্ন অঙ্গের রক্তনালিতে চর্বি জমা হতে থাকলে, সেসব অঙ্গ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমনমস্তিষ্কের রক্তনালিতে চর্বি জমে গেলেও হতে পারে স্ট্রোক। পায়ের রক্তনালিতে এমনটি হলে হাঁটার সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে। রক্তনালির সমস্যায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁরা কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

 

ইউরোলজির সমস্যা

বেশ কিছু কারণে প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে অনেক সময় প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া স্নায়বিক দুর্বলতার কারণেও প্রস্রাবের প্রবাহে সমস্যা হতে পারে। কিডনি থেকে প্রস্রাব বের হওয়ার পথে পাথর জমে গেলেও প্রস্রাবের বেগে হতে পারে বিপত্তি। এগুলো সবই কিডনিস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। এ সমস্যায় ভুগছেন যেসব রোগী, তাঁদের কিডনি কার্যক্রমও নিরীক্ষা করা দরকার।

 

ওষুধ

বেশ কিছু ওষুধ কিডনির শত্রু। এর অপরিমিত ব্যবহার কিডনির সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেদনানাশক ওষুধ বা পেইনকিলার। এ ছাড়া কিছু ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে; যেমনলিথিয়াম, সাইক্লোস্পোরিন, কিছু ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ। এসব ওষুধ গ্রহণের সময় কিডনি কার্যক্রম পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

 

কিছু ব্যাধি

সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস (এসএলই) নামের বাত রোগেও বেশ ক্ষতি হয় কিডনির। এ ছাড়া মাল্টিপল মায়ালোমাসহ আরো কিছু রোগে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

পায়ে পানি এলে

চিকিৎসকদের ভাষায় এ লক্ষণের নাম ইডিমা। এমনটি দেখা দেওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ইডিমা। শরীরের কোথাও পানি জমে গেলে দ্রুত কিডনি পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।

 

লেখক : ক্লাসিফায়েড মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল

মন্তব্য

নির্যাতিতা নারীর মানসিক স্বাস্থ্য

    যৌন নিপীড়ন, নারী নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এ ধরনের আঘাতের পর দেখা দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ভয়াবহ মানসিক সমস্যা। সঠিক চিকিৎসা না পেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন না বেশির ভাগ নারী। নির্যাতিতার মনে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে ও তার চিকিৎসার বিস্তারিত জানাচ্ছেন ডা. মুনতাসীর মারুফ
শেয়ার
নির্যাতিতা নারীর মানসিক স্বাস্থ্য

ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন নারীরা। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন। নারীর সঙ্গে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংস ঘটনা ধর্ষণ। এ জঘণ্য হামলার শিকার নারীরা কেবল শারীরিকভাবেই জখম ও ক্ষতিগ্রস্ত হন, তা নয়।

জখমের দাগ শুকিয়ে গেলেও মনে রয়ে যায় এই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি ও প্রবল মানসিক আঘাত। নারকীয় এই হামলার অনভিপ্রেত ও আকস্মিক সহিংসতা নারীর চিন্তাজগেক প্রবলভাবে নাড়া দেয়, মনে প্রবল চাপ ও কষ্টের সৃষ্টি করে।

চরম এ সহিংসতাই যে একমাত্র যৌন নিপীড়ন, তা নয়। ইভ টিজিং, অনলাইনে মেসেজ বা কমেন্টের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা, শারীরিক লাঞ্ছনা বা মতের বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্কের মতো ঘটনাও মনে তীব্র ছাপ ফেলতে পারে।

শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘমেয়াদি জটিল সব মানসিক সমস্যারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট মানসিক যন্ত্রণা তীব্র হয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপনকে ব্যাহত করে। ভুক্তভোগী নারীর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য, সামগ্রিক সুস্থতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কোমলমতি মেয়েশিশুদের মনে এ ধরনের ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আরো বেশি।
অনেকেই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। যৌন নিপীড়নের প্রভাবে দেখা দিতে পারে একাধিক জটিল মানসিক সমস্যা।

 

পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার

যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার নারীরা পরবর্তী সময়ে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার (সংক্ষেপে পিটিএসডি) রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। পিটিএসডি আক্রান্ত নারীর মনে আঘাতের ভয়ংকর স্মৃতি বারবার ফিরে আসে। ধর্ষকের চেহারা বা ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো শব্দ, দৃশ্য বা আলোচনা তাঁর মনে আকস্মিকভাবে জাগিয়ে তোলে সেই দুঃসহ স্মৃতি।

মানসিকভাবে তিনি আবারও সেখানে ফিরে যান। ঘটনাটি ঘটার সময়ের মতো একই রকম আতঙ্ক ও অসহায়ত্ব অনুভব করেন। এর তীব্রতা এতটাই, যে কোনো পুরুষের উপস্থিতিই তাঁর মনে চরম ভীতি সৃষ্টি করতে পারে। দুঃস্বপ্নে ঘুম নষ্ট হয়। বিপদাশঙ্কায় মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক আচরণ করেন।

যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে অনেকেই দুঃসহ পরিস্থিতিটি মনে করিয়ে দিতে পারেএ ধরনের ঘটনা, ব্যক্তি বা আলোচনা এড়িয়ে চলেন। মানুষের সঙ্গ, বিশেষত পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা বা কথাবার্তা কমিয়ে দেন বা পুরোপুরি বন্ধ করেও দিতে পারেন। নিজের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে অক্ষম হয়ে পড়েন অনেকে। অনেকেই ঘটনাটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যান অজান্তেই।

 

বিষণ্নতা ও উদ্বেগ

বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যৌন নির্যাতনের শিকার নারী। দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকে এবং দৈনন্দিন কাজে উৎসাহ বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আনন্দের অনুভূতি, ঘুম, খাওয়ার রুচি, মনোযোগ, চিন্তা ও কাজের গতি কমে যায়। অনেকে নিজেকে ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে না পারার হতাশায় অথবা ধর্ষণের জন্য নিজেকেই দায়ী ভেবে অপরাধবোধে ভোগেন। উদ্বেগজনিত রোগে আক্রান্ত নারীরা অনেক বিষয় নিয়েই অস্থিরচিত্ত, উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত থাকেন। বাড়ির ছোটখাটো কাজ থেকে শুরু করে বাড়ির বাইরে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজে, অন্য কারো দুঃসংবাদে, এমনকি নিজের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কহীন বিষয়াবলিতেও অতিরিক্ত উদ্বেগে আক্রান্ত হন। এর সঙ্গে শারীরিক বিভিন্ন উপসর্গও দেখা দিতে পারে; যেমনমাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা, খাওয়ায় অরুচি, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া প্রভৃতি।

 

মাদকাসক্তি

মানসিক যন্ত্রণা ও চাপ থেকে মুক্তি পেতে বা দুঃসহ স্মৃতি সাময়িকভাবে ভুলে থাকতে কেউ কেউ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ঘুমের ওষুধ বা অন্যান্য মাদক গ্রহণ করেন। মানসিক চাপ মোকাবেলার চরম ক্ষতিকর কৌশল এটি। এতে মানসিক যন্ত্রণা সাময়িক উপশম হলেও মাদকে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। মাদকাসক্তির ফলে নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা উল্টো সৃষ্টি করে বাড়তি জটিলতা।

 

আত্মহত্যা প্রবণতা

যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হওয়ার ফলে সৃষ্ট অসহায়ত্ব ও বিষণ্নতা, পাশাপাশি অবর্ণনীয় মানসিক ও সামাজিক চাপ আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নিরাপত্তাহীনতা, আতঙ্কবোধ, সামাজিক গঞ্জনা, বিচারহীনতা বা বিচারপ্রক্রিয়ায় সৃষ্ট হতাশা, বৈষম্য ও অসহায়বোধ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নেন।

 

আত্মক্ষতি বা সেলফ হার্ম

অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে না নিলেও নিজের ক্ষতি করেন। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটা-ছেঁড়া করা বা পুড়িয়ে দেওয়ার নজিরও দেখা যায়।

পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব

পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বিশেষত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনীহা ও জড়তা অনুভব করেন অনেক ভুক্তভোগী। সামাজিক সম্পর্কগুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন। অন্যদিকে আক্রান্ত নারী তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের যথোপযুক্ত বিচার না পেলে পরিবার বা সমাজকে অবচেতন মনে দায়ী ভাবেন, যা আরো বেশি করে তাঁকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।

       

চিকিৎসা

যৌন নির্যাতনের শিকার নারীকে তাঁর চিন্তা-ভাবনা ও যথাযথ আবেগ প্রকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। সামাজিক ও আইনি সহায়তার মাধ্যমে তাঁর নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে হবে। মানসিক চাপ মোকাবেলা ও খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বিষণ্নতা, উদ্বেগ, পিটিএসডিসহ যেকোনো মানসিক সমস্যা দেখা দিলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

উৎকণ্ঠাবিনাশী ও বিষণ্নতারোধী ওষুধ এবং বিশেষ কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপির সমন্বয়ে আক্রান্ত নারীর চিকিৎসা করা হয়। গ্রুপ থেরাপির মাধ্যমে রোগীর মাঝে এই বিশ্বাস জন্মে যে এই দুর্যোগে তিনি একা নন। তাঁর মতো ক্ষতিগ্রস্ত আরো অনেকেই আছেন এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আত্মহত্যা প্রতিরোধে নিকটজনদের বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক

কমিউনিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট

মন্তব্য

দাঁত ব্রাশিং ও ফ্লসিংয়ের সঠিক উপায়

শেয়ার

সর্বশেষ সংবাদ