জাকাতের আধুনিক মাসআলা

আসআদ শাহীন
আসআদ শাহীন
শেয়ার
জাকাতের আধুনিক মাসআলা

নামাজের পর জাকাত ইসলামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে ৩২ স্থানে নামাজ ও জাকাত ফরজ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২০২)

জাকাতের গুরুত্ব বুঝতে এটিই অনুমেয় যে মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর আরব বিশ্বের সর্বত্র বিদ্রোহ শুরু হয়, যা  ইসলামী রাষ্ট্রকে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি এবং সংকটাপন্ন ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়। এর নেপথ্যে ছিল জাকাত অস্বীকারকারীরা।

তৎকালীন সময়ে এটি ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসলামী ইতিহাসের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে  (Critical juncture)  আবু বকর সিদ্দিক (রা.) (বেশির ভাগ সাহাবির পরামর্শক্রমে) ঘোষণা করেন যে যারা নামাজ ও জাকাতের মধ্যে যেকোনো পার্থক্য এবং বৈষম্য সৃষ্টি করবে, আমি তার বিরুদ্ধে জিহাদ করব। অতঃপর আমিরুল মুমিনিন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) জাকাত-বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জিহাদ করেন এবং তাদের বিদ্রোহ সম্পূর্ণরূপে চূর্ণ না করা পর্যন্ত তাঁর তরবারি ক্ষান্ত হয়নি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪০০)

জাকাতের আভিধানিক অর্থ হলো পবিত্রতা, বরকত ও বৃদ্ধি।

পারিভাষিক অর্থ হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শরিয়ত দ্বারা নির্ধারিত সম্পদের একটি অংশ একজন মুসলিম দরিদ্র ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে তা দ্বারা সে সম্পূর্ণরূপে ব্যয় করতে সক্ষম হয়। (ফিকহুল ইবাদাত আলা আল-মাযহাবিল হানাফিয়্যাহ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৪৬)

জাকাতের বিধান

জাকাত ফরজ। যে তা অস্বীকার করবে সে কাফির আর যে আদায় করবে না সে ফাসেক এবং যে এর আদায়ে বিলম্ব করবে সে গুনাহগার হবে।

(ফাতহুল বারী, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩০৯, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৮)

জাকাত যাদের ওপর ফরজ

যে ব্যক্তি মুসলিম, বোধসম্পন্ন, সুস্থ মস্তিষ্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন এবং  নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী; যদি সম্পদ মৌলিক চাহিদার চেয়ে বেশি হয় এবং যদি এই সম্পদের ওপর পুরো এক বছর অতিবাহিত হয় তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫৮)

নিসাব মানে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য, উভয়ের মূল্যের সমপরিমাণ অথবা উভয়ের একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা বাণিজ্যিক মালপত্র বা এসবের সমন্বয় কিংবা এগুলোর সামষ্টিক কিছু জিনিস রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৪৭; বাদায়েউস সানায়ে, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৮২)

উল্লেখ্য যে অসুস্থ মস্তিষ্ক মুসলিমের ওপর এবং নাবালেগ বাচ্চাদের ওপর জাকাত ফরজ নয়। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫৯)

জাকাত আদায়ের শর্ত

জাকাতের টাকা, মালামাল এবং সম্পদ জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার সময় জাকাতের নিয়ত করা। অর্থাৎ অন্তরে এই নিয়ত ও ইচ্ছা পোষণ করা যে আমি জাকাত আদায় করছি।

(ফাতাওয়ায়ে শামী, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৬৮)

জাকাতের টাকা, মালামাল এবং সম্পদ পৃথক করার সময় সে জাকাতের নিয়ত করল, কিন্তু জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার সময় নিয়ত করেনি তাহলেও তার জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭০)

জাকাতের আধুনিক হিসাব

জাকাতযোগ্য সব সম্পদের চান্দ্রবর্ষের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর আড়াই শতাংশ (৪০ ভাগের ১ ভাগ) হারে প্রদান করতে হয়। চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিনে হয়, যেহেতু সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনে বা ৩৬৬ দিনে হয়, তাই সৌরবর্ষ অপেক্ষা চান্দ্রবর্ষ ১০ বা ১১ দিন কম। সৌরবর্ষ হিসাবে জাকাত প্রদান করতে চাইলে ২.৫ শতাংশের পরিবর্তে ২.৫৭৮ শতাংশ বা ২.৫৮ শতাংশ দিতে হবে। অথবা মূল জাকাতের সঙ্গে অতিরিক্ত ১১ দিনের হিসাব যোগ করতে হবে। অনুরূপ কারো জাকাত সমাপনী হিসাব তারিখ রমজানে না হলে, সে অতিরিক্ত সময়ের জাকাত সমন্বয় করে রমজানে জাকাত হিসাব তারিখ নিয়ে আসতে পারবে। (ফাতাওয়ায়ে খানিয়া, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৫৫)

জাকাতের সমকালীন মাসআলা

ঋণের টাকায় জাকাত : যদি ঋণের টাকা নিসাব পরিমাণ হয় বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তা উসুল করার পর তার জাকাত আদায় করা আবশ্যক। আর যদি ঋণের টাকা উসুল হতে কয়েক বছর সময় লেগে যায় তাহলে টাকা হাতে আসার পর অতিবাহিত হওয়া প্রতিটি বছরের জাকাত আদায় করতে হবে। (আদ-দুররুল মুখতার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩০৫)

ওষুধের ওপর জাকাত : দোকানে মজুদকৃত ওষুধের ওপর জাকাত দেওয়া আবশ্যক। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৮)

ব্যাবহারিক জিনিসপত্র : ব্যাবহারিক জিনিসপত্রের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। উদাহরণস্বরূপ : টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, সেলাই মেশিন, মোবাইল ফোন, গাড়ি ইত্যাদির ওপর। তবে স্বর্ণ-রৌপ্য দ্বারা তৈরীকৃত ব্যাবহারিক অলংকারাদির ওপর জাকাত ওয়াজিব, যদি নিসাব পরিমাণ হয়। এই কারণে যে ব্যাবহারিক অলংকারাদির বিধান অন্যান্য ব্যাবহারিক জিনিসপত্র থেকে ভিন্ন। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭২)

স্টেশনারি দোকান : স্টেশনারির দোকানে বিক্রির জন্য যে মালই মজুদ থাকুক না কেন, যদি সেগুলোর মূল্য নিসাব পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয় তাহলে উক্ত মালের ওপর জাকাত ওয়াজিব। তাই সেগুলোর ওপর বিক্রীত মূল্য থেকে বার্ষিক শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে খানিয়া, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৩৭)

ব্যবসার পুঁজি ও লভ্যাংশ : ব্যবসার পুঁজি ও লাভ উভয়ের ওপর জাকাত ওয়াজিব। শুধু মূল্যের ওপরও হয় না, আবার শুধু লাভের ওপরও হয় না, বরং উভয়ের সমন্বয় পরিমাণের ওপর জাকাত ওয়াজিব হয়। (আল বাহরুর রায়েক, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২২২)

প্রতিষ্ঠানের আসবাব জাকাত দ্বারা ক্রয় করা : জাকাতের অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আসবাব ক্রয় করলে জাকাত আদায় হবে না। কেননা তার মধ্যে মালিকত্ব দান হয় না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৭০)

জাকাতের অর্থ দ্বারা ইফতারির পণ্য প্রদান : যদি ইফতারকারী ব্যক্তি গরিব এবং জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত হয়, তাহলে জাকাতের অর্থ দ্বারা ইফতারির ব্যবস্থা করা জায়েজ হবে। তবে বণ্টনের পদ্ধতি হলো এই যে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ইফতারের পণ্য পৃথক পৃথক দিতে হবে। যেন মালিকত্ব দান হয়ে যায়, অন্যথায় জাকাত আদায় হবে না। (ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৫৭)

উল্লেখ্য যে যদি ইফতারকারী ব্যক্তি ধনী হয়, তাহলে জাকাতের অর্থ দ্বারা ইফতারির আয়োজন করা জায়েজ হবে না এবং জাকাতও আদায় হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১৮৯)

জাকাত হিসেবে বিভিন্ন জিনিস প্রদান : জাকাত হিসেবে জিনিসপত্র দেওয়া জায়েজ। উদাহরণস্বরূপ : কাপড়, খাদ্যসামগ্রী ইত্যাদি জাকাত হিসেবে দওয়া জায়েজ। (আদ-দুররুল মুখতার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৫)

ব্যাংকের সুদের বিধান : ব্যাংকের সেভিং অ্যাকাউন্টে যে সুদ জমা হয় সেটা নেওয়া নাজায়েজ ও হারাম। (সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১৬১)

সুতরাং সুদের টাকার ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। যদি কোনো ব্যক্তি সুদের টাকা নেয়। তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো সুদের টাকা ফিরিয়ে দেবে, যদি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সুদের টাকা সদকা করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯১)

ফিক্সড ডিপোজিট (Fixed Deposit) : ফিক্সড ডিপোজিট একটি সুদি স্কিম। সুতরাং তাতে টাকা জমা করা এবং লাভের নামে সুদ নেওয়া শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে নাজায়েজ ও হারাম। যদি কোনো ব্যক্তি বিষয়টি না জেনেই নিজের টাকা ফিক্সড ডিপোজিটের মধ্যে জমা করে, তখন তা তার জন্য সেখান থেকে বের করে নেওয়া উচিত।

অতএব, যদি টাকা বের করা মুশকিল হয় তাহলে বার্ষিক আসল টাকা থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত আদায় করবে আর লাভের নামে যে টাকা অন্তর্ভুক্ত হবে তা নেবে না। তার পরও যদি কোনো ব্যক্তি নিয়ে নেয় তাহলে ফেরত দিয়ে দেবে—যদি তা সম্ভব হয়। আর সম্ভব না হলে তখন জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত কাউকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়াই দিয়ে দেবে, যাতে পরকালের আজাব থেকে বাঁচতে পারে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-৩৪৯)

ঘুষের অর্থের ওপর জাকাত :  ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া উভয়টিই হারাম। রাসুল (সা.) বলেছেন, উভয়েই জাহান্নামে যাবে এবং জাহান্নামের শাস্তি বরদাশত করা সম্ভব হবে না। (সুনানে জামে আত-তিরনিজি, হাদিস : ১৩৩৬)

সুতরাং ঘুষের মালের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়। যদি এটা প্রকাশ হয় যে ঘুষের টাকা কার কাছ থেকে নিয়েছে তখন তাকে বা তার ওয়ারিশদের ফিরিয়ে দেবে। আর জানা না থাকলে তখন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সব মাল সদকা করে দেবে, অন্যথায় গুনাহগার হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-২৯১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের জাকাতের মাসআলা জেনে হিসাব করে সঠিকভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজকের নামাজের সময়সূচি, ৩০ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ৩০ মার্চ ২০২৫

আজ রবিবার ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬ চৈত্র ১৪৩১, ২৯ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৬ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৯ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৭ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৩২ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৩৮ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৩ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৫৩ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

ঋণ দেওয়া টাকার কি জাকাত দিতে হবে?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ঋণ দেওয়া টাকার কি জাকাত দিতে হবে?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : আমি একজনকে পাঁচ লাখ টাকা ধার দিয়েছি এই চুক্তিতে যে তিনি তা দুই বছর পর পরিশোধ করবেন। আমাকে কি এই টাকার জাকাত দিতে হবে?

—ইহসাক, মাদারীপুর

উত্তর : নগদ টাকা ঋণ দিলে ওই টাকা নিসাব পরিমাণ হলে ঋণদাতাকে ওই টাকার জাকাত আদায় করতে হবে। ঋণের টাকা হাতে আসার পর বিগত বছরগুলোর জাকাত একসঙ্গে আদায় করবে। তবে টাকা হাতে আসার আগে আদায় করলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে।

(বাদায়েউস সানায়ে : ২/১০, আল বাহরুর রায়েক : ২/২০৭, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/২৭১)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

নতুন টাকা কেনাবেচা কি জায়েজ?

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
নতুন টাকা কেনাবেচা কি জায়েজ?
সংগৃহীত ছবি

এসেছে ঈদ। আনন্দ আর সুখময়তায় মুখর হবে পরিবেশ। যারা রোজা রেখেছে তাদের আনন্দ সবচেয়ে বেশি। তারা দয়াময় আল্লাহর থেকে ঈদের দিন আজর বা প্রতিদান পাবেন।

ঈদ উপলক্ষে নতুন টাকা কেনাবেচার প্রচলন রয়েছে আমাদের দেশে। ঈদ ছাড়াও আমাদের দেশে নতুন টাকা কেনাবেচা হয়। বেশিভাগ মানুষ ঈদে ছোটদের সালামি দেওয়ার জন্য নতুন নোট কিনে থাকেন। নতুন এ নোট কেনার জন্য অনেক সময় অতিরিক্তি টাকা দিতে হয়।
ইসলামে এ কেনাবেচার বিধান কী? যেহেতু কাগজের নোট পণ্য নয়, তাই ইসলামে এই ব্যবসার অনুমোদন নেই। 

ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদরা এটাকে নাজায়েজই বলেছেন। ইসলামে এক প্রকারের দুটি জিনিস কমবেশি ক্রয়-বিক্রয় করা নাজায়েজ। কারণ, এ রকম লেনদেনে অতিরিক্ত অংশ সুদ হয়ে যায়।


 
তাই আলেমরা, একে সুদি কারবারের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেন। এ ধরনের ব্যবসায় জড়িত হওয়া কোনোভাবেই জায়েজ হবে না। কারণ টাকা বা কাগজের নোট পণ্য নয়, বরং এটি মূল্য, তাই এ নিয়ে ব্যবসা করার অনুমোদন নেই ইসলামে।

আরো পড়ুন
অভিনেত্রীর ১৪ মিনিটের ভিডিও ফাঁস!

অভিনেত্রীর ১৪ মিনিটের ভিডিও ফাঁস!

 

তবে অনেক উলামায়ে কেরাম নতুন টাকা সংগ্রহের একটা পদ্ধতিকে জায়েজ বলেন অপারগতার ক্ষেত্রে। একেবারে অপারগতার ক্ষেত্রে নতুন টাকা সংগ্রহ করার পরিশ্রম বাবদ কিছু টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।

শর্ত হলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে যে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হচ্ছে নতুন টাকা সংগ্রহের পারিশ্রমিক হিসেবে, নতুন টাকার মূল্য হিসেবে নয়। শুধু টাকাপয়সা বা সোনা-রুপার ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো বস্তুর ক্ষেত্রেই একই জিনিস কমবেশি করে বেচাকেনা করা বৈধ নয়।

আরো পড়ুন
ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া

ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া

 

দেশি মুদ্রা একই প্রকারের হওয়ায় পরস্পর কমবেশিতে বেচাকেনা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত অংশ সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (আদদুররুল মুখতার ৫/১৭১-১৭২, বুহুসুন ফি কাজায়া ফিকহিয়্যা ১/১৬৩)

মন্তব্য

রমজানের শেষ মুহূর্তে আল্লাহর ডাক, আপনি কি প্রস্তুত

আইয়ূব হুসাইন
আইয়ূব হুসাইন
শেয়ার
রমজানের শেষ মুহূর্তে আল্লাহর ডাক, আপনি কি প্রস্তুত

রমজান বিদায়ের পথে, সময়ের চাকা দ্রুত ঘুরে চলছে। কিন্তু এখনো আপনার জন্য দুয়ার খোলা। হয়তো আপনি এখনো গভীরভাবে রমজানের মাহাত্ম্য অনুভব করতে পারেননি, ইবাদতে একাগ্রতা খুঁজে পাননি, অন্তরে প্রশান্তির পরশ লাগেনি। চারপাশে মানুষ ইবাদতে মশগুল, কেউ কোরআন তিলাওয়াতে রত, কেউ লাইলাতুল কদরের সন্ধানে রাত জাগরণে মগ্ন।

অথচ আপনার হৃদয় যেন শূন্য, আবেগহীন, কাঠিন্যে মোড়ানো! তবে সুখবর হলো—আল্লাহর রহমত এতটাই বিশাল যে তিনি মুহূর্তের মধ্যে আপনার অবস্থান বদলে দিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

’ (সুরা : আজ-জুমার, আয়াত : ৫৩)

এই আয়াত কি যথেষ্ট নয় আমাদের জন্য—যেখানে মহান রব নিজেই ডাকছেন, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না!’ তাহলে আমরা কেন তার রহমত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব?

লাইলাতুল কদর—এক রাতের ইবাদতে ৮৪ বছরের সওয়াব

এখন রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলো পার হচ্ছে। হতে পারে, এটাই লাইলাতুল কদর! যে রাত সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি। আর তুমি কী জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম!’ (সুরা : আল-কদর, আয়াত : ১-৩)

ভাবুন, এই রাতে যদি আপনি নফল নামাজ পড়েন, একটি তাসবিহ বলেন, একটি দোয়া করেন—আপনার আমলনামায় ৮৪ বছরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে! এমন সুবর্ণ সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে?

তাওবার দরজা এখনো খোলা

হয়তো আপনি ভাবছেন—‘আমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছি, আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে খাঁটি মনে তাওবা করে, আল্লাহ তার গুনাহ এমনভাবে মাফ করে দেন, যেন সে কখনো সেই পাপ করেনি।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস : ৪২৫০)

সুতরাং, আপনি যতই পাপ করে থাকুন না কেন, এই মুহূর্তে যদি আল্লাহর দরবারে ফিরে আসেন, তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন।

শেষ সময়ে বিজয়ীর মতো ছুটুন

আমাদের পূর্বসূরিরা রমজানের শেষ দশকে নিজেদের আরো বেশি ইবাদতে ডুবিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) যখন রমাদানের শেষ দশকে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি রাত জাগতেন, পরিবারের সবাইকে জাগাতেন এবং ইবাদতে অধিক মনোযোগী হতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

আমরা কি সেই সুন্নাহকে অনুসরণ করব না?

এখনো সময় আছে—আল্লাহর কাছে ফিরে যান। অনেকেই মনে করেন, ‘আরেকটা বছর আসবে, তখন ভালোভাবে ইবাদত করব।’ কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি আরেকটি রমজান পাবেন?

রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘সুযোগ থাকতেই পাঁচটি জিনিসকে গ্রহণ করো—(১) বৃদ্ধ হওয়ার আগে তোমার যৌবনকে, (২) অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে, (৩) দরিদ্র হওয়ার আগে তোমার সম্পদকে, (৪) ব্যস্ত হওয়ার আগে তোমার অবসরকে, (৫) মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে।

’ (হাকিম, হাদিস : ৭৮৪৬) 

এখনো সময় আছে! আল্লাহর দিকে ফিরে যান, তাহাজ্জুদের মিহরাবে দাঁড়ান, হাত তুলে দোয়া করুন, অশ্রু ঝরান, কোরআনে মনোযোগ দিন।
এই রমজান হতে পারে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজান

রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই শেষ সময়ে আপনি যে আমল করবেন, সেটাই হতে পারে আপনার জান্নাতের চাবিকাঠি। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি শেষ সময়ে ভালো আমল নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে ভালো পরিণতি লাভ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪১)

এখনো সময় আছে—নিজেকে বদলানোর, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার, কদরের রাতের সর্বোচ্চ ফায়দা নেওয়ার।

উঠুন, ফিরে আসুন! রমজান চলে যাচ্ছে, কিন্তু আপনার সুযোগ এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাসে অনেক মানুষ জীবনের শেষ সময়ে আমল বাড়িয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আপনি কি সেই তালিকায় থাকতে চান না?

আল্লাহ আপনাকে ডাকছেন। আপনি কি সাড়া দেবেন?

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ