স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের আজিজুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার ও কুলাউড়া প্রতিনিধি
শেয়ার
স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের আজিজুর রহমান

দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য, মৌলভীবাজারের সাবেক সাংসদ, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান। 

গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ২০২০ সালের মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতা পদকে ভূষিত ৯ জনের মধ্যে তিনিও একজন। 

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এ পুরষ্কার দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২০ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার দেবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান মৌলভীবাজার জেলার গুজারাই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আব্দুল সত্তার, মাতা মরহুম কাঞ্চন বিবি। তিনি শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।

মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা কলেজে ভর্তি হলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে হবিগঞ্জের বিখ্যাত বৃন্দাবন কলেজ হতে বিকম ডিগ্রী অর্জন করেন।

ছাত্রজীবন হতেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত আজিজুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সরাসরি নির্দেশনায় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

 

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কারাবরণ করেন তিনি। এরপর একই বছরের ৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জেল ভেঙ্গে সিলেট কারাগার থেকে তাঁকে মুক্ত করা হয়। ২ মে পুনরায় পাকবাহিনী মৌলভীবাজার শহরে প্রবেশ করে বর্বরোচিত দমন পীড়ন চালানোর পর ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। এক পর্যায়ে মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহুত পশ্চিমবঙ্গের বাগডুগায় (দার্জিলিং) প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে সিলেট বিভাগের একমাত্র প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং ৪ নম্বর সেক্টরের রাজনৈতিক কো-অর্ডিনেটর ও কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর শমসেরনগর, ৬ ডিসেম্বর রাজনগর এবং ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মৌলভীবাজারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন আজিজুর রহমান।

গণপরিষদের এই সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য রচিত সংবিধানের একজন স্বাক্ষরকারী। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনীতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মৌলভীবাজার জেলা শাখার দুই বারের সাধারণ সম্পাদক ও দুই বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ দল ও মহাজোটের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

অকৃতদার এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ (বর্তমানে সরকারী) ও সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। তিনি মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠক। সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, মৌলভীবাজার শাখার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রজ্ঞাপনমূলে মৌলভীবাজারে প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন আজিজুর রহমান। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বরত আছেন তিনি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়

দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়
ছবি: কালের কণ্ঠ

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানে লক্ষাধিক মুসল্লির অংশ গ্রহণে ঈদুল ফিতরের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সোমবার (৩১ মার্চ) উত্তরের ১৬ জেলাসহ সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মিনার ও মাঠ গোর-এ শহীদ ময়দানে এবার ঈদের নামাজ আদায় করতে বাগেরহাট ও গাজীপুর থেকেও কয়েকজন মুসল্লি এসেছেন।

সকাল ৯টায় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৬টা থেকেই মুসল্লিরা সমবেত হতে শুরু করেন এই ঈদগাহে।

ঠিক ৯টায় শুরু হয় নামাজ। এখানে ঈমামতি করেন মাওলানা মো. মাহফুজুর রহমান। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহসহ '৭১ ও '২৪-এ শহীদ ও আহতদের জন্য শান্তি কামনা করে করা হয় মোনাজাত। 

বৃহৎ এই জামাতে অংশ নেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন, বিভিন্ন রাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।

প্রখর রোদে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও শান্তি পূর্ণভাবে বৃহৎ এই জামাতে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিরা।

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, রমজানে আমরা যে তাকওয়া অজর্ন করেছি তা হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। এ সময় তারা বলেন, লাখো মুসুল্লির অংশগ্রহণে দেশের এই বৃহৎ ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সফলভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তারা।

 

এদিকে, বৃহৎ এই জামাতে অংশ নিতে পেরে খুশি মুসল্লিরা। তারা জানান,ঈদের জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে দূর-দূরান্তের মুসল্লিরা এসে অংশ গ্রহণ করতে পেরেছেন। 

বাগেরহাট থেকে আগত আরিফুল ইসলাম ও গাজীপুর থেকে আসা হাফেজ ইমরান হোনের বলেন, আমরা প্রতিবার শুনি দিনাজপুরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিনার ও ময়দানে লাখো মানুষ নামাজ আদায় করেন। আমরা আজ ঈদের নামাজ আদায় করলাম। বড় জামায়াতে নামাজ আদায় করতে পেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

নীলফামারী জেলা থেকে এসেছিলেন রংপুরের একটি হিমাগারে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আব্দুস সাত্তার। তিনি জানান, এবার নিয়ে সাতবার এই মাঠে নামাজ আদায় করলেন। তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, অন্যান্যবারের চেয়ে এবারে ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল। এতো বড় মাঠ ও এতো মুসল্লির সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করার যে অনুভূতি তা প্রকাশ করার মতো নয়। 
 
বৃহৎ এ জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচাগার, ছিল ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিক্যাল টিম। পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এতো কিছু ছাপিয়েও এবার সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে আলোচনা ছিল মাঠে নামাজে আসা অনেক নতুন মুখ ও নতুন ইমাম। তারা বলেন, প্রতিবার আয়োজকরা ময়দানে যে সংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় করতেন, তার চেয়ে অনেক বাড়িয়ে বলা হতো। যারা বাড়িয়ে বলত এবার তারাও উধাও হয়ে গেছেন। 

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান ও ঈদগাহ মিনার। ১৯.৯৯ একর আয়তন বিশিষ্ট এই ঈদগাহে ১৯৪৭ সাল থেকে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও আধুনিক নির্মাণশৈলীতে এই ঈদগাহে বৃহৎ পরিসরে ঈদের জামাত শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। 
 

মন্তব্য

শোলাকিয়া জনসমুদ্র, বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য দোয়া

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
শোলাকিয়া জনসমুদ্র, বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধির জন্য দোয়া
ছবি : কালের কণ্ঠ

লোকে লোকারণ্য মাঠ। মুসল্লিতে ঠাসা আশপাশের রাস্তা। বাসাবাড়ির ছাদেও ভিড়। ঈদগাহ মাঠ ছাড়িয়ে যতদূর চোখ যায়, ঠাঁই নেই অবস্থা।

এটি কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যাবাহী শোলাকিয়া ময়দানে অনুষ্ঠিত আজকের (সোমবার) ঈদ জামাতের চিত্র। এবার শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজের জামাতে সব মিলিয়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মুসল্লি অংশ নেয় বলে জানিয়েছে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি। আর এ জামাতকে নিরাপদ রাখতে নেওয়া হয় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। এতে প্রথমবারের মতো যুক্ত থাকেন সেনা সদস্যরাও।
 

আরো পড়ুন
আগামী বছর থেকে আরো বড় পরিসরে ঈদ উৎসব : আসিফ মাহমুদ

আগামী বছর থেকে আরো বড় পরিসরে ঈদ উৎসব : আসিফ মাহমুদ

 

জামাতের পর বিশ্বশান্তি ও দেশের সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত থেকে বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের আহ্বানও জানানো হয়।

এটি ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম ঈদ জামাত। সকাল ১০টায় শুরু হয় জামাত।

ঈদের নামাজে ইমামতি করেন জেলা শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।

ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশপাশের এলাকা। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে। কঠোর নিরাপত্তার কারণে মাঠে প্রবেশ করতে মুসল্লিদের খানিকটা দেরি হয়। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যেমে মুসল্লিদের ঈদগাহে ঢুকতে দেওয়া হয়।

সকাল ৯টার আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

আরো পড়ুন
খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

 

মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধা করে দিতে সকাল থেকে শহরের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে শোলাকিয়ায়। সকাল ৬টার পর থেকে মুসল্লিদের ঢল নামে ঈদগাহ মাঠে। চারদিক থেকে আসা জনস্রোতের গন্তব্যে ছিল এই শোলাকিয়া মাঠ। 

জামাত শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই কানায় কানায় ভরে যায় ঈদগাহ। পাশের সড়ক, ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও আশপাশের বাসাবাড়ির ছাদে উঠে জামাতে শরিক হতে দেখা যায় অনেককে। এবারও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, প্রায় এক হাজার ২০০ পুলিশ, শতাধিক র‌্যাব সদস্য, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কঠোর নিরাপত্তা বলয়। এবার প্রথমবারের মতো সেনা সদস্যারা নিরাপত্তাব্যবস্থায় যুক্ত হন। তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

আরো পড়ুন
আমরা পৃথিবীর সব মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করব : সারজিস

আমরা পৃথিবীর সব মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করব : সারজিস

 

নজরদারিতে আকাশে ছিল শক্তিশালী ক্যামেরাযুক্ত পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। মাঠ, শহরসহ প্রবেশপথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে দুরবিন নিয়ে নিরপত্তার দায়িত্ব পালন করেন র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তাচৌকি। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেন। ঈদগাহ এলাকায় তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল টিম এবং অগ্নিনির্বাপণ দলও মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল স্কাউট সদস্যরা। 

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেছেন, উৎসবমুখর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজন করতেই নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নিয়েছে। 

গত ৩০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করছেন গাজীপুরের আব্দুল খালেক (৬৫)। তিনি জামাতের একদিন আগে ভাতিজাকে নিয়ে কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। গতবার নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। এবার ভাতিজা নিয়ে এলেন। তিনি বলেন, ‘যত দিন বেঁচে আছি এভাবে সক্ষম সব আত্মীয়-স্বজনকে শোলাকিয়ায় নিয়ে আসব। এখানে নামাজ আদায় করলে মনে শান্তি পাই। তাই বারবার আসি। শোলাকিয়ায় আসাটাই আমার ঈদ।’

আরো পড়ুন
পুতিনের ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প, শুল্ক আরোপের হুমকি

পুতিনের ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প, শুল্ক আরোপের হুমকি

 

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের সিদলা থেকে সাইকেল চালিয়ে এসেছেন আবু তালেব (৫০)। এবারই প্রথম এলেন। এ মাঠের ঐতিহ্য সুনামের কথা তিনি অনেক শুনেছেন। আশা ছিল আসবেন, কিন্তু আসতে পারেননি। তিনি বলেন, গত বছরও আমার বাবা ঈদের নামাজ পড়তে এসেছিলেন। তিনি মারা গেছেন সম্প্রতি। তাই বাবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এসেছি। এত মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করে ভালো লেগেছে। আগামীতে ছোট ভাইকে নিয়ে আসব। 
ময়মনসিংহের নান্দাইলের মুসল্লির বাসিন্দা আরাফাত মিয়া (৩২) তিন বছর ধরে ঈদে শোলাকিয়ায় আসেন। তিনি বলেন, এবার নিয়ত করেছিলাম। হেঁটে শোলাকিয়ায় গিয়ে নামাজ আদায় করব। ফজরের নামাজ পড়েই রওনা হয়েছি। জামাতের আগে পৌঁছে গেছি। 

তিনি আরো বলেন, বড় জামাতে নামাজে অংশ নিলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এ কারণে নিজে থেকে কষ্ট করে এসে ঈদ জামাতে অংশ নিয়েছি।

দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী এবারও শোলাকিয়ার ঈদ জামাত শুরুর পাঁচ মিনিট আগে শটগানে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি ও এক মিনিটি আগে একটি গুলির আওয়াজ করা হয়। এটি নামাজ শুরু করার সংকেত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 

আরো পড়ুন
পুতিনের ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প, শুল্ক আরোপের হুমকি

পুতিনের ওপর ‘বিরক্ত’ ট্রাম্প, শুল্ক আরোপের হুমকি

 

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, এবার পাঁচ লক্ষাধিক মুসল্লি শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন বলে আমাদের ধারণা। এবারের জামাতের ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই ভালো। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে মুসল্লিদের।    

ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছায়। নামাজ শেষে জামাতে আসা যাত্রীদের নিয়ে আবার গন্তব্যে ফিরে যায় ট্রেন দুটি।

আরো পড়ুন
খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

খুলনায় ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

 

কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া মাঠ। এর আয়তন ৭ একর। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই মাঠে বিশাল ঈদের নামাজের জামাত হয়ে আসছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ঈদের প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে। 

মন্তব্য

ঈদের নামাজ শেষে যা বললেন সারজিস আলম

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
শেয়ার
ঈদের নামাজ শেষে যা বললেন সারজিস আলম
ছবি: কালের কণ্ঠ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা আর সব নেতিবাচক কাজ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর প্রতি যেমন বান্দার হক রয়েছে তেমনি বান্দার প্রতি বান্দার হক রয়েছে। এই হক যেন আমরা আমাদের জায়গা থেকে আদায় করতে পারি।

আজ সোমবার (৩১ মার্চ) পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে ঈদের নামাজ শেষে অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন।

আরো পড়ুন

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

 

সারজিস আলম বলেন, ‘পৃথিবীতে অনেক মজলুম মুসলিম ভাই-বোনেরা আছেন যারা আমাদের মতো করে ঈদ করতে পারছেন না। ভারতে উগ্র সাম্প্রদায়িক কিছু হিন্দুত্ববাদি গোষ্ঠী রয়েছে তাদের কাছে আমাদের মুসলিম ভাইরা মজলুম। ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে মুসলিম ভাইয়েরা মজলুম হিসেবে রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে মায়ানমারের অনেক মুসলিম মজলুম ভাইয়েরা রয়েছেন। আমরা পৃথিবীর সব মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করব। পৃথিবীর সব মানুষের জন্য দোয়া করব। যেন আমরা একসঙ্গে আমাদের মনের সংকীর্ণতা আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশের জন্য মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।

এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে এমন কিছু করে যেতে পারি যেন ইহকাল পরকালে শান্তিতে বসবাস করতে পারি।’

মন্তব্য

বিগত বছরগুলোতে আমরা ঈদ উদযাপন করতে পারিনি : এ্যানি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
বিগত বছরগুলোতে আমরা ঈদ উদযাপন করতে পারিনি : এ্যানি

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে, ১৬-১৭ বছর ধরে আমরা আনন্দের সহিত ঈদ উদযাপন করতে পারিনি। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে এ আনন্দ উপভোগ করতে দেয়নি। আজকে এ দেশের মানুষের আন্তরিকতা ও সহযোগিতায় আমরা সবাই খুব শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি।

সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে লক্ষ্মীপুর সোনামিয়া ঈদগাহ মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এ্যানি বলেন, আমাদের মধ্যে আনন্দ আছে, খুশি আছে। এ আনন্দ এবং খুশি যেন আমরা সামনের দিনগুলোতে ধরে রাখতে পারি সবাই মিলেমিশে। সেখানে ঐক্যের প্রয়োজন আছে। সুদৃঢ় ঐক্যই আমাদের মধ্যে এ আনন্দ এবং খুশি ধরে রাখতে পারে।

আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই সুন্দরভাবে আছি, মিলেমিশে আছি, মিলেমিশে থাকব। এটাই হোক আজকের এ আনন্দের দিনে আমাদের অঙ্গীকার। ঈদের খুশি আমরা উপভোগ করছি, ঈদের খুশি নিয়েই আমরা চলতে চাই ভবিষ্যতে। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর (পূর্ব) উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন চৌধুরী রিয়াজ, লক্ষ্মীপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ফয়েজ আহম্মেদ, জেলা কৃষকদলের সহসভাপতি বদরুল ইসলাম শ্যামল, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল আদনান, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহবাজ চৌধুরী জিদান প্রমুখ।


 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ