অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ রবিবার (১৬ মার্চ) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
প্রায় ২৬ বছর আগে বিচারিক আদালত মীর নাছিরকে ১৩ বছর ও মীর হেলালকে তিন বছরের সাজা দিয়েছিলেন। এর এক যুগ পর ২০১৯ সালে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের সাজা বহাল রেখে রায় দেন।
আপিল বিভাগ এই রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আরো পড়ুন
বিদেশিদের নিয়ে এবারও থাকছে ইত্যাদির জমকালো আয়োজন
আদালতে লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাগিব রউফ চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।
আদেশর পর রাগিব রউফ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
’
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর নাছির। ওই বছর মার্চে মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করে দুদক। কমিশনে জমা দেওয়া সম্পদের হিসাব বিবরণীতে তথ্য গোপন ও ঘোষিত আয়ের বাইরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।
আরো পড়ুন
সিপিডির বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই : প্রেসসচিব
পরের মাসেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদকের তখনকার উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ।
সেখানে ৩ কোটি ২২ লাখ ১১ হাজার ৬৩৭ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপন এবং ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯৭ টাকার অবৈধ সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক অমর কুমার রায় ২০০৭ সালের ৪ জুলাই এই মামলার রায় দেন।
রায়ে নাছিরকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর বাবার দুর্নীতিতে সহযোগিতার দায়ে হেলালকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের জেল দেওয়া হয়। পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত দুজনের সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে হাইকোর্টে আলাদাভাবে আপিল করেন বাবা ও ছেলে।
২০১০ সালের ১০ আগস্ট মীর নাছির এবং একই বছরের ২ অগাস্ট মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায় বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে তারা। ২০১৪ সালের ৪ জুলাই আপিল বিভাগ দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের রায়টি বাতিল করেন। সেই সঙ্গে আপিল বিভাগ হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাবা-ছেলের আপিল নতুন করে নিষ্পত্তি করতে।
আরো পড়ুন
সাভারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগী গ্রেপ্তার
দীর্ঘ শুনানির পর মীর নাছির ও মীর হেলালের আপিল খারিজ করে ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর রায় দেন উচ্চ আদালত। এই রায়ে বাবা-ছেলেকে বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখা হয়। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তাঁর ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। সেই আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের দেওয়া সাজা স্থগিত করলেন সর্বোচ্চ আদালত।