<p>ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর খিলাফতকালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে সিরিয়া বিজয় করা হয়। বিখ্যাত সমরবিদ সাহাবি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে ইয়ারমুকের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যেসব সাহাবি অংশ নিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ আর ফেরত আসেননি। তাঁদের অনেকের বরকতময় সমাধি আজও সৌরভ ছড়ায় শামের আকাশে-বাতাসে।</p> <p>সিরিয়ায় কতজন সাহাবি আগমন করেছেন এবং কতজন সাহাবির কবর রয়েছে, সে বিষয়ে মুহাম্মাদ মামদুহ জুনায়েদ বলেন, মুহাদ্দিসরা একমত যে হোমসে প্রায় ৫০০ সাহাবি ইন্তেকাল করেছেন, যাঁদের মধ্যে ৭২ জন বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী। বদরের যোদ্ধাদের মোট সংখ্যা ছিল ৩১৩। এর অর্থ হলো, বদরের যোদ্ধাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এখানে সমাহিত। </p> <p>কিছু মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকদের মতে, হোমসে মৃত্যুবরণকারী সাহাবিদের সংখ্যা ৮০০ পর্যন্ত হতে পারে। আর যাঁরা হোমস অতিক্রম করেছেন তাঁদের সংখ্যা হাজারে পৌঁছেছে। সর্বনিম্ন অনুমান অনুযায়ী এটি তিন হাজার। (মুহাম্মাদ মামদুহ জুনায়েদ, ‘মাকানাতু হিমস ওয়া মান সাকানাহু মিনাস-সাহাবাহ’, রাবেতাতুল উলামা আস-সুরিয়্যিন)</p> <p>হোমস শহরে সমাহিত সাহাবাদের কবর</p> <p>অনেক সাহাবা (রা.) এখানে বাস করেছিলেন এবং এই শহরেই ইন্তেকাল করেন। এখানে বেশ কিছু কবর ও মাজার রয়েছে, যা সাহাবাদের নামে পরিচিত। এর মধ্যে প্রায় ১০টি কবর ও মাজার স্পষ্টভাবে চিহ্নিত। বেশির ভাগ কবর ‘কাসিব আল-আসফার’ নামে পরিচিত, যা ‘সাহাবা ও আশরাফ কবরস্থান’ নামেও বিখ্যাত।</p> <p>তবে ইসলামী বিজয়ের সময় হোমস শহরে আরো অনেক সাহাবা আগমন করেছেন। একটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, আবু মুসলিম আল-খাওলানি (রহ.) বলেন, ‘আমি হোমস মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং একটি গোল চত্বরে বসলাম, যেখানে মহানবী (সা.)-এর ৩২ জন সাহাবা উপস্থিত ছিলেন।’ (মুসনাদ, হাদিস : ২২৭৮৩)</p> <p>হোমস শহরে যেসব সাহাবির কবর পাওয়া যায়—</p> <p>১. খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা.) :  সিরিয়া বিজেতা, ঐতিহাসিক ইয়ারমুক যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি সাহাবি খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রা.), যিনি ‘সাইফুল্লাহ আল-মাসলুল’ (আল্লাহর খোলা তলোয়ার) উপাধিতে পরিচিত। হোমস শহরে ইন্তেকাল করেন এবং সমাহিত হন। তাঁর কবর শহরের খালিদিয়া এলাকায় অবস্থিত, যা ‘মসজিদ খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ’ নামে বিখ্যাত।</p> <p>২. ইয়াদ ইবনে গুনাম (রা.)</p> <p>৩. উবাইদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.)</p> <p>৪. নবীজির খাদেম সাফিনা (রা.)</p> <p>৫. নবীজির খাদেম সাওবান (রা.)</p> <p>৬. আব্দুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.)</p> <p>৭. আরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.)</p> <p>৮. আমর ইবনে আবাসা (রা.)</p> <p>৯. ওহশি ইবনে হারব (রা.)</p> <p>১০. সুদাই ইবনে আজলান (রা.) : সুদাই ইবনে আজলান (রা.), যিনি ‘আবু উমামা আল-বাহলি’ নামে পরিচিত, হোমসে শেষ সাহাবি হিসেবে ইন্তেকাল করেন। (আলি গুনাইম, ‘আদাদু ক্বুবুরিস-সাহাবাহ ফি হিমস’)</p> <p>দামেস্ক শহরে সাহাবিদের কবর</p> <p>সিরিয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক আহমেদ ফায়েজ আল-হোমসি ‘দ্য গ্রেটস হু ডাইড অ্যান্ড আর বিরিড ইন দামেস্ক’—এই দামেস্কে বসবাসকারী এবং সমাধিস্থ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেছেন, যা শেষ অটোমান সুলতানদের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে দামেস্ক শহরে প্রায় ২৬ জন সাহাবির কবর রয়েছে। যেমন—</p> <p>১. আবু দারদা আল-খাজরাজি আল-আনসারী (রা.) : ৫৬২ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তিনি বাব আল-সাগির কবরস্থানে সমাহিত হন।</p> <p>২. আবু দারদা আল-খাজরাজির স্ত্রী (উম্মে দারদা) (রা.)</p> <p>৩. আওস বিন সাদ আল-আনসারি (রা.)</p> <p>৪. আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর মুয়াজ্জিন বিলাল বিন রাবাহ (রা.)</p> <p>৫. আমর বিন আল-আসের ভাই খালেদ বিন সাদ বিন আল-আস (রা.)</p> <p>৬. দিরার বিন আল-আজওয়ার (রা.)</p> <p>৭. খাওলা বিনতে আল-আজওয়ার (রা.)</p> <p>৮. মুদ্রিক বিন জিয়াদ আল-ফাজারি (রা.)</p> <p>৯. আবান বিন সাদ বিন আল-আস (রা.)</p> <p>১০. খালেদ বিন ওয়ালিদে (রা.)-এর ভাই হারমালা বিন আল-ওয়ালিদ বিন আল-মুগিরা আল-মাখজুমি (রা.)</p> <p>১১. আওস বিন আল-আওয়ার আল-আমিরি (রা.)</p> <p>১২. হাবিব বিন মাসলামা (রা.)</p> <p>১৩. সাঈদ বিন যায়েদ আল কুরাশি (রা.)</p> <p>১৪. তামিম আল-দারি বিন আওস (রা.)</p> <p>১৫. দাহিয়া আল-কালবি (রা.) এবং আরো কয়েকজন সাহাবি।</p> <p><em>(সূত্র : মাদাফিনু দামেস্ক, উইকিপিডিয়া)</em></p>