অভাব না থাকার পরও ভিক্ষা করা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

শেয়ার
অভাব না থাকার পরও ভিক্ষা করা প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

আমাদের আশপাশে বহু মানুষ এমন আছে, যারা বাস্তবেই অতিদরিদ্র, তাদের সাহায্য করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাদের পাশে দাঁড়ালে মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছু মানুষ এমন আছে, যারা বাস্তবে অভাবী নয়, বরং অভাবে ভান করে অর্থ সংগ্রহ করা তাদের পেশা। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, এই ভিক্ষা বাণিজ্য করে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে।

যে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকার ভিক্ষা বাণিজ্য করা হয়। 

কষ্টের বিষয় হলো, অধিক পরিমাণে ভিক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকে স্বেচ্ছায় অঙ্গহানির মাধ্যমে বিকলাঙ্গ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। আবার শিশুদের বিকলাঙ্গ করছে বলেও বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা জঘন্য অপরাধ। পবিত্র হাদিস শরিফের তথ্যমতে, পরচুলা ব্যবহার, ভ্রু উপড়ে ফেলা কিংবা শরীরে উল্কি অঙ্কনকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সেখানে সরাসরি অঙ্গ কেটে ফেলা যে কত জঘন্য অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

অনেকে আবার অঙ্গ হানি না করলেও দরিদ্রের বেশ ধারণ করে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায়। অথচ প্রকৃত অভাবি না হয়েও মানুষের কাছে অভাবের কথা বলে বেড়ানো, হাত পাতা জঘন্য অপরাধ। একান্ত বিপদে না পড়ে শুধু সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কারো কাছে চাইলে, তা জাহান্নামের আগুন চাওয়ার নামান্তর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে কিছু চায়, সে অধিক দোজখের আগুন চায়।

’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬২৯)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা করে, সে কিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডলে অসংখ্য জখম, নখের আঁচড় ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উপস্থিত হবে। কেউ জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! সম্পদশালী কে? তিনি বললেন : পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের স্বর্ণ (যার আছে)। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬২৬)

তবে কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই বিপদে পড়ে যায়, তার কথা ভিন্ন। নবীজি (সা.) এমন লোকদের খুঁজে বের করে সাহায্য করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে সে মিসকিন নয়, যাকে এক লোকমা, দুই লোকমা একটি খেজুর বা দুটি খেজুর দান করা হয়।

সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তাহলে মিসকিন কারা? তিনি বলেন, যার কাছে এই পরিমাণ সম্পদ নেই, যা দিয়ে সে নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারে আর তার অবস্থা কারো জানা নেই যে তাকে সদকা দেওয়া যেতে পারে, আর না সে লোকের নিকট চেয়ে বেড়ায়। (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ১৬৫৫)

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

মাওলানা মুহাম্মদ নোমান
মাওলানা মুহাম্মদ নোমান
শেয়ার
ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

ইতিকাফ এমন এক মহৎ ইবাদত, যেখানে বান্দা দুনিয়ার সব বন্ধন ছিন্ন করে কেবলমাত্র আল্লাহর হয়ে যায়। বিশেষত রমজানের শেষ দশকে এই ইবাদত পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।

আল্লামা ইবনুল মুনজির (রহ.) বলেন, সব আলেম একমত যে ইতিকাফ সুন্নত, ফরজ নয়। তবে কেউ যদি মানত করে নিজের ওপর ওয়াজিব করে নেয়, তবে তা ওয়াজিব হয়ে যায়।

(আল-ইজমা, পৃষ্ঠা-৫৩)

ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হলো অবস্থান করা। পারিভাষিক অর্থ হলো, যে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করে এবং ইবাদতে লিপ্ত হয় তাকে বলা হয় ‘আকিফ’ ও ‘মুতাকিফ’ (ইতিকাফকারী)। (লিসানুল আরব, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-২৫৫)

শরিয়তের দৃষ্টিতে, ইতিকাফ মানে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নিজেকে মসজিদে আবদ্ধ করা। (উমদাতুল কারি, খণ্ড-১১, পৃষ্ঠা-১৪০)

আর রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি স্বতন্ত্র সুন্নত।

মদিনায় হিজরত করার পর থেকে ওফাত পর্যন্ত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফের আমল মহানবী (সা.) কখনো ছেড়ে দেননি। (ফাতহুল বারি, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৮৫)

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর উম্মাহাতুল মুমিনিনরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

ইতিকাফের ফজিলত

১. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইতিকাফকারী সম্পর্কে বলেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সব নেকি তার জন্য লেখা হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮১)

২. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এক দিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তার মধ্যে ও জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন, যা পূর্ব-পশ্চিমের চেয়েও বেশি দূরত্ব। (আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস : ৭৩২৬; শুআবুল ঈমান লিল বায়হাকি, হাদিস : ৩৯৬৫)

লাইলাতুল কদরপ্রাপ্তিতে ইতিকাফের গুরুত্ব  

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকেও উত্তম।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৩)

সেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইতিকাফের মূল লক্ষ্য ছিল লাইলাতুল কদর পাওয়া। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন।

এরপর তিনি মাঝের ১০ দিন তুর্কি কুব্বাতে (এক ধরনের ছোট তাঁবুতে) ইতিকাফ করেছেন। যে তাঁবুর দরজার ওপর একটি কার্পেট ঝোলানো ছিল। (বর্ণনাকারী বলেন) তিনি তাঁর হাত দিয়ে কার্পেটটিকে কুব্বার (তাঁবু) এক পাশে সরিয়ে দিলেন। এরপর তাঁর মাথা বের করে লোকদের সঙ্গে কথা বললেন। লোকেরা তাঁর কাছে এলো। অতঃপর তিনি বলেন, আমি প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করেছি—এই রাতের (লাইলাতুল কদরের) খোঁজে, এরপর মাঝের ১০ দিন ইতিকাফ করেছি। এরপর আমাকে বলা হলো, লাইলাতুল কদর শেষ দশকে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন ইতিকাফ করে। তখন লোকেরা তাঁর সঙ্গে ইতিকাফ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৭)

প্রকৃত অর্থে ইতিকাফের ইতিবাচক ফলাফল মানুষের জীবনে তাত্ক্ষণিকভাবে, এমনকি ইতিকাফের দিনগুলোতে পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়া পরবর্তী রমজান পর্যন্ত অনাগত দিনগুলোর ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। আতা আল-খুরাসানি (রহ.) বলেন, ইতিকাফকারীর উদাহরণ ওই ব্যক্তির মতো, যে নিজেকে আল্লাহর সামনে পেশ করে বলছে, হে আল্লাহ যতক্ষণ না তুমি ক্ষমা করো, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না; হে আমার রব, যতক্ষণ না তুমি আমাকে ক্ষমা করো, আমি তোমার দরবার ত্যাগ করব না। (শারহুল ইবনে বাত্তাল আলাল বুখারি, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৮২)

ইতিকাফের কিছু মাসআলা 

১. ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যায়। হাদিসে আছে, একান্ত বাধ্য না হলে মসজিদ থেকে বের হবে না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১১৫)

মনে রাখবেন, ইতিকাফ মানে বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহর হয়ে যাওয়া। মসজিদে সঙ্গীদের সঙ্গে গল্প করা, মোবাইলে ফোনালাপ, গোসল করতে বেশি সময় লাগানো—এসব ইতিকাফ পরিপন্থী কাজ। ইতিকাফে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার সব কিছুর চিন্তা থেকে মনকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেবল আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে হবে। তবেই ইতিকাফ সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।

আল্লাহ তাআলা আমাদের ইতিকাফ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২১ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২১ মার্চ ২০২৫

আজ শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৯ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৭ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৩ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ২৭ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৪৯ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৬টা ১০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আমল

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
আল্লাহর ভালোবাসা লাভের আমল

বান্দার সৌভাগ্যের মূল ভিত্তি হলো, আল্লাহর ভালোবাসা। যার অন্তরে মহান আল্লাহর ভালোবাসা আছে, তার আত্মা প্রশান্ত হয়। তার অন্তরে হিদায়াতের আলো প্রজ্বলিত হয়। তার দুনিয়া ও আখিরাত সাফল্যমণ্ডিত হয়।

তাই তো নবীজি (সা.) মহান আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধির দোয়া করতেন। তিনি দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ভালোবাসা, আপনার প্রেমিকদের ভালোবাসা এবং সেই আমলের ভালোবাসা চাই, যা আমাকে আপনার মহব্বতের নিকটবর্তী করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৩৫)

কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসে তখন আসমানের অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যদি কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডাক দেন এবং বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক লোককে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস।

তিনি বলেন, তখন জিবরাইল (আ.) তাকে ভালোবাসেন। অতঃপর তিনি আকাশমণ্ডলীতে ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুক লোককে ভালোবাসেন, সুতরাং আপনারাও তাকে ভালোবাসুন। তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালোবাসে। তিনি বলেন, এরপর দুনিয়াতে তাকে নন্দিত, সমাদৃত করা হয়।
(মুসলিম, হাদিস : ৬৫৯৮)

এই হাদিসটি দেখলে পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি মনে পড়ে যায়, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সত্ কাজ করে, পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে) ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৯৬)

বর্তমান যুগে চারদিকে ফিতনা ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষের মধ্যে গাফিলতি জেঁকে বসেছে, দুনিয়াবি আকর্ষণে মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তাঁর মহব্বত অর্জনের উপায় অনুসন্ধান করা।

নিম্নে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো—

কোরআন তিলাওয়াত : পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে গবেষণা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। তাই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি একটি কল্যাণময় কিতাব, তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ২৯)

ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল আমল করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে...। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)

নিজের ইচ্ছার চেয়ে আল্লাহর ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেওয়া : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যায়, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে—(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, (৩) কুফরে ফিরে যাওয়া এতটাই অপছন্দ করা, যেমন—আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬)

আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে জানা : আল্লাহর গুণবাচক নাম সম্পর্কে জানা এবং সেগুলোর অর্থ ও গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)

আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করা : কারণ আমাদের যা কিছু আছে, সব তাঁরই দেওয়া, ভালোবাসার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যে কোনো নিয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৩)

আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য গ্রহণ করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসরণ করে থাকে, তাই তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত কাকে সে বন্ধু বানাচ্ছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)

মন্তব্য

বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে না পারলে করণীয়

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
বার্ধক্যের কারণে রোজা রাখতে না পারলে করণীয়

যেসব নারী-পুরুষ অতিশয় বার্ধক্যের কারণে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় উপনীত, তাদের জন্য রোজা না রাখা বৈধ।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে।

আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সত্ কাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩-১৮৪)

মাসআলা : রোজা রাখতে অক্ষম বৃদ্ধ ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে ফিদিয়া আদায় করবেন।

(কামুসুল ফিকহ : ৪/৪৫০)

বৃদ্ধের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া হয়েছে, এই পরিমাণ বৃদ্ধ যে তার মধ্যে একেবারে ক্ষমতা নেই এবং মৃত্যুর নিকটবর্তী পৌঁছে গেছে, বয়সের কোনো সীমা নেই। শক্তি থাকা এবং না থাকাটাই বিবেচ্য। যতক্ষণ পর্যন্ত রোজা রাখতে পারে যদিও না কি কষ্টের সঙ্গে হয়, রোজা রাখবে। কাজা রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখা প্রয়োজন নেই।

পৃথক করে রাখবে ফিদিয়া দেওয়া ওই সময় পর্যন্ত যথেষ্ট নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত একেবারে রোজা রাখার ক্ষমতা হারিয়ে না ফেলে, কোনোভাবেই রোজা রাখতে পারে না।

রোজার ফিদিয়ার পরিমাণ

রোজার ফিদিয়া হচ্ছে, একজন মিসকিনকে দুই বেলা ভরপেট খাবার খাওয়ানো। মালেকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাবের বেশির ভাগ আলেমের মতে, খাদ্যদানের মাধ্যমে রোজার ফিদিয়া আদায় করবে।

তবে হানাফি মাজহাব মতে, খাবারের পরিবর্তে প্রতি রোজার জন্য সদকাতুল ফিতর পরিমাণ দ্রব্য বা মূল্য দিলেও ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে।

সদকাতুল ফিতিরের পরিমাপ হলো এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম, আটা বা তার মূল্য অথবা তিন কেজি ২৭০ গ্রাম জব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ বা তার মূল্য গরিবকে দান করা।

(রদ্দুল মুহতার : ৫/১৪৪)

মাসআলা : ফিদিয়া আদায় করার পর সুস্থ হলে ভাঙা রোজাগুলো কাজা করতে হবে। আগের ফিদিয়া প্রদান যথেষ্ট হবে না। তবে ফিদিয়া আদায়ের কারণে তার সওয়াব আমলনামায় থেকে যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৬৫)

মাসআলা : ফিদিয়া আদায় করার মতো কোনো সম্পদ না থাকলে তাওবা-ইস্তিগফার করবে। সেই সঙ্গে এই নিয়ত রাখা যে ‘আল্লাহ তাআলা সচ্ছলতা দান করলে ফিদিয়া আদায় করে দেব।’ অসচ্ছল অবস্থায় মারা গেলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কারণ সাধ্যের বাইরে বান্দার ওপর আল্লাহ কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৪৯, আপকে মাসায়েল : ৪/৬০২)

মাসআলা : প্রশ্ন—রমজান মাসের ফিদিয়ার টাকা যদি রমজান আসার আগেই অগ্রিম দেওয়া হয়, তাহলে কি ঠিক হবে?

উত্তর : রমজান শুরু হওয়ার আগে ফিদিয়া দেওয়া ঠিক নয়। রমজান শুরু হওয়ার পর দেবে। রমজান মাস শুরু হওয়ার পর বাকি সামনের দিনের ফিদিয়াও একসঙ্গে দিতে পারবে। এর বিপরীতে সদকায়ে ফিতর রমজান মাস আসার আগেও দেওয়া বৈধ; বরং কয়েক বছরের সামনের ফিতরও দিতে পারবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৬)

মাসআলা : জাকাতযোগ্য খাতে ফিদিয়া দিতে হবে। (রাদ্দুল মুহতার : ২/৭৯, ৮৫৪)

মাসআলা : ফিদিয়ার অর্থ কোনো এতিমখানায় প্রদান করা যাবে। নাবালেগ নিঃস্ব এতিমের পেছনে ব্যয় করার জন্য তার অভিভাবককে অর্থ দেওয়া জায়েজ আছে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/২৫৮, রাদ্দুল মুহতার : ২/৮৫)

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ