দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারি কর্মকর্তারা আসতো তদবির বাণিজ্য করতে। মেহেরপুরের আবাসিক হোটেলগুলো রমরমা ব্যবসা করতো ওই সময়গুলোতে। সেই দাপুটে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে এখন নেই কোনো জনমানব। মন্ত্রীর বড়ভাই সহিদ সাদিক হোসেন বাবুল, মেজভাই শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকবাল হোসেন বুলবুল বাড়িতে অবস্থান করলেও কেউ এখন বাড়ির বাইরে আসেন না।
পরিবারতন্ত্রের কমিটি
২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ফরহাদ হোসেনকে পুনরায় সভাপতি ও এম এ খালেককে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এর ১৩ মাস পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।
কমিটিতে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তার ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান, বোন শামীম আরা হীরা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা হোসেন সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি, বড় ভাই ইকবাল হোসেন বুলবুল শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক, ভাইয়ের ছেলে আদিব হোসেন আসিফ মেহেরপুর সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, চাচা প্রয়াত বোরহান উদ্দিন চুন্নু সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমঝুপি ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার ছেলে সেলিম আহমেদকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সে উপ-নির্বাচন হয়নি। চাচাতো ভাই মোমিনুল ইসলাম শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বারাদি ইউপি চেয়ারম্যান, চাচাতো ভাই আকবর জালাল ও বিয়াই (বোনের ভাসুর) সিরাজুল ইসলাম ও মামা সম্পর্কের রেজাউল হক মাস্টার পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদ।
কমিটি অনুমোদনের পর পরই মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, সভাপতির নিকটাত্মীয় কেউ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে নেই। প্রতিমন্ত্রীর যেসব আত্মীয়স্বজন এই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন, তারা সবাই সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এ ক্ষেত্রে নতুন করে কাউকে কোনো পদ পদবিতে রাখা হয়নি। তারা তাদের নিজের যোগ্যতা বলেই বিভিন্ন পদ-পদবিতে ঠাঁই পেয়েছেন।
কলেজশিক্ষক থেকে মন্ত্রী
ঢাকার সিটি কলেজে শিক্ষকতা করতেন ফরহাদ হোসেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসেন মেহেরপুরে। বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে জয়ী হয়ে পরের বছর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পেয়ে যান। এরপর ধীরে ধীরে মেহেরপুরে দলীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি পর্যন্ত সবই চলে যায় ফরহাদ হোসেনের পরিবারের দখলে।
ফরহাদ হোসেনের বাবা ছহিউদ্দীন বিশ্বাস ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন কমিটির সভাপতি এবং তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে ফরহাদ হোসেন সংসদ সদস্য (এমপি) হওয়ার আগ পর্যন্ত দলের কোনো পদ ছিলেন না। এলাকায় কলেজশিক্ষক হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো বোন সৈয়দা মোনালিসা ইসলামকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালে মেহেরপুর-১ আসনের এমপি হওয়ার পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে সরাসরি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বনে যান। সবশেষ ২০২২ সালেও দলের সম্মেলনে তিনি একই পদ পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দলীয় সভানেত্রী ফরহাদ হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়ে একই মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন ফরহাদ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় কয়েকটি মামলায় ফরহাদ হোসেন, তার স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা হোসেন, ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল, ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তার বোন শামীম আরা হীরা গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পর তিনি জামিন পেয়ে বের হয়ে আসেন।
দলে তৈরি করেছিলেন বিভেদ
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, পরিবারের সদস্য, স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের দলীয় বিভিন্ন পদে বসিয়েছেন সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তাদের অনেককে জনপ্রতিনিধিও বানিয়েছেন। তাদের দিয়েই জেলার ঠিকাদারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলেজ-বিদ্যালয়ে নিয়োগ, সরকারি কর্মচারীদে বদলি বাণিজ্য সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। বিপরীতে কোণঠাসা করেছেন দলের ত্যাগী নেতাদের। তার বিপক্ষে গেলে দলীয় নেতা-কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। ফরহাদের ভাই ও ভগ্নিপতির দাপটে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তটস্থ থাকতেন। ২০১৪ সালের এমপি হওয়ার পর থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক পাশে ডিসি, আরেকপাশে এসপিকে নিয়ে মঞ্চে বসতেন। দলীয় অনেক সিনিয়র নেতাদেরও মঞ্চে জায়গা দিতেন না ফরহাদ হোসেন।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফরহাদের আধিপত্যের বিরোধিতা করায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন তিনি। এ নিয়ে দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি করে রেখেছিলেন। যার অন্যপক্ষে নেতৃত্ব দিতেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল। তার সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, সহসভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন প্রমুখ। দলীয় কোন্দলের কারণে এ সব নেতারা স্থানীয় সরকারের গুরত্বপূর্ণ পদে থাকলেও তাদের নানাভাবে হয়রানি করতেন এবং উন্নয়নমূলক কাজে সরাসরি বাঁধা দিতেন।
ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ
মেহেরপুরের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ও ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল। মূলত অন্যদের প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ নিয়ে বাবলু বিশ্বাস তা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারেরা।
২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর সরফরাজ হোসেনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলা করেছিলেন দেবাশীষ বাগচি নামের এক ব্যক্তি। সে মামলায় চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি মেহেরপুর অর্থঋণ আদালত সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলের এক বছর জেল, ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করে রায় দেন। আদেশে বলা হয়, ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানার ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাদীকে এবং ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। বাদী দেবাশীষ বাগচি মৃদুলের ব্যবসায়ী অংশিদার ছিলেন।
মামলার বাদী দেবাশীষ বাগচি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি সরফরাজের সঙ্গে যৌথভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রকৌশলী, এলজিইডিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫টি দরপত্র তিনি প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নেন। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে জানুয়ারিতে সরফরাজ হঠাৎ কিছু না বলে তাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন। পাওনা টাকা চাইলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি শুরু করেন। এক পর্যায়ে পাওনা টাকা বাবদ গত বছরের ১২ জুলাই ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গেলে দেখা যায় ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা নেই। পরে আদালতে মামলা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের আগে ছোট একটি ওষুধের দোকানের ব্যবসা করতেন সরফরাজ হোসেন মৃদুল। যেখানে তেমন মূলধনও ছিল না। ভাই এমপি হওয়ার পর পরই তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত হন। প্রভাব বিস্তার করে দরপত্র বাগিয়ে নিতেন। মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত, এলজিইডি, সড়ক বিভাগ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র প্রভাব খাটিয়ে বাগিয়ে নিতেন এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করতেন ওই সকল উন্নয়নমূলক কাজগুলোতে। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একাধিকবার বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তেন। এমনকি কয়েকটি কাজ প্রতিষ্ঠান বুঝে না নিলে প্রভাব খাটিয়ে তা বুঝিয়ে দিতেন। তিনি পৌরসভা কমিউনিটির সামনে বড় বাজার সড়কের পাশে ৬ কাটা জমি কিনে সেখানে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেন। এ ছাড়া ঢাকাতে দুটি ফ্ল্যাট, মেহেরপুর শহরের অদূরে দিঘীরপাড়ায় ১০ বিঘা জমি কিনেছেন সরফরাজ হোসেন মৃদুল।
দাপট দেখিয়েছেন ভাই-ভগ্নিপতি
আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি ও তিনি পিরোজপুর ইউপির চেয়ারম্যান। ২০২৪ সালের নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জনসমাবেশে তিনি নিজেকে বড় মাস্তান পরিচয় দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে হুমকি দিতেন। ওই সময় তার একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন ‘কিসের ভয় দেখায়, আমি তো বুঝতি পারিনি। আমার চেয়ে মাস্তান বেশি আছে কেউ? আমার চেয়ে যন্ত্রপাতি কারও বেশি আছে? আমার চেয়ে কি টাকা তাদের বেশি আছে? তাহলে ভয় কিসের দেখায়?’ একই সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘পিরোজপুর ইউনিয়নের চারটি সেন্টারে (ভোটকেন্দ্রে) আমি যেন দেখতে না পাই কোনো এজেন্ট আছে ওই চাপা দেওয়া জিনিসের (ট্রাক প্রতীকের)।’
মন্ত্রীর ভগ্নিপতি হওয়ার সুবাদে বাবলু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কারও কোনো কথা বলার সাহস ছিল না। ১০ বছর পিরোজপুর ইউনিয়নের দাদ বিল তিনি দখলে রেখেছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন ভাতা ও সরকারি সুবিধা দিতে তিনি প্রতিজনের কাছে থেকে নিতেন টাকা। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় লোকজন বাবলু বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। এর পর তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর ঢাকার ভাটার এলাকা থেকে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন।
মেহেরপুর সরকারি বালিকা ও বালক উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি ছয়তলাবিশিষ্ট একাডেমি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। প্রতিটি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কোটি টাকা। বালিকা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ঠিকাদার বাবলু বিশ্বাস, বালক বিদ্যালয়টির ঠিকাদার সরফরাজ হোসেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২৯ আগস্ট মেহেরপুর শহরের ক্যাশবপাড়ায় ফরহাদ হোসেনের ফুফাতো ভাই শাজাহান সিরাজের ভাড়া বাড়ি থেকে কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ সরকারি মালামাল জব্দ করে যৌথ বাহিনী। ফরহাদ হোসেনের পক্ষে শাজাহান সিরাজ বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। জব্দ মালামালের মধ্যে ছিল বিনামূল্যে বিতরণের কোরআন শরিফ, কম্বল, বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়াসামগ্রী, সেলাই মেশিন, হুইলচেয়ার, চিকিৎসকের অ্যাপ্রোন, পিইপি, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপস, অক্সিজেন সিলিন্ডার, শিক্ষার্থীদের টিফিন বক্স। এসব সামগ্রীর গায়ে লেখা ছিলো ‘বিক্রয়ের জন্য নহে’।
ফরহাদ হোসেনের ভাগ্নে সাবেক ছাত্রনেতা ও ব্যবসায়ী নেতা আমিনুল ইসলাম খোকনও ছিল মেহেরপুরের আরেক ত্রাস। তার বড়বাজারের ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বসত সালিস। যে কোন কাজ করাতে আমিনুল ইসলাম খোকনের সুপারিশ লাগতো। হাসপাতাল, সমাজসেবা, ব্যবসা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ হতো তার হুকুমে।
হলফনামাতেই ১০ বছরে আয় ১২ গুণ
গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া ফরহাদ হোসেনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে শিক্ষকতা করে বছরে আয় করতেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৪০ টাকা। ১০ বছর পর সেই আয় বেড়ে দাঁড়ায় বছরে ৭৭ লাখ ১ হাজার ৮৫০ টাকা।
তার স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা ইসলামের নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি সোনা ছিল। এখন তার সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখে। যদিও মোনালিসা ইসলামের আয়ের উৎসের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঘুষের টাকা তিনি বা তার স্ত্রী গুণে গ্রহণ করতেন। তিনি ক্ষমতার দাপটে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার স্ত্রী অনলাইন জুয়া (ক্যাসিনো) নিয়ন্ত্রণ, স্কুল-কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ আয় করেছেন। অবৈধ আয় দিয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের মাধ্যমে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন বলে জানা গেছে। ৫ আগস্টের পর তিনি সপরিবারে কানাডায় পালিয়ে গেছেন বলেও গুজব ছড়িয়েছিল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মেহেরপুরের সভাপতি ড. গাজী রহমান বলেন, মানুষ যখন পছন্দমাফিক প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পান না, ঠিক তখনই গণতন্ত্র বিলুপ্ত হতে থাকে। ঠিক সে রকম একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফরহাদ হোসেনের মত মানুষ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। যার ফলে মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ হয়ে গিয়েছিলো। এমনকি তিনি রাষ্ট্রের বড় পদ দখল করে ঘুষ-বাণিজ্য, অনিয়ম ও লটুপাটের স্বর্গ গড়ে তুলেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কোণঠাসা করে পরিবারতন্ত্র কায়েম করেছিলেন।