<p>ইসলামে জুমার দিনকে সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, দিবসগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো জুমার দিন এবং তা আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪,  তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)</p> <p>আর তাই এই দিনে বেশ কিছু চমৎকার আমলের কথা কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায়, যথা:</p> <p><strong>১. আগেভাগে মাসজিদে গমন করা </strong></p> <p>মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারো।’ (সুরা : জুমুআ, আয়াত : ০৯)</p> <p><strong>২. হাদিসে বর্ণিত ১৭টি বিশেষ নির্দেশনা মেনে চলা</strong></p> <p>ক. গোসল করা, (বুখারি, হাদিস : ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭,৮৯৮)</p> <p>খ. মিসওয়াক করা, (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৮, বুখারি, হাদিস : ৮৮৭)</p> <p>গ. উত্তম পোশাক পরিধান করা, (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৭, আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)</p> <p>ঘ. সুগন্ধি ব্যবহার করা, (বুখারি, হাদিস : ৮৮০)</p> <p>ঙ. মসজিদে প্রবেশের পর অন্য মুসল্লিদের ফাঁক করে বা গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যাওয়া, (বুখারি, হাদিস : ৯১০, ৮৮৩)</p> <p>চ. কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা, (বুখারি, হাদিস : ৯১১)</p> <p>ছ. সালাতের জন্য কোনো একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে না রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই সালাত আদায় করা, (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৬২)</p> <p>জ. নির্ধারিত নামাজ আদায় করা। এমনকি ফরজ সালাতের আগে ও পরে দুই-চার রাকাত করে নফল সালাত আদায় করা, (বুখারি, হাদিস : ৯৩০)</p> <p>ঝ. গায়ে তেল (লোশন) ব্যবহার করা, (বুখারি : ৮৮৩)</p> <p>ঞ. পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা, (মুসলিম, হাদিস : ১৪০০)</p> <p>ট. মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন না খাওয়া ও ধূমপান না করা, (বুখারি, হাদিস : ৮৫৩)</p> <p>ঠ. ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা পরিবর্তন করে বসা, (আবু দাউদ, হাদিস : ১১১৯)</p> <p>ড. ইমামের খুতবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা, (আবু দাউদ, হাদিস : ১১১০)</p> <p>ঢ. খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা, (আবু দাউদ, হাদিস : ১১০৮)</p> <p>ণ. এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া বা তিলাওয়াত না করা, যাতে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৩২)</p> <p>ত. ইমামের খুতবার জন্য বের হওয়া থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত নীরবতা অবলম্বন করা। তবে কাউকে কথা বলতে দেখলে তাকে চুপ করতে বা বারণ করতে বলাও বেহুদা কাজ। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১১২)</p> <p>থ. বেশি বেশি প্রার্থনা (দোয়া) করা। (বুখারি, হাদিস : ৯৩৫)</p> <p>উক্ত কাজগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জন্য এই জুমা ও তার পূর্ববর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)</p> <p><strong>৩. দরুদ পড়া</strong></p> <p>জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার ব্যাপারে রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা রয়েছে। তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)</p> <p><strong>৪. সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা</strong></p> <p>রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা আল কাহফ পড়বে, তার (ঈমানের) নূর এ জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ৭৩৬)</p> <p><strong>৫. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা</strong></p> <p>এই দিন বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দোয়া করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‌জুমার দিনে এমন একটা সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে তা দান করবেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৫৩)</p> <p>মহান রব আমাদের জুমার দিনের উপরোক্ত বিশেষ আমল করার মাধ্যমে তাকওয়া ও দ্বিনের অনুসরণের তাওফিক দান করুক, আমিন।</p> <p><em>লেখক : শিক্ষক ও ধর্মীয় গবেষক</em></p> <p><em>টেকনাফ, কক্সবাজার।</em></p>