রমজানের ২৭তম রাতে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ৪২ লাখের বেশি মুসল্লি

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
রমজানের ২৭তম রাতে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ৪২ লাখের বেশি মুসল্লি

পবিত্র রমজান মাসের ২৭তম রাতে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ ও মদিনার মসজিদে নববিতে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। এ সময় পবিত্র মসজিদুল হারামে ৪২ লাখের বেশি মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন। তারা সেখানে তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে ইবাদতে পুরো রাত কাটিয়েছেন। 

বুধবার (২৬ মার্চ) সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আল-ইখবারিয়া সূত্রে আরব নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

 

পবিত্র রমজানের একটি মহিমান্বিত রাত লাইতুল কদর বা শবেকদর। তা রমজানের শেষ দশকের যেকোনো এক দিন হতে পারে। পবিত্র এই রজনীতে মহাগ্রন্থা কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এই রাতের বরকত ও মহিমা নিয়ে সুরা কদর নামে একটি সুরা নাজিল হয়েছে।

তাতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতে তা অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন, কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ...’

আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গতকাল বুধবারের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে ছিল প্রতি ঘণ্টায় এক লাখ ৭ হাজার ওমরাযাত্রীর যাতায়াতের জন্য মাতাফ প্রস্তুত করা। যেন পবিত্র কাবাঘর ও গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতরে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায়।

তাই মসজিদের ৪২৮টি এসকেলেটর এবং ২৮টি লিফট এবং ১৩০০টি স্পিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া গ্র্যান্ড মসজিদ প্রাঙ্গণ ঠাণ্ডা রাখতে ৯০ হাজার টন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঈদের আনন্দ উদযাপনে শরিয়তের নির্দেশনা

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ঈদের আনন্দ উদযাপনে শরিয়তের নির্দেশনা

নবী করিম (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর ঈদের প্রবর্তন হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)

তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম না থাকলেও আনন্দ-খুশির কমতি ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন; এমনকি মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। তাদের কোনো বৈধ আনন্দ উদযাপনে বাধা দিতেন না।

বুখারি শরিফের ২৯০৬ নম্বর হাদিস সেই কথারই ইঙ্গিত বহন করে। 

এক ঈদে আয়েশা (রা.)-এর ঘরে দুটি বালিকা (দফ বাজিয়ে) বুআস যুদ্ধের গৌরবগাথার সংগীত গাইছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাঁর মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। এমন সময় আবু বকর (রা.) আয়েশা (রা.)-কে ধমক দিয়ে বলেন, আল্লাহর রাসুলের কাছে শয়তানের বাজনা? তখন রাসুল (সা.) তাঁর দিকে ফিরে বলেন, ওদের ছেড়ে দাও।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সা.) বললেন, হে আবু বকর, ওদেরকে ছাড়ো। প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ঈদ আছে আর আজ হলো আমাদের ঈদের দিন। (বুখারি, হাদিস : ৩৯৩১)

তা ছাড়া ভিন্ন ধর্মের মানুষরা যেন জানতে পারে, ইসলামে বৈধ আনন্দ-ফুর্তি জায়েজ আছে। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনা- নবীজি (সা.) বলেন, ইহুদিরা যেন জানতে পারে, আমাদের ধর্মে প্রশস্ততা আছে।

নিশ্চয়ই আমি একনিষ্ঠ ও মহানুভব ধর্ম ইসলাম নিয়ে প্রেরিত হয়েছি। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৫৯৬২)

ঈদের দিন নবী করিম (সা.) পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম।

তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তাহলে এবার যাও। (বুখারি, হাদিস : ২৯০৭)

ঈদের দিন সাহাবিদের ঈদ আনন্দের ভাগাভাগির পদ্ধতি ছিল ভিন্ন রকম। পরস্পর দেখা হলে তারা দোয়ার মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতেন। যা ছিল প্রকৃত ঈদ আনন্দের অনন্য উদাহরণ। সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) বলেন, ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরাম একসঙ্গে হলে একে-অপরকে বলতেন, আল্লাহ কবুল করুন আমাদের থেকে এবং আপনাদের থেকে (সব আমল)। (ফাতহুল বারি ২/৪৪৯)

আর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ঈদের দিন বলতেন, জানি না, আমাদের মধ্যে কে পুরস্কৃত, তাকে আমরা শাবাশি দিতাম! আর কে বঞ্চিত, তার জন্য আমরা শোক প্রকাশ করতাম! হে পুরস্কৃত! তোমাকে অভিনন্দন। হে বঞ্চিত! আল্লাহ তোমার ক্ষতিপূরণ করুন। (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২৩৫)

উপরোক্ত হাদিস থেকে উলামায়ে কেরাম কয়েকটি বিধান উদ্ভাবন করেছেন।

১.  ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ করে শরীর ও মনকে উৎফুল্ল করে তোলা দ্বিনের অন্যতম নিদর্শন।

২.  আবশ্যকীয় বিধি-বিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে বৈধ খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কাজে লিপ্ত হওয়া নিন্দনীয় নয়। যেমনটি হজরত আয়েশা (রা.)-এর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

৩.  নবী করিম (সা.)-এর অন্যতম গুণ ছিল, তিনি মানুষের সঙ্গে নম্র আচরণ করতেন এবং তাদের মনোভাব বুঝতেন। তাই বৈধ কোনো অভ্যাস বা কাজে তিনি কখনো বাধা দিতেন না।

উল্লিখিত ঈদের বিনোদনে নবীজি (সা.)-এর ঘর ছিল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা দয়া-মায়া, ভালোবাসা ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। সারকথা, নবীর যুগে ঈদ ছিল একদিকে ইবাদত, ধর্মীয় আচার এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যম। অন্যদিকে মনের সব দুঃখ-কষ্ট ও কালিমা দূর করে পরিবার-পরিজন, সন্তানাদি ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠার অনন্য সুযোগ। তবে নবীজি (সা.) এই আনন্দ প্রকাশের নির্দিষ্ট সীমারেখাও উল্লেখ করে দিয়েছেন।
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর সুন্নত পদ্ধতি

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর সুন্নত পদ্ধতি

আমাদের দেশে ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রচলন আছে। কিন্তু সালামের আগেই ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা উচিত নয়। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো এই দোয়া পাঠ করা—‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ বলা। এর অর্থ, আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন।

ওয়াসিলা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা। মহানবী (সা.)ও বলেন, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা। (বায়হাকি : ৩/৪৪৬)

তা ছাড়া ঈদের দিন সালাম ও মুসাফাহা করা ইসলামী শিষ্টাচারের অনুষঙ্গ।

সালামের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দেন। মুসাফাহার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, দুই মুসলমান যখন পরস্পর সাক্ষাতে মুসাফাহা করে তখন তাদের পৃথক হওয়ার আগে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১৪; তিরমিজি, হাদিস : ২৭২৭)

দীর্ঘ সাক্ষাতের পর পরস্পরের ঘাড়ের সঙ্গে ঘাড় মেলানো এবং বুকের দিকে জড়িয়ে ধরাকে শরিয়তে মুয়ানাকা বলা হয়।

এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, জায়েদ ইবনে হারিসা (রা.) যখন মদিনায় এলেন, তখন নবী করিম (সা.) আমার ঘরে ছিলেন। জায়েদ (রা.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আমার ঘরে এলেন এবং দরজায় টোকা দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের কাপড় সামলাতে সামলাতে উঠে গেলেন। জায়েদের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমু দিলেন।
(জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩২)

মুয়ানাকা করার সুন্নত পদ্ধতি হলো, একে অপরের ডান দিকের ঘাড়ের সঙ্গে ঘাড় মেলানো। বুকের সঙ্গে বুক মিলে গেলে কোনো সমস্যা নেই। তবে মুয়ানাকা শুধু একবার করতে হয়, তিনবার করার কথা হাদিস বা ফিকহের কোনো কিতাবে উল্লেখ নেই। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৯/৭৭)

মুয়ানাকা করার সময় এই দোয়া পড়া উচিত—‘আল্লাহুম্মা জিদ মুহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহি।’ অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের মধ্যে আল্লাহর ওয়াস্তে পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিন। (জামেউস সুনান : ১৫৯)
 

মন্তব্য

ঈদের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ঈদের দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এলো ঈদুল ফিতর। ঈদ শুধু আনন্দ উৎসব আর ভোগ-বিলাসের জন্য নয়, বরং বিভিন্ন ইবাদতের দ্বারা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ, ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। ঈদুল ফিতরে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আছে বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—

ঈদের রাতে ইবাদত

ঈদের রাতে তারাবির নামাজ নেই, তবু সাধ্যমতো নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ ইত্যাদি করা যায়।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যেদিন অন্তরসমূহ মুর্দা হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)

ঈদের দিনে করণীয়

ঈদের দিনের প্রধান কাজ নির্ধারিত সুন্নত মোতাবেক নামাজের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে আগেভাগেই নামাজ আদায় করতে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হলো, যে পরিশুদ্ধ হয়েছে, তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করেছে এবং নামাজ আদায় করেছে। (সুরা : আ‘লা, আয়াত : ১৪-১৫)

ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবিরে তাশরিক অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ পাঠ করা সুন্নত।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবির পাঠ করতেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ১১০৬)

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ এর অর্থ- আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুন।

(আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১৭৫৮৯)

ঈদে‌র দিনে বর্জনীয় কাজ

ঈদ মুসলিম জাতির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসব তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।  বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কওমের (সম্প্রদায়ের) অনুসরণ-অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯৮৯)

ঈদের পোশাক নির্বাচন

প্রতিটি সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা পোশাক আছে। দেহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরাই শরিয়তের নির্দেশ। ঈদের সময় পোশাক-আশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) মহিলার পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে লানত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৯৮)

অশ্লীলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকা

সিয়াম সাধনার মাসে সবাই যেমন গুনাহর ব্যাপারে সতর্ক ছিল, ঠিক তেমনি সারা বছর থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে ঈদের দিনগুলোতে অশ্লীলতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। কেননা এগুলো হারাম হওয়া সত্ত্বেও ঈদ উপলক্ষে আরো বেশি এগুলো রিলিজ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)

ঈদের দিনের নিষিদ্ধ কাজ

ঈদের দিন মহান আল্লাহ সবাইকে মেহমানদারি করেন। এদিন নিজে খাওয়া এবং অন্যকে খাওয়ানোর দিন। তাই এদিন রোজা রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ও কোরবানির ঈদের দিন রোজা পালন করা থেকে, সাম্মা ধরনের কাপড় পরিধান করা থেকে, এক কাপড় পরিধানরত অবস্থায় দুই হাঁটু তুলে নিতম্বের ওপর বসতে (কেননা এতে সতর প্রকাশ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে) এবং ফজর ও আসরের পর নামাজ আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২৫৪৪)
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

কেমন ছিল মহানবী (সা.)-এর যুগের ঈদ

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
কেমন ছিল মহানবী (সা.)-এর যুগের ঈদ

সব জাতিরই সুনির্দিষ্ট কিছু উৎসব রয়েছে। জাহেলি যুগেও আরবে নওরোজ ও মেহেরজান নামের দুটি উৎসব ছিল। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের এর চেয়ে উত্তম দুটি উৎসব উপহার দেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।

এক মাস সিয়াম সাধনার পর পয়লা শাওয়াল পালন করা হয় ঈদুল ফিতর। আর ১০ জিলহজ পালন করা হয় ঈদুল আজহা। দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানুল মোবারকের রোজা ফরজ হয়। একই হিজরিতে ঈদুল আজহার নামাজ ও কোরবানির বিধানও নাজিল হয়।

 

নামকরণ

ঈদ শব্দটি আরবি। অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি। শব্দের মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। লিসানুল আরব অভিধানে রয়েছে, আরবদের কাছে ঈদ বলা হয় এমন সময়কে, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে।

আল মুহিত অভিধানে রয়েছে, যে রোগ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা অনুরূপ কোনো কিছু বারবার ফিরে আসে তাকে ঈদ বলা হয়।

আল মুনজিদ অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদ এমন দিনকে বলা হয়, যাতে লোকজনের সমাগম হয় বা কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করা হয়। ঈদ প্রতিবছর সাজগোজ, আনন্দ-খুশি ও নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে ফিরে আসে। এ কারণে ঈদের দিনকে আনন্দ ও খুশির দিন বলা হয়। অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদকে এ জন্য ঈদ বলা হয় যে তা প্রতিবছর নতুন আনন্দ ও খুশি নিয়ে ফিরে আসে।

কোরআন মজিদেও ঈদ শব্দের ব্যবহার রয়েছে; যেমন- মরিয়ম তনয় ঈসা বলল, হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে ঈদ-আনন্দোৎসব এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৪)।

এই আয়াতে আসমানি খাদ্য নাজিল হওয়ার দিনটি পরবর্তীদের জন্য স্মৃতিচারণার দিন হওয়ায় তাকে ঈদ বলা হয়েছে।

ঈদের প্রবর্তন

মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদ্‌যাপন করছে। তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে। মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের ওই উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৬)

মদিনায় প্রথম ঈদ

মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ। তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামা-কাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রাসুল (সা.) পূরণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তাহলে এবার যাও।

ঈদের দিনে মহানবী (সা.)-এর আমল

মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি দ্রব্য খেতেন।

ঈদুল আজহায় কিছু খেতেন না। কোরবানির গোশত দিয়ে দিবসের প্রথম আহার করতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন। তিনি ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। অতঃপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে খুতবা দিতেন। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন।

সাহাবায়ে কেরামের ঈদ

সাহাবায়ে কেরাম সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করতেন। তাঁরা এ বাক্যের মাধ্যমে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।

সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমজানে গুনাহ মাফ হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে বেশি চিন্তিত থাকতেন। তাই আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে থাকেন, আমার গুনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কিভাবে ইমামতি করতে পারি। তাঁদের ঈদে নতুন জামা, জুতা ও খাওয়াদাওয়ার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ কম ছিল না। মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাঁকে কাছে পাওয়া, তাঁর নির্দেশ পালন করাই ছিল তাঁদের প্রকৃত আনন্দ। ঈদের দিন অনেক দূর থেকে সাহাবায়ে কেরাম ছুটে যেতেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য।

পথের শিশুর প্রতি মহানবী (সা.)-এর দয়া

একদা ঈদের দিন মহানবী (সা.) রাস্তার পাশে একটি ছেলেকে কাঁদতে দেখে তার কাছে যান। ছেলেটি বলল, তার মা ও বাবা কেউই নেই। মহানবী (সা.) ছেলেটিকে গৃহে এনে বলেন, আমি তোমার পিতা আর আয়েশা তোমার মা, ফাতেমা তোমার বোন আর হাসান-হোসাইন তোমার খেলার সাথি। মহানবী (সা.) এতিম ছেলেটিকে সন্তানের মর্যাদা দান করেন। এভাবে মহানবী (সা.) ঈদের দিন অসহায়দের সহায়তা দান করতেন। মহান আল্লাহ আমাদের মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের মতো ঈদ উদ্‌যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ