<p>জ্ঞানের পিপাসা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই প্রশংসনীয় একটি গুণ। ইসলাম বরাবরই মানুষকে জ্ঞানার্জনে উদ্বুদ্ধ করে। তবে কাউকে বিব্রত করার জন্য অবান্তর প্রশ্ন করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দনীয় কাজ। যাঁর কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তাঁর মনমানসিকতা লক্ষ করাও জরুরি। কারণ সব পরিস্থিতিতে সব প্রশ্ন করা সমীচীন নয়। এতে যাঁর কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে, তিনি কষ্ট পেতে পারেন।</p> <p>এ রকম ঘটনা আমাদের নবীজি (সা.)-এর সঙ্গেও ঘটেছে, যাতে তিনি রাগান্বিত হয়েছিলেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু মুসা (রা.) বলেন, ‘একদা নবী (সা.)-কে কয়েকটি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। প্রশ্নের সংখ্যা অধিক হয়ে যাওয়ায় তখন তিনি রেগে গিয়ে লোকদের বলেন, তোমরা আমার কাছে যা ইচ্ছা প্রশ্ন করো। জনৈক ব্যক্তি বলল, আমার পিতা কে? তিনি বলেন, তোমার পিতা হুজাফাহ। আরেক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কে? তিনি বলেন, তোমার পিতা হলো শায়বার দাস সালেম। তখন ওমর (রা.) আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর চেহারার অবস্থা দেখে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে তাওবা করছি।’ (বুখারি, হাদিস : ৯২)</p> <p>তাই কারো কাছে কোনো কিছু জানার প্রয়োজন হলে অবশ্যই স্থান-কাল-পাত্র বুঝে প্রশ্ন করতে হবে এবং অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনেও এ ধরনের প্রশ্ন করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা এমন সব বিষয়ে প্রশ্ন কোরো না, যা প্রকাশ করা হলে তোমাদের কাছে অপ্রীতিকর মনে হবে।...(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১০১)</p> <p>এই আয়াতের শানে নুজুল হলো, হজ ফরজ হওয়া সম্পর্কিত আদেশ অবতীর্ণ হলে আকরা ইবনে হাবেস (রা.) জানতে চাইলেন, প্রতিবছরই কি হজ করা ফরজ? প্রশ্নকারী তৃতীয়বার প্রশ্ন করলে শাসনের সুরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি আমি তোমার জবাবে হ্যাঁ বলে দিতাম, তাহলে তাই হয়ে যেত। কিন্তু তুমি তো এই আদেশ পালন করতে সক্ষম না।</p> <p>অতঃপর বলেন, যেসব বিষয় সম্পর্কে আমি তোমাদের কোনো নির্দেশ না দিই, সেগুলোকে সেভাবেই থাকতে দিয়ো, অহেতুক প্রশ্ন কোরো না। তোমাদের আগে বহু উম্মত বেশি বেশি প্রশ্ন করে ধ্বংস ডেকে এনেছে। আল্লাহ ও রাসুল যেসব বিষয় ফরজ করেননি, তারা প্রশ্ন করে সেগুলোকে ফরজ করিয়ে নিয়েছিল। পরে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়েছিল। কাজেই আমি যে কাজের আদেশ দিই সাধ্যানুযায়ী তা পালন করা এবং যে কাজের নিষেধ করি তা পরিত্যাগ করাই তোমাদের কর্তব্য। যেসব বিষয়ে আমি নীরব থাকি, সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন কোরো না।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৮৬২০)</p> <p>এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারাহর ঘটনার দিকে তাকালেও দেখা যায়, অতিরিক্ত প্রশ্ন করার কারণে বনি ইসরাঈলের ওপর বকরি নির্বাচন ও জবাইয়ের শর্ত কঠিন হয়েছে।<br />  </p>