<p>বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়।’</p> <p>গতকাল রবিবার (২৫ আগস্ট) জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ভাষণের জবাবে আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব। জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অবশ্যই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হবে। সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতা, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আমি আশা করব, প্রধান উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়া-রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে আর কোনো দিন কেউ যেন কোনো পুলিশি রাষ্ট্র পরিণত না করতে পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। আমরাও সেটা চাই। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিলে আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আমাদের ছেলেদের গুলি করে মারা হবে-এটা আর দেখতে চাই না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের দায়ীদের বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা হয়েছে। এগুলো অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’’</p> <p>আমরা পত্রিকায় দেখলাম প্রধান উপদেষ্টার মামলা উঠানো হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আরেকজন উপদেষ্টার মামলাও উঠানো হয়েছে- সাজা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত বা সমমনা রাজনৈতিক দলের এমন কেউ নেই, যাদের নামে মিথ্যা মামলা নেই। আমাদের এক লাখ ৪৫ হাজার মিথ্যা গায়েবি মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে-এটা আমাদের দাবি।’</p> <p>এ সময় উপস্থিত একজন বলেন, ‘ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।’ তার কথা আমলে নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগে মামলা প্রত্যাহার করুক, তারপর ক্ষতিপূরণ নিয়েন।’</p> <p>সংস্কার করতে পুলিশ ও ব্যাংক কমিশন গঠন করা হবে, প্রধান উপদেষ্টার এমন প্রতিশ্রুতির জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ভালো কথা। আইজিপিও বলেছেন, পুলিশকে জনগণের পুলিশ তৈরি করা হবে, আইডিয়াল পুলিশ। আমরা দ্রুত এটাও চাই। এখনো একটা জিনিস ধোঁয়াশা, যেটা আমার পরিষ্কার করা হয়নি। যেটা আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা একটা রোডম্যাপ দেবেন, গণতন্ত্রের পথে কিভাবে যাবেন, তা কিন্তু আমরা পাইনি। সংস্কারের কথা বলেছেন, কিন্তু কোন কোন খাতে সংস্কার আনবেন, সে ব্যাপারে কিছু আভাস দিয়েছেন। আমি জানি, এত অল্প সময়ে সেটা সম্ভব নয়। তার পরও একটা ধারণা দিলে, ধারণা করতে পারতাম যে ভালোর দিকে যাচ্ছে। ভালোর দিকে যাক এটা আমাদের প্রত্যাশা।’</p> <p>সচিবালয় ঘেরাও এবং ছাত্র-জনতার ওপর পোশাকধারী আনসার সদস্যদের হামলা প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পোশাকধারী আনসার সদস্য ও কিছু লোক সেখানে বড় ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, ছাত্ররা সেটা নস্যাৎ করে দিয়েছে।’</p> <p>আনসার সদস্যদের এই কর্মকাণ্ডকে অশনিসংকেত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটা ভালো লক্ষণ নয়। অর্থাৎ যারা পরাজিত, এখন আবার বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করছে, ছাত্র-জনতার বিজয়কে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য।’ </p> <p>জনগণের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সব সময় সতর্ক থাকবেন। এই বিষয়গুলোকে কখনো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।’</p> <p>বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যখন ফ্যাসিবাদ ছিল, তখন তো দাঁড়াবার কথা চিন্তাও করতে পারতেন না। কথা বলার সুযোগ পেতেন না। সুযোগ এসেছে, সময় দিন। কেবল তো দুই সপ্তাহ হলো, আপনাদের বিষয়গুলো নিশ্চিয়ই দেখবে। সচিবালয় ঘেরাও করে কোনো কিছু আদায় করার চেষ্টা করবেন না। এটা জনগণ ভালো চোখে দেখবে না।’</p> <p>ছাত্রদের উদ্দেশে সাবেক এই শিক্ষক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্ররাই সব কিছু পরিবর্তন করে এনেছে; ’৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে ’২৪ সাল পর্যন্ত। এই পরিবর্তনের ধারাটা তারা সেট করে দিয়েছে। সে জন্য ছাত্রদের বাংলাদেশের মানুষ আলাদা চোখে দেখে, সম্মান করে-ভালোবাসে। তাদের ওপর আস্থা সব সময় থাকে। একই সঙ্গে শিক্ষক, কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বলপ্রয়োগ করে অযথা-এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যে সেখানে প্রশাসন নষ্ট হয়ে যায়।’’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখলাম কিছু কিছু স্কুল-কলেজে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এটার ব্যবস্থা তো আছেই। অভিযোগ থাকলে অভিযোগ করেন, প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।’</p> <p>সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘আমরা প্রশাসনে এখনো সেই সব ব্যক্তিকে দেখতে পাচ্ছি- যারা ফ্যাসিবাদী সরকারকে মদদ দিয়েছে, সাহায্য করেছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের চেহারা দেখতে চাই না। আবারও বলছি, অতি দ্রুত এদের অপসারিত করে দয়া করে দেশপ্রেমিক, যারা কাজ করতে চায়, যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে তাদেরকে নিয়ে এসে প্রশাসনকে চালু করুন।’ এটা না করলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে ধৈর্য ধরে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। এই সরকার এসেছে, অবশ্যই কাজ করার জন্য এসেছে। সেই সুযোগ তাদের দিতে হবে। আমরা বারবার বলেছি, অবশ্যই আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। নির্বাচন দিতেই হবে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, সেখানে যেন সবাই ভোট দিতে পারে। এমন যেন না হয় যে আগের অবস্থা ফিরে আসে। সে জন্যই আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। জনগণ অপেক্ষা করছে। সেটা অবশ্যই যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে-এটা আমরা বিশ্বাস করি।’<br />  <br /> জাতীয় পার্টির উদ্যোগে পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় আরো বক্তব্য দেন আহসান হাবীব লিংকন, জাফর আহমদের কন্যা কাজী জয়া প্রমুখ।</p>