তৈরি পোশাক খাতের ১০০টির বেশি কারখানা গত ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে। কয়েক মাসে ১০টির মতো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়েছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮৩টি কম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, ইস্পাত ও কাগজশিল্পের অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
তৈরি পোশাক খাতের ১০০টির বেশি কারখানা গত ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে। কয়েক মাসে ১০টির মতো টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়েছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮৩টি কম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, ইস্পাত ও কাগজশিল্পের অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার মূল্যের অস্থিতিশীলতা, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার (এলসি) অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও কারখানার উৎপাদন কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধের প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগে। নতুন করে বিনিয়োগের সাহস পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কর্মসংস্থান ও কর আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি চারটি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেয়া গ্রুপ।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশ করা বেসরকারি খাতের ঋণের পরিসংখ্যান বলছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি আর অর্থনীতিতে ধীরগতির কারণে বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের নিম্নমুখী প্রবণতা আগে থেকেই ছিল, যা আরো কমে ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছেছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বার্ষিক ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম অর্ধাংশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৪ শতাংশ কম।
এর আগে, ২০২১ সালের মে মাসে কভিড মহামারির মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল। মূলত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি আরো কমতে থাকে। গত জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সরকার পতনের মাসে (আগস্ট) তা নামে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে তা আরো কমে হয় ৯ দশমিক ২০ শতাংশ; যেটি ছিল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। নিম্নমুখী এ হার পরের মাসে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে।
একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, চলমান অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ সুদের হার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন ঋণের চাহিদা, বিশেষ করে মেয়াদি ঋণের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১৪ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ সুদের হারে বিভিন্ন ঋণ দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মেয়াদি ঋণ এবং বাণিজ্যিক অর্থায়নের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় আমদানি এখনো কম রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা বর্তমান আর্থিক ঝুঁকি এড়াতে নতুন বিনিয়োগ করার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অপরিবর্তিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৯০ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি হয়েছে ৮৬ কোটি ডলারের। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ১১১ কোটি ডলার। ৯ শতাংশ ঋণের সুদ এখন ১৫ শতাংশের বেশি।
একইভাবে কমেছে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বিনিয়োগ এসেছে ১৪৭ কোটি ডলার। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬১ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। বেড়েছে বেকারত্ব। ২০২৩ সালের জুনে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। চলতি বছরের জুনে বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজারে।
এ বিষয়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংক এখন নতুন ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে একটি রক্ষণশীল মনোভাব গ্রহণ করছে, যাতে ঋণ শ্রেণীকরণের নতুন ঝুঁকি না বাড়ে এই ধীরগতির আর্থিক পরিস্থিতিতে।
এ পদ্ধতির অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো এখন ঋণ অনুমোদনের আগে যথাযথ জামানত নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। এদিকে এলসি নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রকৃত আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২৮ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমে ২৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
সম্পর্কিত খবর
ভোজ্য তেল আমদানিতে অব্যাহত শুল্ক—কর ছাড় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। দাম সহনীয় রাখতে এ দাবি জানিয়েছে তারা।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে এসংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। আগামী ৩১ মার্চ কর ছাড়ের বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দাম সহনীয় রাখতে গত ১৫ ডিসেম্বর সয়াবিন তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ায় সরকার। এরপর আজ ট্যারিফ কমিশন নতুন করে আরো তিন মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। মূলত বাজারে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন।
অর্থনীতি নিয়ে হতাশ হওয়ার কারণ নেই উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কের কোনো সমস্যা হবে না।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আগে খাদের কিনারায় ছিল। সেখান থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছি।
পণ্য খালাসে জট খুলেছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জট খুলেছে। ব্যবসায়ীরা নানা সময় নানা ধরনের সিস্টেম করার চেষ্টা করে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
খাদের কিনারা থেকে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আগে খাদের কিনারায় ছিল। সেখান থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছি। এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থনীতি নিয়ে হতাশ হওয়ার কারণ নেই উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কের কোনো সমস্যা হবে না।
পণ্য খালাসের জট খুলছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জট খুলেছে। ব্যবসায়ীরা নানা সময় নানা ধরনের সিস্টেম করার চেষ্টা করে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের প্রস্তাব বাতিল ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগের স্বার্থ সংরক্ষণের দাবিতে গতকাল সোমবার সকালে ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিমানবন্দর মহাসড়ক অবরোধও করেন তাঁরা। এদিকে বেবিচক বলছে, এমন ধরনের কোনো বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করা হয়নি।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মাদ কাউছার মাহমুদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সম্প্রতি একটি নির্দিষ্ট সংস্থার নামে ভিত্তিহীন তথ্য প্রকাশ করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।
বেবিচকের ভাষ্য মতে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি বিমানবন্দরগুলোর অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবা উন্নত করতে বেবিচক নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মতামত গ্রহণ ও যাচাই-বাছাই করে।
বেবিচক জানায়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমানে এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগ (এভসেক), এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা কাজ করছেন। তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার জন্য তিন হাজার ৪৯২ জন নিরাপত্তা সদস্যসহ মোট পাঁচ হাজার ১১২ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
সিভিল এভিয়েশন কর্মচারীদের বিক্ষোভ
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগের স্বার্থ সংরক্ষণের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ সময় তাঁরা ‘এভসেক বিভাগকে অকার্যকর করার সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, বেবিচকের অধীনে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বন্ধ করা, বেবিচকের অর্গানোগ্রাম পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা, প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত শক্তিশালীকরণ নিশ্চিত করা, ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টের আওতায় সব জনবল প্রত্যাহার করা, ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা, বেবিচকের স্বনির্ভরতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি জানান।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমাদের দাবি যৌক্তিক। বিমানবাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারসহ আমাদের দাবি না মানা হলে আমরা আরো বৃহত্তর কর্মসূচি দেব।
বেবিচক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স (বিএএসএফ) নামের বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরাপত্তা সংস্থা গঠনের উদ্যোগে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। প্রস্তাবিত বিএএসএফের জন্য ১০ হাজার ৬৩২ সদস্যের ৭০ শতাংশ নেওয়া হবে বিমানবাহিনী থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ বেসামরিক লোকবল থেকে নেওয়া হবে। এই ফোর্স গঠনের খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৭ কোটি দুই লাখ টাকা। এই বাহিনী নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বেবিচকের নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে।