প্রতিমা নির্মাণে ব্যস্ততা বেড়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিমা কারিগরদের। ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজসজ্জা অবস্থা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই দূর্গা দেবীর স্বর্গ থেকে আগমন ঘটেছিল। এরই ধারাহিকতায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর শারদীয় উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা উদযাপন করে থাকেন।
আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। শারদীয় দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দিরগুলোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ পথে। দেবীকে স্বাগত জানাতে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মাঝে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। এদিকে উপজেলা পূজা উদর্যাপন পরিষদ বিভিন্ন এলাকার পূজা কমিটিগুলোকে দিয়েছেন বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা।
সোমবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, কোথাও খড় দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আবার কোথাও শিল্পীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় কৃত্রিম জীবন পাচ্ছেন মা দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর ও শিবমূর্তি। এখানে কোনো মূর্তিতে পরানো হয়েছে শাড়ি, হাতের বালা, গয়নাসহ সরঞ্জাম। ইতোমধ্যে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
রঙ ও সাজসজ্জার কাজ বাকি রয়েছে। এসব প্রতিমা কারিগররা বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করছেন। এ বছর বোয়ালমারী উপজেলার ১১৪টি ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ৪৬টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ জোরেস্বরে চলছে।
বোয়ালমারী পৌরবাজার সার্বজনীন রক্ষাচন্ডী মন্দির, কামারগ্রাম আখড়া, ময়না বারোয়ারী মন্দির, আধারকোঠা বারোয়ারী মন্দির, সাতৈর মন্দিরের প্রতিমা তৈরি কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তাছাড়া আলফাডাঙ্গা উপজেলা কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী হরি মন্দির, ঝাঁটিগ্রাম সার্বজনীন মন্দির, পাচুড়িয়া সার্বজনীন মন্দিরসহ প্রতিমা তৈরি কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।
বোয়ালমারী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আধারকোঠা বারোয়ারী মন্দিরের প্রতিমা কারিগর কিরণ পাল জানান, প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন তিনি। গত বছর করোনা মহামারি থাকায় এ বছর একটু কাজের চাপ বেড়ে গেছে। তিনি ৭টি পূজা মন্ডপে প্রতিমা বানাচ্ছেন। সঠিক সময়ের মধ্যে তারা কাজ শেষ করবেন বলে জানান।
তিনি আরো জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পান তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেলেও তারপরও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।
বোয়ালমারী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার সাহা বলেন, গত বছরের তুলোনায় এ উপজেলায় দুইটি পূজা মন্ডপ হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। এ বছর ১১৫ টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজামন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে মন্ডপ বানানোর কাজ চলছে। সব মিলিয়ে এ বছর ভালোভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশা করছেন।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বছর আলফাডাঙ্গায় ৪৭টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পাল না পাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্তু ৪৬টি মন্ডপে জাকজমকভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে পূজা উদযাপন করতে সকল এলাকায় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।