সোনালি ব্যাগের আলোচনা আছে, নেই বাণিজ্যিক উৎপাদন

শিহাবুল ইসলাম
শিহাবুল ইসলাম
শেয়ার
সোনালি ব্যাগের আলোচনা আছে, নেই বাণিজ্যিক উৎপাদন
ফাইল ছবি

আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তাই এর বিকল্প কী হবে—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পলিথিনের পরিবর্তে কাপড় ও পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা সম্ভব কি না এমন আলোচনা সামনে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিকল্প না থাকলে পলিথিন ব্যবহার থেকে সরে আসা কঠিন হয়ে যাবে।

তবে পলিথিনের চেয়ে কিছুটা দাম বেশি হলেও বিকল্প হিসেবে সরকারি উদ্যোগে পাট দিয়ে তৈরি ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই ব্যাগ এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব হয়নি। পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগের চাহিদাও রয়েছে এবং সুপারশপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এটি কিনতে আগ্রহী; কিন্তু বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তাদের অভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে দেখা যায়, পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

তবে এখনো যেহেতু ১৯ দিন সময় রয়েছে, এই সময়ের মধ্যে সরকারের নিয়ম অনুযায়ী পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার থেকে সরে আসবে। সেভাবেই সুপারশপের উদ্যোক্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সুপারশপ স্বপ্ন’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাব্বির হাসান নাসির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নিজেরাই চাচ্ছিলাম কিভাবে পলিথিনের ব্যবহার কমানো যায়। সরকারকে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য সাধুবাদ জানাই।

পলিথিন বাদ দিতে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিন যে পরিমাণ ব্যাগ আমাদের লাগে তা কিন্তু এখন প্রস্তুত নেই। এখন আমরা সরবরাহকারীদের সঙ্গে কথা বলছি। একই সঙ্গে আমরা ক্যাম্পেইন চালাচ্ছি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী স্যাম্পল ও দামসহ যেন সরবরাহকারীরা আমাদের কাছে চলে আসেন।’

সোনালি ব্যাগ নিয়ে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ব্যাগ যদি আমাদের চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারে এবং তিন, পাঁচ বা সাত টাকায় সোনালি ব্যাগ সরবরাহ করতে পারে, তাহলে আমাদের যা ব্যাগ প্রয়োজন হয়, সব তাদের কাছ থেকে নিতে পারব।

গুলশান-২-এ অবস্থিত সুপারশপ ইউনিমার্টের আউটলেট ম্যানেজার মো. মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্দেশনা দেওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ডেকে ছিল। আমাদের প্রতিনিধি সচিবালয়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে যেভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে, সেভাবেই আমরা কাজ করব। পলিথিনের পরিবর্তে যা ব্যবহার করতে বলা হবে, সেগুলোই ব্যবহার করব।’

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশের মুখে রয়েছে জিনিয়াস সুপারশপ। ওই শপের ম্যানেজার হাসনাইন শাওন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প বাজারে কোনো কিছু এলে আমরা সেটা ব্যবহার করতে পারব। কাপড়ের ব্যাগ আমরা ব্যবহার করি। পাটের ব্যাগ যদি পাওয়া যায় তাহলে আমরা সেটা ব্যবহার করব। যেটা পরিবেশসম্মত, সেটাই ব্যবহার করব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন বিকল্প নেই। আগে পলিথিনের বিকল্প তৈরি করতে হবে। এখন চানাচুর, বিস্কুট, চকোলেট ও রুটির প্যাকেট তৈরি করা হচ্ছে পলিথিন দিয়ে। কম্পানি পর্যায়েও পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য সরকারকে চাপ দিতে হবে। আমরা চেষ্টা করব যাতে শতভাগ পরিবেশবান্ধব কাজ হয়।’

পাট ও কাপড়ের ব্যাগের বিকল্প

আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোবারক আহমেদ খান গবেষণা করে পাট দিয়ে সোনালি ব্যাগ তৈরি করেন, যা পরিবেশবান্ধব। দেখতেও পলিথিনের মতো। নিজে গবেষণা করে ২০১৭ সালে এই ব্যাগ প্রস্তুত করেন, যা দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। কিন্তু এর মধ্যে পার হয়ে গেছে সাত বছর। বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী পলিথিনের বিকল্প তৈরি করার পরও দেশে বাণিজ্যিকভাবে এখনো উৎপাদন সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাট দিয়ে যদি পলিথিনের মতো ব্যাগ পাওয়া যায়, তাহলে সেটা ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা উচিত। এতে পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। চাষিরা পাটের ন্যায্য দাম পাবে।

সোনালি ব্যাগের সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে ড. মোবারক আহমদ খান গতকাল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে স্যাম্পলও দিয়ে এসেছেন।

তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি পলিথিনের উত্তম বিকল্প। এটি এখন সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার চাইলে এটি দ্রুত তৈরির ব্যবস্থা করতে পারে। এখানে সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি উদ্যোক্তা লাগবে। এ ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা যাঁরা প্লাস্টিকের ব্যবসা করেন। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনা হয়েছে। এখন পলিথিনের বিকল্প না করে আইন করলে তা কার্যকর হবে না। এখন আমাদের টেকনোলজি পুরো প্রস্তুত।’

তিনি জানান, এখন প্রতি মিনিটে ৬০ ব্যাগ তৈরি করা যায়। কিন্তু অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে এর উৎপাদন বাড়বে। এখন প্রতিটি শপিং ব্যাগের দাম পড়ছে পাঁচ টাকার মতো। তবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দাম অনেক কমে আসবে। একই সঙ্গে ব্যাগের গ্রেড অনুযায়ী আলাদা আলাদা মানের তৈরি করা যাবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
সংগৃহীত ছবি

বিশ্বব্যাপী মার্কিন পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার প্রথম দিনে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বুধবার ব্রেন্টের অপরিশোধিত তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা করোনাকালে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন।

বিশ্লেষক অ্যাশলে কেলি বলছেন, হোয়াইট হাউস চায় তেলের দাম আরো কমে যাক। কারণ এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কেউ পালাতে পারবে না : গভর্নর

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কেউ পালাতে পারবে না : গভর্নর
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে, যাতে কেউ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে না পারে। অনিয়ম, কেলেঙ্কারি ও সুশাসনের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য প্রয়োজন সংস্কার।’

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর বিআইবিএম কার্যালয়ে দশম বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, সংস্কারের জন্য গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টাস্কফোর্স গঠন, নতুন আইন প্রবর্তন ও ব্যাংক কম্পানি আইনের মতো বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ ব্যাংকিং খাতের একগুচ্ছ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলস্বরূপ লুটপাট করা কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও কোমর ভেঙে আছে বেশ কিছু ব্যাংকের।
 
আর সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ নয়, তবে যেগুলো খারাপ সেগুলোর অবস্থা খুব খারাপ উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা লোপাট করে আর কাউকে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না এবং ব্যাংকগুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরো বলেন, ‘গ্রাহকের স্বার্থে ব্যাংকের বোর্ডে হস্তক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরো একটি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে।

এ সময় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ব্যাংকের প্রকৃত মালিক গ্রাহকরাই। তাই তাদের আস্থার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না এই খাত।’

মন্তব্য

বসুন্ধরা গ্রুপে বিনিয়োগে আগ্রহী ফিনল্যান্ড

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
বসুন্ধরা গ্রুপে বিনিয়োগে আগ্রহী ফিনল্যান্ড
ছবি: কালের কণ্ঠ

ফিনল্যান্ডের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে, বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হেডকোয়ার্টারে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিমো লাহদেভির্তা এ আগ্রহের কথা জানান।

তিনি বলেন, “বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে ইতোমধ্যেই কিছু ফিনিশ কোম্পানির সহযোগিতামূলক ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে, আমরা সেটি আরো সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী।”

রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিজনেস ফিনল্যান্ড-এর প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি ও শিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর-সি-এর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শাহেদ জাহিদ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন কুলব্রুক প্রজেক্ট ডিরেক্টর শ্রীনিবাসন শ্রীরামুলু, এলেম্যাটিক-এর সন্দীপ কুমার, কোনক্রেইনস-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর রতন বিশ্বাস, মিরাসিস -এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরিন্দম দাস সরকার, রাউটা ডিজিটাল-এর সিইও কুমার অভিজিৎ, ওয়ার্টসিলা বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম, ওয়্যারপাস-এর মারুতি মাল্লেপল্লি এবং ফিনল্যান্ড দূতাবাস ও বিজনেস ফিনল্যান্ড-এর অন্যান্য প্রতিনিধিরা।

মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত জানান, প্রতিনিধি দল আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছে। আজ আমরা বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছি।

আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল প্রযুক্তি, টেকসই নির্মাণ, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য খাত এবং টেকসই উন্নয়ন।

বিনিয়োগ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনই কিছু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”

বৈঠক শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের সিওও শাহেদ জাহিদ জানান, ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি দল সিমেন্ট, পেপার এবং প্রি-কাস্ট বিল্ডিংসহ বেশ কিছু খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে। সিমেন্ট খাতে ফসিল ফুয়েলের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি প্রক্রিয়া চালুর বিষয়ে প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

তিনি আরো বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে স্বল্পসুদে অর্থায়নের অভাব রয়েছে। ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা দাঁড় করানো কঠিন। ফিনল্যান্ড সরকার দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ কাঠামোর মাধ্যমে এ বিষয়ে সহায়তা করতে পারে। প্রতিনিধি দলটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, তারা স্বল্প সুদে ঋণ ও যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধান করবে। 

সভায় বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র ডিএমডি মোস্তাফিজুর রহমান, ডিএমডি কে এম জাহিদ উদ্দিনসহ গ্রুপের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 

মন্তব্য

জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে, মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ১০.২ শতাংশে : এডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমবে, মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ১০.২ শতাংশে : এডিবি
ছবি: কালের কণ্ঠ

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বাড়বে ৫.১ শতাংশে। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এডিবির ঢাকা অফিসে প্রকাশিত ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫’ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও রাজনৈতিক উত্তরণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি, শিল্প খাতে অস্থিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়েছে।

২০২৪ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২ শতাংশ।

বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জেয়ং বলেন, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল রয়েছে। এই সহনশীলতা আরও শক্তিশালী করা সম্ভব কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

তিনি আরো বলেন, তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক খাতের সুশাসন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার করা যেতে পারে।

এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ২০২৪ অর্থবছরের ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৫ অর্থবছরে ১০.২ শতাংশে পৌঁছাবে। পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব, বাজার সংক্রান্ত তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ১.৪ শতাংশ থেকে কমে ০.৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এডিবি বলছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ভোগ ও বিনিয়োগে কিছুটা গতি আসবে।

তবে সংকোচনমূলক আর্থিক ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার কারণে এ গতি সীমিত থাকবে। বিশ্ববাজারে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবও বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। সরবরাহপক্ষে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং ক্রয়ক্ষমতার হ্রাসের কারণে সেবাখাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। বারবার বন্যার কারণে কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে। তবে রপ্তানি খাতের সহায়তায় শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রতিবেদনটি ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক ঘোষণার আগে তৈরি হওয়ায় সেসব শুল্কের প্রভাব এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে এডিও এপ্রিল ২০২৫-এ নতুন শুল্ক নীতির ফলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলাদা বিশ্লেষণ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বর্তমানে ৬৯টি সদস্য দেশের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।


 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ