কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রেগে গিয়ে মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. সুলতান মাহমুদ মুঠোফোনে বলেছেন, আমি বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কেন্দ্রীয় চিকিৎসক পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি, জনতা ক্লাব কদমতলার সভাপতি। আপনি যত পারেন, তত লেখেন, আমার পদসহ লেখেন।
আজ শনিবার বেলা বারোটায় মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পেয়ে মুঠোফোনে কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে বলেন, আমি টাঙ্গাইলে আছি।
গত সপ্তাহে বুধ ও বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, আমি ছুটি পাওনা আছি।
আগামীকাল রোববার ছুটির আবেদনপত্র জমা দেব।
জানা গেছে, গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে সরকার তিন যুগ আগে থলপাড়া গ্রামে ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য একতলা একটি ভবন নির্মাণ করেন। এ ছাড়া পাশেই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আবাসিক ভবনও নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিভাগ এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও একজন অফিস সহায়ক নিয়োগ দেন।
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ডা. মো. সুলতান মাহমুদ যোগদান করেন। যোগদানের পর প্রথম দিকে নিয়মিত কর্মস্থলে আসলেও এখন মাঝে মধ্যে আসেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন শত শত নারী ও শিশু চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। ডা. সুলতান মাহমুদ নিয়মিত না আসায় ইউনিয়নের সাধারণ নারী ও শিশু রোগীরা কাঙ্ক্ষিত গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কেউ উপস্থিত নেই। তবে আয়া সুমি আক্তার ও পিয়ন বিরেন্দ্র নাথ সরকারকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ডা. সুলতান মাহমুদের কক্ষে তার চেয়ারের উপর তার ছবিসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি দিয়ে বানানো ‘জনতা ক্লাব কদমতলা’ একটি ক্যালেন্ডার ঝুলছে। টেবিলে হাজিরা খাতায় দেখা গেছে, কেন্দ্রের চিকিৎসক উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সাকমু) ডা. মো. সুলতান মাহমুদ গত বুধবার থেকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটিতে আসেন না।
অন্যদিকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা তাহমিনা খাতুন ও ফার্মাসিস্ট মোজাম্মেল এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক সোহেল রানাও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে উপস্থিত নেই।
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে রোগীদের জন্য ২৫ প্রকার ওষুধও বরাদ্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত না আসায় এলাকার সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে কেন্দ্রটির পাশে আবাসিক ভবনটিতে দীর্ঘ দিন যাবত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অবস্থান না করায় ভবনের চারপাশসহ প্রধান দরজায় আগাছায় ঢেকে গেছে।
কেন্দ্রটিতে কর্মরত পিয়ন বিরেন্দ্র নাথ সরকার ও আয়া সুমি আক্তারের কাছে ডাক্তার নিয়মিত আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, হাজিরা খাতা আছে। তবে ডাক্তার প্রতিদিন আসে না বলে তারা জানান।
ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. আনেয়ারুল ইসলাম, বহনতলী গ্রামের আব্দুস সামাদ, মহেড়া ইউনিয়নের হিলড়া গ্রামের নুর মুহাম্মদ খান নুরু বলেন, স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত আসেন না। ১৯৯৮ সালের পর আবাসিক ভবনে কেউ না থাকায় ভবনের দরজা আর খোলা হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।
ফতেপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সাকমু) ডা. মো. সুলতান মাহমুদ গত বুধবার থেকে কর্মস্থলে না আসার কথা স্বীকার করে বলেন, আবাসিক ভবনে থাকার মতো পরিবেশ নেই। বৃষ্টিতে পানি ঝড়ে। এ ছাড়া বিদ্যুৎও নাই। সব মিলিয়ে আবাসিক ভবনটিতে কেউ থাকেন না। এ ছাড়া কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মোজ্জামেল হোসেন অবসরে এবং ভিজিটর তাহমিনা খাতুন বদলি হয়ে ঢাকায় চলে গেছেন বলে জানান।
মির্জাপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল করিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এ উপজেলায় যোগদান করেছি। ফতেপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও যাওয়া হয়নি।
উপ সহকারী মেডিক্যাল অফিসার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার অফিসে এসে বিস্তারিত জানাবেন বলে তিনি জানান।