ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬
বিএনপি

স্বৈরাচারের প্রতি ক্ষোভ ও ক্রোধ থেকেই ভাঙচুরের জনস্পৃহা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
স্বৈরাচারের প্রতি ক্ষোভ ও ক্রোধ থেকেই ভাঙচুরের জনস্পৃহা
ফাইল ছবি

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। এতে দলটি বলেছে, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে।

এরই ফলশ্রুতিতে বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।’

এতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

‘অথচ জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নানান ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে যখন-তখন সড়কে “মব কালচারের” মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।’

বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, জুলাই-আগস্টের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিন্দিত ঘৃণিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি অগ্রাধিকার, অথচ এসব বিষয়ে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।

বিএনপি আরো বলেছে, এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা, তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।

দলটি এ-ও বলেছে, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।’

বিএনপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জুলাই ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

এতে আরো বলা হয়, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেওয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরনের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’

‘বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্র বিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দলটি আহ্বান জানিয়েছে, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায়, দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং, কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জি এম কাদেরের ইফতার মাহফিলে হট্টগোল-মারধর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জি এম কাদেরের ইফতার মাহফিলে হট্টগোল-মারধর
ফাইল ছবি

রাজধানীতে জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইসিবি এলাকায় একটি হোটেলে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের ইফতার অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ আর নেই

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ আর নেই

 

জানা যায়, বুধবার বিকেলে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছামাত্র দুই গ্রুপের মধ্যে হট্টোগোল তৈরি হয়।

পরে সেখানে বেশ কয়েকজনকে মারধর করতেও দেখা যায়।

এ সময় হোটেলের সামনের সড়কেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া এবং চাঁদাবাজি দমন করতে হবে : শিমুল বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া এবং চাঁদাবাজি দমন করতে হবে : শিমুল বিশ্বাস
ছবি : কালের কণ্ঠ

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া এবং পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’ 

বুধবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার জন‍্য পুলিশ বিভাগ, বিআরটিএ এবং পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফুলবাড়িয়া-গুলিস্তান বাস টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট শ্রমিক মালিকদের করনীয় নির্দেশনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘ঈদ এলেই জনদুর্ভোগে পড়েন ঘরমুখো মানুষ।

অতীতে পথে পথে মানুষের ভোগান্তি দেখেছি। এই ভোগান্তি দূর করতে হবে।’

আরো পড়ুন
এসআই সদস্যদের মোটরসাইকেল কিনতে সুদমুক্ত ঋণ দেবে সরকার

এসআই সদস্যদের মোটরসাইকেল কিনতে সুদমুক্ত ঋণ দেবে সরকার

 

শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘এয়ারপোর্টে প্রবাসীরা যখন হয়রানির শিকার হন, তা গোটা দেশের ওপর পড়ে। তেমনি পরিবহন সেক্টরে কিছু চাঁদাবাজের জন্য পুরো পরিবহন সেক্টর এর দায় নিতে পারে না।

বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও মামলা এবং হয়রানি থেকে রেহাই পাননি। সেই ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশীদার হিসেবে পেতে চাই। এর জন্য চাঁদাবাজ ও দখলবাজমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বার জানাই।’ 

এতে বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার সরোয়ার হোসেন, যুগ্ম কমিশনার এনামুল হক, ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (মতিঝিল) জালাল উদ্দিন, মালিক সমিতির সাইফুল ইসলাম, আব্দুল বাতেন, শ্রমিক ফেডারেশনের আব্দুর রহিম বক্স প্রমুখ।

 

সভায় আসন্ন ঈদে নিরাপদে ঘরে ফেরা ও ফিরে আসা নির্বিঘ্ন করার জন্য মহাখালী, গাবতলী, সায়দাবাদ, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেল স্টেশনসহ ঢাকা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিসিটিভি ও ইলেকট্রনিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনার আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা পুলিশ, বিআরটিএ, মালিক, শ্রমিক, যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আ. লীগ নেতা গোলাপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আ. লীগ নেতা গোলাপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী আব্দুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (১৯ মার্চ) কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

আরো পড়ুন
নির্বাচনের জন্য আইনগতভাবে উপযুক্ত বাবর

নির্বাচনের জন্য আইনগতভাবে উপযুক্ত বাবর

 

আক্তার হোসেন বলেন, আব্দুস সোবহান গোলাপ সংসদ সদস্য হিসেবে পাবলিক সার্ভেন্ট হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের কুইন্স-এ ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি, যার মূল্যমান বাংলাদেশি টাকায় ৩২ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে কমিশন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি মো. আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকানা অর্জন করে ও তা ভোগদখলে রাখেন।

এ ছাড়া তার নিজ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৫১টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরো পড়ুন
বার্ন ইনস্টিটিউটের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যু

বার্ন ইনস্টিটিউটের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যু

 

গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারার এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে।

মন্তব্য

নির্বাচনের জন্য আইনগতভাবে উপযুক্ত বাবর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের জন্য আইনগতভাবে উপযুক্ত বাবর

অস্ত্র মামলার ১৭ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

রায়ে আদালত বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, আটক এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করার পুরো বিষয়টি ছিল কারসাজি। আর এই কারসাজির প্রধান ভিকটিম (ভুক্তোভোগী) হলেন লুৎফুজ্জামান বাবর।

বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেন।

হাইকোর্টে বাবরের আপিলের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সুলতানা আক্তার রুবী।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে লুৎফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে আর কোনো সাজা থাকল না।

নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কিছুর জন্য তিনি এখন আইনগতভাবে উপযুক্ত। আমরা আশা করব, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে তিনি পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন।’

মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা হয়েছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তার বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছিল।

যেদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তার সাত দিন পর মামলা করা হয়েছে।’ 

হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, এই মামলাটি করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াটিই ছিল অবৈধ। এ জন্য মামলার প্রক্রিয়াটিই অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আর যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবরকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেইসব সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, একজনের সাক্ষ্যের সেঙ্গে আরেকজনের সাক্ষ্যের কোনো মিল নেই। এগুলোর সবই ছিল এক-এগার সরকারের কারসাজি।

এই কারসাজির প্রধানতম ভিকটিম (ভুক্তভোগী) ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর।’ এই মামলায় বাবরের আটকাদেশকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলেও জানান আইনজীবী শিশির মনির।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৭ মে যৌথ বাহিনী লুৎফুজ্জামান বাবরকে বাসা থেকে আটক করে। পরদিন তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের ৭ দিন পর, অর্থাৎ ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ও ১৯ (চ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন গুলশান থানার এস আই হেলাল উদ্দিন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথ বাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তার স্ত্রী ৩টি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলবারেরটি দেখাতে পারেননি। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ বাবরকে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় ৭ বছর সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালেই হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর, যার ওপর শুনানি শেষে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

গত বছর ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বাবরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এই মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা তেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলাতেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ