<p>কভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা ছিল। পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল শুরু হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। বছরের মাঝামাঝি থেকে আন্দোলন-বিক্ষোভে দেশ ছিল উত্তাল। এক পর্যায়ে সরকার পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরও কাটছিল না অস্থিরতা। তাই বছরের শুরু থেকে শেষ অবধি অর্থনৈতিক সংকট লেগেই ছিল।</p> <p>আমদানি পণ্য পরিবহনে এসব প্রভাবের মুখোমুখি হয়েছে দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর। তবু বছর শেষে পণ্য পরিবহনে নতুন রেকর্ড গড়েছে পায়রা বন্দর। সদ্যোবিদায়ি ২০২৪ সালে এই বন্দর দিয়ে ৪৩ লাখ ছয় হাজার ১০ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে পৌনে দুই লাখ টন বেশি। ডলার সংকট, এলসি কমে যাওয়াসহ নানা কারণে বৈরী ভাব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। তবু আগের বছরের তুলনায় পায়রা বন্দর দিয়ে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ৪.৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় বিদায়ি বছরে পায়রা বন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, যা টাকার অঙ্কে ৩০০ কোটি।</p> <p>বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেকর্ড ৯৯১টি জাহাজে ৪৩ লাখ ছয় হাজার ১০ টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০২৩ সালে এক হাজার ২১টি দেশি-বিদেশি জাহাজে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৭৪৮ টন, যা আগের বছরের চেয়ে পৌনে দুই লাখ টন বেশি। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ৪.৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।</p> <p>সম্প্রতি বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের জেটি। সড়কপথে রপ্তানি পণ্য এখন থেকে সোজা চলে যাবে বন্দরে। ক্রেনের কাজ চলমান। বিদায়ি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিপ টু শিপ কার্গো খালাসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১১০টি বিদেশি এবং ৮৮১টি দেশি জাহাজের মাধ্যমে বন্দরে ৪৩ লাখ ছয় হাজার টন পণ্য খালাস হয়েছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৪১ লাখ ২৫ হাজার টন। এই পরিমাণ পণ্য ৯৮টি বিদেশি এবং ৯২৩টি দেশি জাহাজের মাধ্যমে খালাস হয়েছে। বিদায়ি বছরে পায়রা বন্দর থেকে ৬৩০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে, যার পরিমাণ ২০২৩ সালে ছিল ৩৩৪ কোটি। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।</p> <p>পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষে ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ দেশের গভীরতম চ্যানেলটি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে বিদেশি ড্রেজিং কম্পানি। রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং গত বছরের এপ্রিলে শেষ হয়েছিল। বর্তমানে ওই মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং স্থগিত থাকায় চ্যানেলের নাব্যতা কমে ৭.৫ মিটারে নেমে আসে। ফলে বন্দরের নিজস্ব সক্ষমতা (ড্রেজার ক্রয় না করা পর্যন্ত) অর্জন পর্যন্ত জরুরি মেইটেন্যান্স ড্রেজিং অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। বর্তমানে বন্দরের ইনার-আউটার বারে মার্কিং ও বয়া বাতি বসানো হয়েছে। ইনার বারে ১৫টি জাহাজ রাখা যাবে। সেখানে লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম চলবে।</p> <p> </p>