<p>হাদিস সংরক্ষণ, সম্পাদনা কারো ব্যক্তিগত সাহিত্যকর্ম ও মনগড়া রচনা নয়। প্রিয় নবী (সা.)-এর শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ এবং সাহাবিদের মুখস্থকরণ, পঠন-পাঠন, দৈনন্দিন আমলে হাদিসশাস্ত্রের বিস্তরণ ঘটে বিশ্বব্যাপী। হাদিস সংরক্ষণ-সংকলন নিম্নোক্ত পরিক্রমায় বিকশিত—</p> <p>(ক) রাসুল (সা.)-এর যুগে হাদিস সংকলন।</p> <p>(খ) সাহাবায়ে কিরামের যুগে হাদিস সংকলন।</p> <p>(গ) ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-এর যুগে।</p> <p>(ঘ) আব্বাসীয় খলিফা মুতাওয়াক্কিলের যুগে।</p> <p>(ঙ) সিহাহ সিত্তাহ প্রণয়ন ও অন্যান্য।</p> <p>প্রিয় নবী (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তি থেকে হিজরি প্রথম শতাব্দীর শেষভাগের সময়কালেই হাদিস সংরক্ষণ, সংকলনের মূল ভিত্তি রচিত হয়।</p> <p>প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় রচিত কয়েকটি সংকলন হলো—</p> <p>আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.)-এর ‘সাহিফাহ সাদিকাহ’। সহস্র হাদিসের এ এক অনবদ্য পাণ্ডুলিপি।</p> <p>আবু শাহ ইয়েমেনিকে রাসলুল্লাহ (সা.)-এর আদেশে হাদিস লিখে দেওয়া হয়।</p> <p>আলীর (রা.)-এর কাছে সংকলনের মধ্যে ছিল জাকাত, দণ্ডবিধি, হারামে মদিনা এবং বিভিন্ন ফরমান, বিভিন্ন রাজা-বাদশাহর কাছে প্রেরিত চিঠিপত্র ও দাওয়াতনামা। এগুলোকে ‘সহিফায়ে আলী’ বলে। ‘মাকতুবাতে নাফি’ও এ সময়ের সংকলন।</p> <p>প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় সম্পাদিত হয় মদিনা সনদ, হুদাইবিয়ার সন্ধি, প্রায় আড়াই শ দেশীয় শাসকের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে পাঠানো হয় পত্র।</p> <p>মিথ্যা-বিকৃতি রোধে সাহাবি ও জ্যেষ্ঠ তাবেঈরা হাদিস সংকলনের উদ্যোগ নেন। খুলাফায়ে রাশিদিনের আমলে হাদিস সংরক্ষণ, সম্পাদনা রাষ্ট্রীয়ভাবে না হলেও সাহাবায়ে কিরামের উদ্যোগে চর্চা, বাস্তবসম্মত পঠন-পাঠনের মাধ্যমে হাদিসশাস্ত্রের ব্যাপক উৎকর্স সাধিত হয়।</p> <p>হাদিস চর্চা ও প্রচারের জন্য সাহাবিদের নেতৃত্বে ‘মারকাজ’ বা কেন্দ্র গড়ে ওঠে। যেমন—মদিনায় আয়েশা (রা.), ওমর (রা.), আবু হুরাইরা (রা.), মক্কায় আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.), কুফায় আলী (রা.), ইবনু মাসউদ (রা.), বসরায় আবু মুসা আশআরি (রা.), সিরিয়ায় আবু সাইদ খুদরি (রা.), মিসরে আমর ইবনুল আস (রা.) প্রমুখ।</p> <p>হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীতে হাদিসশাস্ত্রের বিকাশধারার ক্রমোন্নতি ঘটে। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) হাদিস গ্রন্থায়নে সরকারি ফরমান জারি করেন। ফলে সংকলিত প্রায় অর্ধশত হাদিসগ্রন্থ, এগুলোর অন্যতম—</p> <p>১. মুয়াত্তা ইমাম মালিক</p> <p>২. জামে সুফিয়ান আস সাওরি</p> <p>৩. জামে ইবনে মুবারক</p> <p>৪. জামে ইমাম আওজায়ি</p> <p>৫. জামে ইবনে জুরাইয</p> <p>৬. কাজি আবু ইউসুফের কিতাবুল খারাজ</p> <p>৭. ইমাম মুহাম্মদের কিতাবুল আসার</p> <p>৮. ইমাম শাফিঈর কিতাবুল উম্ম ও মুসনাদ</p> <p>৯. ইমাম আবু হানিফার মুসনাদ</p> <p>১০. আবদুর রাজ্জাকের জামে</p> <p>১১. লাইসের মুসান্নাফ</p> <p>১২. ইমাম আহমদের মুসনাদ।</p> <p>হিজরি তৃতীয় শতাব্দী হাদিসশাস্ত্রের স্বর্ণযুগে সিহাহ সিত্তাহ বা ছয়টি বিশুদ্ধ গ্রন্থ বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজা সংকলিত হয়। পরবর্তী সময়েও অব্যাহত থাকে হাদিস সংকলন প্রয়াস।</p> <p>তা ছাড়া হাদিসচর্চায় বাংলাদেশের অবস্থান গৌরবোজ্জ্বল। </p>