<p>কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাজারে নগদ টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও তা উত্তোলন করতে পারেননি বহু মানুষ। তিন দিন আন্দোলন, শুক্র-শনিবার সরকারি ছুটি ও তিন দিন সাধারণ ছুটির পর আগামীকাল বুধবার থেকে ব্যাংক লেনদেন শুরু হচ্ছে। এতে এটিএম বুথগুলোতে টাকা তোলার চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছেন ব্যাংকাররা।</p> <p>খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু সরকারি বা সাধারণ ছুটি নয়, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণেও এটিএম বুথসহ ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। টাকা জমা, উত্তোলন, বুথে টাকা সরবরাহ থেকে শুরু করে আমদানি দায় পরিশোধও বন্ধ। অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি প্রয়োজন।</p> <p>সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন কালের কণ্ঠকে জানান, গত কয়েক দিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে আমদানি মূল্য পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এই সময়ের মধ্যে যেসব ব্যবসায়ীর বিল দেওয়ার তারিখ ছিল আগামীকাল তাদের বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে। যেহেতু সুইফট বন্ধ ছিল তাই আমাদের কিছুই করার ছিল না। সুইফট বন্ধ থাকলে বিলে পেমেন্ট করা যায় না।</p> <p>মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এএমডি মতিউল হাসান বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকে আন্দোলন ও কারফিউ জারি থাকার কারণে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। তাই ব্যাংকের এটিএমগুলোতে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। তাই রাজধানীসহ সারা দেশের এটিএম বুথগুলোতে লেনদেন করতে সমস্যা হয়েছে। আশা করি আগামীকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ কাল থেকে ব্যাংক খোলার সংবাদ পাওয়া গেছে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, যেসব বিদেশি পেমেন্ট বাকি আছে তাদের সঙ্গে কাল যোগাযোগ হবে। যাদের পেমেন্ট বিলম্ব হয়েছে তাদের দায় শোধ করা হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে সচরাচর জরিমানা হয় না।</p> <p>গত রবিবার রাজধানী ঢাকার নটর ডেম কলেজের সামনে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের বুথে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত কর্মচারী বলেন, ‘নেট নেই। আজ কেউই টাকা তুলতে পারেনি।’</p> <p>এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে আমরা পরিস্থিতির শিকার। বুথ সেবা থেকে শুরু করে ইন্টারনেটনির্ভর সব ধরনের ব্যাংকিং সেবাই বন্ধ রয়েছে।’ তবে কিছু কিছু বুথে টাকা পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।</p> <p>ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের টাকা সরবরাহকারী কম্পানি মানি ট্রান্সপ্লান্ট লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের কারণে গাড়ি নিয়ে আমরা বের হতে পারছি না। তাই বুথে টাকা সরবরাহ করতে পারিনি। সর্বশেষ বুধবার টাকা সরবরাহ করেছি। যেসব বুথে টাকা শেষ হয়ে গেছে, সেসব বুথে টাকা না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সব জায়গায় নির্বিঘ্ন জাতায়াত করা যাচ্ছে না। তাই দেশের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে টাকা সরবরাহের বিষয়টিও।’</p> <p>বিদেশি বাণিজ্য সম্পর্কে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রেজোয়ান রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইন্টারনেটসেবা বন্ধ থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে ধসে পড়ছে। এখন আমাদের আমদানি-রপ্তানি হুমকির মুখে। আগে থেকেই ডলারের অভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ছিলাম। কোটা আন্দোলন সেই ক্ষতিতে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এখন বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তারা এসএমএস করলেও তার কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যেকোনো সময় তারা অর্ডার ক্যান্সেল করতে পারেন। দেশের অবস্থা যেহেতু খারাপ, সেহেতু চাইলেই বিদেশি বায়াররা তাদের অর্ডার শ্রীলঙ্কা বা ভিয়েতনামে স্থানান্তর করতে পারেন। তাই দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে যেকোনো মূল্যে সমস্যার সমাধান করা দরকার।’</p>